অনুবদ্ধ প্রণয় পর্ব-০৮

0
471

#অনুবদ্ধ প্রণয় 💛
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ০৮

মাথায় হাত চেঁপে বসে রইলাম। কী হচ্ছে আমার সাথে? তাহমিদ একটু আগে কী বলে গেলেন আমায়? কে তাকে ছেঁ’ড়ে চলে গেছে? আর আমাকে যেতে দেবে নাহ্ মানে? কী হচ্ছে এখানে? আর ওই ড্রয়ারের চাবি টা কোথায়? আর আরেকটা কথা মাথায় এলো।

দ্রুত উঠে দাঁড়ালাম। দু’বার এই বাড়িতে ঢুকার সময় একটা চিলেকোঠার ঘরের জানালা নজরে এসেছিল। কিন্তু তেমন গুরুত্ব দেই নি। কিন্তু এবার ব্যাপার টা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে৷ উঠে দাঁড়ালাম। সারা বাড়ি একবার ঘুরলাম। নাহ্ তাহমিদ কোথাও নেই৷ এবার উঠে ছাদে গেলাম। আজ আকাশ টা কালো মেঘে ঢাকা। রোদ নেই বললেই চলে।
এই বাড়িতে ছাদ দু’টো। মানে দু’তলা বিশিষ্ট ছাদ। উপরে আরো একটা ঘর আছে ছোট। আর সেই সিড়ির নিচেই ছোট্ট চিলেকোঠার ঘর। আয়তন আর কত, ১২ হাতের মতো হবে।

সেদিকে এগিয়ে যেতেই সেই চিলেকোঠার ঘরের ছোট্ট দরজা টা নজরে এলো। দ্রুত সেটার সামনে দাঁড়ালাম। তালাবদ্ধ দরজা টা নজরে আসতেই হতাশ হলাম। এখন কী করব? এটায় তো তালা দেওয়া। ধ্যাত! মাথা যেন ছিঁ’ড়ে যাচ্ছে। কী যে করি?

তার উপর ১২ টা বেজে গেছে। নাহ্ ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে সব। এখন মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।
_________
‘বিয়া ভাই’ঙা পালাইছিস। এহন আবার রাস্তায় ঘুর ঘুর করতাছোস। লাজ-লজ্জা বইলা কিছু নাই তোর? ক্যান মাইয়্যা দেহো একবার।’

পাশের ঘরের সামনের বারান্দায় বসে থাকা মহিলা টির এমন কথা শুনে পা আপনা-আপনি থেমে গেল ইফার। নেত্রকোণ ভিজে উঠল। পাশ ফিরে তাকানোর মতো ইচ্ছা টাও তার ম’রে গেছে। সেখানে আরো দু’জন বসে ছিল তাদের মধ্যে একজন বলল, ‘কী রে? পালাইছিলি নাকি? নিয়া ভাই’ঙা যাওয়ার পথে আছিল। তোর খালাতো বইনেই তোর পরিবার রে বাঁচাইছে। কার লগে ভাইগা গেছিলি? আবার ফিইরা আইছোস? তোরে কী কিছু কয় নাই? নাকি গা ঢাকা দিতে তোরে মাথায় তুইলা রাখছে।’

ইফার নেত্রকোণে জমা অশ্রুগুলো এবার গড়িয়ে পড়ল। মাথা নিচু করে যেতে নিলেই কেউ হাত টেনে ধরল। ইফা পাশ ফিরে ইবনান কে দেখতে পায়। অবাক হলো। সে এখানে কেন? ইবনান তাকে ইশারায় থামতে বললে সে তার দিকে করুন অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকায়। তার দৃষ্টি তীরের মতো বুকে বিঁধল ইবনানের৷ সে তার হাত ধরে টে’নে সেই মহিলা তিনজনের সামনে গেল। বলল, ‘এবার বলুন কী বলবেন।’

‘আরে বা’জান! তুমি তো ইরহান ভাইজানের পোলা না?’

‘হ্যাঁ। আর ইফার হাসবেন্ড। এবার বলুন, কী যেন বলছিলেন?’

‘কী কও? তুমি এই মাইয়্যার হাশবেন মানে?’

‘হ্যাঁ আমি ওর স্বামী। একটু আগেই তো শুনলাম কী যেন বলছিলেন। এবার বলুন আমিও একটু শুনি।’

মহিলা তিন টে কিছুক্ষণ থ হয়ে বসে রইল। ইফার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তুই কেমন বে’শ’র’ম মাইয়্যারে! শেষ মেষ ভাইয়ের লাহান একটা পোলারে বশ কইরা নিলি?’

ইবনান বলল, ‘এক্সকিউজ মি! আমি আপনার কথা টা ঠিক বুঝতে পারলাম না আন্টি। ভাইয়ের মতো? হ্যাঁ ভাইয়ের মতো। কিন্তু আমি ওর আপন ভাই না। আর সে মতে ওর সঙ্গে আমার বিয়ে জায়েজ আছে। কী? কোন যুক্তি আছে আপনাদের?’

তারা চুপ করে রইল। ইবনান বলল, ‘ও পালায় নি। বরং ওর সাথে কখনোই আমার ফ্রেন্ডের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বরং এটা একটা সারপ্রাইজ ছিল আমার বোনের জন্য। না জেনে একটা মেয়েকে মেয়ে হয়েও হ্যারেস করতে লজ্জা করে না? ও একটা মেয়ে। আপনিও একজন মেয়ে। আর সেই মেয়ে হয়ে একটা মেয়ের নামে ফালতু গু’জব ছড়াচ্ছেন?
আর ওর সঙ্গে আমারই বিয়ে ঠিক ছিল। সুতরাং অন্যের পরিবার কে নিয়ে বা’জে মন্তব্য করার আগে নিজের ফ্যামিলির টা দেখবেন। মাইন্ড ইট!’

বলেই ইফাকে টেনে নিয়ে এলো সেখান থেকে। ইফা মাঝ রাস্তায় থেমে বলল, ‘আপনি? আপনি কবে এলেন এখানে? আর.. এত কিছু বলার কী দরকার ছিল বলুন ইবনান ভাই?’

ইবনান বলল, ‘এট ফার্স্ট, আমাদের আকদ্ হয়েছে। আমি তোর ভাই না। আমাকে ভাই বলে ডাকবি না। অ্যান্ড সেকেন্ড, তুই আমার ওয়াইফ। তোকে নিয়ে কেউ কিছু বলল আমার প্রতিবাদ করা অবশ্যই কর্তব্য। যা এখন সোজা ভার্সিটি যাবি আর ফিরে আসবি। কারো কথায় কান দিবি না।’

ইবনান তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উল্টো ঘুরে হাঁটা ধরল। নিষ্পলক চোখে ইফা তার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইল। ইবনান কী বলে গেল এসব?
__________

‘এভাবে বসে আছো কেন ইয়ানাত?’

তাহমিদের প্রশ্নে নড়েচড়ে বসলাম। তার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। তা দেখে তিনি কিছু টা অবাক হলেন৷ আমার সামনে এসে বললেন, ‘কী ব্যাপার ফুলটুসি? এভাবে মুখ পেঁচার মতো করে বসে আছো কেন?’

রে’গে বললাম, ‘আমি পেঁচার মতো মুখ নিয়ে বসে আছি? আমি পেঁচা?’

‘আরে আরে। কে বলল তুমি পেঁচা?’

‘আপনিই তো বললেন।’

‘ঠিক ই তো বললাম। এভাবে বসে আছো কেন?’

‘আমার সঙ্গে কথা বলবেন না আপনি।’

উঠে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। তিনি পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘কী হলো ইয়ানাত? এমন করছো কেন? আমি কী কিছু করেছি?’

আমি চুপ। কথা বলব না আজ এর সাথে। তিনি আবারো বললেন, ‘ইয়ানাত? কী হয়েছে বলো?’

এবারো আমি চুপ। তিনি এবার কোমড় ধরে আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে বললেন, ‘টেল মি হোয়াট দ্যা হেল? কী হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন? আর এভাবে মুখ ঘুরানোর মানে কী? কিছু কী হয়েছে?’

মাথা নিচু করে বললাম, ‘হয়েছে তো। অনেক কিছু হয়েছে।’

‘কী হয়েছে?’

‘আমি কত কিছু জানার আশায় আপনার দিকে চেয়ে আছি। আপনি কিছু জানাচ্ছেন না আমায়। উল্টো রা’গ দেখাচ্ছেন। কেন আমি কী কিছুই জানার যোগ্য নই?’

তাহমিদ মলিন মুখ করে চেয়ে রইলেন আমার দিকে। বললেন, ‘আমি.. প্লীজ এসব বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করো না ইয়ানাত। আমি পারব না এই বিষয়ে তোমাকে কিছু বলতে।’

‘কেন? কেন পারবেন না?’

‘জানি না।’

আমায় ছেঁ’ড়ে তিনি ব্যালকনি ত্যাগ করলেন। একরাশ হতাশা নিয়ে চেয়ে রইলাম সেদিকে। উনি কী কখনোই এই বিষয়ে বলবেন না? হয়তো না। কিন্তু আমাকে সব খুঁজে বের করতে হবে। কী এমন রহস্য! সব জানতে হবে।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]