#অনুবদ্ধ প্রণয় 💛
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ০২
‘মিস. ওহ্ স্যরি মিসেস.? মিসেস ইয়ানাত? নাকি মিসেস. তাহমিদ? কোনটা বলে ডাকব? নিজেই তো কনফিউশানে আছি।’
কারো শীতল গম্ভীর কন্ঠে কেঁপে উঠলাম খানিকটা। নড়ে চড়ে বসলাম। মাথা নিচু করেই রইলাম। এই মুহুর্তে ভীষণ রাগ হচ্ছে লোকটার উপর। এমনিতে বাবা আর দাদুর উপর রাগ জমে আছে তার উপর তার এসব ত্যাড়া কথা! কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। সে এবার আমার সামনে এসে বিছানার পাশে থাকা ছোট টেবিলে ‘ঠাস’ করে বারি মেরে বলল, ‘ওহ্ হ্যালো আমি তোমাকে বলছি। বয়রা নাকি?’
এবার মাথা উঠিয়ে বললাম, ‘জ্বি নাহ্। আমি সব শুনছি।’
তিনি আবারো দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘এই মেয়ে! তুমি এখানে বসেছ কেন? উঠো! উঠো বলছি!’
তাজ্জব হলাম, ‘আজব! এখানে কেন বসেছি মানে? তা ছাড়া এভাবে কথা বলছেন কেন? আর আজ আমাদের বিয়ে হয়েছে ভুলে গেছেন? আর এই মেয়ে বলছেন কেন? আমারো একটা নাম আছে। তা ছাড়া আমি আপনার বউ। সুন্দর ভাবে ডাকবেন।’
একটু পর বুঝতে পেরে এবার নিজেই বোকাবনে গেলাম। এ কী বললাম আমি? তা-তার বউ? ইয়াক ইয়ানাত এটা কী বললি তুই? জিহ্বায় কামড় বসালাম। তিনি তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে ফেললেন, ‘হোয়াট? কী বললে তুমি? আমার বউ? কী মনে করেছ? আমাকে বিয়ে করেছ বলে আমার বউ হয়ে গেছো?’
‘দেখুন আপনি এভাবে আমার সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। তা ছাড়া আপনি জানতেন ইফা আপু অন্য কাউকে ভালোবাসে তাহলে কেন বিয়ে করতে গেলেন?’
‘বাবা মা জোড় করে বিয়ে ঠিক করেছিল ইউ নো! এদিকে আব্বু আম্মু আমায় জোড় করছিল অন্য দিকে ইফাকে ওর বাবা মা। তাহলে?’
‘তো এতে আমার দো’ষ কোথায়? আমায় কেন এমন করছেন? আমি তো আপনার কোন ক্ষ’তি করিনি। তা ছাড়া এই বিয়েতে আমারো মত নেই। বাবা আমার লাইফ টা হেল করে দিল শিট!’
আমি বিরক্ত হয়ে অন্য দিকে ফিরলাম। রাগে মাথার তার ছিঁ’ড়ে যাওয়ার উপক্রম। তার উপর মশাইয়ের এসব ঘ্যানঘ্যানানি। হঠাৎ কারো ধামকি কন্ঠ শুনে কেঁপে উঠলাম,
‘এই মেয়ে শুনো। বিয়ে করেছি ঠিক আছে। কিন্তু আমার মনে তোমার কোন স্থান নেই। বাবার কথায় করতে হয়েছে। নাম মাত্র স্বামী স্ত্রী আমরা। আমি আমার মতোই থাকব। আমার কাছ থেকে কখনো স্ত্রীর অধিকার চাইতে আসবে না। বুঝেছ তুমি?’
ভেংচি কেঁটে বললাম, ‘আমার বয়েই গেছে আপনার স্ত্রী হতে। আপনিও শুনে রাখুন। আমার থেকে কখনো স্বামীর অধিকার আশা করবেন না। দাদুর সম্মান বাঁচাতেই এই বিয়ে করতে হলো। নয়তো আমার কোন প্রয়োজন নেই আপনার মতো বদমেজাজি মানুষকে বিয়ে করার।’
তাহমিদ ভীষণ রেগে গেলেন। রাগে তার চোখ, কপাল ও কানের পাশে থাকা রগটা দৃশ্যমান হলো। দাঁতে দাঁত চেঁপে এগিয়ে এসে হাত চেঁপে ধরে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললেন, ‘ইউ রাবিশ। স্টুপিড ডাফার গার্ল। হাউ ডেয়ার ইউ? তুমি আমার সঙ্গে, তাহমিদ ইরফান চৌধুরীর সঙ্গে এভাবে কথা বলছ? দম কত তোমার মাঝে? আমার সঙ্গে লড়তে আসছ? ইউ লিটল স্টুপিড! ফার্দার যদি এভাবে আমার সঙ্গে গলা উঁচিয়ে কথা বলো তাহলে অনেক বড় ক্ষ’তি হয়ে যাবে তোমার বলে দিচ্ছি।’
ভীষণ জোড়ে চেঁপে ধরায় নেত্রপল্লব বেয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। ভাঙা কন্ঠে বললাম, ‘হাত ছাড়ুন আমার লাগছে।’
তিনি কিছুটা ইতস্তত হলেন। হাত ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালেন। আমি বললাম, ‘এখানে এসেও শান্তি পেলাম না? বাবা আপনার কারণেই আজ প্রথম আমায় মে’রে’ছে। সবার কথায় আমি আমার সব ছে’ড়ে এখানে এসেছি৷ আর আপনিও আমায় কষ্ট দিচ্ছেন? কেমন মানুষ আপনি?’
তাহমিদ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু ভাবলেন। অনুশোচিত কন্ঠে শুধালেন, ‘আমি চাই নি তোমাকে আঘাত করতে। কিন্তু…’
‘কিন্তু কী?’
কিছু বললেন না উনি। চেয়ে রইলে অপলক আমার দিকে। আমি আবারো প্রশ্ন করলাম, ‘চুপ করে আছেন কেন? বলুন!’
তিনি কিছু বলেন না। কিছুক্ষণ নিষ্পলক চেয়ে থেকে আওড়ালেন, ‘রাত অনেক হয়েছে। ঘুমিয়ে পড়ো।’
বাণীটি ছুঁ’ড়ে আর এক লহমা ব্যয় করলেন না তাহমিদ। ব্যালকনির দিকে চলে গেলেন। তাজ্জব হলাম আবারো। এই বললো বিছানা থেকে উঠো তো এই বলল ঘুমিয়ে পড়ো? আজব তো! গিরগিটি নাকি যে রঙের মতো মত বদলায়? থাক যেখানে যাক আমার কী?
ওয়াশরুমে যেতে হবে। চেইঞ্জ করতে হবে। কিন্তু.. আমি তো কোন কাপড় আনিনি? বাহিরেও যেতে পারব না এখন। কী করি? অজান্তেই তার কাভার্ডে হাত রাখলাম। খুলতেই কিছু শাড়ি দেখতে পেলাম। আর কিছু থ্রি-পিস। কিন্তু.. এসব এখানে কেন? এখানে কী অন্য কেউ থাকে নাকি? আর খুব যত্নেই সাজানো আছে। কিন্তু এগুলো কার?
এসব ভাবনা একপাশে ফেলে একটা থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চেইঞ্জ করে আসলাম। শুয়ে পড়লাম বিছানায়। কিন্তু ঘুম আসছে না। একবার এদিকে ফিরছি তো একবার ওদিক। আচ্ছা উনি কী ঘুমুবেন না? ব্যালকনিতে কী করছেন?
কৌতুহল জাগল। উঠে বসলাম। পুরো রুম আঁধার। ধিমিধিমি পায়ে এগিয়ে গেলাম ব্যালকনির দিকে। তিনি রকিং চেয়ারে বসে আছেন হেলান দিয়ে। হাতে কিছু একটা অবলোকন করতে পারছি। উনার হাতে ওটা কী? তিনি তা গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। আর কিছু যেন বলছেন! ভ্রু কুঁচকে বললাম, ‘এই যে! আপনি এখানে কী করছেন?’
তিনি চমকে উঠলেন। দ্রুত হাত নামিয়ে জিনিস টা লুকিয়ে ফেললেন। সন্দেহ হলো। তিনি কিঞ্চিৎ রেগে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি এখানে কী করছো?’
‘এমনি এসেছি। ঘুমুবেন না?’
তিনি আবারো হেলান দিয়ে বসলেন। চোখ বুজে বললেন, ‘আমার চিন্তা তোমাকে করতে হবে না। যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো।’
‘এভাবে এখানে ঘুমাবেন? আর আপনার হাতেই বা ওটা কী ছিলো?’
‘তোমাকে এত কিছু নিয়ে ভাবতে আমি বলিনি। যাও!’
মুখ গোমড়া হয়ে এলো। মুখ ভেংচি দিয়ে আবারো বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। এপাশ উপাশ করতে করতে কবে যে চোখ লেগে এলো বুঝতেই পারলাম না।
__________
আকাশে আঁধফালি চাঁদ বিরাজমান। অগণিত তারায় ভরপুর নীলিমার বুক। ছাদে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে অনন্ত মহাকাশ অবলোকনে ব্যস্ত রমণী। কিয়ৎক্ষণ বাদে কারো উপস্থিতি জানান দেয় মস্তিষ্কে। পাশ না ফিরেই বলল, ‘এত কিছু আমার জন্য কেন করছেন ইবনান ভাইয়া?’
ইবনান হাসে। আকাশপানে মুখে করে বলল, ‘আমি ভালোবাসায় বিশ্বাসী। তা ছাড়া তুই কষ্ট পাবি এটা আমি কী করে দেখতে পারি ইফা? আমার যে কারো কষ্ট সহ্য হয় না৷’
‘আজ আমার জন্য ইয়ানাতকে অন্যের কাছে তার মতামত বিহীন তুলে দিতে হয়েছে। তা ছাড়া তাহমিদ ভাইয়া এখনো ওই ঘটনার ট্রমা কাঁটিয়ে উঠতে পারেন নি। জানি না ইয়ানাতের সাথে কী হয়।’
‘এসব ভাবিস না ইফা। তাহমিদ এতটাও খারাপ না যে ইয়ানাত কে কষ্ট দিবে। দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে।’
‘হুম।’
‘শোন। আজ লাস্ট নাইট কোচে যাবি তোরা। আমি টিকিট কেটেছি। ফাহাদকে কল দিয়ে বল দ্রুত চলে আসতে। এখন সবাই ঘুম। এই সুযোগে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে হবে।’
‘আচ্ছা। কিন্তু.. ফোন নেই আমার কাছে।’
‘আমার তো আছে। নে!’
ইফা কিছুক্ষণ টেপাটেপি করে ফোন কানে লাগাল। উপাশের ব্যক্তিটাকে সব ঘটনা বলে ফোন ডিসলাইন করল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল বধুরূপী ইফা। ইবনান বলল, ‘কী? ও কী বলেছে?’
‘আঁধ ঘন্টার মাঝেই আসছে।’
‘তাহলে চল আমরা স্টেশনে চলে যাই।’
‘জ্বি।’
চুপি চুপি দু’জন সবাইকে ঘুমে মগ্ন রেখে বেরিয়ে গেল। রাতে খুব একটা গাড়ি চলে না। একটা অটোতে উঠে দু’জন রওনা দিল রেল স্টেশনে।
__________
রেল স্টেশনের বেঞ্চিতে পাথরের ন্যায় বসে আছে ইফা। পাশে ইবনান। ইফার চোখ বেয়ে পড়ছে অনর্গল অশ্রুধারা। ইবনান তার কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘প্লীজ এভাবে কাঁদিস না ইফা। আমার ভালো লাগছে না।’
ইফা নিরুত্তর! এ কী বলে গেল ফাহাদ? তার জীবন টা কী এমনই হওয়ার কথা ছিল? কেন এমন হলো? কেন?
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]