অনুভবে থাক যে তুমি পর্ব-০৩

0
3733

#অনুভবে_থাক_যে_তুমি
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পর্ব_০৩

ভার্সিটি ছুটি হলো ইতি সুমাইয়াকে নিয়ে বাড়ী না ফিরে অন্য দিকে গেল।সুমাইয়া অবাক হয়ে বলল
সুমাইয়া —– কি হয়েছে আপু কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস
ইতি ——ভাবছি আজ আর বাড়ী ফিরব না, আমার ফ্রেন্ড রুপালীর বাড়ীতে থাকব
সুমাইয়া —— কি??? কেন????
ইতি —– কেন মানে তুই ভুলে গিয়েছিস, ওরা যা বলবে তা করতে হবে
সুমাইয়া —- ইশশ এতে এত ভয় পাওয়ার কি আছে, কি বা বলবে
ইতি —- না বাবা ভয় করছে, আজ বাড়ীতে যাওয়া দরকার নেই, কাকী মাকে ফোন করে পরে বলে দেব,এখন আমার সাথে চল নদী পাড়ে যাব
সুমাইয়া —– ঠিক আছে

অন্যদিকে,,,,,
ফারদিন আর প্রিয় বাড়ী ফিরলো, ফারদিনের মা ওদের দেখে বলল
ফারদিনের মা —- তোরা চলে এসেছিস, ইতি আর সুমাইয়া কোথায়
ফারদিন —- কি বলছ তুমি আসে নিই
প্রিয় —— ভার্সিটি তো আরও অনেক আগে ছুটি হয়েছে।
ফারদিনের মা —- কোথায় গেল ওরা খুব টেনশন হচ্ছে
ফারদিন —- আহহহ মা চিন্তা কর না, আমি আর প্রিয় গিয়ে খুজে আনছি
ফারদিনের মা — ঠিক আছে।

ফারদিন আর প্রিয় বের হলো,
প্রিয় —- কোথায় খুজবি ওদের, তুই জানিস
ফারদিন —- হয় তো আমি জানি ওরা কোথায় থাকতে পারে
প্রিয় —- সত্যি
ফারদিন —- হুম চল

ওরা দুজন মিলে নদীর পাড়ে গেল, গিয়ে দেখে ইতি আর সুমাইয়া বসে আছে
ফারদিন — বলেছিলাম না এখানেই হবে
প্রিয় —- হুম
ফারদিন —– চল ওদের কাছে যাই।
প্রিয় —– ঠিক আছে।

ওই দিকে,,,,,,,,,
সুমাইয়া ——আপু খুব ভালো লাগছে এখানে
ইতি —— হুম আমারও আকাশটা মেঘলা হয়ে আছে,মনে হচ্ছে একটু পরই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝড়বে।
ফারদিন আর প্রিয় দুই জনের দুই দিকে বসে বলল
ফারদিন – ঠিক বলেছিস
ইতি — হুম
বলেই সুমাইয়াকে বলল,,,,,
ইতি —- সুমু আমার মনে হয় আমি ফারদিন ভাইয়ার কন্ঠ শুনলাম।
সুমাইয়া —- মনে হয় না, ভাইয়া এখানেই😰
ইতি —- কি?????
বলেই পাশে তাকিয়ে দেখে ফারদিন হেসে তাকিয়ে আছে
ইতি —- তুমি এখানে
ফারদিন —হুম
প্রিয় — আমিও আছি।
সুমাইয়া —– তোমরা এখানে কি কর
ফারদিন —– আমি জানতাম তোরা এখানেই থাকবি,এখন চল বাড়ীতে ফিরা যাক মা টেনশন করছে।
ইতি —- হুম

ওরা বাড়ীতে গেল,,,,,,,,
ফারদিনের মা —- কোথায় ছিলি তোরা
ইতি — ওই একটু নদীর পাড়ে গিয়ে ছিলাম
ফারদিনের মা — আমাকে জানিয়ে নিতি
সুমাইয়া —- নেক্সট টাইম জানিয়ে যাব প্রমিস
ফারদিনের মা — ঠিক আছে।

তখনি বাহিরে বৃষ্টি শুরু হলো,
ইতি —- সুমাইয়া দেখ বৃষ্টি হচ্ছে
সুমাইয়া —– হুম চল ছাদে যাই
ফারদিন —- একদম না, এই অবেলায় ভিজলে জ্বর আসতে পারে
ইতি — কিছু হবে না
বলেই দুজন ছাদে দৌড় দিল,ফারদিনের মা হেসে বলল
ফারদিনের মা — পাগলী মেয়ে পুরো
ফারদিন — মা তুমি কিছু বললে না
ফারদিনের মা —-থাক ভিজুক ওদের শখ পুরোন করুক
প্রিয় —- আমি রুমে গেলাম
ফারদিন —- না আমার সাথে আয়, আমরাও ভিজবো
প্রিয় — তোর আবার কি হলো
ফারদিন —- আয় তো

ওরা ছাদে গিয়ে দেখে দুইজন বৃষ্টিতে ভিজছে,,,,
ইতি —- তোমরাও চলে আস
ফারদিন —– আসছি প্রিয় চল
প্রিয় —- তুই ভিজ আমি যাচ্ছি না
ফারদিন —- তোর ইচ্ছে
ফারদিন ওদের কাছে গেল,ফারদিনের চোখ পড়লো পাশের বাড়ীর ছাদের দিকে, ওখানে কিছু ছেলে ইতি আর সুমাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,ফারদিন হাতের ইশারায় ছেলে গুলোকে চলে যেতে বলল,আর ছেলেরা চলে গেল।

অন্যদিকে,,, সুমাইয়া গিয়ে প্রিয়র কাছে দাড়ালো
সুমাইয়া —— এই যে মিস্টার ভদ্র লোক বৃষ্টিতে ভিজবেন না
প্রিয় —- না
সুমাইয়া —- আমি তো তা হতে দেব না
বলেই প্রিয়র হাত টান দিয়ে বৃষ্টির মাঝে নিয়ে নিল
প্রিয় —- এটা কি হলো
সুমাইয়া — যা হয়েছে বেশ হয়েছে😁
প্রিয় —-এর শোধ আমি তুলবো
সুমাইয়া —হুশ হুশ আমি কি ভয় পাই নাকি
প্রিয় —ওকে

অন্যদিকে,,,,,,,
ফারদিন — আর কত ক্ষন এভাবে বৃষ্টিতে ভিজবি
ইতি —- আমার এখনও মন ভরে নিই তুমি চলে যাও
ফারদিন ইতির হাত এক টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল,,,
ইতি —- কক,ক,কক,,কি করছ ছাড় আমাকে
ফারদিন — না
ইতি —- আরে ছাড় আমাকে ওরা এদিকে চলে আসবে
ফারদিন — দেখুক
ইতি — প্লিজ এমন কর না, প্লি,,,,,
ফারদিন ইতির ঠোটে আঙ্গুল রেখে ধির কন্ঠে বলল
ফারদিন —- শিশশশশ চুপ
ইতি ঘাবড়ে তাকিয়ে আছে ফারদিনের দিকে, ফারদিন ধিরে ধিরে অগ্রসর হতে লাগল ইতির ঠোটের দিকে, অনেকটা পৌছো গেল, তখনি আকাশে বাজ পরার আওয়াজে দুই জন আকাশের দিকে তাকায়,তারপর একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দে।

রাতের দিকে,,,,,,,,
সবাই বসে বসে খাবার খাচ্ছে,,,,,
ফারদিনের বাবা — ইতি
ইতি —- হুম বল বড় আব্বু
ফারদিনের বাবা —- শাহিন ফোন করেছিল
ইতি — ও আব্বু কি বলল
ফারদিনের বাবা —– শাহিন তো এখন সিলেটে আছে, তোদের ওখানে গিয়ে বেড়িয়ে আসতে বলেছে,আর শাহিনের সাথে দেখাও করতে বলেছে।
সুমাইয়া —- ওয়াও চল আপু যাই
ইতি — সামনে পরিক্ষা শেষ করে তারপর যাব
সুমাইয়া — ঠিক আছে
ফারদিন — আমিও যাব
সবাই অবাক হয়ে ফারদিনের দিকে তাকিয়ে আছে,
ফারদিনের বাবা —তুই ও যাবি
ফারদিন — হুম আমি একা না প্রিয়ও যাবে, আমরা গিয়ে সিলেট ঘুরবো।
ফারদিনের মা —- যখন যাবে তোরাও যাস

খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো,তখনি ইতির রুমে কেউ ধাক্কা দিল,দরজা খুলে দেখে ওপাশে ফারদিন আর প্রিয় দাড়িয়ে আছে।ইতি ওদের দেখে ব্রু কুচকে বলল
ইতি — তোমরা এখানে এত রাতে
ফারদিন কিছু না বলে ভিতরে ঢুকে গেল সাথে প্রিয়ও, সুমাইয়া ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে দেখে ওদের
সুমাইয়া — তোমরা এখানে কেন
ইতি — হুম তোমরা এখানে কেন
ফারদিন —- তোরা হয় তো ভুলে গিয়েছিস
সুমাইয়া — কিসের কথা
প্রিয় — সর্তের কথা
ইতি ভয় পেয়ে বলল
ইতি — প্লিজ এটা কি ভুলে যাওয়া যায় না
ফারদিন — নো সুইটহার্ট,
ইতি —😰😰😰
সুমাইয়া —- ওকে বল কি করতে হবে, আআ,,আমরা ভয় পাই না।
ফারদিন —- হুম তোকে প্রিয় বলবে,আর ইতি তুই আমার সাথে চল
ইতি — কোথায়
ফারদিন — বারান্দায়
ইতি — এই না
ফারদিন — হ্যা চল সুইটহার্ট

ফারদিন ইতিকে নিয়ে বারান্দায় গেল।সুমাইয়া রেগে তাকালো প্রিয়র দিকে
সুমাইয়া — কি করতে হবে বল
প্রিয় বাকা হেসে বলল
প্রিয় — কোনো কঠিন কাজ দেব না
সুমাইয়া — বলবা কি করতে হবে
প্রিয় — হুম,, আমার পা টিপে দেও
সুমাইয়া — কি😠😠
প্রিয় — কি না জ্বি
সুমাইয়া — খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু
প্রিয় — মোটেও না, বলে ছিলাম না শোধ তুলবো, এখন কথা বন্ধ করে কাজে লেগে পড়,পা টা টিপে দেও
সুমাইয়া —- বললে তোমার গলাটাও টিপে দেই।
প্রিয় — ওতো কষ্ট করতে হবে না

সুমাইয়া রেগে গিয়ে পা টিপতে লাগল, আর প্রিয় মুচকি মুচকি হাসতে লাগল,
প্রিয় — আরে ভালো ভাবে টিপো
সুমাইয়া —- যথা আগ্গা মহারাজ😠😠😠😠😠
প্রিয় —😁😁😁

অন্য দিকে,,,,,,,,
ফারদিন ইতি বারান্দায় গেল।
ইতি — এখানে এনেছ কেন,
ফারদিন —- তুই ভয় পাচ্ছিস কেন?
ইতি — না না কক,কই ভয় পাচ্ছি
ফারদিন — হুম না, তুই ভয় পাচ্ছিস
বলেই ইতির দিকে এক পা বাড়ালো,আর ইতি এক পা পিছালো
ইতি — এভাবে তাকাচ্ছ কেন
ফারদিন ইতিকে এক টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল,,,তারপর ওর মুখের সামনে থেকে অবাদ্ধ চুল গুলোকে সরিয়ে দিল, ইতি চোখ বন্ধ করে রেখেছে,ফারদিন নেশা যুক্ত কন্ঠে বলল
ফারদিন — কি ম্যাজিক করেছিস আমাকে,,
ইতি — কক,কই আমি আবার কি করলাম
ফারদিন — তোর দিকে কি এত করে টানে আমায়

ইতি নিজেকে ফারদিনের থেকে সরিয়ে সামনে গিয়ে দাড়ালো,, ফারদিন পিছনে গিয়ে ইতির ঘাড় থেকে চুল গুলোকে সরিয়ে একটা লোকেট পড়িয়ে দিল।
ইতি — এটা
ফারদিন — অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম দেব, কিন্তু সঠিক সময় পাচ্ছিলাম না।
ইতি — এটা আমার
ফারদিন — হুম তোর জন্য এনেছি পছন্দ হয় নিই।
ইতি — না খুব সুন্দর হয়েছে,আমাকে দিয়ে কিছু করাবার ইচ্ছে বুঝি হচ্ছে না
ফারদিন — কিছু করাব না তোকে দিয়ে, এটা তো শুধু অযুহাত তোকে কিছুটা সময় আমার কাছে পাওয়ার জন্য
ইতি সামান্য হেসে দিল।

ওদিকে,,,,,,
প্রিয় —- থাক আর করতে হবে না
সুমাইয়া —😠কেন মন ভরে গেছে
প্রিয়— হুম

ফারদিন আর ইতি বারান্দা থেকে এসে বলল
ফারদিন — সব কমপ্লিট
প্রিয় — হুম এবার যাওয়া যাক
ফারদিন — হুম চল

ওরা চলে গেল,ইতি খেয়াল করে দেখলো সুমাইয়া গাল ফুলিয়ে বসে আছে
ইতি — কি হয়েছে তোর
সুমাইয়া — কি আর হবে
ইতি — প্রিয় ভাইয়া তোকে দিয়ে কি করালো
সুমাইয়া — পা টিপিয়েছে
ইতি —কি সত্যি 😄😄😄
সুমাইয়া — তুই হাসি বন্ধ করবি,তোকে দিয়ে কি করালো
ইতি — কিছু না
সুমাইয়া — সত্যি
সুমাইয়ার চোখ পড়লো ইতির গলায় পড়া লোকেট টার দিকে
সুমাইয়া — ওয়াও আপু এটা কোথ থেকে আসলো
ইতি — এটা
সুমাইয়া — ওয়েট ভাইয়া দিয়েছে
ইতি — হুম
সুমাইয়া — খুব কিউট, অনেক সুন্দর এই লোকেট টা

পরের দিন সকালে,,,,,,,
ফারদিনের মা —- ফারদিন, প্রিয়
প্রিয় —- আমাকে বলুন আন্টি ফারদিন ঘুমাচ্ছে
ফারদিনের মা — ভালো হয়েছে তুমি উঠে পড়েছ, আমি আর তোমার আঙ্কেল ফারদিনের খালার বাড়ীতে গেলাম,ইতি আর সুমাইয়া উঠতে আর দেরি হবে তাই তোমাকে বলে যাচ্ছি ওদের বলে দিও বাবা
প্রিয় — ঠিক আছে আন্টি
ফারদিনের মা — আর খাবার রাখা আছে, আজ আবার কাজের আপাটাও আসে নিই
প্রিয় — ঠিক আছে।

সবাই খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছে,,,, ইতি উঠে চলে যেতে লাগল
ফারদিন —কিরে খাচ্ছিস না কেন
ইতি — ইচ্ছে করছে না
সুমাইয়া — আপু তোর কি শরীর খারাপ লাগছে
ইতি — না আমি ঠিক আছি
ইতি উঠে চলে যেতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যায়,ইতির চোখে খোলার পর দেখে ও বিছানায় শোয়া আছে,ওর পাশে সুমাইয়া, ফারদিন আর প্রিয়
সুমাইয়া — আপু তোর এখন কেমন লাগছে
ইতি — ঠিক আছি
ফারদিন — এমন মার মারবো না, তোর শরীরে এত জ্বর আর তুই কাউকে বললি না কেন
ইতি — আমার কিছু হয় নিই ঠিক আছি
প্রিয় — একদম না, ডক্টর এসে দেখে গেছে তোমাকে মেডিসিনও দিয়েছে,এখন রেস্ট নেও
সুমাইয়া — আমি আজ ভার্সিটি যাব না
ইতি — কেন,সামনে পরীক্ষা সব ক্লাস ইম্পর্ট্যান্ট
সুমাইয়া — কিন্তু তুই বাড়ীতে একা থাকবি
ফারদিন — তুই যা সুমু, আমি আছি আজ আমি আর ভার্সিটি যাব না, প্রিয় তুই আর সুমু এক সাথে যা আর এক সাথে ফিরবি
প্রিয় — ঠিক আছে
ইতি — তোমাকে থাকতে হবে না,
ফারদিন —বেশী পাকামো করবি না, আর তোরা যা
সুৃমাইয়া — ঠিক আছে আপু আমি আসি সাবধানে থাকিস
ফারদিন — আমি থাকতে তোর চিন্তা করতে হবে না
সুমাইয়া — হুম
প্রিয় — ইতি তুমি রেস্ট নেও,আমরা আসি

ওরা চলে গেল,বাড়ীতে ইতি আর ফারদিন একা,,,,,,

চলবে,,,,,,,,
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন