অনুবদ্ধ প্রণয় পর্ব-০৩

0
580

#অনুবদ্ধ প্রণয় 💛
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ০৩

উদ্দেশ্যহীন ভাবে হেঁটে চলেছে ইফা। ফাহাদ যে তার পুরো জীবনটাই বদলে দিল। এখন কী করবে সে? সব কী অনর্থক হয়ে গেল?

কিছু প্রহর পূর্বে..

রেল স্টেশনে এসে ফাহাদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল ইফা আর ইবনান। ট্রেনের সময় হয়ে এসেছে। কিন্তু ফাহাদ আসে না। ইফা ইবনানের ফোন দিয়ে তার নাম্বারে ফোন দিল। ফোনও রিসিভ করে না। এর মধ্যেই ট্রেন ছেঁ’ড়ে দেয়। ইফা হতাশ হয়ে পড়ে। ইবনানও কিছু বুঝতে পারছে না। ট্রেন ছাঁ’ড়ার কিয়ৎক্ষণ পরেই কল এলো ইবনানের ফোনে। ইফা রিসিভ করে উত্তেজিত গলায় বলল, ‘এসব কী ফাহাদ? কোথায় তুমি? এখনো আসছ না কেন? ট্রেন ছেঁ’ড়ে দিয়েছে। আজ তো বোধহয় আমাদের যাওয়াই হবে না।’

উপাশ থেকে শুধু একটা কথাই ভেসে এলো, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারব না ইফা। আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আর আমি চাইও না তোমাকে বিয়ে করতে।’

ইফার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। অবিশ্বাস্য স্বরে বলল, ‘এসব কী বলছ ফাহাদ? তুমি ঠিক আছো তো?’

‘আমি একদম ঠিক আছি ইফা। আর যা বলছি সব সত্য। তুমি ফিরে যাও। আর যার সঙ্গে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তাকে বিয়ে করে নাও।’

‘ইউ আর অ্যা লাইয়ার ফাহাদ! তুমি আমাকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে বিয়ের আসর থেকে তুলে এনেছ। সবার কাছে এখন প্রকাশ পেয়েছে যে আমি পালিয়েছি।
কেন এমন করলে? তুমি আগে বললে না কেন? কেন বললে না? আমায় এতদূর কেন আনলে বলো!’

‘তোমার সঙ্গে এত ফালতু কথা আমি বলতে পারব না ইফা। গুড বায়!’

কট করে ফোন কেঁটে দিল ফাহাদ। ইফা হতভম্ব। সাথে ইবনানও। কার জন্য এতদূর এলো ওরা? আর এখন সেই বলছে..

‘ইফা! ইফা দাঁড়া! প্লীজ দাঁড়া!’

কিন্তু ইফা দাঁড়ায় না। এলোমেলো ভাবে হেঁটে চলেছে। মরিচীকার পেছন ছুটেছে এতদিন সে। কিন্তু শেষে.. ইবনান তার কাছাকাছি পৌছাল। তাকে থামিয়ে বলল, ‘কী হয়েছে? এমন করছিস কেন তুই? ও তোকে ধোঁকা দিল তাহলে এর শোকে কেন মাতোয়ারা হবি বল?’

ইফা হঠাৎই কেঁদে ইবনান কে জড়িয়ে ধরল। ইবনান থমকে গেল। ইফা কান্নামিশ্রিত গলায় বলল, ‘আমার সঙ্গেই কেন এমন হলো ইবনান ভাই? ও আমায় ধোঁকা দিয়েছে? কী কমতি ছিল আমার মাঝে? আমি কী দেখতে অসুন্দর? বলুন!’

ইবনান বলল, ‘না ইফা। তুই খারাপ না। না দেখতে না শুনতে। প্লীজ এসব নিয়ে ভাবিস না। ও তোকে পেয়েও হারাচ্ছে। তুই কেন কাঁদবি ওর জন্য? যেখানে ওই তোর পরোয়া করেনা?’

‘তাহলে কী করব ইবনান ভাইয়া?’

‘বাসায় ফিরে চল।’

‘কী বলছেন এসব? কোন মুখে যাব ওই বাড়িতে?’

‘মেয়ে মুখে। তুই ওই বাড়ির মেয়ে।’

ইফা ইবনানকে ছেঁ’ড়ে বলল, ‘স্যরি আসলে.. বুঝতে পারিনি।’

‘না সমস্যা নেই। চল।’

‘আমি যাব না ইবনান ভাই।’

‘কেন? তাহলে কোথায় যাবি?’

‘জানি না। হয়তো উদ্দেশ্যবিহীন কোন রাস্তায়। যেখানে কেউ নেই।’

‘ঠাঁটিয়ে একটা চ’ড় মা’রব বেয়াদব। খুব কথা শিখেছিস না? চল বাসায় চল।’

‘না ভাইয়া প্লীজ।’

‘তুই যাবি নাকি মা’র খাবি?’

ইফা নিরুপায় হয়ে হাঁটতে লাগল ইবনানের সাথে।
__________

‘তুই? তুই নির্লজ্জ কোন সাহসে এই বাড়িতে পা রেখেছিস বল? তোর লজ্জা করল না এত কিছুর পর ফিরে আসতে?’

ইফার বাবা রে’গে উক্ত বাণীটি ছুঁ’ড়ে দিল ইফার উদ্দেশ্যে। ইফা মাথা নিচু করে রইল। ইবনান পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ইফার বাবা বলল, ‘ইবনান! তুই ওকে কোথায় পেলি?’

ইবনান আমতা আমতা করে বলল, ‘পথেই পেয়েছিলাম আঙ্কেল।’

‘পথে? পথে কী করছিল বিয়ের আসর ভেঙে? জানিস কত অপমানিত হতে হতো আমাদের? শুধু তোর জন্য। আগে কেন বলিস নি যে তুই রাজি না?’

ইফা নিচুস্বরে বলল, ‘তোমাদের হাসিমুখ দেখেই তো রাজি হয়েছি। কষ্ট দিতে চাইনি।’

‘তাহলে বিয়ের আসর ছেঁ’ড়ে পালালি কেন?’

‘তখন বুঝতে পারিনি বাবা। যে ভালোবাসার মূল্য টাই বেশি।’

‘চুপ কর। তোর জন্য ইয়ানাতকে তোলে দিতে হলো ওদের কাছে। ওকে বিয়ের আসরে বসাতে হলো তাহমিদের সাথে।’

‘কেন? আট বছর আগেও তো তুলে দেওয়ার প্লান ছিল। তাহলে সেটা কেন ভুলে গেলে?’

ইফার বাবার সাথে উপস্থিত সবাই চুপ। বিশেষ করে ইরহান সাহেব আর ইরা বেগম একে অপরের দিকে তাকায়। ইতস্তত দেখাচ্ছিল তাদের। ইফা আবারো বলল, ‘কী হলো? চুপ করে গেলে কেন তোমরা? কেন আট বছর আগে এই প্লান করে রাখোনি? তাহলে আজ কেন সেই প্লান ভেঙে আমায় তাহমিদ ভাইয়ার হাতে তুলে দিচ্ছ বলো?’

ইরহান সাহেব বললেন, ‘দেখ ইফা। ওটা আট বছর আগের কথা। অতীতকে অতীত থাকতে দে। তা ছাড়া তাহমিদই তো এই প্লান ভেঙে দিয়েছে। তাহলে কোন প্রশ্নই আসে না।’

‘কেন প্রশ্ন আসে না আঙ্কেল? আট বছর আগে করা প্লান টা এখন তো সম্পন্ন করেছ? তাহলে আমায় তো ধন্য করা উচিত তোমাদের। যে তোমার তৃষ্ণা মেটালাম। কেন এতে কী উপকার নয়?’

সবাই চুপ করে রইল। ইমদাদ মিয়া এবার মুখ খুলেন, ‘হ্যাঁ অন্যের উপকার করতে গিয়ে তো নিজেকে শেষ করলি। তোর বিষয়ে সবাই জানে। কে বিয়ে করবে তোকে?’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ। কে বিয়ে করবে তোকে? এসব জেনে কেউই আসবে না তোর জন্য।’

ইফা সহ্য করতে না পেরে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। সবাই মুখ ঘুরিয়ে এক এক করে চলে যেতে লাগল। রুমে বাকি রইল ইরা, ইমদাদ মিয়া আর ইবনান। ইবনান ইমদাদ মিয়াকে বলল, ‘দাদু। তুমি বলছিলে না? কেউ ইফা কে বিয়ে করবে না। ঠিক আছে। তোমাদের কথা মিথ্যে করলাম। আমি বিয়ে করব ইফাকে। দেখি কে আটকায়।’

ইরা বেগম বললেন, ‘এসব কী বলছিস তুই ইবনান? ইফা তোর বোনের মতো।’

‘হ্যাঁ বোনের মতো কিন্তু বোন না। আর তা ছাড়া তোমাদের এসব কথা নিতে না পেরে ও এমনিতে ডিপ্রেশনে চলে যাবে। এবার ওকে এভাবে দেখবে? নাকি শূন্যতা টা পূর্ণ করবে? তোমাদের হাতেই না হয় ছাড়লাম ওর আর আমার লাক।’

আর এক মুহুর্ত ব্যয় না করে ইবনান দ্রুত হন হন করে রুমে চলে গেল। ইরা আর ইমদাদ মিয়া নিরব দাঁড়িয়ে রইলেন। ইমদাদ মিয়া বললেন, ‘আকদ্ এর কার্যক্রম শুরু করতে বলো। কাল রাতেই।’

ইরা হতভম্ব, ‘ভেবে বলছেন তো চাচা জান?’

‘হ্যাঁ আমি ভেবেই বলছি। তা ছাড়া আমি চিনি ইবনান কে। এ ভুল কিছু করবে না। ইফাকে ওই সুখে রাখবে।’

‘ঠিক আছে। আমি ইরহানকে বলছি।’

‘শুধু ইরহানকেই নয়। সবাইকে বলো।’

‘জ্বি চাচাজান।’
__________

খুব ভোরে ঘুম ভাঙল। হাই দিয়ে উঠে বসলাম। চারপাশ অবলোকন করলাম। কাল রাতে কথা মনে পড়ল। দ্রুত উঠে ব্যালকনির দিকে গেলাম। ভোরের আলো ফুঁটতে আর বেশি বাকি নেই।
তাহমিদ রকিং চেয়ারে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পড়েছেন। ডাকতে নিলেও থামলাম। কাল রাতে হয়তো ঘুমুন নি। গায়ে সেই একি কালো পাঞ্জাবী। এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে চুল। আমি গিয়ে কাভার্ডে সাজানো সেই কাপড় গুলো থেকে একটা নতুন শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। গোসল করে শাড়ি পড়া নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়লাম। বাহিরে এখনো তেমন আলো ফুঁটেনি। বেরিয়ে এসে ইউটিউব দেখে শাড়ি পড়লাম কোনমতে। যদিও এতটা খারাপ হয়নি। ওয়াশরুমে গিয়ে ভেজা কাপড় গুলো ধুঁয়ে মেলে দিলাম। তারপর চুল গুলো খুলে মুছে নিলাম। তারপর মুখ ধুঁয়ে নিলাম। দরজা খুলে বেরিয়ে আসতে নিলেই হঠাৎ…
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]