#অনুবদ্ধ প্রণয় 💛
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ০৫
ইফা আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে আবারো তাও আবার আমার ভাইয়ার সাথে! কথা টা শুনে দু’মিনিট স্থির হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
যখন শুনলাম আজই রাতে তাদের আকদ্ পড়ানো হবে এটা শুনে আরেকদফা ধাক্কা খেলাম। মানে? ইফা আপুর তো.. আরেকজনকে ভালোবাসতো৷ তাকে বিয়ে করতেই তো আমাকে এভাবে ফাঁসিয়ে গেল। আর এখন ভাইয়াকে.. তার মানে কী আপু ভাইয়াকে ভালোবাসতো? কিন্তু ইফা আপু তো ফাহাদ নামের কারো কথা বলেছিল। তাহলে?
একটু পর রুমে কেউ প্রবেশ করল। আমি এখনো একদৃষ্টিতে হাবার মতো ফোনের দিকে চেয়ে আছি। একটু পর তাহমিদের গলা শুনলাম, ‘কী সমস্যা? তুমি এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
হুশে ফিরতেই বললাম, ‘ইফা আপু…’
‘কী হয়েছে ইফার?’
‘ব-বিয়ে ঠিক হয়েছে।’
‘কীহ্? ইফা ফিরে এসেছে?’
‘ইফা আপু তো পালায় নি। আপনি জানেন না?’
‘মানে কী? ও পালায় নি?’
‘জ্বি নাহ্!’
তাহমিদের কপালে চিন্তা আর সন্দেহের ভাজ পড়ল। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, ‘আপনারাই তো সব প্লান করেছিলেন। তাহলে আপনিই জানেন না তা কী করে হয়?’
তাহমিদ বললেন, ‘সত্যি আমি জানি না। ইফা তো পালিয়ে যাবে বলেছিল। কিন্তু.. ও ফিরে এসেছে।’
‘ফিরে আসে নি। বেরিয়ে এসেছে।’
‘মানে?’
‘ইফা আপু পালায় নি। চিলেকোঠায় লুকিয়ে ছিল। আমাকে ভাইয়া ওখানে নিয়ে গেছিলো। কথা বলে জানলাম সে তার তার প্রেমিক কে বিয়ে করবে। কিন্তু.. এখন শুনছি যে.. ভাইয়ার সাথেই ইফা আপুর আকদ্ আজকে।’
‘কীহ্?’
‘হ্যাঁ।’
‘উফ গড এত অভিনয় করার কী দরকার ছিল? আর আমার লাইফ টাই বা হেল করার কী দরকার ছিল? কত সুন্দর একটা প্লান করেছিলাম। যে ইফা পালিয়ে যাবে। তারপর বিয়ে টা ভেঙে আমরা ফিরে আসব। কিন্তু তা আর হলো কই। তোমার ফ্যামিলি তোমার উপর চাঁপিয়ে দিল। ধ্যাত!’
‘মানে? ধুর কেন যে সে’দিন জেদ করে খালামণির সঙ্গে থেকে গিয়েছিলাম কে জানে। ধুর ধুর বিয়েতেই আসা উচিত হয়নি।’
‘হয়েছে হয়েছে। নিজের সাফাই গাওয়া বন্ধ করো।’
‘দেখুন আপনি কিন্তু বার বার আমাকেই দোষারোপ করছেন। এটা ঠিক না।’
তাহমিদ কিছু না বলে পরণের পাঞ্জাবীটা খুলে টি শার্ট গায়ে দিলেন। কিছু একটা জিজ্ঞাস করতে গিয়েও করলাম না। নিচে নেমে এলাম।
_________
গোসল করে বেরিয়ে আসতেই তাহমিদ আমায় দেখে রাগান্বিত হন। রেগে বললেন, ‘তোমাকে বলেছিলাম ওই কাপড় গুলোতে হাত দেবে না। তুমি তবু কেন পড়ছ?’
ভ্রু কুঁচকে বললাম, ‘কেন? আর তাহলে আমি পড়বই বা কী? আপনাদের ছেলেদের শার্ট প্যান্ট পড়ে ঘুরব নাকি আজব? তা ছাড়া এই কাপড় গুলো কার? পড়লে সমস্যা কী?’
তাহমিদ কোথা থেকে কয়েকটা থ্রি-পিসের বাঁধানো সেট এনে ছুড়ে মা’রলেন বিছানার দিকে৷ বললেন, ‘ফার্দার আমার কাভার্ডে হাত দেবে না।’
আর একমুহুর্ত ব্যয় না করে নিচে নেমে গেলেন হন হন। তাজ্জব বনে গেলাম। হচ্ছে টা কী আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। উনি.. এমন করছেন কেন? আর কাপড় গুলো কার আসলে? আর উনি ওসব নিয়ে এত সেনসিটিভ হচ্ছেন কেন?
না না এভাবে বসে থাকলে তো হবে না। জানতে হবে এসব বিষয়ে।
_________
তাহমিদের মা’য়ের দেওয়া একটা শাড়ি পড়ে তৈরি হচ্ছি। ইফা আপু আর ভাইয়ার আকদ্ এ দাওয়াত করা হয়েছে তাহমিদের পুরো ফ্যামিলিকে। যেহেতু তাহমিদের বাবা তাশরীফ ইরফান চৌধুরীর সঙ্গে আব্বু আর আঙ্কেলের ভালো বন্ধুত্ব আছে তাই না গিয়ে পারলেন না। বলতে গেলে তারা তিনজনই স্কুল লাইফে বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলেন। এখনও কম কী? আগের মতোই খুনসুটি আড্ডা আছেই।
তাহমিদকে এই মুহুর্তে কোথাও দেখছি না। সে কোথায়? সে কী যাবে না? না যাক এতে আমার কী? আমার তো ভালোই। কিন্তু বাজল এক ঝামেলা। আমি আর তাহমিদ বাদে বাকি সবাই মাইক্রো কারে যাবে৷ কিন্তু আমাদের যেতে হবে তাহমিদের ‘প্রাইভেট’ কারে। ইয়া আল্লাহ্! কী জ্বালায় পড়লাম।
আমি মা’কে বলেছিলাম, ‘ও আম্মু! প্লীজ আমি আপনাদের সাথে যাব।’
‘কেন? তুমি তাহমিদের সাথেই যাবে। তা ছাড়া সদ্য বিয়ে হওয়া স্ত্রী স্বামীকে ছাড়া যাবে এটা কেমন দেখায় বলো তো?’
‘প্লীজ!’
‘না। যাও যাও।’
তারা বহু আগেই বেরিয়ে গেছে। কিন্তু তাহমিদ শাওয়ার নিচ্ছে। এই রে! বাড়িতে আমি ছাড়া কেউই নেই। এখন কী করব? আমার ভাইয়ার আকদ্ এ আমি থাকব না এটা হয়? তাহমিদ কে বলব? কিন্তু কেন? আমি ওনাকে রিকুয়েস্ট করতে পারব না। কিন্তু না করেও তো উপায় নেই। রুমে আসলাম। ততক্ষণে তিনি শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। পরণে সাদা টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে আছেন। এই মুহুর্তে চুপ মুছছেন। একি তিনি কী যাবেন না? ইতস্তত করে বললাম, ‘এই যে আপনি কী বিয়েতে যাবেন না?’
তিনি ভাবলেশহীন ভাবে বললেন, ‘যাব। কিন্তু এখন না।’
‘এখন না? তাহলে কখন?’
‘রাতে।’
‘তো এখন কী দিন?’
‘শাট আপ! এত ঘাড়ত্যাড়া কথা কীভাবে বলো তুমি?’
‘তো কী বলব? কবে যাবেন?’
‘যখন কার্যক্রম শুরু হবে তখন।’
‘কীহ্? মানে.. যখন আকদ্ পড়ানো হবে ঠিক সেই টাইমে?’
‘জ্বি হ্যাঁ মহারাণী জি।’
কিছুক্ষণ অসহায়ের মতো চুপ করে রইলাম। তিনি নিজের কাজ করেই যাচ্ছেন। এবার বেশ আদুরে সুরেই বললাম, ‘এই যে, প্লীজ এখন চলুন না। আপনার জন্য আমার মজা কেন মাটি করব বলুন?’
‘তো যাও। তুমিই না হয় একটা গাড়ি ভাড়া করে চলে যাও।’
‘এসব কী বলছেন? তাহলে আমি আপনাকে বলতাম কেন?’
‘আমার সাথে যেতে হলে রাত করেই যেতে হবে।’
‘তাহমিদ সাহেব! প্লীজ চলুন না। প্লীজ প্লীজ। আমি আপনার সব কথা শুনব। প্লীজ চলুন?’
‘আচ্ছা? সব কথা শুনবে?’
‘জ্বি জ্বি শুনব।’
তাহমিদ হুট করে কাছে এসে চোখ ছোট ছোট করে বললেন, ‘যদি বলি আমাকে কিস করো। শুনবে?’
কর্ণকুহরে কথা টা বিশ বারের মতো ধাক্কা খেল। এই মুহুর্তে কী বললেন উনি? ছিঃ ছিঃ!
‘এসব ক-কী বল-ছেন আপনি?’
‘কেন? তুমিই না বলেছিলে। আমার সব কথা শুনবে?’
‘হ-হ্যাঁ ব-লেছিলাম কিন্তু.. এর সুযোগ নিয়ে আপনি.. এসব বলবেন?’
‘সে যাই বলি। তুমি কী বলেছিলে মনে আছে তো?’
‘হ্যাঁ।’
‘সো ওকে। নাও কিস মি।’
শীতল বেনামী অনুভূতি পুরো অঙ্গে স্পর্শ করল। উনি কী সত্যি পাগল হয়ে গেছেন? আমি কিছু না বলে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিনি এবার হাসতে হাসতে সরে এসে বললেন, ‘ঠিক আছে যাও। নিচে যাও আমি আসছি।’
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নিচে নেমে এলাম। বাপরে! কী গিরগিটিরে বাবা।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]