অনুভবে থাক যে তুমি পর্ব-০৬

0
2716

#অনুভবে_থাক_যে_তুমি
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পর্ব_০৬

রাতের দিকে,,,,,,
সবাই এক সাথে বসে খাবার খাচ্ছে। ফারদিন ইতির সামনে বসা কিন্তু একবারের জন্য ও তাকাচ্ছে না।
ফারদিন — মা ডালটা দেও তো
ইতির সামনে ডালের বাটি ছিল,ইতি ডালের বাটি থেকে ফারদিনের বেল্টে দিল,আর সাথে সাথে ফারদিন খাওয়া ছেড়ে উঠে গেল।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ফারদিনের দিকে
ফারদিনের বাবা — কি হয়েছে তোর উঠে গেলি কেন
ফারদিন — এমনি আমি আর খাব না।

বলেই হনহন করে চলে গেল।ইতি মনটা খারাপ করে উঠে গেল।
ফারদিনের মা — তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস
ইতি — রুমে
ফারদিনের বাবা — কেন, খাবার খাবি না
ইতি — আর খেতে ইচ্ছে করছে না,আমার পড়া আছে

বলেই ইতি ও চলে গেল। সবাই ব্যাপারটাকে নরমালি ভাবে নিলেও,সুমাইয়ার কাছে ব্যাপার টা সন্দেহ জনক মনে হচ্ছে। সুমাইয়া রুমে গিয়ে দেখে ইতি চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছে, আর লেম্পের লাইট একবার ওন করছে আরেক বার ওফ করছে।
সুমাইয়া — কি হয়েছে তোদের
ইতি — কাদের
সুমাইয়া — ভাইয়া আর তোর কথা বলছি, কোনো ঝগড়া হয়েছে।
ইতি — না
সুমাইয়া — তাহলে তোরা এমন করছিস কেন, আর ভাইয়া তো মনে হয় অনেক রেগে আছে, কিছু করেছিস তুই
ইতি — আমি কি করব
সুমাইয়া — তুই বলবি নাকি আমিও তোর সাথে কথা বন্ধ করে দেব।
ইতি — শুধু বলেছি সব কিছু ভুলে ওর জীবনটা নতুন করে শুরু করুক
সুমাইয়া —- কি??????মানে
ইতি — হুম,,, ওর আর আমার মাঝে কোনো অন্য সম্পর্ক থাকবে না।
সুমাইয়া —কি তোর মাথা ঠিক আছে,তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস

অন্যদিকে,,,,,,,
প্রিয় — ফারদিন তুই একটু শান্ত হো
ফারদিন —- কিভাবে শান্ত হব, আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না, ও কিভাবে বলল সব কিছু ভুলে যাওয়ার কথা
প্রিয় — ও হয় তো কোনো কারনে বলেছে,আর তুই এমন করিস না
ফারদিন — ও এই সব বলে আমাকে খুব আঘাত করেছে, খুব কষ্ট দিয়েছে,
প্রিয় — তুই কি তাহলে ও যা বলেছে তা করবি
ফারদিন — না, ও বললেই আমি ওকে ছেড়ে দেব নাকি, ও শুধু আমার, শুধু মাএ আমার,কিন্তু ও আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে, ওকেও কষ্ট পেতে হবে।
প্রিয় — দেখ সব ঠিক করে ফেল
ফারদিন — সব তো ঠিক হবেই, ও নিজে এসে বলবে

ওইদিকে,,,,,,,,,,,,,,,
সুমাইয়া — তোর ভাগ্য ভালো ভাইয়া তোকে মারে নিই।
ইতি — আমার কিছু করার নেই, আব্বু যদি অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করে তাহলে আমি আব্বুর মুখের ওপর না করতে পারব না
সুমাইয়া — তুই এসব ভাবিস না তো,সব ঠিক হয়ে যাবে
ইতি — কিছু ঠিক হবে না, কিছু না
সুমাইয়া — তুই ও তো ভাইয়াকে ভালোবাসিস, তাহলে কেন,,,
আর কিছু বলার আগেই ইতি বলে উঠল
ইতি — আমি ঘুমাতে চাই
সুমাইয়া — আপু
ইতি — প্লিজ আমাকে ঘুমাতে দে
সুমাইয়া — ঠিক আছে, তুই ঘুমা আমি তোর মাথায় বুলিয়ে দেই
ইতি — ঠিক আছে।

ইতি সুমাইয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো,ইতির চোখের পানি সুমাইয়া শরীরে স্পর্শ হতেই সুমাইয়া বুঝতে পারলো, ও কান্না করছে,সুমাইয়া মনে মনে বলতে লাগল
সুমাইয়া — না এদের ঝামেলা শেষ করতেই হবে।

পরের দিন ভার্সিটিতে,,,,,,,,
প্রিয় — তুমি এখানে কেন ডেকেছ কিছু বলবে
সুমাইয়া — তুমি কি ভাইয়া আর আপুর বিষয়টা জানো না
প্রিয় — জানি
সুমাইয়া — কিছু একটা করতে হবে
প্রিয় — হুম
সুমাইয়া — পেয়েছি
প্রিয় — কি
সুমাইয়া — একটা কাজ করি, কিছু গুন্ডা ভাড়া করি
প্রিয় — করে
সুমাইয়া — ওই গুলোকে দিয়ে আপুকে বিরক্ত করা বো,ভাইয়া গিয়ে বাচাবে
প্রিয় — তোমার মাথা পুরোটাই ফাকা, এই সব মুভিতেই হয়।তোমাকে ভাবতে হবে না, আমাকে ভাবতে দেও।
সুমাইয়া গাল ফুলিয়ে বলল
সুমাইয়া — ঠিক আছে।

অন্যদিকে,,,,,,,
ইতি ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছে, আর ফারদিন ওর সামনে দিয়ে আসছে,ফারদিন ওকে না দেখার মতো হেটে চলে গেল।

ইতি কিছুখন পর সুমাইয়াকে ফোন করলো,,
ইতি — হ্যালো তুই কোথায়
সুমাইয়া — কেন আপু
ইতি — কথা ছিল, ক্যাম্পাসে আয়
সুমাইয়া — কিছু হয়েছে আপু
ইতি — এত কথা বলছিস কেন, আসতে বলেছি আয়
সুমাইয়া — ঠিক আছে আসছি

একটুপর সুমাইয়া আসলো,
সুমাইয়া — বল
ইতি — ভাবছি সিলেটে যাব
সুমাইয়া — ও হ্যা আব্বু তো যেতে বলেছিল
ইতি — আজ রাতে বাসে যাব
সুমাইয়া — আজই
ইতি — হ্যা এখানে আর ভালো লাগছে না,কিছু দিন ওখানে থেকে ঘুরে আসি
সুমাইয়া — ঠিক আছে, আমি ভাইয়া আর প্রিয় ভাইয়াকে জানাই
ইতি — আর জানিয়ে কি হবে, যাবে না
সুমাইয়া — জিজ্ঞেস করে দেখি

সন্ধ্যার দিকে,,,,,,,,,
সুমাইয়া ফারদিনের কাছে গিয়ে বলল
সুমাইয়া — ওই
ফারদিন — কি হয়েছে
সুমাইয়া — তোমরা যাবে না
ফারদিন — আমি যাব না, প্রিয় যাবে নাকি জিজ্ঞেস কর
সুমাইয়া – তুমি যাবা
প্রিয় — না
আবার কি ভেবে বলল
প্রিয় — হ্যা যাব
ফারদিন — সত্যি তুই যাবি
প্রিয় — হ্যা যাব
ফারদিন — ওকে
সুমাইয়া — তাহলে সব গুছিয়ে নেও

যাওয়ার সময় হলো,,,,,
ইতি — কাকী মা আসি
ফারদিনের মা — সাবধানে যাস তোরা
প্রিয় — আমি আছি আন্টি চিন্তা করবেন না
ফারদিনের মা — হ্যা তুমি থাকতে চিন্তা নেই,কিন্তু ফারদিন কেন যাচ্ছে না বুঝলাম না
সুমাইয়া — বাদ দেও, আমরা আসি
ফারদিনের মা — ঠিক আছে

ওরা সবাই বাস স্টেশনে গেল।ইতির মনটা খুব খারাপ
ইতি — সত্যি আসল না ( মনে মনে)
প্রিয় — চল যাওয়া যাক বাস ওপাশে
সুমাইয়া — হুম চল আপু
ইতি — হুম

আগের থেকেই চারটা সিট কাটা ছিল,এক সিটের পিছনের সিট, প্রথমটায় ইতি আর সুমাইয়া বসলো,তার পরের টায় প্রিয় বসলো।
প্রিয় — গাড়ি ছাড়তে দশ মিনিট লাগবে, কিছু প্রয়োজন হলে বল নিয়ে আসবো, আমি নিচে গেলাম
ইতি — ঠিক আছে।
ইতি সুমাইয়া কাধে মাথা রেখে বলল
ইতি — দেখলি ও আসলো না
সুমাইয়া — থাক, তুই এটা বল,হুট করে কেন আর কিছু দিন পর যাওয়ার কথা ছিল তো
ইতি – আব্বু কাল রাতে ফোন করে তাড়াতাড়ি যেতে বলল, আমি জানি না কেন এত তাড়াতাড়ি যেতে বলল
সুমাইয়া — ও, আপু তুই একটু থাক আমি ওয়াসরুমে যাব
ইতি — ঠিক আছে।

সুমাইয়া উঠে নিচে গেল।ইতি জানালা খুলে বাহিরের খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
মনের মাঝে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে, মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছি যা, তা কি আদৌও ফিরে পাব নাকি জানি না।মনের গহীন কোণে একাকীত্ব, হতাশা,আর মন খারাপের রাজ্য দখল করে নিয়েছে।

এর মাঝে মনে হলো, বাসের সিটে কেউ বসেছে, সুমাইয়া ছাড়া আর কে হবে।ইতি আবার সুমাইয়া কাধে হেলান দিয়ে বলতে লাগল
ইতি — ভালো লাগছে না রে,মনের মাঝে এক শূন্যতা কাজ করছে।
এর মাঝে ইতি একটা খুব পরিচিত পারফিউম এর গন্ধ অনুভব করলো,ইতি বলে উঠতে লাগল
ইতি — এই স্মেইল টা তো,,,,
বলতে বলতে উঠে ফারদিনকে দেখে হা হয়ে গেল।
ইতি — তুমি এখানে
ফারদিন –,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
এর মাঝে সুমাইয়া প্রিয় গাড়িতে উঠে অবাক হয়ে বলল
সুমাইয়া — তুমি
প্রিয় — তুই বলে আসবি না
ফারদিন —- বাড়ীতে একা ভালো লাগছিল না, তাই চলে আসলাম
প্রিয় — ভালো করেছি
সুমাইয়া — তুমি আমার সিটে বসা
ফারদিন — দূর আর উঠতে পারব না, তুই অন্য সিটে বস
সুমাইয়া — ঠিক আছে।

পিছনের সিটে সুমাইয়া আর প্রিয় বসলো।সুমাইয়ার একটু অন্যরকম লাগছে,প্রিয় এটা খেয়াল করল
প্রিয় — তোমার অসুবিধা হলে আমি পিছনের সিটে গিয়ে বসি
সুমাইয়া — না না আমি ঠিক আছি।কিন্তু ভাইয়াকে দেখে অবাক হলাম
প্রিয় — আমি জানতাম আসবে,,,
সুমাইয়া — হুম
প্রিয় — জুস খাবে
সুমাইয়া — অরেঞ্জ জুস তো
প্রিয় — হুম
সুমাইয়া — দাও

আর ওদিকে,,,,,,,
ইতি আর ফারদিন চুপচাপ বসে আছে।পিছন থেকে সুমাইয়া বলে উঠল
সুমাইয়া — ভাইয়া আপু জুস খাবে
ইতি — না
ফারদিন– পানির বোতলটা দে
প্রিয় — এই নেও

ফারদিন পানিটা নিয়ে খেয়ে রাখতে গিয়ে গাড়ির ঝাকিতে পানির বোতলের পানি গিয়ে পড়লো ইতির শরীরে,,,
ইতি — এটা কি করলা
ফারদিন — ইচ্ছে করে করি নিই
ইতি — ইচ্ছে করে করস
ফারদিন — ঠিক আছে দোস যখন আমার ওপরই পড়লো, তাই করি
বলেই বোতলের পানি ইতির মুখে ফিক্কে দিল,ইতি অবাক হয়ে গেল
ইতি — এটা কি করলা😠
ফারদিন — কেন তখন না করে আমাকে দোষী বানিয়ে ছিলি, তাই এখন করলাম যা খুশি তা বল
সুমাইয়া — আরে তোমরা কি করছ এখানে অন্য যাএীরাও আছে।

ইতি রেগে জানলার দিকে ঘুরে বসলো আর মুখ মুছতে লাগল।
অন্য দিকে, সুমাইয়া ফোনে গেম খেলছে হঠাৎ কাধে ভাড়ী কিছু অনুভব করল,তাকিয়ে দেখে প্রিয় কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে,সুমাইয়ার ঠোটের কোণারে হাসি খেলা করে উঠলো।

অন্যদিকে,,,,,,,,,,
ফারদিন ইতির দিকে তাকিয়ে দেখে ইতি জানালায় মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ফারদিন কিছুখন তাকিয়ে থেকে, ইতির মাথা নিজের কাধে রেখে, ইতি শরীরে নিজের খুলে রাখা জ্যাকেট টা মুড়িয়ে দিল।তারপর ওর মাথার ওপর মাথা রেখে পরম শান্তিতে চোখ দুজোড়া বন্ধ করে নিল।

চলবে,,,,,,,,,

ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন