অনুভবে থাক যে তুমি পর্ব-০৭

0
3015

#অনুভবে_থাক_যে_তুমি
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পর্ব_০৭

ভোর ৬ টার মাঝে সিলেটে গিয়ে পৌছালো সবাই,,,,,,,,,
বাস থেকে নেমেই রিকশা নিল,তারপর পাঠানো ঠিকানায় পৌছালো,বাড়িতে গিয়ে কলিং বেল দিতেই ইতির আব্বু এসে দরজা খুললো।
ইতির বাবা — তোরা এসে পড়েছিস , সমস্যা হয় নিই তো
ফারদিন — না ছোট আব্বু
ইতি — কেমন আছ তুমি
ইতির বাবা — ভালো আছি
প্রিয় — আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল
ইতির বাবা — ওয়ালাইকুম আসসালাম
প্রিয় — আমি প্রিয় ফারদিনের বন্ধু আপনার সাথে ফোনে কথা হয়ে ছিল
ইতির বাবা — হ্যা মনে পড়েছে, কেমন আছ বাবা
প্রিয় — ভালো
সুমাইয়া — আমাকে কি চোখে লাগছে না
সুমাইয়ার বাবা — দূর পাগলী তুই তো আমার ছোট রাজকুমারী
সুমাইয়া –😊😊
সুমাইয়ার বাবা — সবাই ফ্রেশ হয়ে নেয় তোদের জন্য খাবার রেডি করতে বলি আবুলকে
ফারদিন — ঠিক আছে।

যে যার রুমে চলে গেল।ইতি রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো সাথে সুমাইয়াও
ইতি — শুয়ে পড়লি কেন যা ফ্রেশ হো
সুমাইয়া — তুই ও তো শুয়ে পড়েছিস
ইতি — খুব ক্লান্ত লাগছে
সুমাইয়া — আমারও
ইতি — তাহলে শুয়ে থাক
সুমাইয়া — দেখলি
ইতি — কি
সুমাইয়া — ভাইয়াও চলে এসেছে,
ইতি — হুম
সুমাইয়া — হুম মানে
ইতি — চুপ কর বাচাল
সুমাইয়া — ওই কথা সামলে বল
ইতি — ইশশশ যা ভাগ
সুমাইয়া — তোকে তো আমি
বলেই কাতুকুতু দিতে লাগল।

রাতের দিকে,,,,,,,,,
ইতির বাবা বিছানায় শুয়ে শুয়ে উপন্যাস পড়ছে,ইতি গিয়ে বলতে লাগল
ইতি — তোমার রাত জাগার স্বভাবটা গেল না
ইতির বাবা হেসে বলল
ইতির বাবা — কোনো দিনই যাবে না মা
ইতি — কিন্তু এভাবে রাত জাগলে তো তোমার শরীর খারাপ করবে
ইতির বাবা — তুই তো জানিস তোর মা চলে যাওয়ার পর থেকেই রাত জাগাটা আমার রোগে পরিবর্তন হয়েছে।
ইতি — কি বই পড়ছ
ইতির বাবা — উপন্যাস,হুমায়ুন আহমেদর
ইতি — তোমার থেকে এই স্বভাব আমাকে পেয়েছে,প্রত্যক দিন একটা করে বই না পড়লে মনে হয় পেটের ভাত হজম হয় না
ইতির বাবা — হাহাহা,, তুই তো আমার মতো হয়েছিস, আর সুমাইয়া হয়েছে তোর মার মতো।
এর মাঝে সুমাইয়া এসে বলতে লাগল
সুমাইয়া — আমাকে ছাড়াই গল্প করছ
সুমাইয়ার বাবা — আয়
সুমাইয়া — কি কথা বলছিলে
ইতি — তেমন কিছু না
ইতির বাবা — বলছিলাম যে তুই তোর মার মতো হয়েছিস
সুমাইয়া — তাই নাকি, মা কি আমার মতো ছিল
ইতির বাবা — হ্যা, স্বভাব পুরো তোর মার মতো,
ইতি — আব্বু মনে আছে সুমু একবার যে ডাসবিনে পড়ে গিয়ে ছিল,ওকে তো পুরো ভূতের মতো দেখা গিয়ে ছিল😂
ইতির বাবা — হ্যা ঠিক বলেছিস😄
সুমাইয়া — হাসি বন্ধ করবা তোমরা 😡

পরের দিন সকালে,,,,,,
সবাই এক সাথে বসে খাবার খাচ্ছে,,,,
ফারদিন — ছোট আব্বু আজ থাক না, সবাই এক সাথে বাহিরে যাব
ইতির বাবা — না বাবা তোরা যা আমার কাজ আছে।
প্রিয় — কিন্তু যাওয়া হবে কোথায়
ইতির বাবা — সামনেই নদীর ওদিকে একটা ব্রিজ আছে,ওখানে গাড়ি চলাচল খুব কম হয়, কিন্তু ওখানে অনেক মানুষ ঘুরতেও যায় তোরা ওখানে যেতে পারিস
সুমাইয়া — হুম খুব মজা হবে, ওখানে থেকে পাহাড় দেখা যাবে,কখন যাব
ফারদিন — বিকেলের দিকে যাব কি বলিস
প্রিয় — ঠিক বলেছিস
সুমাইয়া — তাহলে ডান,ওখানেই যাব

বিকেল এর দিকে,,,,,,,,,
সবাই রেডি হচ্ছে বাহিরে যাওয়ার জন্য,,,,,
সুমাইয়া — আপু বল না আমাকে কোন ড্রেস টায় ভালো লাগবে, লাল টায় নাকি গোলাপি টায়
ইতি — গোলাপী টায় মানাবে
সুমাইয়া — ঠিক আছে তাহলে এটাই পড়বো,আর তুই ওই কালো ড্রেসটা পড়িস তোকে ওইটায় মানাবে
ইতি — আমি যাব না
সুমাইয়া — কি বলছিস তুই
ইতি — হুম ভালো লাগছে না,,,
সুমাইয়া — প্লিজ চল তোর ভালো লাগবে
ইতি — বললাম না যাব না

কিছুখন পর ফারদিন আর প্রিয় ওদের রুমে আসলো
প্রিয় — রেডি তো স,বা,,,ই
বলেই চুপ হয়ে গেল,চোখ যেন ফিরাতে পারছে না সুমাইয়ার থেকে, মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। ফারদিন কাশি প্রিয়র হুশ ফিরালো।
প্রিয় — ক,,ক,ক,কি হয়েছে
ফারদিন — তুই কিছু বলছিলি
প্রিয় — হ্যা হ্যা বলছিলাম, কিন্তু কি বলছিলাম
বলেই ভাবতে লাগল,আর সবাই মুখ চেপে হাসতে লাগল,আর সুমাইয়া লজ্জা পেয়ে গেল।
প্রিয় — হ্যা মনে পড়েছে,তোমরা রেডি
সুমাইয়া — হুম,কিন্তু আপু বলে যাবে না
প্রিয় — কি??? কেন ইতি চল প্লিজ, এটা কেমন কথা
ইতি — আমি যাব না,প্রিয় ভাইয়া তোমরা যাও
সুমাইয়া — আপু প্লিজ চল
প্রিয় — হ্যা চল
ইতি — না না যাব না
ফারদিন গম্ভীরমুখে প্লাস রাগ নিয়ে বলল
ফারদিন —- সুমু ওকে বলে দে,ওর জন্য যেন আমাদের যাওয়া নষ্ট না হয়, ওকে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিতে বল
ইতি — আমি যাব না
ফারদিন এখন ওর দিকে তাকিয়ে ধমকে বলল
ফারদিন — আমি কোনো মতামত শুনতে চাই নিই
ইতি এবার গাল ফুলিয়ে রেডি হতে গেল।

তারপর সবাই বের হলো ঘুরার উদ্দেশ্যে, সবাই ওই ব্রিজের দিকে গেল।
সুমাইয়া — ওয়াও কত সুন্দর না জায়গাটা
ইতি — হুম
প্রিয় — জায়গাটা আসলেই খুব সুন্দর
ফারদিন — পাহাড় গুলো দেখেছিস, কত বিশাল
সুমাইয়া — হুম

সুমাইয়া ব্রিজে নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল
সুমাইয়া — ওয়াও
ফারদিন — কি হয়েছে
সুমাইয়া — দেখ নৌকা, আমি নৌকায় উঠবো
ফারদিন — আমার নৌকায় ওঠার কোনো ইচ্ছে নাই
সুমাইয়া — আপু চল না
ইতি — না ভালো লাগছে না
সুমাইয়া — তুই তো ভালো লাগছে না রোগে আক্রান্ত, আমি কি একা যাব তাহলে
প্রিয় — চল আমিও যাব।
সুমাইয়া — সত্যি
প্রিয় — হুম
সুমাইয়া — ওকে, তাহলে তোমরা এখানে থাক, আমরা যাচ্ছি

ওরা দুজন গিয়ে নৌকায় উঠলো,,,,,
প্রিয় — বেশী কর্ণারে যেও না
সুমাইয়া — ঠিক আছে, ভালো হলো না
প্রিয় — কি ভালো হলো
সুমাইয়া — এই যে ওরা কিছুখন একা একা সাথে আছে
প্রিয় — হুম
সুমাইয়া — আর আমরাও,,,
বলেই চুপ হয়ে গেল।সুমাইয়া মনে মনে বলতে লাগল
সুমাইয়া — ইশশশশ কি যে বললাম, মুখে কিছু আটকায় না
এইসব ভেবে মুখে নকল হাসি টেনে বলতে লাগল
সুমাইয়া — ইয়ে মানে, আমার কথার মানে ছিল, যে আমরাও আমাদের ইচ্ছে পুরোন করতে পারলাম নৌকায় চরে😅😅
প্রিয় — হুম
বলেই মুচকি হাসলো প্রিয়

অন্যদিকে,,,,,,,
ইতি আর ফারদিন, দুইজন দুই সীমানায় চুপচাপ দাড়িয়ে আছে, দুজন মনে হয় দুজনকে চেনেই না।দুজন দুজনের দিকে প্রায় আড়চোখে দেখছে কিন্তু চোখ পড়তেই আবার সাথে সাথে সরিয়ে ফেলছে
এর মাঝে একটা মেয়ে এসে ফারদিনকে বলল
মেয়েটা — আপনি একটু হেল্প করতে পারবেন
ফারদিন — কি হেল্প
মেয়েটা — আমরা ফ্রেন্ডরা ঘুরতে এসেছি, সবাই এক সাথে একটা ছবি তুলবো, আপনি যদি কষ্ট করে ছবি তুলে দিতেন।
ফারদিন এক নজর ইতির দিকে তাকালো,ইতি রেগে পুরো আগুন,
ফারদিন — ঠিক আছে।

ফারদিন গিয়ে ছবি তুলতে লাগল,ছবি তোলা শেষ করে ফারদিন বলল
ফারদিন — এই নিন
মেয়ে গুলো ছবি দেখে বলল
মেয়েটা — অসংখ্য ধন্যবাদ,খুব সুন্দর হয়েছে
ফারদিন একটু ইতির দিকে তাকিয়ে বলল
ফারদিন — যদি মানুষ গুলোই এত সুন্দর হয় তাহলে তো ছবি সুন্দর হবেই।
ওদের মাঝে আরেকটা মেয়ে বলে উঠল
মেয়েটা — একটা কথা জিজ্ঞেস করব যদি কিছু না মনে করেন
ফারদিন — বলুন
মেয়েটা — আপনি কি সিঙ্গেল
ফারদিন কিছু বলার আগেই ইতির এসে ফারদিন এর হাত ধরে বলতে লাগল
ইতি — ছবি তোলা শেষ হয় নিই
ওই মেয়েটা বলে উঠল
মেয়েটা — আপনি কে
ইতি — ও সিঙ্গেল না বুঝেছ,
মেয়েটা — হুম

বলার পর ইতি ফারদিনকে হাত ধরে ওদের থেকে দূরে নিয়ে গেল।
ইতি — কি করছিলে, মেয়ে দেখলে কথা বলতে ইচ্ছে করে তাই না😠
ফারদিন — তাতে তোর কি
ইতি — আমার কি মানে
ফারদিন — কেন তুইও আমার লাইফে থাকবি না আর অন্য কাউকেও আসতে দিবি না
ইতি আর কিছু না বলে সামনে তাকালো আর মনে মনে বলতে লাগল
ইতি — ঠিকই তো, আমি কেন এমন করছি, যা খুশি তা করুক

কিছুখন পর প্রিয় আর সুমাইয়া আসলো,এসে দুজন দুজনকে বলতে লাগল
সুমাইয়া — কি ব্যাপার এখানে এই পরিবেশ কেন
প্রিয় — বুঝতে পারছি না,চল গিয়ে দেখি
ওদের কাছে গিয়ে বলল
সুমাইয়া — আমরা চলে এসেছি
ইতি — চল ফিরা যাক
প্রিয় — এখনিই
সুমাইয়া — আপু আর কিছুখন থাক না
ইতি — তুই থাক তাহলে আমি যাচ্ছি
বলেই হাটা দিল।
সুমাইয়া — আরে এত চলে যাচ্ছে 😨 আপু দাড়া,,,,,,,৷
প্রিয় — তোদের আবার ঝগড়া হয়েছে
ফারদিন — চল আমিও বাড়ী যাব
প্রিয় — ঠিক আছে

রাতের দিকে,,,,,,,
ইতির বাবা আর ফারদিন বসে টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখছে
ইতির বাবা– ফারদু শোন
ফারদিন — বল
ইতির বাবা –প্রিয় কোথায়
ফারদিন –ও ওয়াসরুমে গিয়েছে চলে আসবে এখন,
ইতির বাবা — আচ্ছা প্রিয় ছেলেটা কেমন রে
ফারদিন — খুবই ভালো কেন
ইতির বাবা — ভাবছি প্রিয়কে জামাই বানিয়ে নেব,খুব ভালো ছেলেটা ওর ফ্যামিলির সাথে কথা বলতে হবে
ফারদিন কিছুখন চুপ থেকে বলল
ফারদিন — কার সাথে বিয়ে দেবে ভাবছ
ইতির বাবা — আর কার ইতির সাথে, খুব মানাবে না ওদের
ফারদিনের যেন শ্বাস গলায় আটকে গেছে, নিশ্বাস ফেলতে পারছে না,তাও নিজেকে কোনো মতো সামলে বলল
ফারদিন — হহ,হ,,,,,,হ্যা মা,,,ম,মানাবে,আমার মনে হয় তোমাকে ওর সাথে কথা বলা দরকার ও কি চায়
ইতির বাবা — হ্যা আসুক কথা বলব

কিছুখন পর,,,, প্রিয় আসলো
ইতির বাবা — চলে এসেছ,তোমার সাথে কিছু কথা ছিল
প্রিয় — বলুন
ইতির বাবা — ইতিকে তোমার কেমন লাগে
প্রিয় একবার ফারদিনের দিকে তাকালো,
প্রিয় — ইতি তো খুব ভালো মেয়ে অপছন্দ করার কোনো কারণ নেই
ইতির বাবা — বিয়ে কি করবে না
প্রিয় — করব আরও সময় লাগবে
ইতির বাবা — আমি চাই, আমার মেয়েটাকে তোমার হাতে তুলে দিতে, তুমি খুব ভালো রাখবে ওকে
প্রিয় একটু ঘাবড়ে গেল।
প্রিয় — মানে আঙ্কেল 😅
ইতির বাবা — তুমি আমার মেয়ে ইতিকে বিয়ে করবে
প্রিয় — হ্যা বিয়ে করব
ফারদিন অবাক হয়ে প্রিয়র দিকে তাকালো

চলবে,,,,,,,,

ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন