#অনুবদ্ধ প্রণয় 💛
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ০৪
দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরে আছেন আমায় তাহমিদ। রাগে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ত্যাগ করছেন। রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছেন। বারংবারই তার এমন চেহারা দেখে ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে। তিনি দাঁতে দাঁত চেঁপে বললেন, ‘হাউ ডেয়ার ইউ? তুমি এই কাপড়, এই শাড়ি পড়ার সাহস কোথা থেকে পেলে?’
‘মানে? কাপড় পড়তে আবার সাহস লাগে?’
‘শাট আপ! এক্ষুনি চেইঞ্জ করো। আমি বলছি চেইঞ্জ করো। ওই কাপড় গুলোতে হাত দেবে না।’
‘কেন? কার ওই কাপড়গুলো?’
‘চুপ! একদম চুপ! আমার কথার উপর প্রশ্ন করছো? যাও এক্ষুণি চেইঞ্জ করো। যাও!!’
ধমকে উঠায় কেঁপে উঠলাম এক দফা। উনি এমন কেন করছেন। মিনমিন করে বললাম, ‘তা-তাহলে আমি কী পড়ব?’
‘আই ডোন’ট নো তুমি কী পড়বে। অ্যান্ড আই ডোন’ট কেয়ার ওকে? আজকের পর থেকে ওই কাপড়গুলোতে হাত দিবে না।’
আর এক মুহুর্ত সময় না নিয়ে তিনি হন হন করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন। কী হলো এটা? উনি এমন কেন করলেন? আর এই শাড়ি, এই থ্রি-পিস, এই টপ। এসব কার? আর এসব পড়তে পারব না কেন আমি? হুহ্! যত্তসব। পারব এত চেইঞ্জ করতে। এতই না পড়তে দিলে আগে আমায় কাপড় এনে দে। তেজপাতা কোথাকার।
__________
মাথায় ঘোমটা টেনে নিচে নেমে এলাম। এখনো মেহমানে ভরপুর ঘর। কিচেনে যেতেই দেখি কাজের মেয়ে আর তাহমিদের মা কাজ করছেন। আমি যেতেই উনি বললেন, ‘এই যে উঠেছ? তা এখানে কেন এলে? যাও যাও ওদের সঙ্গে গল্প করো।’
হেসে বললাম, ‘আরে কী বলছেন মা? গল্প করব কেন? আসুন আপনাকে হেল্প করি।’
‘উহু! আমাকে হেল্প করতে হবে না। যাও। যাও বলছি।’
জোর করে পাঠিয়ে দিলেন। সবাই এখনো ঘুম। তবে তাহমিদের বোন তাহমিনা উঠে পড়েছে৷ সে এইচএসসি দেবে।
তার রুমের দিকে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে মাত্র বিছানায় বসেছে। আমি নক করলাম, ‘আসব আপু?’
‘আরে ভাবী যে? আসো আসো।’
ভেতরে প্রবেশ করলাম। সে বসার ইশারা করলে বিছানায় বসলাম। তাহমিনা হঠাৎ চমকে বলল, ‘একি ভাবী! তুমি.. এটা পড়েছ?’
‘হ্যাঁ কেন? কী হয়েছে?’
‘কী হয়নি বলো? ভাইয়া দেখলে তোমার অবস্থা বেহাল করে ছাড়বে।’
‘কেন আপু কী হয়েছে? আর.. উনার কাভার্ডে ওই কাপড় গুলো কার ছিল? এই বাড়িতে কী আরো কেউ আছে? মানে অন্য কোন মেয়ে? তুমি ছাড়া।’
তাহমিনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘ছিল। কিন্তু এখন নেই।’
‘মানে?’
তাহমিনা চুপসে গেল, ‘ক-কিছু না ভাবী। তবে..’
‘তবে কী? কী লুকাচ্ছ?’
‘কিছু না তো ভাবী। কিছু না।’
সন্দিহান চোখে চেয়ে রইলাম। দু’জন গল্প জুড়ে দিলাম। বেশ ভালোই বন্ধুত্ব জমেছে দু’জনের মধ্যে।
_________
বেলা এগারোটা। এক দৃষ্টিতে জানালার দিকে চেয়ে আছে ইফা। শূণ্য দৃষ্টি। একটু বাদে দরজা খোলার আওয়াজ পেল। আস্তে করে সেদিকে তাকাল৷ ইরা আর তার মা আহিয়া। হাতে একটা ব্যাগ। সে মুখ ঘুরিয়ে আবারো জানালার দিকে দৃষ্টি রাখল৷ ইরা আর আহিয়া তার পাশে এসে বসল। আহিয়া বলল, ‘কী হয়েছে? তুই কী কেঁদেছিস?’
‘না তো আম্মু। কাঁদিনি।’
‘তাহলে? চোখ ফুলে আছে কেন?’
‘এমনি। ঘুমুইনি তাই।’
ইরা ব্যাগ টা খুলে একটা শাড়ি বের করল। তাকে দেখিয়ে বলল, ‘শাড়ি টা সুন্দর না?’
‘হুঁ!’
‘তোকে বেশ মানাবে ইফা।’
‘সত্যি?’
‘হুম।’
ইফা জোরপূর্বক হাসল। ইরা বলল, ‘আজ শাড়ি টা পড়ে রেডি থাকবি।’
ইফা ভ্রু কুঁচকায়, ‘কেন?’
আহিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘আজ তোর আকদ্ সম্পূর্ণ হবে। ইবনানের সাথে।’
‘কীহ্?’
‘হ্যাঁ।’
‘মানেহ? এসব কী বলছ খালামণি? ইবনান ভাইয়ার সাথে.. আমার আকদ্.. আমি কিছু বুঝতে পারছি না।’
‘তোকে কিছু বুঝতে হবে না। তুই শুধু রেডি হয়ে থাকবি। এবার তো অন্তত বলিস না যে তুই এই বিয়েতে রাজি না।’
ইফা কী বলবে বুঝতে পারে না। না বলবে? নাহ্ তা বলবে না। কেন ফাহাদ তো ঠিক’ই বিয়ে করে নিচ্ছে তাকে ছেঁ’ড়ে। তাহলে সে কেন কষ্টে ম’রবে? ইফা মাথা নিচু করে থাকে। আহিয়া বলল, ‘তুই রাজি আছিস মা? দেখ তুই রাজি না থাকলে আমরা জোর করব না সত্যি।’
ইফা চুপ করে রইল। ইরা বলল, ‘দেখ আমি জানি তুই ডিপ্রেসড। তুই কাউকে ভালোবাসলে বল। আমি চাচা জানকে রাজি করাব৷ সাথে ভাইজানকেও। কিন্তু যদি কাউকে ভালো না বাসিস বা আমাদের আগের করা প্লান টা সম্পূর্ণ করতে এই কাজ করে থাকিস তাহলে ওকে। তুই চাইলে এই বিয়েতে রাজি হতে পারিস। আর যদি কাউকে পছন্দ হয় তাহলে তোকে জোর করব না।’
ইফা এবারো চুপ করে রইল। ইরা আবারো বলল, ‘ইফা। এভাবে চুপ করে থাকলে তো হবে না তাই না?’
ইফা হঠাৎ বলে উঠল, ‘আমি রাজি খালামণি।’
আহিয়া আর ইরা বলে উঠল, ‘আলহামদুলিল্লাহ্।’
ইরা আর আহিয়া ব্যাগ টি রেখে রুম ত্যাগ করল। ইফা চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করল।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]