মৃণালিনী পর্ব-০১

0
940

#মৃণালিনী
#পর্ব ১

লন্ঠন টা একটু উঁচু করে ধর তো হারুর মা, মুখ খানা দেখি নতুন বউয়ের,

হারুর মায়ের তুলে ধরা লন্ঠন এর আলোয়, নতুন বউয়ের পান পাতার আদলের মিষ্টি মুখ টা দেখে মন ভরে উঠলো পারুল বালার। সদ্য তাঁর দেওর পো বউ নিয়ে এসেছে সুদূর কলকাতা থেকে, কলকাতার মেয়ে দেখতে, ছেলেপুলে কোলে কাঁখে নিয়ে হামলে পড়েছে গাঁয়ের মেয়ে বউরা।

তোমরা সব এখন এসো বাছা, কাল সকালে দেখতে এসো বউ,

হাত ধরে নতুন বউ কে গাড়ি থেকে নামাতে নামাতে বললেন তিনি। মুহূর্তের মধ্যে খালি হয়ে গেলো চারপাশ, পারুল বালার কথায় কথা বলার সাহস এ গ্রামে কারোর নেই! শুধু গ্রামে কেনো, এবাড়িতেও সবাই ডরায় তাঁকে, এমন কি যার ছেলের বউ সেই কুমদও, বড়ো জার মুখের ওপর কথা বলার ক্ষমতা তাঁরও নেই। এই চৌধুরী বাড়িতে পারুল বালার কথাই শেষ কথা, তিনিই এ বাড়ির গৃহকর্ত্রী, যতই তিনি বাল্য বিধবা হন না কেনো।

স্বামীর হাত ধরে এ বাড়িতে বউ হয়ে পা দিয়েছিলেন মাত্র ন বছর বয়সে, সেই থেকেই কাটিয়ে ফেলেছেন আজ প্রায় পঞ্চাশ বছর। এ বাড়ির সমস্ত কিছুই তাঁর অঙ্গুলি হেলনেই চলে এসেছে এতগুলো বছর ধরে।

ছোট, বরণ কর বউ কে,

কুমুদ কে তাঁর ছেলের বউ কে বরণ করার সুযোগ দিয়ে পিছিয়ে এলেন পারুল বালা, তিনি না বললে বরণ করার সাহস কুমুদের নেই সেটা তিনি খুব ভালো করেই জানেন। বরণ পর্ব শেষ হলে ছেলে বউয়ের হাত ধরে ঘরে নিয়ে এলেন কুমুদ, দূর থেকেই দেখলেন পারুল বালা, তিনি বিধবা মানুষ এই সব শুভ কাজে থাকেন না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি সবটাই কুমুদ এর ওপর ছেড়ে দেবেন! তাঁর শ্যেন চোখ ঘোরা ফেরা করতে লাগলো বাড়ির সবার ওপর, কোনো নিয়মের ভুল ত্রুটি তিনি বরদাস্ত করবেন না।

সামনে রাখা দুধে আলতা র থালায় পা রাখলো মৃণালিনী, এত বড় বাড়ির এত লোকজন দেখে ভয় পেয়ে গেছে ও, বুঝতে পারছিলেন কুমুদ, কিন্তু বড় জা কে এড়িয়ে বউয়ের ভয় ভাঙ্গানোর সাহস তাঁর নেই। বিয়ে হয়ে আসা ইস্তক বড় জায়ের দাপটে কুঁকড়ে থাকেন তিনি, বৌদির ওপর অগাধ আস্থা তাঁর স্বামীর, বৌদির বিরুদ্ধে কোনো কথাই তিনি কোনোদিনও শোনেন নি আজ পর্যন্ত। তাই ছেলের দিকে তাকালেন তিনি, ছেলে সৌমসুন্দরের সঙ্গে খুব সুন্দর একটা বোঝাপড়া আছে তাঁর, ছেলে তাঁর চোখের ইশারা বুঝতে পারে।

সরমা, তোর বৌদি কে ঘরে নিয়ে যা,

মায়ের ইশারা বুঝতে পেরেই বোন কে বললো সৌম্য, বিরক্তি তে মুখ কুঁচকে তাকিয়ে থাকলেন পারুল বালা, বড্ড নির্লজ্জ আজকালকার ছেলে গুলো, এদের কাছেই যেনো রাশ কিছুটা আলগা হয়ে যাচ্ছে তাঁর। প্রথম থেকেই শক্ত হাতে ধরতে হবে মৃণালিনী কে, একে তো কলকাতার মেয়ে, তায় শিক্ষিতা, দেখেই মনে হচ্ছে বিয়ের একদিনের মধ্যেই সৌম্য কে হাত করে ফেলেছে!

এই জন্যেই কলকাতার মেয়ে কে বাড়ির বউ করার একটুও ইচ্ছে তাঁর ছিলো না। এই বিয়েটা কে আটকাতে যথেষ্টই চেষ্টা করেছিলেন তিনি, কিন্তু তাঁর দেবর আবার একটু পয়সাকড়ি বোঝে বেশি, তাই তাঁকে অনেক করে বুঝিয়ে মত আদায় করেছে সে। বরং সৌম্য অনেক ভালো ছেলে, সে নিজের পাত্রীর ব্যাপারে একটুও মাথা ঘামায় নি। সবটাই সে তার বাবা আর বড়মার ওপরেই ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু এখন তাকে মায়ের ইশারায় কথা বলতে দেখে বিরক্ত লাগছে পারুল বালার, বলে কলকাতার মেয়েরা অনেক ছলা কলা জানে, কি জানি ইনি আবার কি রকম হবেন!

তুমি ভেতরে যাও, তোমাকে ওকে নিয়ে ভাবতে হবে না,

দেওরপো র দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললেন পারুল বালা, সৌম্য আর কিছু বলার সাহস দেখালো না। যত নষ্টের গোড়া ওর মা, ছোটো জা এর দিকে তাকিয়ে মনে মনেই মুচকি হাসলেন তিনি, ছেলের সঙ্গে কুমুদ এর চোখের ইশারা তাঁর নজর এড়ায় নি।

সরমা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো, বড়মা দাদা কে বারণ করায় আর এগোতে পারছিলো না সাহস করে,

সরমা আজ কালরাত্রি ওকে তোর ঘরে নিয়ে যা, দেখবি যেনো সৌম্য ওঘরে না ঢোকে, যে দিকে তাকাবো না সেদিকেই অনাছিস্টি, আজকাল আবার লোকে ইশারায় কথা বলে,

বিরক্ত গলায় কথাগুলো বলেই চাবির গোছা সমেত আঁচলটা কাঁধের ওপর আওয়াজ করে ফেলে চলে গেলেন পারুল বালা, কার দিকে ইঙ্গিত করে কথাগুলো বলা সবাই বুঝতে পারলো, কাজের লোকেদের মধ্যে একটু মুচকি হাসি ছড়িয়ে পড়লো, মুখ নামিয়ে দ্রুত জায়গা ছাড়লেন কুমুদ, কাজের লোকেরাও জানে এই সংসারে তাঁর অবস্থান কোথায়!

এসো গো বৌদিদি, এইটে আমার ঘর, কেমন সাজিয়েছি বলো তো ঘর টা কে,

মৃণালিনী কে হাত ধরে নিজের ঘরে নিয়ে এসে দেখালো সরমা, এতক্ষনে শ্বাস ছাড়লো মৃণালিনী, সে যথেষ্ট বুদ্ধিমতি, এতক্ষন ধরে ঘটে চলা ঘটনা গুলো থেকেই এ বাড়িতে কার কি অবস্থান সেটা বুঝে নিতে একটুও সময় লাগেনি তার।

বেশ তো, খুব সুন্দর তোমার ঘর,

এতক্ষনে কথা বললো মৃণালিনী, ননদের ঘরে ঢুকে যেনো খানিক টা সহজ হতে পারলো ও। খাটের এক পাশে বসে সরমা র ঘরের প্রতিটা কোণ লক্ষ্য করছিলো ও, ওর নিজেরও গোছানো ঘর খুব পছন্দ, কলকাতার বাড়িতে ওর একটা নিজস্ব ঘর আছে, সেটাকে মনের মতো করে গুছিয়ে রেখেছে ও, মনে পড়তেই মন টা একটু খারাপ হয়ে গেলো, আর কি ওটা ওর ঘর থাকবে!

বৌদি দি তুমি একটু বসো, আমি আসছি একটু,

বলেই দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো সরমা, মৃণাল একাই বসে রইলো। লণ্ঠনের আলোর এতো ক্ষমতা নেই, যে সে রাতের নিকষ কালো অন্ধকার কে দূর করে! ভয় পাচ্ছিলো মৃণালিনী, কলকাতার আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ ছেড়ে এসে এই নিস্তব্ধতা যেনো গ্রাস করতে আসছিলো ওকে।

যেদিন থেকে সৌম্যর সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছে সেদিন থেকেই মন খারাপ ওর, এতদূরে বাবা কে একা ফেলে আসতে একটুও ইচ্ছা ছিলো না মৃণালিনীর। কিন্তু কপালের লিখন খন্ডায় কে! তাই কলকাতা ছেড়ে পা দিতে হলো এই অজ পাড়াগাঁয়ে।

স্বাধীনতার পরে পেরিয়ে গেছে প্রায় সতেরো আঠেরো বছর, এখনও বিদ্যুৎ এসে পৌঁছায় নি এখানে! কলেজে আই এ পড়তে পড়তে বিয়ে ঠিক হবার পরে, সে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলো, কিন্তু বাবা এতো ভালো পাত্র হাতছাড়া করতে চাননি। মেয়েকে বলেছিলেন, তিনি মৃণালের পড়াশুনা চালিয়ে যাবার কথা বলবেন শ্বশুর মশাই এর সঙ্গে, তাই অনেকটা নিমরাজি হয়ে ছিলো মৃণাল। কিন্তু এখানে এসে, এখানকার পরিবেশ দেখে সে আশা ছেড়েছে এখন।

পরিবার টি যথেষ্টই গোঁড়া, বাড়ির ছেলে কে কলকাতায় তাঁরা পড়তে পাঠিয়েছেন বটে, কিন্তু নিজেদের মনের গোঁড়ামি কতটা দূর হয়েছে সেটা বোঝা দুষ্কর। বিশেষ করে পারুল বালা যে তার পড়াশুনা চালানোর অন্তরায় হয়ে উঠতে পারেন সেটা সে ভালোই বুঝতে পারছিলো। তাই নতুন শ্বশুরবাড়িতে পা দিয়েই মন টা খারাপ হয়ে গেলো মৃণালের।

এতটা রাস্তা গাড়ি করে এসে যথেষ্টই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো মৃণাল, কিন্তু এই মুহূর্তে শুয়ে পড়ে বিশ্রাম নেবার কথা একটুও ভাবতে পারছে না সে। সেই যে গিয়েছে সরমা এখনও আসেনি, কিন্তু এই অন্ধকারে অচেনা জায়গায় কাকেই বা ডাকবে ও!

খুব খিদে পেয়ে গেছে নিশ্চয়ই? এসো খেয়ে নাও,

গা ভর্তি গয়নায় ঢাকা, মাথায় ঘোমটা টানা, হাসি মুখের ছোটো খাটো কুমুদ খাবারের থালা হাতে ঢুকে এলেন ভেতরে, পেছন পেছন লন্ঠন হাতে সরমা। ওদের দেখে যেনো প্রাণ ফিরে পেলো মৃণালিনী। সদা হাস্য মুখ শাশুড়ি কে দেখে নিজের হারিয়ে যাওয়া মায়ের কথা মনে পড়লো মৃণালের, আজ মা থাকলে এরকমই বয়সের হতেন নিশ্চয়ই! নিজের অজান্তেই প্রথম দর্শনেই মৃণালের মনের মধ্যে জায়গা করে নিলেন কুমুদ! আর একটু হলেও যেনো মন খারাপটা কেটে গেলো মৃণালের।

উকিল শ্যাম সুন্দরের পয়সাকড়ি যথেষ্ট আছে, এক মাত্র ছেলেকে কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন ওকালতি পড়ানোর জন্য, আশা ছিল ছেলে তাঁর কাছেই থেকে ওকালতি করবে, কিন্তু তাঁর ইচ্ছেই জল ঢেলে ছেলে যখন ওকালতি পড়া ছেড়ে, কলেজে ভর্তি হয়ে অধ্যাপক হবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো তখন যথেষ্টই মনঃক্ষুন্ন হয়ে ছিলেন।

কিন্তু একটুও বুঝতে দেননি সেটা, ছেলে কে কোনমতে পড়াশুনা শেষ করিয়েই গ্রামে ফিরিয়ে আনবেন ভেবে রেখেছিলেন। তার জন্যেই বিয়ের ব্যবস্থা করছিলেন ছেলের তলে তলে, বুদ্ধিটা তাঁর বৌদি পারুল বালা র দেওয়া, ছেলে কে বিয়ে দিয়ে বউ নিয়ে আসতে পারলেই সব জারিজুরি শেষ। নতুন বউয়ের আকর্ষণ কাটিয়ে কেমন করে ছেলে কলকাতায় পড়ে থাকে তিনিও দেখবেন!

কিন্তু ছেলে যে খুব বোকা নয় সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য হচ্ছিলো তাঁর কাছে। ছেলে যখন এক কথায় বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলো তখন খুব খুশি হয়ে ছিলেন তিনি, তাঁর ধারণা ছিলো এত সোজা হবে না সব কিছু। শুধু একটাই শর্ত ছিল তার, মেয়ে শিক্ষিতা হতে হবে,তো সেটুকু উনি মেনেই নিয়েছিলেন, শিক্ষিতা হলেও বা কি সে তো আর জজ, ব্যারিস্টার হতে যাবে না। থাকবে তো ঘরের বউ হয়ে এই অজ পাড়া গাঁয়েই, দুদিনেই সেই শিক্ষা ভুলে যেতে তার সময় লাগবে না।

কিছুদিন পরেই একজন একটি সম্বন্ধ নিয়ে হাজির হলো কলকাতা থেকে, তিনি উকিল মানুষ লাভ ক্ষতির হিসাব না কষে একটি পাও বাড়ান না কোথাও। বৌদি পারুল বালা কলকাতার মেয়ে বিয়ে দিতে একটুও ইচ্ছুক ছিলেন না, বড্ড নাক উঁচু হয় তারা, কিন্তু শ্যাম সুন্দর ভেবে দেখলেন বড়লোক বাবার একমাত্র কন্যা, কলকাতায় জমি বাড়িও যথেষ্ট আছে সবই একদিন ছেলের বকলমে তাঁরই প্রাপ্য হবে, তাই রাজি হয়ে গেলেন এক কথায়।

স্ত্রী কুমুদ কে কোনো দিনও সেই ভাবে ঘরের গৃহকর্ত্রী র ভূমিকা দেননি তিনি, সেই ভূমিকায় তিনি পারুল বালাকেই রেখেছেন বরাবর। কুমুদ দুঃখ পেয়েছে, মনের মধ্যে অনেক ক্ষোভ জমা আছে তার, সে সব খোঁজ যে তাঁর মতো বিষয়ী লোক রাখেন না তা নয়, কিন্তু তিনি স্বার্থ ছাড়া কোনোদিন কিছু করেন না।

পারুল বালার বাপের বাড়ির দিকের আত্মীয়স্বজন কম নেই, তাঁর ভাইপোরা দাদার মৃত্যুর পর পিসির সম্পত্তিতে ভাগ বসাতে চাইছিলো, পিসি কে নিয়ে গিয়ে রাখতে চেয়েছিলো তাদের বাড়িতে। বড়লোক পিসি কে রাখা নিয়ে রীতিমত কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছিল তাদের। বৌদি বাপের বাড়ি চলে গেলে যে দাদার অংশের ভাগ তাঁর হাতছাড়া হবার সুযোগ রয়েছে তা তিনি ভালোই জানতেন। তাই বৌদিকে বাড়ির কত্রী বানিয়ে রেখে সেই যাওয়া আটকেছেন তিনি। পারুলবালা নিজেকে গিন্নি ভেবে খুশি থাকেন, বাপের বাড়ি র আশ্রয়ে ফিরে গিয়ে কারোর গলগ্রহ হয়ে থাকতে হয়নি এটা তাঁর কাছে অনেক পাওয়া।

তা বলে যে কুমুদ কে তিনি ভালোবাসেন না তা নয়, শত হলেও কুমুদ তাঁকে পুত্র সন্তান উপহার দিয়েছে, তাই তাঁর কদরই আলাদা। কত্রীর আসন না দিলেও কুমুদ কে শাড়ি, গয়নায় মুড়ে রাখেন তিনি। মাসে একবার করে স্যাকরা আসে বাড়িতে, কুমুদ তাঁর পছন্দের গয়না নিজের ইচ্ছে মত পছন্দ করেন তিনি দাম মেটান এক কথায়, কোনো দিনও না বলেন না।

যাইহোক না কেন সে গয়না তো আসলে তাঁর সঞ্চয়ের সোনাই বাড়ায়, সে সব নিয়ে কুমুদ তো আর স্বর্গে যাবেন না! পারুল বালা বিধবা মানুষ তাঁর পেছনে এই খরচ নেই, যদি থাকতো তাহলে হয়ত একটু মুশকিলই হতো তাঁর কারণ সেই গয়নায় আবার বৌদির ভাইপো দের ভাগের একটা সম্ভাবনা থাকতো! দুজন নারীই তাঁদের প্রাপ্য নিয়ে খুশি থাকেন, তাঁরা কোনোদিনই বোঝেন না, আসলে তাঁদের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত হয় সেই পুরুষের হাতেই, এই সমাজ ব্যবস্থায় আসলে তাঁরা দুজনেই একজনের হাতের খেলার পুতুল মাত্র।

এহেন উকিল বাপের বুদ্ধি কেও টেক্কা দিলো ছেলে সৌম্য, সে যে বুদ্ধিতে বাপ কা বেটা, সেটা যখন শ্যাম সুন্দর টের পেলেন তখন সব কিছু তাঁর হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। বাবার কথার একটুও অবাধ্য না হয়ে, বাবার পছন্দ করা পাত্রীকে যখন সে বিয়ে করতে রাজি হলো এক কথায়, তখন শ্যাম সুন্দর একটুও কিছু বুঝতে পারেন নি।

ভুল ভাঙলো বিয়ের রাতে, যখন শ্বশুর মশাই কে স্যার বলে সম্বোধন করলো ছেলে। যে ভদ্রলোক সম্বন্ধ নিয়ে এসেছিলেন, তিনিও এত সুচারু ভাবেই কাজ সম্পন্ন করেছিলেন যে তাঁর ঠিকানা যে তাঁর ছেলেরই দেওয়া সেটা একটুও বুঝে ওঠা সম্ভব হয় নি তাঁর পক্ষে। কিন্তু মেয়ের বাপের সম্পত্তি টা তো আর মিথ্যে নয়, তাই লাভ ক্ষতির হিসেবে পাল্লা তাঁর দিকেই ভারী বলে এই ছোট্ট মূর্খামি টা আর কারোর কাছেই প্রকাশ করলেন না তিনি। আর তাঁর ছেলে তাঁর মতো উকিল কে ঘোল খাইয়েছে এটা জন সমক্ষ্যে স্বীকার করতেও তাঁর বাধছিল বৈকি! তাই কোনো রকম গোলমাল ছাড়াই নির্বিবাদে শ্বশুরবাড়িতে পা দিলো মৃণালিনী।
ক্রমশ