অনুভবে থাক যে তুমি পর্ব-০৯

0
2941

#অনুভবে_থাক_যে_তুমি
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পর্ব_০৯

প্রিয় — কোথায় যাচ্ছিস ফারদিন
ফারদিন কিছু না বলে চলে গেল।সুমাইয়া সাথে সাথে রুমে গেল
সুমাইয়া — আপু এ কি অবস্থা ওঠ, ইশশ হাত থেকে কত রক্ত পড়ছে
প্রিয় — আমি ডক্টরকে ফোন করি
সুমাইয়া — হুম তাড়াতাড়ি
প্রিয় বাহিরে বের হচ্ছে তখন ইতির আব্বু রুমে আসছিল
প্রিয় — আঙ্কেল আপনি
ইতির বাবা — হ্যা
প্রিয় — বাহিরে কোথায় যাবেন নাকি
ইতির বাবা — হ্যা, হুট করে অফিসের স্যার বলল, যে এখনি যেতে কাজ আছে বলে, হয় তো রাতেও থাকতে পারি তাই ওদের বলতে এসেছিলাম
প্রিয় — আপনি অফিসে যান আমি ওদের বলে দেব
ইতির বাবা — থাক আমিই ওদের বলে যাই
প্রিয় — না,,,,, মানে 😅 ইতি ঘুমাচ্ছে আর সুমাইয়া ওয়াসরুমে আমি ওদের কাছ থেকেই আসলাম
ইতির বাবা — ঘুমাচ্ছে মানে এই অবেলায় কেউ ঘুমায়,ওর শরীর ভালো তো
প্রিয় — হ্যা হ্যা ঠিক আছে,আপনার দেরি হচ্ছে আমি ওদের বলে দেব
ইতির বাবা — ঠিক আছে,আসি
প্রিয় — ঠিক আছে সাবধানে যাবেন
ইতির বাবা — হুম

প্রিয় একটু শান্তির নিশ্বাস ফেলল, তারপর ডক্টরকে আসতে বলল।ডক্টর এসে কিছু মেডিসিন দিয়ে গেল।ইতির বিছানায় আধ সোয়া হয়ে শুয়ে আছে
সুমাইয়া — আপু, আপু কিছু তো বল এমন চুপ হয়ে আছিস কেন
ইতি –,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
সুমাইয়া —তোর হাতের এই হাল ভাইয়া করেছে তাই না
ইতি –,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
সুমাইয়া — আপু এমন করছিস কেন, এত চুপ হয়ে আছিস কেন
প্রিয় — সুমাইয়া আমার মনে হয় ওকে একা ছেড়ে দেয়া উচিৎ
সুমাইয়া — হুম

সুমাইয়া আর প্রিয় ড্রইংরুমে গেল,,
সুমাইয়ার খুব মন খারাপ
প্রিয় — সুমাইয়া সব ঠিক হয়ে যাবে
সুমাইয়া — কি ঠিক হবে আর কবে হবে,তুমি দেখেছ আপুর অবস্থা কিছু বলতেও পারছে না কিছু করতেও পারছে না।আর ভাইয়া ও অনেক কষ্ট পাচ্ছে
প্রিয় — সব কিছু ঠিক করার একটা তো উপায় হবে
এর মাঝে ইতি রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো
সুমাইয়া — কোথায় যাচ্ছ
ইতি — ছাদে
সুমাইয়া — কেন,আমিও যাব তোকে একা ছাড়বো না
ইতি –প্লিজ কিছুটা সময় একা কাটাতে চাই
প্রিয় — সুমাইয়া ওকে একা ছেড়ে দেও

ইতি ছাদে গেল,,,,
সুমাইয়া — আপুর অবস্থা দেখেছ
প্রিয় — হুম কিছু একটা করতে হবে

ইতি ছাদে গেল,খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল,,,দিনটা মেঘলা, আকাশ কালো মেঘে মুড়িয়ে আছে,কিছুখন পরই আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি হবে,বৃষ্টি পাত শেষ হলেই আকাশ আবার সচ্ছ কাচের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে,মেঘের আড়াল থেকে সূর্যটা বেড়িয়ে আসবে চার পাশে আলো ছড়িয়ে উজ্জ্বল করে তুলবে,কিন্তু আমার মনের আকাশে যে কালো মেঘে ছেড়ে গেছে তা কি আদৌও বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়বে নাকি জানি না, হয় তো আর কোনো দিনই মনের আকাশে বৃষ্টিপাত হবে না,হয় তো আর কোনো দিনই মনের আকাশে সূর্য আলো ছড়াবে না, হয় তো আর কোনো দিনই মনের আকাশ থেকে কালো মেঘ গুলো সরবে না, হয় তো আর কোনো দিনই তোমাকে বলতে পারব না ভালোবাসি,কিন্তু অনুভব থেকে কিভাবে সরাবো তোমাকে, হাজার চেষ্টা করলেও যে সম্ভব না সব সময় “অনুভবে_থাক_যে_তুমি”

অন্যদিকে,,,,সুমাইয়া আর প্রিয় রুমে বসে আছে বাহির থেকে বজ্রপাতের আওয়াজ পৌছালো ওদের কানে সাথে রিমঝিম বৃষ্টির আওয়াজ ও।
সুমাইয়া — বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে
প্রিয় — হ্যা
সুমাইয়া — এর আগের বার বৃষ্টিতে কত মজা করে ছিলাম সবাই আর আজ
বলেই মনটা খারাপ করে চুপ হয়ে গেল সুমাইয়া,, প্রিয় মুচকি হেসে বলল
প্রিয় — মন খারাপ কর না সব ঠিক হয়ে যাবে,সবাই আবার আগের মতো মজা করব, আনন্দে মেতে থাকব
সুমাইয়া — হুম তাই যেন হয়,এই যা
প্রিয় — কি হয়েছে
সুমাইয়া — আপু তো ছাদে বৃষ্টি হচ্ছে এখনও আসলো না কেন?এমনি ওর শরীরটা ভালো না, আর কিছু দিন ধরে তো খাওয়া দাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে শরীর খুব দূর্বল আবার মাথা ঘুরে যদি পড়ে যায়,আর বৃষ্টিতে ভিজলেই ওর জ্বর আসে
প্রিয় — চল ছাদে যাই
সুমাইয়া — হুম

ওরা বের হবার আগেই ফারদিন এসে রেগে বলতে লাগল
ফারদিন — ইতি কোথায়
প্রিয়র চোখ পড়লো ফারদিনের হাতের দিকে,,,,,
প্রিয় — ফারদিন তোর হাতের কি হাল করেছিস, কি হয়েছে
ফারদিন — ইতি কোথায়😡
সুমাইয়া — আপু তো ছাদে গিয়েছে
ফারদিন — ছাদে গিয়েছে মানে এই বৃষ্টিতে

ফারদিন আর এক মিনিট ও দেরি না করে ছাদে গেল,সাথে প্রিয় আর সুমাইয়া ও।ছাদে গিয়ে দেখে ছাদের দরজা ভিতর দিয়ে আটকানো।
ফারদিন — দরজা তো ভিতর দিয়ে আটকানো
ফারদিন এবার কান্না করে দিল,আর চিৎকার করে বলতে লাগল
ফারদিন — আই এম সরি ইতি, আমাকে মাফ করে দে, আমি তোর সাথে খুব খারাপ আচরণ করেছি,প্লিজ দরজাটা খোল প্রমিস আমি আর কখন তোকে কিছু বলব না,আর কখন রাগ দেখাবো না,তুই যা চাস তাই হবে দরজাটা খোল
সুমাইয়া — আপু আপু তুই ঠিক আছিস তো, দরজাটা খোল আপু
প্রিয় —দরজাটা ভেঙ্গে ফেলতে হবে
ফারদিন — হ্যা হ্যা তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি
দুজন মিলে দরজাটা ভাঙ্গলো, ভিতরে ঢুকে দেখে ইতি নিচে পড়ে আছে,ফারদিন গিয়ে ইতিকে
উঠিয়ে বলতে লাগল
ফারদিন — এই এই তোর কি হয়েছে ওঠ,,
সুমাইয়া — আপু ওঠ আপু
ফারদিন — শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে
প্রিয় — ওকে রুমে নিয়ে চল
ফারদিন — হ্যা হ্যা

ফারদিন ইতিকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেল।
ফারদিন — সুমাইয়া এই
সুমাইয়া — বল
ফারদিন — আগে ওর ড্রেসটা চ্যান্জ করে দে,প্রিয় চল বাহিরে ডক্টরকে ফোন কর
প্রিয় — হুম করছি

ডক্টর আসলো, ইতিকে দেখে চলে গেল।প্রায় পাঁচ দিন পর,,,,,,,,,,
বাড়ীতে বেশ আয়োজন চলছে,কারণ আকাশের পরিবার আসবে
ইতির বাবা — ফারদু
ফারদিন — বল ছোট আব্বু
ইতির বাবা — ওই দিকে সব কিছু ঠিক আছে তো
ফারদিন — হ্যা সব ঠিক আছে
প্রিয় — আঙ্কেল এই গুলো কোথায় রাখব
সুমাইয়া — আমি বলছি
ইতির বাবা — তুই এখানে কেন ইতি রেডি তো
সুমাইয়া — হ্যা রেডি করেছি

কিছুখনের মাঝে আকাশের পরিবার এসে হাজির হলো।
ফারদিন — ছোট আব্বু আমি রুমে যাই
ইতির বাবা — কেন?
ফারদিন — হঠাৎ শরীর খুব খারাপ লাগছে
ইতির বাবা — এটা বললে হয় নাকি, তুই ভাই হোস তুই না থাকলে কি চলবে

কিছুখন পর ইতিকে সবার সামনে নিয়ে আসলো,ফারদিন আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইতির দিকে,সবাই খুব পছন্দ করলো,বিয়ের তারিখও ঠিক করা হলো।কিছু দিন পর প্রিয়র পরিবারের সাথে কথা বলল ইতির বাবা, সুমাইয়া আর প্রিয়র বিয়েও একই দিন ঠিক করা হলো।

আজ ওরা সিলেট থেকে আবার ঢাকায় ফিরলো।সকালে বাসে উঠে ছিল যেতে প্রায় বিকেল হলো।সবাই বাড়ীতে ফিরে রেস্ট নিচ্ছে। রাতে খাবার টেবিলে,,,,,,
ফারদিন — বাবা
ফারদিনের বাবা — কি হয়েছে কিছু বলবি
ফারদিন — হ্যা আমি আর ভার্সিটিতে যাব না, তোমার সাথে অফিসের কাজে মন দেব।
সবাই ফারদিনের কথা শুনে অবাক।
ফারদিনের মা — কি হয়েছে রে ফারদিন, কিছু হয়েছে হুট করে ভার্সিটি ছাড়বি কেন
ফারদিন রেগে বলতে লাগল
ফারদিন — আমি আর ওখানে কাজ করব না তাতে তোমার কি, আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করবা না
ফারদিনের বাবা — ফারদিন এ কেমন বেয়াদবি, তুমি তোমার মার সাথে এভাবে কথা বলতে পার না
ফারদিন আর কিছু না বলে উঠে চলে গেল।সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে চুপ হয়ে আছে।ফারদিনের বাবা গম্ভীর কণ্ঠে বলল
ফারদিনের বাবা — সার্কাস হচ্ছে নাকি সবাই খাবার খাও
সবাই আবার খাবারে মনোযোগ দিল।

রাত ১১ : ০৫ মিনিটে,,, ফারদিন ওর মার রুমে গেল।ওখানে ওর বাবা ছিল না
ফারদিন — মা আসবো
ফারদিনের মা –,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
ফারদিন গিয়ে ওর মার সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে কান ধরে বলতে লাগল
ফারদিন — আমাকে মাফ করে দেও, প্লিজ তুমি আমার উপর রেগে থেক না।রাগের মাথায় খুব বেয়াদবি করে ফেলেছি তোমার সাথে।
ফারদিনের মা — এভাবে বসে থেকে কিছু হবে না,খুব কষ্ট দিয়েছ তুমি আমাকে
ফারদিন — মাফ করে দেও এবারের মত। তুমি যেই শাস্তি দিতে চাও দেও, তবু আমাকে মাফ করে দেও।
ফারদিনের মা — করব আগে আমাকে বলতে হবে তোর কি হয়েছে
ফারদিন কিছু না বলে ওর মার কোলে মাথা রেখে কান্না করতে লাগল।

মাস কেটে যেতে থাকলো,ফারদিন আর ইতির মুখে হাসির রেখা দেখাচ্ছে না দুইজনই একদম চুপ হয়ে গেছে,দেখে মনে হয় কোনো দিন কথাই বলে নিই।

অবশেষে এত গুলো দিন শেষ হয়ে আজ সুমাইয়া আর ইতির গায়ে হলুদ।ওদের দুজনকেই সাজিয়ে স্টেজে তুলা হলো,একে একে সবাই হলুদ দিতে লাগল।ফারদিন এখন গেল সুমাইয়ার কাছে
সুমাইয়া — ভাইয়া
ফারদিন — খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তোকে, দোয়া করি প্রিয়র সাথে তোর আগামী দিন গুলো খুব ভালো কাটবে
সুমাইয়া –😊
সুমাইয়াকে হলুদ দিয়ে ফারদিন এখন ইতির কাছে গিয়ে বসলো,ফারদিনের বুকের ভিতরটা দুমরে মুচড়ে ছিড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে এখনি নিশ্বাসটা বন্ধ হয়ে যাবে,ফারদিন হলুদটা হাতে নিয়ে ইতির গালে আলতো করে ছুড়ে স্টেজ থেকে উঠে চলে আসলো।

ফারদিন ওখান থেকে ছাদে চলে গেল,,গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল
ফারদিন — আল্লাহ আমাক ধর্য্য দেও, আমার মনের কষ্ট টা একটু কম কড়ে দেও না,আর পারচ্ছি না সত্যি আর সহ্য হচ্ছে না,ভিতরে ভিতরে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছি
বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ফারদিন,,,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,,,

ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন