অতিরিক্ত চেয়েছি পূর্ণতায় পর্ব-০৪

0
331

#অতিরিক্ত_চেয়েছি_পূর্ণতায়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৪

‘বাসররাতটাও বুঝি তোমাদের সুখের হলো না মিস থুক্কু মিসেস ইশিতা।’
বাজারে এসেছিল ইশিতা। হাতে বাজারের পলিথিন নিয়ে বাসার পথে যেতে নিলে কে যেন পেছন থেকে বাজে প্রশ্নটি করে উঠে। চোখ-মুখ রাগিয়ে পিছু মোড়ে সে। দেখতে পেল রাফিয়ার বান্ধবী নয়না দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার স্বাচ্ছন্দ্যময় তৃপ্তির হাসি। চোয়াল শক্ত করে ইশিতা বলে,

‘দেখ স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার কথায় নাক গলাবি। দিজ নান অফ ইউর বিজনেস।’

নয়নাও মুখ বাঁকিয়ে ইশিতার পাশ কেটে চলে যায়। সে বিদেশ ছিল। রাফিয়ার সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে দেখা করতেই দেশে আসা তার। বান্ধবীর ঠিকানা জেনে সে তাদের বাসার উদ্দেশ্যেই যাচ্ছিল। সেখানে রাস্তায় অসহায়, নিথর শরীর নিয়ে ইশিতাকে কুড়িয়ে হাঁটযে দেখে মজা নিতে কথাটুকু বলে উঠে।
তার তো রুচিতে বাঁধে ইশিতা ও ইফতিয়াসের মত নর-নারীর সঙ্গ হতে।
বাসার পথে এসে ইশিতা বাড়িতে ঢুকতে নিলেই দেখতে পেল বেশ কিছু সাংবাদিক ও প্রতিবেশীগণ দাঁড়িয়ে সমালোচনা করছে। ব্যাপারটা মন্দ লাগেনি তার। সেও সুযোগকে কাজে লাগাতে নিজেকে অবলা নারী বানিয়ে ফেলে। সাংবাদিকের সামনে গিয়ে নিজের শ্বশুড় ও শ্বাশুড়িকে জল্লাদ প্রমাণ করে। তার ক্ষতময় ঠোঁটের করুণ দশা দেখে সকলে প্রমাণ পেয়ে যায়। বিস্তারিত তাল বানাতেও প্রস্তত তারা। এখন হোক সেটা সত্য বা মিথ্যে!
বাসার ভেতর ঢুকে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি কাউকে না দেখে ভ্রু কুঁচকায়। তবে ভ্রুক্ষেপ করে না। সংকোচহীন নিজ রুমের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে ফিসফিসানো কণ্ঠস্বর শুনে থেমে যায় ইশিতা। কান খাড়া করে বিপরীত রুমের দিকে এগোয়। যে রুমে তার রাফিয়ার মা ও বোন থাকে। দরজায় কান পেতে শুনতে পেল।
নাহিরউদ্দীন সাহেব কাঁদো মুখ নিয়ে শয্যাশায়ী রাফিয়ার মা অথাৎ মিসেস নিঝুমকে বলছে।

‘বোন আপনিই এবার মেয়েকে বুঝাতে পারবেন। বিপদ উৎপেতে ঝেঁকে বসেছে ঘাড়ে। আপনি সহায়তা না করলে আমরা যাবো কই।’

রাফিয়ার বোন বাসায় নেই সে স্কুলে গেছে। বিধেয় সে সুবাদে নাহিরউদ্দীন সাহেব ও মিসেস রহমানা বোনের কাছে এসে বিনতি করতে লাগে। অসুস্থ অবস্থায় মিসেস নিঝুম কাঁপা কণ্ঠে বলে,

‘ফোন দি দিন আমার।’

মিসেস রহমানা তৎক্ষণাৎ ফোন নিয়ে কল লাগায় রাফিয়ার ফোনে। কিন্তু একি নট রিচেবাল বলছে! শুনে যেন আতঁকে উঠে মিসেস নিঝুমের হৃদপিন্ড! দম যেন বন্ধ হয়ে যাবার দূরাবস্থা। ইশিতা বুঝল না তার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি কিসের পরিকল্পনা গেঁতেছে মস্তিষ্কে।
তবে ঘাপলা আছে বুঝতে পেরেছে শুদ্ধভাবে। ফলে সেও কড়া নজরে রাখবে ভেবে নিজের রুমে গেল ফ্রেশ হতে। মাছ বাজার থেকে এসেছে শরীর পুরু দুর্গন্ধে রগরগ করছে তার।

_____

দুপুর হয়ে গেল রাফিয়ার কোনো খবর না পেয়ে দিশাহারা হয়ে গেল মিসেস আরজিয়া। দিগিদ্বিক ভুলে সে ফোন লাগায় রুজহানের নাম্বারে। কালো ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় সে কোর্টের মধ্যে বসে জর্জের অপেক্ষা করছে। আজকে তার ছোট এক বিরুদ্ধীয় দলের কোর্টের মামলা আছে। সেই সমাধানের জন্য সকাল দশটায় বেরিয়ে পড়ে ছিল। সে তো জানেই না রাফিয়া বাসায় নেই। জর্জ আসতে না আসতেই মায়ের কল পেয়ে সে দোটানায় পড়ে। মামলার সুনানি হবে ফলে কয়েক মিনিট পর সে নিজ থেকে ফোন দেবে বলে ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে দেয়।
মিসেস আরজিয়া ঠোঁট কামড়ে স্বামীর কাছে ছুটে গেল। গত পরশু নতুন ব্যান্ডের বহু কাপড়ে সিলমোহর করতে করতে কোমর বেঁকে গিয়ে ছিল তার। এখন অনেকটা সুস্থ আছে বটে। ঘুমের ঘোরে স্ত্রীর ডাকে নিভু চোখ খুলে তাকায় তিনি। স্ত্রীকে হতদন্ত রুপে দেখে তার ঘুম উবে গেল। চট করে বসে স্ত্রীকে ধরে জিজ্ঞেস করে।

‘তুমি কাঁদছো কেন কি হয়েছে!’

‘ওগো রাফু মামুনির কোনো খবর নেই। সেই ভোরবেলা থেকে বেরিয়েছে। বলেও যায়নি কোথায় গেল। তাকে কই খোঁজব। তাওসীফ বাবুও নেই কোর্টে নাকি তার এক মামলার সুনানি করতে হবে বলে চলে যায়। মামুনির খবর কোথার থেকে পাবো এখন!’

দিবায়েত সাহেব অবাক স্ত্রীর কথা শুনে। কোনো কথা না বলে তৎক্ষণাৎ ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। রাফিয়া বাসায় নেই, খোঁজও নেই এ যেন কালবৈশাখী ঝড় আসার পূর্বাভাস! একঘণ্টার মধ্যে তিনি বেরিয়ে পড়ে রাফিয়াকে খোঁজ করতে।
দুঘণ্টা অব্দি জর্জের রায় না পাওয়া অব্দি কোর্টে আঁটকে ছিল রুজহান। রায় পেতেই পক্ষ ও বিপক্ষ দলেল সামঞ্জ্যতা মিটে গেল। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল রুজহান। কোর্ট থেকে বেরিয়ে দেখে তার মায়ের বিশ মিসডকল। ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের বশে কল লাগায় তার মায়ের নাম্বারে। ফোন রিং হতে না হতেই রিসিভ করে তিনি।

‘ওগো পেয়েছো তুমি রাফু কে! কই যে গেল মেয়েটা। না জানি ছেলেটা জানলে কেমন রিয়েক্ট করে। ভয়ে তো আমার কলিজা কাঁপছে গো।’

বাকি কিছু বলতে পারল না তিনি। কট করে ফোন কেটে যায়। আকস্মিক কল কেটে যাওয়ায় তিনি ফোনের স্ক্রিনে দেখল ছেলের কল। ভর্য়াত দৃষ্টিতে ঢোক গিলে তিনি। ভুলবশত কাকে তিনি কথাগুলো বলে ফেলল। ইশ! যেখানে বাঘের ভয় হচ্ছিল সেখানেই সন্ধ্যা নামতে চলেছে।
রুজহান স্বাভাবিক ভাবে বাসায় প্রবেশ করে। শিষ বাজাতে থেকে সোজা হেঁটে রাফিয়ার রুমে ঢুকে দরজা আঁটকে দেয়। এতে ভীত দৃষ্টিতে চেয়ে রইল মিসেস আরজিয়া ও দিবায়েত সাহেব।

____

নিভু নিভু দৃষ্টিতে চোখ খুলল রাফিয়া। মাথা ঝিমঝিম করছে তার। মাথায় হাত রেখে কোনোমতে শরীর বাঁকিয়ে বসে। চর্তুপাশ্ব তাকাতে দৃষ্টিজোড়া ঝাপসা লাগল তার। চোখ কচলে দেখে কেউ নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার বিরাজমান। ঘাবড়ে উঠে দাঁড়ায়। দেওয়াল হাতড়ে দরজা খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু পেলেও খুলার উপায় পাচ্ছে না। পকেট থেকে ফোন বের করে। ভাগ্যবশত তার ফোনটি ছিল সঙ্গে! ফোনের কলে গিয়ে ট্রাই করে রুজহানের নাম্বারে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন দেখায়। বুঝল সে এমন এক স্থানে ফেঁসেছে যেখানে না পাবে কোনো নেটওয়ার্ক, না পারবে বের হতে। কপাল চেপে বসে পড়ে। ফোনের মধ্যে সময় দেখে হতবাক। বিকেল তিনটা বেজে গিয়েছে অথচ বেরিয়ে ছিল ভোর সকালে। আকস্মিক তার গলা শুকিয়ে পুড়তে লাগল। পেটের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষুধার ভাব চলে এসেছে। অন্ধকারে সে খাওয়ার সন্ধান পেল না। পুরু স্থান হাতড়ে নাগাল পায়নি কোনো দানাপানির।ঠোঁট কামড়ে আলতো করে গলায় হাত বুলায়। যেন গরমের উত্তাপ অনুভূতি না হয়। ঘেমে তার শরীর ভেজে গিয়েছে। ফোনের স্ক্রিন আলোকিত করে গ্যালারির মধ্যে চাপ দেয়। সেখানে ফটোফ্রেমের মধ্যে ফুফার পরিবারের সঙ্গে তার পরিবারের মিলিত ছবি। চোখ থেকে টুপটুপ পানি পড়তে লাগল। নিশ্চুপে সে হাটুঘেরে বসে রইল। ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাহিল প্রায়। শুয়ে রইল মেঝেতে। কি ভেবে যেন চট করে দাঁড়িয়ে যায়!
দেওয়াল হাতড়ে দরজায় কড়াঘাত করতে আরম্ভ করে। হায় আপসোস! ভার্সিটির পেছনের দিকে কারো যাতায়াত সচরাচর হয়ে উঠে না। তথাপি নির্জন এক স্থান বলা চলে এটাকে। অন্দরমহলের স্থানের আওয়াজ কারো কর্ণগোচরে পৌছায়নি। সকলে যে যার মত নিত্যকর্মে ব্যস্ত। কেঁদে দেয় দরজা ধাক্কাতে থেকে। বুঝে উঠতে পারছে না কে করল তার সঙ্গে ষড়যন্ত্র! কেনো ফেলে দিল তাকে অন্ধকারময় বেসমেন্টে! ফোনের ফ্লাশলাইট অন করে সে দেওয়ালের মধ্যে ফাঁকা গর্ত পায় আছে কিনা তার সন্ধানে ব্যস্ত হলো। যদি ফাঁকা গর্ত পায় তবে পাথরের সংস্পর্শে ঘষাঘষি করে দেওয়াল ফাঁকা করে গর্ত বড় করবে। যেন সে বাহিরে যেতে সক্ষম হয়।

____

ইশিতা শাওয়ার করে রেডি হয়ে নেয়। আজ সে থানায় যাবে। ইফতিয়াসকে না দেখে তার মন ঠিকছে না! ইশিতাকে সাজুগুজু করে বের হতে দেখে মুখ বাঁকিয়ে থামায় মিসেস রহমানা। নামেমাত্র ছেলের বউয়ের দিকে এগিয়ে বলে,

‘মহারাণী সেজেগুজে কার বুকে শুতে যাচ্ছেন একটু বলবেন!’

শ্বাশুড়ির কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল ইশিতা। হাত মুঠোবদ্ধ করে শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,

‘আপনার ছেলের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। যতই হোক স্বামী আমার।’

মিসেস রহমানা পিছু ডাকেনি। খালি ‘নাটকবাজ’ বলে চলে যায়। দরজা দিয়ে বের হতে নিলে কারো সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে তার কোলে নেতিয়ে পড়ে। আকস্মিক ধাক্কায় ইশিতা তাল সামলাতে পারেনি। হঠাৎ শাড়ির কুচি ভেদ করে কোমরে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকায়। চুলে পাক ধরেছে, মুখে নির্লিপ্ত শান্ত গম্ভীরতাময় এক অর্ধবয়স্ক পুরুষ তাকে ধরে রেখেছে। ইশিতা তৎক্ষণাৎ সোজা দাঁড়িয়ে হাত ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয় অর্ধবয়স্ক পুরুষটিকে। দেখতে চল্লিশ – একচল্লিশ বছরের বয়স্ক পুরুষ মনে হচ্ছে। দৃষ্টিনত করে পুরুষটির পাশ কেটে চলে যায় ইশিতা। তথাপি পুরুষটি তার শান্ত দৃষ্টিতে ইশিতার ব্যাকসাইডের দিকে চেয়ে রইল।

‘মিস্টার সাবের আপনি এখানে!’

কুমিল্লার বিদ্যুৎ ফ্যাক্টরির নামকরা তৃতীয় মালিক সাবের কুমার। ধর্ম হিন্দু। তাকে দেখে বেশ অবাক হলো নাহিরউদ্দীন। সাবের সাহেব মৃদু হেসে নাহিরউদ্দীনের সঙ্গে সোফার রুমে বসে। মিসেস রহমানা অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে স্বামীর কথায় চা-পানির বন্দোব্যবস্থায় লেগে যায়। সাবের সাহেব নাহিরউদ্দীনকে প্রস্তাব দেয়।

‘আপনার ফ্যাক্টরি বন্ধের মুখে। আমি চাই আপনি ফ্যাক্টরি আমার নামে করে দিন। আপনি ফিফটি পার্সেন্ট পার্টনারশিপ নিয়ে থাকবেন।’

সাবের সাহেবের প্রস্তাবে নাকচ করে দাঁড়িয়ে যায় নাহিরউদ্দীন সাহেব। কটুকণ্ঠে বলে,

‘ভেবেছিলাম কুমিল্লার নামকরা ব্যক্তি আপনি সহায়তার হাত বাড়াবেন। এ যে শত্রুতার হাত ভাবেনি। যাই হোক বিদায় নিতে পারেন।’

সাবের সাহেব উঠে দাঁড়ায় যাওয়ার পূর্বে ক্ষণিকের জন্য থেমে যায়। নাহিরউদ্দীন সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ইটস জাস্ট এ টেস্ট আই উইল ডিল উইড ইউ।’

চমকে গেলেও খুশি হয় নাহিরউদ্দীন সাহেব। সাবের সাহেবের সঙ্গে গলা মিলিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে লাগল। অন্যত্রে সাবের সাহেবের দৃষ্টি ইফতিয়াসের রুমের দিকে। যেখান থেকে ইশিতাকে ইফতিয়াসের বধূসেজে ফটোফ্রেমে করে দেওয়ালে টাঙানো হয়েছে। জিভ দিয়ে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে নেয়। তার লালসার দৃষ্টি প্রমাণ করছে তিনি কি চাই! পরিণয়ে বাঁকা হাসি দেয় সকলের অগোচরে।

_____

নাবিল চিন্তিত হয়ে পায়চারী করছে। রাফিয়ার ফোন ট্রাক করার প্রচেষ্টা যতদূর সম্ভব। অন্যত্রে শিষ দিতে থেকে তবলা বাজানোর মত হাত টেবিলে বা’রি দিচ্ছে রুজহান। নাবিলের মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা দেখে রীতিমত বিরক্ত সে। ঠোঁট বাঁকিয়ে প্রশ্ন করে।

‘মিস্টার অফিসার আপনি শান্ত হয়ে খোঁজার চেষ্টা করুন।’

‘চুপ করেন অফিসারের কাজে আপনি ঠ্যাং না গলালে খুশি হবো।’

মুখে হাত দিয়ে রুজহান চুপটি করে বসে রইল। নাবিলের চিন্তাধারা পার্টনার হিসেবে রাফিয়ার জন্য জায়েজ। তবে মানতে অবাধ্য রুজহান। নাবিলের পায়চারী থামাতে সে টেবিলের মধ্যে থাকা মার্বেলের গুটি হাতে নিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। নাবিল ফোনের মধ্যে ঘাঁটাঘাটি করে পায়চারী করছে। এলাহি কান্ড ঘটে গেল! গুপ্তচরের ন্যায় শয়তানি দৃষ্টিতে চেয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসল। নাবিল ব্যথার চটে ‘আহ আহ’ করে উঠছে। কনস্টেবল এসে অফিসারকে ধরে দাঁড় করায়। কিন্তু পেছনের অবস্থা কাহিল তার। বিধেয় বেডরেস্টের বাহানা ছু’ড়ে দেয়। নাবিল হতবুদ্ধির ন্যায় অগ্নিশর্মা হয়ে উঠতে নিলেই ‘মাগো’ বলে শুয়ে পড়ল। রুজহান তার বিছানার কাছে গিয়ে বলে,

‘ঐ অফিসার উত্তেজিত হস কেন হে! অন্যের হবু বউ গায়েব হয়ছে এতে তুই কেন উত্তেজিত হবি। তুই চুপ মেরে বসে থাকবি তা না উল্টো আমাকে চুপ করতে বলিস। খাড়া আজ তোর বউয়ের কান ভরব।’

‘কার কান ভরবেন আপনারা!’

নাবিল চোখ বড় করে তাকায়। রুজহান দুষ্টু হেসে ভাবীকে দেখে আহ্লাদী হয়ে বলে,

‘ভাবী আজ আপনার স্বামীর কুচিন্তার কথা বলেই দেয়। সে নিজের বউ রেখে অন্যের বউয়ের চিন্তায় বিভোর থাকে। দ্যাটস এ রিডিকিউলাস।’

ভাবীর চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেল। রুজহান অফিসারকে তার বিবির সঙ্গে ব্যস্ত রেখে মাথা নেড়ে নেড়ে বলে, ‘গার্লস হাহাহাহা।’
বাহিরে এসে বাইকে উঠতে নিলে ‘ঘেউ ঘেউ’ করে উঠে এক কুকুর। রুজহান চোখ পাঁকিয়ে তাকায়। দেখতে বিদেশী কু’কু’র লাগছে শব্দ করা কুকুরটিকে। এখানে পোষা কু’কু’র নয় বরং জা’লিমের মত ফেলে ব্যবহার করা হয় কু’কুর’কে। চোখ রাঙিয়ে থানার দিকে একপলক তাকিয়ে কুকুরটির সামনে ঝুকে আহ্লাদী গলায় বলে,

‘সবাই খালি চুন্নীকে খোঁজছে। আর আমি বিন্দাস কলা খাচ্ছি। আচ্ছা চুন্নী গায়েব হয়ে মজাই আছে। খালি নিজের নামডাক প্রশংসা শুনতে অভ্যস্ত মেয়ের। গিজগিজ করে কান জ্বালা না করলে মেয়ের বুকে শান্তি লাগে না বোধ হয়।’

বাইকে উঠে কুকুরের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয়। থানার কনস্টেবলগুলো কুকুর চুরি হতে দেখে চিৎকার দিয়ে বলে,

‘কুকুরচোর যাচ্ছে সবাই ধর।’

নাবিল হতভম্ব দৃষ্টিতে উঠতে নিলে বউয়ের অভিমানী সোহাগে নেতিয়ে পড়ে। মনে মনে বলে, ‘উড়নঘরের তরুণদাসের দ্বিতীয় পল্টিবাজ।’

রুজহান কুকুরটিকে নিজের পিছনে বসিয়ে গলা চেঁচিয়ে গেয়ে উঠে।

‘আমি যাই আমি যাই বল্টুপোষা নিয়া
তলাশি করতে,
তোমরা আসো আমার পিছে আমিও খুশি মনে যাই, যাই।’

পেট চেপে কান্না করছে রাফিয়া।
‘ইয়া আল্লাহ আমার অপরাধের ফল কি এভাবেই দিচ্ছো। আমি সহ্য করে ফেলতেছি। তাও রহম করো এই অভাগী বান্দীর উপর। তোমার সিজদায় ক্রন্দন থাকতে রাজি আমি। কষ্ট পেয়ে সুখ পাবো সেই আশায় আমি তোমার দেওয়া পরীক্ষার কষ্টের ভোগে নিজেকে সপে দিলাম আল্লাহ সপে দিলাম।’
কথাটুকু মনের মধ্যে করুণভাবে আওড়ায়। কোমরের নিচে প্লাজু ভিজে গেছে অন্ধকারে হয়ত সে দেখছে না। তবুও আন্দাজ করতে পারছে সে। ধীরে ধীরে তার চোখে পুনরায় ঝাপসা দেখতে পেল। গহীন অন্ধকারে সে নিমিত্তে তলিয়ে যেতে লাগে। হয়ত আর দেখা হবে না কারো সঙ্গে! প্রিয় মানুষ নেই, বাঁচার তাগিদ ছিল মা-বোন। তারাও বহু দূরত্বে। হয়ত আল্লাহ তার ভাগ্যের জোড় কম রেখে ছিল।

চলবে…..