অনুবদ্ধ প্রণয় পর্ব-০৭

0
504

#অনুবদ্ধ প্রণয় 💛
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ০৭

‘আপু? আমি কী জানতে পারি তাহমিদের আগে কেউ ছিল কী না? আমি কী জানতে পারি কাভার্ডে ওই কাপড় গুলো কার? যার জন্য তাহমিদ এমন রিয়েক্ট করেন?’

আমার প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠল তাহমিনা আপু। আমি গিয়ে তার পাশে বসলাম। বললাম, ‘চুপ করে আছো কেন আপু? বলো?’

তাহমিনা আপু চুপ মেরে রইল। আমি আবারো প্রশ্ন করলাম, ‘কাপড় গুলো কার আপু? আর তাহমিদের কী কেউ আছে? মানে কেউ ছিল তার জীবনে?’

তাহমিনা আপু বলল, ‘আমি.. স্যরি ভাবী। আমি তোমাকে কিছু বলতে পারব না। প্লীজ.. আমায় এই বিষয়ে প্রশ্ন করো না।’

‘কেন আপু? কেন? আমায় এই বিষয়ে না জানালে আমি বুঝব কীভাবে বলো? তা ছাড়া তোমরা চাইছ টা কী?’

‘আমরা কিছু চাইছি না। শুধু চাইছি.. ভাইয়া যেন তোমাকে আপন করে নেয়।’

‘হোয়াট?’

‘হ্যাঁ। কিন্তু আমি জানি ও তোমাকে পছন্দ করে না। এটাও জানি ও তোমাকে মেনে নিতে চায় না।’

‘কেন?’

‘আমি তোমায় কিছু বলতে পারব না ভাবী। শুধু এটাই বলব, ওকে আগের প্রাণবন্ত ছেলেটার মতো ফিরিয়ে আনো। ওকে তোমার ভালোবাসার চাঁদরে মুড়িয়ে নাও।’

তব্দা খেয়ে বসে রইলাম। তাহমিনা আপু কলেজ যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল। রেডিই ছিল। উক্ত বাণী টি ছুঁ’ড়ে ব্যাগ নিয়ে রওনা হলো।
এ কী বলে গেল? তাকে.. ভালো.. বাসার জালে মোড়াবো? অসম্ভব! এই তেজপাতার প্রেমে পড়া তো দূর, ক্রাশ খেতে গেলেও ভাবতে হবে। যা রাগের অধিকারী। আল্লাহ্ জানে এর বউ কেমন হবে। ইয়াক থু! কী বলিস? তার বউ তো তুই। ভেবে চিন্তে কথা বলিস ইয়ানাত। কিন্তু.. তাহমিনা আপু বলতে কেন চাইছে না? আচ্ছা.. উনার মা’কে প্রশ্ন করব?
__________

‘আমার মনে হচ্ছে.. আপনারা আমার থেকে কিছু লুকোচ্ছেন।’

আমার কথায় কিচেনে অবস্থান রত তাহমিদের মা সবজি কুঁচি করা বন্ধ রেখে আমার দিকে ফিরলেন। হতবুদ্ধি হয়ে বললেন, ‘কী বলছ এসব মা?’

‘হ্যাঁ মা। আমার মনে হচ্ছে।’

‘ক-কেন.. মনে হচ্ছে?’

‘দেখুন মা। তাহমিদ আমার সঙ্গে যে বিহেভ গুলো করেন তাতে মনে হয় তার সাথে কিছু একটা হয়েছে। তা ছাড়া তার ড্রয়ারে আমি কিছু মেয়ের কাপড় দেখতে পেয়েছি৷ তা নিয়েও সে বেশ সেনসিটিভ থাকে। কেন? কী হলো উনার সাথে? আপনারাই বা এই বিষয়ে এতটা ভড়কে থাকেন কেন?’

তিনি চুপচাপ নিজের কাজ করতে লাগলেন। আমি উত্তরের আশায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। তিনি যেন চোরের মতো কাজ করে যাচ্ছেন। নিরুপায় হয়ে রুমে ফিরে এলাম। নাহ্.. কিছু তো হয়েছে এখানে। সব জানতে হবে আমায়। তাহমিদও এই মুহুর্তে ঘরে নেই৷ বিছানায় বসে এদিক সেদিক তাকালাম। তার টেবিলের দিকে নজর গেল। আস্তে করে উঠে গিয়ে সেখানে গেলাম। তার বইগুলো ঘাটাঘাটি করলাম কিছুক্ষণ। তারপর হঠাৎ একটা ড্রয়ারের দিকে চোখ গেল। কৌতুহলবশত ড্রয়ার টা খুলতেই চোখ কপালে! ড্রয়ার টি ভর্তি ছিল মেয়েদের কসমেটিকস দিয়ে। সেখানে চুড়ি হতে কানের দুল, গলার হার, চেইন, বিছা, বাসন্তী ফুলের গাজরা আরো কত কী! কিন্তু.. এসব এখানে কেন? কার এগুলো? এগুলো তো তাহমিদের ঘরে থাকার কথা না? তাহমিনারও তো হতে পারে। না নাহ্ তাহমিনার জিনিস এখানে কেন থাকবে? না নাহ্ আর ভাবতে পারছি না। তা সব ঠিকভাবে রেখে তার আলমারির দিকে এগিয়ে গেলাম। চাবী ঘরে থাকায় সেটা খুললাম। সেখানে আরো একটা সিক্রেট ড্রয়ার দেখতে পেলাম। সেটার চাবি কোথায় পাব? হঠাৎ মাথায় এলো ওই ড্রয়ারের চাবি দেখেছিলাম একটা।

ড্রয়ার থেকে চাবি টা নিয়ে চেষ্টা করলাম। নাহ্ কাজ হলো না তো। এবার ফিরে এসে চাবি টা রাখতে যেতেই হঠাৎ কেউ খপ করে হাত ধরে ফেলল। আচমকা এমন হওয়াতে ভড়কে পাশে ফিরতেই তাহমিদের রাগান্বিত মুখখানা নজরে আসতেই ভয়ে কলিজার পানিই যেন শুকিয়ে গেল। এখন কী হবে?

‘হাও ডেয়ার ইউ? তুমি আমার অনুমতি ব্যতিত আমার টেবিলে, আমার ড্রয়ারে হাত রাখছো কোন সাহসে?’

উপরোক্ত কথা গুলো ছুঁ’ড়ে হাত থেকে চাবি টা কেড়ে নিলেন তাহমিদ। আমি কী বলব ভেবে পাচ্ছি না। তিনি দ্রুত চাবি টা ড্রয়ারে রেখে ড্রয়ার টা তালাবদ্ধ করলেন। তারপর আমার কাছে এসে হাত চেঁপে ধরে বললেন, ‘তোমাকে এতটা রাইট আমি দেই নি যে তুমি অনুমতি ছাড়া আমার জিনিস ধরবে।’

নিঃসংকোচে বললাম, ‘ওগুলো আপনার জিনিস? কিন্তু ওগুলো তো মেয়েদের জিনিস।’

তিনি রে’গে বললেন, ‘হ্যাঁ সে যাই হোক সে তো আমারই ছিল।’

চমকালাম, ‘মানে?’ তিনি চুপ মে’রে গেলেন। আমাকে ছেঁ’ড়ে দিয়ে বললেন, ‘নেক্সট টাইম আমার জিনিসে হাত দেবে না।’

‘হ্যাঁ দেব না কিন্তু আমায় বলুন। সব বলতে হবে আমায়। ওই কাপড় গুলো, এই কসমেটিকস গুলো কার? কী লুকোচ্ছেন আপনি আমার থেকে? বলুন মি. তাহমিদ আমি সব জানতে চাই।’

তাহমিদ বললেন, ‘আমি তোমাকে সব জানাতে বাধ্য নই ইয়ানাত। যেমন আছো তেমনই থাকো।’

‘কিন্তু আমি থাকব না। যেমন আছি তেমন থাকতে পারব না। আমি এখানে কেন আছি? দায়বদ্ধতার জন্য? বলুন? যে আমার আর আপনার বিয়ে হয়েছে তাই আমরা এক বাড়িতে একসাথে থাকব? কী হবে তাহলে? কিছুই তো হবে না। তা ছাড়া আমাদের মাঝে কিছুই নেই। আর আমাকে জানাতে প্রবলেম কী?’

তাহমিদ চুপ করে রইলেন। আমি আবারো বললাম, ‘কথা বলুন। আপনি তো আমায় মেনে নেন নি। আর নিতে চানও না। আর না আমি চাই।
তা ছাড়া আপনার এমন ব্যবহার আমি নিতে পারছি না। এই রহস্য, এই গোপন কাহিনী এগুলো আমায় না জানালে আমি কীভাবে আপনাকে বুঝব?
ঠিক আছে। আপনি ডি’ভো’র্স চান তাই তো? ফাইন! আর এক মাসের মধ্যেই ডি’ভো’র্স পেপার বানানো হয়ে যাবে। চিরতরে মুক্তি পাবেন।’

হঠাৎ কী হলো কে জানে? তিনি এসে আমাকে দেওয়ালের সাথে চেঁপে ধরে বললেন, ‘আমার থেকে মুক্তি নিবি? তুইও? ও আমায় ছেঁ’ড়ে চলে গেল এখন তুইও যাবি? ভুলে যা এই কথা। আমার থেকে মুক্তি পাওয়া এত সোজা না। ভুলেও এই কথা ভাববি না নয়তো তোর অবস্থা খুব খারাপ হবে৷ ডি’ভো’র্স চাস তাই না? ডি’ভো’র্স? আরেকবার যদি এই তাহমিদ কে ছেঁ’ড়ে যাওয়ার কথা ভাবিস তাহলে তুইও থাকবি না আমিও থাকব না ইয়ানাত! মাইন্ড ইট!’

আমায় এক ঝটকায় ছেঁ’ড়ে তিনি কক্ষ ত্যাগ করলেন। তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কী হলো এখন? উনি কী বলে গেলেন এসব? আর এমন রিয়েক্টই বা করলেন কেন? আর কী হচ্ছে এখানে? আর উনিই বা কী চান? কী লুকোচ্ছেন আমার থেকে?
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]