অনুভবে থাক যে তুমি পর্ব-০৫

0
3032

#অনুভবে_থাক_যে_তুমি
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পর্ব_০৫

সুমাইয়া আর ইতি অনেক খন ধরে খাবার টেবিলে বসে আছে,,ফারদিন আর প্রিয় মনে হয় আজ বাংলাদেশ আবার স্বাধীন করে তারপর রান্না ঘর থেকে বের হবে।ইতি আর সুমাইয়া বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত,সুমাইয়া কাটা চামচ টা হাতে নিয়ে বলতে লাগল
সুমাইয়া — আর দুই মিনিটের মাঝে না আসলে ওদের খবর আছে
ইতি — আল্লাহ জানে কবে এদের রান্না শেষ হবে
সুমাইয়া —আজ মনে হয় না খেয়েই রাত পাড় করতে হবে
ইতি — কেন যে বলে ছিলাম যেতে,আমি গেলেই ভালো হতো

কিছুখন পর সকল অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটিয়ে ফারদিন আর প্রিয় বের হলো রান্না ঘর থেকে
সুমাইয়া — ফাইনালি আসলা,কি রেধেছ
ইতি — হুম বল
ফারদিন — পাস্তা,
প্রিয় — আর পুডিং
সুমাইয়া — বাহ বাহ অসাধারণ, এত খাবার কিভাবে খাব ভেবে পাচ্ছি না
ইতি পাশ থেকে হেসে দিল।
ফারদিন — যা করেছি তা চুপ চাপ খা
ইতি — হুম দেখি কেমন রেধেছ

ইতি খাবার মুখ দিয়ে ফারদিন আর প্রিয়র দিকে তাকালো
ইতি — খাবার টা,,,,
বলার আগেই ফারদিন বলে উঠল
ফারদিন — দেখ যেমনই হয়েছে খুব কষ্ট করে রেধেছি,চুপচাপ খেয়ে নেয়
সুমাইয়া — আমি তো আগের থেকেই জানতাম, কি আর রাধবে তোমরা
ইতি — না সুমু,খুব ভালো হয়েছে, জাস্ট অসাধারণ
ফারদিন — সত্যি😃
ইতি — হুম
প্রিয় — যা তাহলে, ভালো লাগল
ফারদিন — কিরে পেত্নী দাড়িয়ে আছিস কেন
সুমাইয়া — বসছি
প্রিয় — চল খেয়ে নেই

সবাই খাবার খাচ্ছে, তখন ফারদিন বলে উঠল
ফারদিন — ওই সবাই শোন
ইতি — কি
প্রিয় — কি হয়েছে
ফারদিন — চল আজ সবাই মিলে একটা মুভি দেখি
সুমাইয়া — হুম খুব মজা হবে
প্রিয় — কি মুভি দেখবি
ফারদিন — তোরা তোদের চয়েস বল,
ইতি — ফানি
সুমাইয়া — রোমান্টিক
প্রিয় — হরর
ইতি — ভূতের তো একদম দেখা হবে না,
সুমাইয়া — হুম রোমান্টিক মুভি দেখবো
প্রিয় — পাকা মেয়ে কোথাকার রোমান্টিক মুভে দেখবে
সুমাইয়া — কি বললা😠
ফারদিন — ওকে ভোর্ট হবে
ইতি — ফানি
সুমাইয়া — রোমান্টিক বাসসস
প্রিয় — হরর
ফারদিন হাত উচু করে বলল
ফারদিন — হরর😁
ইতি — না না
ফারদিন — কেন গো ভয় লাগছে নাকি
সুমাইয়া — এহে এসেছে, কে ভয় পায়
প্রিয় — তাহলে ভূতের মুভি দেখা হবে
সুমাইয়া — ঠিক আছে
ইতি — এই না
সুমাইয়া — ওফফ আপু চিল, আমি আছি তো

পরে সবাই মিলে ভূতের মুভি দেখা শুরু করলো,ফারদিন আর প্রিয় মুভি কি দেখবে ওদের দেখেই সময় পাচ্ছে না।ভূত হঠাৎ টিভির স্কিনে আসতেই ইতি ভয়ে খামছিয়ে ফারদিনের হাত ধরে ফেলল,আর ফারদিন হেসে দিল।কিছুখন পর প্রিয় চিল্লিয়ে উঠলো,সবাই অবাক হয়ে প্রিয়র দিকে তাকালো
ফারদিন — কি হয়েছে তোর
ইতি — এমনি ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে আর তুমি ভয় দেখাচ্ছ
প্রিয় ওর হাত উচু করে দেখালো,সুমাইয়া খামচে ধরে রেখেছে, সুমাইয়ার আশেপাশের কোনো খবরই নেই টিভির দিকেই তাকিয়ে আছে আর ভয় পাচ্ছে
ইতি — সুমু এই সুুমু
সুমাইয়া —-আআআআআআআআআ😱কি হয়েছে ভূত বাহিরে চলে এসেছে নাকি
সবাই সুমাইয়ার এমন ভয় পাওয়া দেখে হাসতে হাসতে ক্লান্ত।
প্রিয় — খুব তো সাহস দেখিয়ে ছিলে, এখন তো ভয়ে ভিজা বিড়াল হয়ে আছ
সুমাইয়া — আমাকে রাগীও না নইলে, এই টিভির ভূতের মতো তোমাকেও আস্ত গিলে খাব
প্রিয় — তা তো খাবেই, তুমি তো একটা রাক্ষসী
সুমাইয়া — কি বললা😠😠😠😠
ফারদিন — অনেক ঝগড়া হয়েছে, এবার মুভিটা অফ কর,অন্য মুভি দেয় নইলে এই দুই ভিতুর ডিমের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।
প্রিয় — ওকে অন্য মুভি দিচ্ছি

সবাই মিলে অন্য মুভি দেখতে শুরু করলো,মুভিতে ইমোশনাল সিন আসতেই, ফারদিন, সুমাইয়া, প্রিয় কারও কান্নার আওয়াজ পেল,কান্নার আওয়াজ অনুসরণ করে দেখে ইতি বাচ্চাদের মতো কাদছে,ইতি এমন কান্না দেখে সবাই মুখ চেপে হাসছে,ফারদিন ব্রু কুচকে হেসে ইতির দিকে টিস্যু এগিয়ে দিল,ইতি টিস্যু নিয়ে চোখের পানি মুছছে আর বলছে
ইতি —- দেখলে কি বাজে লোক মেয়েটাকে মেরে ফেলল ভ্যা ভ্যা ভ্যা
ফারদিন — থাক ভিলেনকে হিরো শাস্তি দিয়ে দেবে আর কান্না কর না
ইতি — ভ্যা ভ্যা ভ্যা ভ্যা
ইতি কেদেই যাচ্ছে আর ফারদিন শান্তনা দিচ্ছে, সুমাইয়া প্রিয়কে ইশারায় বলল, ওদের একা ছেড়ে দিতে।প্রিয় আর সুমাইয়া ওদের থেকে দূরে সরে গেল।

সুমাইয়া আর প্রিয় ছাদে গেল,,,,,,,,,
সুমাইয়া — এখানে কেন আসলাম আমরা, কত অন্ধকার
প্রিয় মজা করে বলল
প্রিয় — নইলে তোমাকে মারবো কিভাবে
সুমাইয়া ভয় পেয়ে গেল।ভিতু ভিতু কন্ঠে বলল
সুমাইয়া — কক,,কক,কি বলছ, তত,ত,তুমি😰দেখ মজা বন্ধ কর
প্রিয় — আমি মজা করছি না, এখনি তোমাকে শেষ করে দেব
সুমাইয়া — কি সব বলছ
প্রিয় —আমি প্রিয় না, হাহাহাহহাহা
সুমাইয়া — ক,ক,কি???😰😰😧তাহলে প্রিয় ভাইয়া কোথায়
প্রিয় — ওকে মেরে ফেলেছি এখন তোমাকেও মারবো
সুমাইয়া এবার ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিল,আর কাপতে কাপতে বলল
সুমাইয়া — ভ্যা ভ্যা ভ্যা আমাকে মের না প্লিজ, আমি তোমাকে আমার সব চকলেট দিয়ে দেব
প্রিয় — চকলেটে চলবে না
সুমাইয়া — কি চাই তোমার
প্রিয় — রক্ত, তোমার শরীরের রক্ত দিয়ে সুপ খাব আমি
সুমাইয়া — ভ্যা ভ্যা ভ্যা
প্রিয় সুমাইয়াকে ধরতে গেল ওমনি সুমাইয়া চিৎকার দিতে গেল,প্রিয় গিয়ে মুখ চেপে ধরে বলল
প্রিয় — ইশশশ চিৎকার করছ কেন,কেউ শুনলে কি ভাববে
সুমাইয়া প্রিয়র হাত সরিয়ে বলল
সুমাইয়া — তুমি মজা করছিলে
প্রিয় — হুম
সুমাইয়া — আফ্রিকার ভেড়া, নাইজেরিয়ার গরু,উগান্ডার মহিষ তোমার এক দিন কি আমার এক দিন
বলেই প্রিয়কে মারতে শুরু করলো,প্রিয় হেসে সুমাইয়ার দুই হাত চেপে ধরলো,তারপর সুমাইয়ার কিছুটা কাছে গিয়ে বলল
প্রিয় — এই প্রথম দেখলাম, ভূতকে কেউ ঘুষ হিসেবে চকলেট দিতে চায়😂😂😂
সুমাইয়া ও এবার হেসে দিল।

অন্যদিকে,,,,,,
ফারদিন হেসে বলল
ফারদিন — এত ইমোশনাল হলে কি হয়
ইতি –আমার খুব খারাপ লাগে,দেখলে তো মেয়েটা শেষ পযন্ত তার ভালোবাসার মানুষটাকে পেল না।
ফারদিন — আরে এটা তো মুভি
ইতি — রিয়াল লাইফেও কত হয়, আসলে কতটা কষ্টকর না, যাকে ভালোবাসে তাকে যদি না পায়,তুমি যদি তোমার ভালোবাসার মানুষকে না পাও,, তাহলে তোমার কষ্ট হবে না
ফারদিন ওর ঠোটে আঙ্গুল চেপে ধরে বলল
ফারদিন — চুপ একদম চুপ, তোকে হারাবার কথা আমি ভাবতেও পারি না
ইতি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ফারদিনের দিকে,,,,,,
এর মাঝে সুমাইয়া আর প্রিয় আসলো।
প্রিয় — ফারদিন আমার মনে হয় এখন সবার ঘুমাতে যাওয়া উচিৎ
ফারদিন — হুম, তোরাও যা
সুমাইয়া — ওকে চল আপু
ইতি — হুম

ওরা যে যার রুমে চলে গেল,,,,,,,,,,,,
সুমাইয়া অনেক খন ধরে খেয়াল করছে ইতি চুপ হয়ে আছে
সুমাইয়া — আপু এই আপু
ইতি — হুম বল
সুমাইয়া — কি হয়েছে তোর, ওমন চুপ হয়ে আছিস কেন
ইতি — ভালো লাগছে না
সুমাইয়া — কেন
ইতি — এত প্রশ্ন করিস না তো
সুমাইয়া — ঠিক আছে,এখন ঘুমা।

কিছু দিন কেটে গেল,,,,,,,,
ইতি ক্লাস থেকে বের হয়ে হাটছে তখন ওর হাত টান দিয়ে কেউ অন্য ক্লাসে নিয়ে গেল।
ইতি — তুমি আমাকে যেতে দাও
ফারদিন — দেব যেতে তার আগে বল, তোর হয়েছে টা কি
ইতি — আমার কি হবে, আমি তো একদম ঠিক আছি
ফারদিন —তুই কিছু দিন ধরে একদম চুপচাপ থাকছিস, কিছু একটা ভাবছি বল আমাকে
ইতি — কিছু না
ফারদিন — মার খাবি এখন বল তাড়াতাড়ি
ইতি — বললাম না কিছু না
ফারদিন রেগে তাকিয়ে বলল
ফারদিন — এই মাথা খারাপ করিস না।
ইতি — আমার আসলে আমাদের বিষয়টা নিয়ে ভয় হচ্ছে
ফারদিন — কেন
ইতি — যদি ফ্যামিলি থেকে না মেনে নেয়,আর আব্বু যদি আমার বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক করে ফেলে, আমি তো আব্বুকে কিছু বলতেও পারব না
ফারদিন — দূর পাগলী এই সব নিয়ে কেউ ভাবে
ইতি — আমার খুব ভয় হয় এইসব ভেবে, আমরা সব কিছু ভুলে যাই, যে যার লাইফে নিজের মতো মুভ ওন করি।তুমি তোমার লাইফে খুব ভালো মেয়ে পাবে যে তোমাকে খুব ভালোবাসবে
ফারদিন চুপ হয়ে, রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ইতির দিকে,, তারপর কিছু না বলে ওর সামনে থেকে চলে গেল।

ফারদিন ভার্সিটির গেট দিয়ে বের হচ্ছে, ইতি পিছন থেকে বলল
ইতি — শোনো
ফারদিন কিছু না বলে দাড়ালো
ইতি — সুমাইয়া ক্লাসে ওর আর দুইটা ক্লাস আছে, আমি বাড়ী ফিরব আমার টাকা হারিয়ে ফেলেছি আমাকে তোমার সাথে বাইকে করে নিয়ে চল না
ফারদিন কিছু না বলে বাইকে উঠে চলে গেল।ইতি অবাক হয়ে বলল
ইতি — যা বাবা চলে গেল,হয় তো রেগে আছে কিন্তু আমার কিছু করার নেই এটাই আমাদের জন্য ভালো।
ইতি দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসব ভাবছে, তখন একটা রিকশাচালক এসে বলল
রিকশাচালক — আহেন
ইতি — কোথায়
রিকশাচালক — আপনার বাসায় পৌছাইয়া দিয়া আসমু।
ইতি — আমার কাছে টাকা নেই
রিকশা চালক— ভাড়া দেওয়া লাগব না, ভাড়া দেওয়া হইয়া গেসে
ইতি — কে দিল
রিকশা চালক — এই দিক দিয়া বাইকে কইরা একটা পোলা গেল না ওই পোলা
ইতি বুঝতে পারলো ফারদিন,, ইতি আর কিছু না বলে উঠে পড়লো, এইসব ভাবতে ভাবতে বাসায় পৌছে গেল।

চলবে,,,,,,,
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন