অনুবদ্ধ প্রণয় পর্ব-০৬

0
478

#অনুবদ্ধ প্রণয় 💛
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ০৬

এক কোণে বসে আছি। সামনেই তাহমিদ আর ভাইয়া হেসে হেসে কথা বলছে। আর একে অপরকে ‘তুই’ বলে সম্মোধন করছে। আচ্ছা এরা কী ফ্রেন্ড? আচারা আচরণ দেখে তো তাই মনে হয়।

কিন্তু ইফা আপু? তাকে তো একবারও দেখার সুযোগ পাইনি। আসার পর থেকেই নড়তে দিচ্ছেন না তিনি। কী হলো কে জানে এই লোকটার। কাল থেকে সকাল পর্যন্ত অদ্ভুদ বিহেভিয়ার করে গেছে। কোন খোঁজ খবর নাই আজ আবার আমাকে এদিক থেকে ওদিকে যেতে দিচ্ছে না। আসার আগে আবার বলে কিস্ করতে। ছিঃ ছিঃ কী হলো লোকটার?

এসব ভেবে ওদিকে তাকাতেই কাউকে দেখতে পেলাম না। চলে গেল নাকি? যাক আমার কী? দ্রুত উঠে যেতে নিলেই কেউ হাত টেনে ধরল। পাছে তাকাতেই চমকালাম। তাহমিদ চোখ রাঙিয়ে বললেন, ‘কোথায় যাচ্ছ?’

‘ই-ইফা আপুর কাছে।’

‘কেন?’

‘কেন মানে আজব? দেখা করব না?’

‘এখন করতে হবে না। পরে করো।’

‘এই যে আপনার হলো টা কী? আমাকে তো মুভমেন্টও করতে দিচ্ছেন না আপনি। আচ্ছা কী হলো বলুন তো আপনার?’

‘আমার কিছু হয়নি হয়েছে তোমার। তোমার বিষিয়ে ইবনানের কাছে অনেক শুনেছি। সে প্রায় বলে তোমার মতো দু’ষ্টু মেয়ে দুনিয়ায় দু’টো নেই। এখানেও এত মানুষের সামনে তিড়িং বিড়িং শুরু করেছ? না না এসব হবে না। এখন তুমি ছোট না বুঝলে?’

‘আরে আমি কোথায় তিড়িং বিড়িং করছি? প্লীজ আমায় ইফা আপুর কাছে যেতে দিন।’

‘সত্যি ওখানেই যাবে? নাকি আবার লাফালাফি শুরু করবে?’

‘আচ্ছা? আপনি আমাকে দেখেছেন কখনো লাফালাফি করতে?’

‘দেখেছি তো। অনেকবারই দেখেছি।’

‘মানেহ? কবে দেখেছেন? আমি তো কালই মাত্র আপনাকে দেখলাম।’

‘তোমাকে তো প্রথম সে ছয় বছর আগেই দেখেছি।’

‘হোয়াট!’

‘নো নো পিচ্চি মাথায় এত প্রেশার নিও না।’

‘আচ্ছা। প্লীজ যেতে দিন না। দেখুন আমি ভাইয়াকে বলে ব’কা খাওয়াবো আপনাকে।’

‘ওমা? বলে কী?’

‘জ্বি জ্বি এবার ছাড়ুন না।’

‘ওকে একটা শর্তে। লাফালাফি একদম করা যাবে না। আর এদিক ওদিক কোথাও যাবে না ডিড ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড?’

উপর নিচ মাথা দুলালাম৷ যার অর্থ হ্যাঁ। সে হাত ছেঁ’ড়ে দিতেই ভৌ-দৌড় দিলাম। পেছন ফিরে এক জোড়া হতবাক আঁখি নজরে এলো। হেসে উপরে উঠে গেলাম। কিন্তু? এর হলো টা কী? আর ছয় বছর আগে দেখল? মানে কী? মাথা কী গেছে? কালই তো ফার্স্ট দেখলাম তাকে। কাল আবার আমাদের বৌ-ভাত। আর আমরা এসেছি আকদ্। বিষয় টা কেমন যেন না?
__________

‘এসব কী দেখছি, কী শুনছি আপু? তোমাদের দু’জনের বিয়ে ঠিক হয়েছে?’

ইফা আপু আমার কথায় মাথা নাড়ায়, ‘হ্যাঁ রে ইয়ানু।’

‘মানে কী? তুমি আহাদ না ফাহাদ কাকে বিয়ে করবে বলেছিলে, তাকে না ভালোবাসো?’

‘বাসতাম। কিন্তু এখন না।’

‘মানে?’

‘ও আমাকে ধোঁ’কা দিয়েছে ইয়ানু। ও এমন তা কল্পনায়ও আশা করিনি।’

‘কী বলছো এসব আপু?’

‘হ্যাঁ রে। ও একটা ধোঁ’কা’বা’জ। ও কখনোই আমাকে ভালোবাসেনি।’

‘তো? ভাইয়ার সাথে বিয়ে ঠিক.. এসব কী করে হলো?’

‘জানি না। হঠাৎ খালামণি আর আম্মু এসে বলল ইবনান ভাইয়ার সাথে আমার আজ আকদ্ হবে।’

‘আর তুমি রাজি হয়ে গেলে?’

‘আর তাদের মন ভাঙতে চাই না ইয়ানাত।’

‘আর তোমরা আমায় ওই বদ লোকটার জালে ফাঁসিয়ে দিলে?’

‘বদ লোক? আচ্ছা ইয়ানাত তুই কী বিয়ে করতি না বল? চিরকুমারী রয়ে যাবি?’

‘না তা রয়ে যাব কেন? হ্যাঁ কিন্তু রয়ে যাব। এমন ব’জ্জা’ত লোকটাকে বিয়ে করার চেয়ে চিরকুমারী রয়ে যাওয়াই ভালো।’

‘চুপ! পাগল। কী বলছিস এগুলো?’

‘ঠিক’ই তো বলছি।’

ইরা বেগম আর আহিয়া বেগম রুমে ঢুকে বললেন, ‘ইফা আয়। ইয়ানাত ইফাকে নিয়ে আয়।’

সাথে আমাদের দু’জন কাজিনও এলো। ইফা আপুকে নিয়ে নিচে নামলাম। দু’জনের আকদ্ সম্পূর্ণ হলো।
__________

‘আপনি আমার জন্য এত কিছু কেন করছেন ইবনান ভাই? কেন? প্রথমত আমায় ফাহাদের জন্য রেলস্টেশনে নিয়ে গেলেন। এখন কটু কথা বাঁচাতে বিয়েতে রাজি হলেন?’

পূর্ণিমার আরো দু’দিন বাকি। চাঁদ টা অনেকাংশে বড় হয়েছে।
ইফার কথায় রহস্যময় হাসে ইবনান। বলল, ‘এ আর তেমন কিছু নয় ইফা। তোকে বাঁচাতে এত কিছু করছি না।’

‘মানে? অন্য কোন কারণ আছে বুঝি?’

‘আছে তো। বহু কারণ আছে। কিন্তু বলতে যে পারছি না এখন।’

‘কেন?’

‘সিক্রেট। হা তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ।’

‘গুরুত্বপূর্ণ আবার সিক্রেটও?’

‘হুম।’

‘তো কবে জানতে পারব?’

‘পারবি আস্তে আস্তে সব জানবি। এখন এসব নিয়ে না ভেবে লাইফ টা সেটেল কর। পড়াশোনায় মনোযোগ্ দে। কাল থেকে ভার্সিটি চলে যাবি।’

ইফা কেবল মাথা নাড়ে। ইবনান তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
__________

‘কেউ একজন আমাকে ব’জ্জা’ত বলেছিল।’

তাহমিদের কথায় বেশির চেয়েও বেশি চমকালাম। ব’জ্জা’ত? সে আবার কবে বললাম?

আকদ্ সম্পূর্ণ হওয়ার পর পরই ফিরে আসতে হলো সবাইকে৷ শাড়ি খুলে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে কেবল মুখ টা মুছছিলাম। ওমনি টেবিলে কম্পিউটার টেপাটেপি করতে থাকা তাহমিদ উক্ত কথাটি কর্ণকুহরে পৌছে দিলেন আমার। চমকে তার দিকে ফিরলাম, ‘মানে? কে বলল?’

কম্পিউটারে নজর রেখেই তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে যে রমণী মুখমন্ডল ওয়াইপিং এর কাজে আছে সে।’

এ কী? ইফা আপুকে বলার সময় শুনে নিল নাকি? এই রে! এ ওখানে গিয়েছিল?

‘কীহ? কী বলছেন এসব? আমি আপনাকে কবে ব’জ্জা’ত বললাম আজব?’

‘বলো নি?’

‘ন-না তো।’

‘তো তোঁতলাচ্ছ কেন?’

‘ক-কই ত-তোঁতলাচ্ছি?’

‘এই যে এখনো।’

ঢোক গিলে নিজের কাজে মনোযোগ দিলাম। এবার দেখলাম তিনি কম্পিউটার থেকে নজর সরিয়ে আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়েছেন। আবারো ঢোক গিললাম। হঠাৎ তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন। এগিয়ে আসলেন দু’কদম। তাকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে পিছিয়ে গেলাম। তিনি আবারো এগিয়ে এলেন। আমি আবারো পিছুলাম। একটা সময় পিঠ ঠেকল দেয়ালের সাথে। আর তার হাত ঠেকল আমার বাহুর পাশে দেয়ালে। তিনি তীক্ষ্ণ নজরে চেয়ে বললেন, ‘এমন ব’জ্জা’ত টাকে বিয়ে করার চেয়ে চিরকুমারী রয়ে যাওয়াই ভালো। এমন টা কে জানি বলেছিল? আচ্ছা? আমাকে বিয়ে করার চেয়ে চিরকুমারী রয়ে যাওয়া ভালো? তো? চিরকুমারী থাকার ইচ্ছা? করে দেব চিরকুমারী? চলো নাহয় কোর্টে গিয়ে ডিভোর্স দিয়ে দিলাম। তারপর কই যাবে? বাপের বাড়ি? কে রাখবে ওখানে তোমাকে? যাক চিন্তা নেই আমি আছি কী করতে? একটা হোস্টেলের রুম ভাড়া করব। রুম টা এমন হবে, পুরনো। রুম টা হবে কিচেনের সমান। ওয়াশরুম থাকবে বাহিরে। সেখানে রাতে আসা-যাওয়া করতে হবে। আর পুরনো হওয়ায় জ্বিনের ভয় তো আছেই৷ তার উপর সিকিউরিটি ব্যবস্থা এমন যে ভার্সিটি ছাড়া কোথাও যেতে দেবে না। এমনকি ফ্যামিলির কাছে বা বেড়াতেও না। ছুটিও নেই অনলি পড়া। আর ডিভোর্সের পর তো তুমি চিরকুমারী থাকবে না। তখন তো তুমি ডিভোর্সী হয়ে যাবে।’

চোখ মুখ কুঁচকে এলো এমন বিবরণ শুনে, ‘কী বলছেন এসব? এর চেয়ে বিবাহিত থাকাই ভালো।’

‘আচ্ছা? তো বলছিলে না আমি ব’জ্জা’ত।’

‘দেখুন ওটা তো আমি..’

তিনি সরে এলেন, ‘হয়েছে হয়েছে আর বর্ণনা করতে বলিনি। যাও ঘুমিয়ে পড়ো।’

মুখ ভেংচি দিয়ে আসতে নিলেই তিনি হাত টেনে বললেন, ‘মুখ বাঁকা করছো তাও আমার জন্য? বাহ্ বাহ্ মিসেস. তাহমিদ বেশ তো। যখন একটা ঠাঁটিয়ে মা’রব না? তবেই বুঝবে পরিণাম।’

এই রে! এ তো দারুণ ডেঞ্জারাস, ‘স্যরি! এবার তো ছাড়ুন।’

তিনি ছাড়লেন। আমি কাথা বালিশ নিয়ে সোফায় আসতে নিলেই তিনি প্রশ্ন ছুঁ’ড়ে দিলেন, ‘ওখানে কোথায় শুচ্ছ?’

‘কেন সোফায়?’

‘সোফায় কেন?’

‘কেন আবার? বিছানায় তো শুতে পারব না।’

তিনি হাত ভাঁজ করে বললেন, ‘কেন পারবে না?’

চোখ মার্বেলের মতো গোল হয়ে এলো, ‘কেন পারব না মানে? আমি আপনার সাথে এক বিছানায় কীভানে শুবো?’

‘কীভাবে মানে? এই ভাবে?’

তাজ্জব হলাম। তিনি হাত টেনে বিছানায় নিয়ে এলেন। শান্ত গলায় বললেন, ‘আমি চাই না আমার জন্য কারো অসুবিধা হোক। শুয়ে পড়ো।’

নিচস্বরে প্রশ্ন করলাম, ‘আর আপনি?’

‘ডোন’ট ওয়ারি অ্যাবাউট মি।’

স্থির চোখে তার বারান্দায় যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলাম। এতটাও খারাপ না লোকটা, যতটা তাকে ভেবেছিলাম। তবে তার রহস্য টা কী?
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]