অনুভবে থাক যে তুমি পর্ব-০৮

0
2924

#অনুভবে_থাক_যে_তুমি
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পর্ব_০৮

ফারদিন মনে হয় বোকা হয়ে গেছে প্রিয়র কথা শুনে কি বলছে এইসব প্রিয়।
প্রিয় — হ্যা আঙ্কেল আমি বিয়ে করব আপনার মেয়েকে, কিন্তু ইতিকে না আমি সুমাইয়াকে বিয়ে করতে চাই।
ফারদিন এখন একটু শান্তির নিশ্বাস ফেলল।
ইতির বাবা — কি বলছ তুমি
প্রিয় — হ্যা আমি সুমাইয়াকে পছন্দ করি, আর ওকে বিয়ে করতে চাই
ইতির বাবা — ভালো হয়েছে তুমি সত্যটা বলে দিলে।
ফারদিন — ছোট আব্বু কি করবে
ইতির বাবা — সুমাইয়াকে জিজ্ঞেস করব, ব্যাপারটা নিয়ে
প্রিয় — হুম
ইতির বাবা — চল সবাই আবার খেলা দেখি।
ফারদিন — হুম

কিছুখন পর যে যার রুমে চলে গেল।ফারদিন প্রিয়কে বলতে লাগল
ফারদিন — আরে তুই ও তো
প্রিয় — কি
ফারদিন — আরে ব্যাটা আর একটু হলে তো মনে হয় আমার হার্ট ফেল হয়ে যেত।
প্রিয় — 😄
ফারদিন — হাসিস না তো চিন্তা হচ্ছে খুব, তোর তো সব ঠিক হয়ে গেল।
প্রিয় — আসলেই ভাবি নিই সব কিছু এত সহজে হয়ে যাবে,কিন্তু আমার মনে হয় আঙ্কেল ইতির বিয়ে নিয়ে ভাবছে
ফারদিন — হুম

এর মাঝে ইতির বাবা, ফারদিন আর প্রিয়র কাছে আসলো
ফারদিন — ছোট আব্বু তুমি এই সময়
প্রিয় — কিছু বলবেন আঙ্কেল
ইতির বাবা — হ্যা, আমি মাএ ইতি আর সুমাইয়ার কাছ থেকে আসলাম, সুমাইয়া কোনো অমত জানায় নিই
কথা শোনার সাথে সাথে প্রিয়র মুখে রাজ্য জয় করার মতো হাসি লাফিয়ে উঠলো
প্রিয় — সত্যি😃
বলে চুপ হয়ে গেল,
প্রিয় — না মানে 😅
ইতির বাবা — আমি তোমার পরিবারের সাথে কথা বলব,এবারের ফাইনাল পরিক্ষা টা হয়ে গেলেই তোমাদের বিয়ে দেব।
ফারদিন — ওহো প্রিয় অভিনন্দন তাহলে সামনে একটা বিয়ে খাওয়া পড়বে
ইতির বাবা — একটা না দুইটা
ফারদিন — মানে বুঝলাম না
ইতির বাবা একটা ছবি ওদের দেখিয়ে বলল
ইতির বাবা — দেখ তো ছেলেটা কেমন
প্রিয় — হুম খুব ভালো দেখতে
ফারদিন — এই ছেলেটা কে ছোট আব্বু
ইতির বাবা — ওর নাম আকাশ, আমার অফিসেই কাজ করে, খুব ভালো ছেলে। কাল ডেকেছি আসবে ইতির সাথে কথা বলতে।ভালো হবে না
প্রিয় এক নজর ফারদিনের দিকে তাকালো,,

কিছুখন পর ইতির বাবা চলে গেল।
ফারদিন — দেখলি ছোট আব্বু কি সব বলে গেল
প্রিয় — দেখ শান্ত হো, সব ঠিক হয়ে যাবে
ফারদিন — দূর,,,,

অন্যদিকে,,,,,
ইতি — যা ভেবে ছিলাম,দেখলি আব্বু কেন এত তাড়াতাড়ি আসতে বলে ছিল
সুমাইয়া — হুম,আসলেই
ইতি — আর ভালো লাগছে না,আমার সাথেই কেন এমন হয়
সুমাইয়া — চিন্তা করিস না আব্বুকে গিয়ে বলে দে যে তুই ওই ছেলেকে বিয়ে করবি না, তুই ভাইয়াকে ভালোবাসিস।
ইতি — না,,, আব্বুকে বলতে পারব না,আব্বুকে কষ্ট দিতে চাই না
সুমাইয়া –তাহলে কি করবি
ইতি — যেভাবে সব চলছে সেভাবেই চলুক
সুমাইয়া —ওফফ আপু এত ইমোশনাল হলে চলে না, আব্বুকে বল, আব্বু বুঝবে
ইতি — চুপ কর ভালো লাগছে না

সকালে,,,,,,,,,আজ ছুটির দিন তাই বাড়ীতে ইতির আব্বুও আছে।ড্রইংরুমে ইতির বাবা, প্রিয় আর ফারদিন বসে বসে টিভি দেখছে,এর মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠল, সুমাইয়া গিয়ে দরজা খুললো,,
সুমাইয়া — আপনি কে
আকাশ — আমি আকাশ, আঙ্কেল কি বাড়ীতে আছে
সুমাইয়া — আকাশ নামটা শুনেছি কোথায় যেন, হ্যা মনে পড়েছে আব্বু বলে ছিল,ওওওও আপনি আসুন
আকাশ — হুম আপনি কি
সুমাইয়া — না না না, আমি সুমাইয়া,, আমার বড় বোনের সাথে কথা বলতে এসেছেন, ভিতরে আসুন না

আকাশ ভিতরে গেল,,,,,,,
ইতির বাবা — আরে আকাশ আসো
আকাশ — কেমন আছেন আঙ্কেল
ইতির বাবা — ভালো, ফারদিন প্রিয় ও আকাশ
প্রিয় — হ্যালো কেমন আছেন
আকাশ — ভালো, আপনি
প্রিয় — আমিও
ইতির বাবা — সুমাইয়া ইতিকে ডাক দে
সুমাইয়া একবার ফারদিনের দিকে তাকিয়ে বলল
সুমাইয়া — ঠিক আছে
ইতির বাবা — ফারদিন পরিচয় হো, আর আকাশ ও হলো ফারদিন আমার বড় ভাইয়ের একমাএ ছেলে,
ফারদিন মনে হয় চোখ দিয়ে ভষ্স করে দেবে আকাশকে,তাও উঠে গিয়ে হাত মিলালো
ফারদিন — হ্যালো মিস্টার আকাশ,পরিচয় হয়ে ভালো লাগল
আকাশ — আমারও
আকাশ হাত টানছে কিন্তু ফারদিন হাত ছাড়ছেই না
আকাশ — আমার হাতটা
ফারদিন — ও, সরি
আকাশ — কোনো ব্যাপার না

এর মাঝে সুমাইয়া আর ইতি আসলো,,ইতি এসে দাড়াতেই আকাশ ভ্যাবলার মতো হা হয়ে তাকিয়ে আছে,সুমাইয়া আর প্রিয় ভয়ে ভয়ে ফারদিনের দিকে তাকাচ্ছে কখন কি বলে ফেলে কে জানে,আর ফারদিন পারলে তো আকাশকে তুলে আকাশে ফিক্কে দিয়ে উড়িয়ে দেবে।ফারদিন হঠাৎ চিল্লিয়ে উঠলো
ফারদিন — আ,,,,,,,
সবাই অবাক হয়ে ফারদিনের দিকে তাকালো,,
ইতির বাবা — কি হয়েছে তোর
ফারদিন — না মানে,,, আবুল চাচাকে ডাকছিলাম😅মেহমান এসেছে কিছু দেবে না
ইতির বাবা — পাগল ছেলে ধিরে বললেই তো হতো।আকাশ
আকাশ — বলুন
ইতির বাবা — তোমরা গিয়ে একটু কথা বল
আকাশ — ঠিক আছে।
আকাশ ইতির কাছে গিয়ে বলল
আকাশ — চলুন
ইতি — হুম

ওরা চলে গেল,ফারদিনের পাশে প্রিয় দাড়িয়ে আছে,ফারদিন প্রিয়র হাত শক্ত করে ধরে ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,আর বেচারা প্রিয় ব্যথা দাত চেপে সহ্য করছে,প্রিয় ধিরে ধিরে ফারদিনকে বলল
প্রিয় — ওই আমার হাত ভাঙ্গার প্লেন নাকি তোর
ফারদিন — ও সরি

ওইদিকে রুমের ভিতরে,,,,,,দুইজনই চুপচাপ দাড়িয়ে আছে,কেউ কিছু বলছে না, সকল চুপ থাকার সমাপ্তি ঘটিয়ে আকাশ বলে উঠল
আকাশ — আপনার কিছু জিজ্ঞেস করার থাকলে করতে পারেন
ইতি — না আমার কিছু জিজ্ঞেস করার নেই,আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন
আকাশ একটু মুচকি হেসে বলল
আকাশ — আপনার সম্পর্কে যেমন শুনে ছিলাম আপনি ঠিক তেমনই শান্ত স্বভাবের, আমি মোটামোটি অনেক কিছু জানি আপনার সম্পর্কে, কিছু জিজ্ঞেস করার নেই।আপনি কি এই বিয়েতে রাজি
ইতি — আব্বু যা ভালো মনে করবে তাই,
আকাশ — আপনি আসলেই খুব বাধ্য,কিন্তু মনের ইচ্ছে কেও দাম দিতে হয়,নইলে হাসি খুশি থাকতে পারবেন না,চলুন এবার বাহিরে যাওয়া যাক
ইতি — হুম

ওরা বাহিরে গেল,কিছুখন পর আকাশ চলে গেল।
ইতির বাবা — তোর কি সিদ্ধান্ত
ইতি — কিসের
ইতির বাবা — আকাশকে তোর কেমন লেগেছে, তুই বিয়েতে রাজি
সবাই ইতির উওরের আসায় আছে প্রিয় সুমাইয়া সিরিয়াস ভাবে তাকিয়ে আছে,সুমাইয়া মনে মনে বলতে লাগল
সুমাইয়া — বলে দে আপু, না করে দে
ইতি — তুমি যা ঠিক মনে করবে
ইতির বাবা — আমি জানতাম তুই আমার পছন্দকে না করবি না
ফারদিন বসা থেকে উঠে বাহিরে চলে গেল।

রুমের ভিতরে প্রিয় আর সুমাইয়া রেগে ইতির দিকে তাকিয়ে আছে
সুমাইয়া — আপু তুই এটা কি করলি
প্রিয় — হ্যা তুমি হ্যা বলে দিলে
ইতি — আমি কি করব, আমি আব্বুর মুখের ওপর না করতে পারি না,মা মারা যাবার পর আব্বুই আগলে রেখেছে, আব্বুর পছন্দ করা ছেলেকে না বলে, আব্বুকে কষ্ট দিতে চাই না আমি।
সুমাইয়া — কিন্তু আপু,,,

বলার সাথে সাথে ফারদিন রুমে ঢুকলো,ঢুকে রেগে বলতে লাগল
ফারদিন — বাহিরে যা তোরা
সুমাইয়া আর প্রিয় কিছু না বলে বাহিরে চলে গেল,বাহিরে গিয়ে বলতে লাগল
সুমাইয়া — আল্লাহ আপুর কপালে শনি আছে,ভাইয়া কত রেগে ছিল
প্রিয় — হুম চোখ দেখে মনে হচ্ছিল আগুন জ্বলছে

ভিতরে,,,,,,,,
ফারদিন আগ্নি জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে,ইতি অনেকটা ভয় পেয়ে আছে ফারদিনের রাগ দেখে
ইতি — কক,ক,,কি হয়েছে
বলার সাথে সাথে ফারদিন ইতির দুই হাত দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো,ইতির হাতের কাচের চুড়ি ভেঙ্গে হাতে ঢুকে রক্ত পড়তে লাগল,,,,,
ফারদিন — তুই হ্যা বলে দিলি একবারও আমার কথা ভাবলি না
ইতি — ছা,,,ছ,,ছাড় আমাকে, আমার লাগছে
ফারদিন — লাগুক,,এই এই তুই এতটা সেলফিস কিভাবে হতে পারিস
ইতি — প্লিজ আমার হাতটা ছাড় খুব লাগছে আমার
ব্যথায় ইতির চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়তে লাগল,ফারদিন আরো শক্ত করে ধরলো,আর ইতি ব্যথায় কুকড়ে উঠলো
ইতি — আ,,,,,,,,,😣
ফারদিন — কি 😠খুব যন্ত্রণা হচ্ছে তাই না, এর থেকে বেশী কষ্ট তুই আমাকে দিচ্ছিস,আমি এখন গিয়েই ছোট আব্বুকে তোর আর আমার বিষয়টা বলে দেব
বলেই চলে যেতে লাগল,তখনি ইতির ফারদিনের হাত ধরে বলতে লাগল
ইতি — না তুমি আব্বুকে কিছু বলবা না, প্লিজ,,
ফারদিন আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগল
ফারদিন — তুই এতটা চ্যান্জ হলি কিভাবে,, ঠিক আছে বলব না কিছু বসে বসে তোর বিয়ের মিষ্টি খাব, ছাড়তে বলেছিলি না, যা ছেড়ে দিলাম, তুই আমাকে এমন ভাবে আঘাত করেছিস এতটা যন্ত্রণা দিয়েছিস যা সহ্য করার মতো না,কিন্তু মনে রাখিস কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ কখন সুখী হতে পারে না।

বলেই ফারদিন রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো, আর ইতি দাড়ানো থেকে বসে অশ্রু ঝড়াতে লাগল।

চলবে,,,,,,,
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন