অনুভবে থাক যে তুমি পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
4838

#অনুভবে_থাক_যে_তুমি
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পর্ব_১০ [ সমাপ্ত ]

বাড়ীতে অনেক আয়োজন চলছে, পরিচিত অপরিচিত অনেক মেহমান এসেছে।বাড়ীরর সবাই খুব ব্যস্ত বিয়ে বাড়ী বলে কথা।
ইতির বাবা — ভাইয়া
ফারদিনের বাবা – বল
ইতির বাবা – ছেলে পক্ষ আসতে কত সময় লাগবে জানো
ফারদিনের বাবা — হুম, আসছে বলে
ইতির বাবা — ভালো, ভাবি শোনো
ফারদিনের মা — বল শাহিন
ইতির বাবা — গিয়ে একটু দেখ ওদের সাজগোজ হলো নাকি
ফারদিনের মা — চিন্তা করিস না, আমি দেখে আসছি

ফারদিনের মা ওদের কাছে গেল।রুমে ঢুকে দেখে দুইজনই রেডি
ফারদিনের মা –বাহ আজ তো তোদের খুব সুন্দর দেখাচ্ছে নজর না লেগে যায়
সুমাইয়া — সত্যি ভালো দেখাচ্ছে তো
ফারদিনের মা — একদম পরীর মতো লাগছে তোদের
তখনি সুমাইয়ার মোবাইলে কল আসলো,আর কে প্রিয় ফোন করেছে,ফারদিনের মা দেখে বলতে লাগল
ফারদিনের মা — বাহ বাহ প্রিয়র দেখি মনে হয় রাস্তা ফোরাচ্ছে না
সুমাইয়া — কাকী মা ☺️একটু কথা বলে আসি
ফারদিনের মা — যা কিন্তু তাড়াতাড়ি কথা শেষ করবি
সুমাইয়া — ওকে ওকে

সুমাইয়া বারান্দায় গেল।
ফারদিনের মা — কিরে ওমন চুপচাপ হয়ে আছিস কেন,মুখে হাসি নেই কেন
ইতি — তেমন কিছু না
ফারদিনের মা — মুখে হাসি ছাড়া কি সুন্দর দেখাবে, বোকা মেয়ে
ফারদিনের মা চলে যেতে লাগল তখনি পিছন থেকে ইতি বলে উঠল
ইতি — কাকী মা
ফারদিনের মা — কি হয়েছে
ইতি — ফা,,ফ,,ফারদিন ভাইয়া কোথায়
ফারদিনের মা কিছু না বলে চলে গেল।

ওইদিকে বারান্দায়,,,,,,,
সুমাইয়া — হ্যালো
প্রিয় – লাভ ইউ, লাভ ইউ সো মাচ সোনা
সুমাইয়া — ওরে বাবা ভয় পাইসি
প্রিয় — তুমিও বল না
সুমাইয়া — না
প্রিয় — কেন
সুমাইয়া — বিয়ে হয়ে নিক তারপর উওর দেব
প্রিয় — এটা কেমন কথা , আর কিছুখন পরই তো আমাদের বিয়ে
সুমাইয়া — তাহলে আর কিছুখন অপেক্ষা কর সোনা বায়য়য়য়য়য়

বলেই সুমাইয়া ফোন কেটে হাসতে লাগল।সুমাইয়া রুমে ঢুকলো
সুমাইয়া — আপু তুই ঠিক আছিস তো
ইতি — না কেমন যেন লাগছে
এর মাঝে বাহির থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, বুঝাই যাচ্ছে বর পক্ষ চলে এসেছে।
ইতি — সুমু
সুমাইয়া — কি হয়েছে
ইতি — আকাশ ওরা মনে হয় চলে এসেছে
সুমাইয়া — হুম
ইতি — কেমন অস্থির লাগছে,ফারদিন ভাইয়াকে কাল রাতের পর থেকে আর দেখি নিই,ওর আবার কিছু হয় নিই তো,যদি ওর কিছু হয়ে যায়।কাল ওর চোখে চাপা যন্ত্রণা দেখতে পেরেছি তার কারণ আমি, অন্তত একবার ওকে দেখতে চাই
সুমাইয়া — আপু প্লিজ শান্ত হো
এর মাঝে রুমে ইতির বাবা ঢুকলো,,,
ইতির বাবা — বাহ আমার রাজকুমারী দুইজনকে তো চমৎকার দেখাচ্ছে
সুমাইয়া — আব্বু প্রিয় ভাইয়া চলে এসেছে, না মানে😅
ইতির বাবা — পাগলী মেয়ে, হ্যা চলে এসেছে,তুই যা পাশের রুমে
সুমাইয়া — ওকে

সুমাইয়া রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো,,,,,,
ইতির বাবা — কিরে মা ওমন চুপ হয়ে আছিস কেন
ইতি — কই না তো ঠিক আছি☺️
ইতির বাবা — শশুরবাড়ী গিয়ে আমার কথা মনে পড়বে না
ইতি — কি বল, তোমার কথা কিভাবে ভুলতে পারি
ইতির বাবা — আরে পাগলী মেয়ে কাদছিস কেন
ইতি — এমনি
ইতির বাবা — এই চোখের পানি তো অন্য কার জন্য তাই না☺️
ইতি অবাক হয়ে বলল
ইতি — ককক,কি মানে
ইতির বাবা সামান্য হেসে বলল
ইতির বাবা — আয় আমার সাথে ফারদু অপেক্ষা করছে
ইতি অবাকের শেষ সীমানায় পৌছে গেল।
ইতি — আআ,আব্বু
ইতির বাবা — আমি এটা ভেবে অনেক খুশি যে আমার মেয়ে আমাকে এতটা শ্রদ্ধা করে আর এতটা ভালোবাসে।আয় আমার সাথে।

ইতিকে ওর বাবা পাশের রুমে নিয়ে গেল,তারপর কাজী সাহেব বিয়ে পড়ালো,দেখতে দেখতে সুমাইয়া – প্রিয় আর ইতি – ফারদিন স্বামী স্রীর সম্পর্কে আবদ্ধ হলো।ওদের বাড়ীতেই আজ বাসর রাত সাজানো হয়েছে।সুমাইয়া রুমে বসে বসে গুন গুন করে গান গাইছে, তখনি রুমে প্রিয় ঢুকলো,প্রিয় গিয়ে সুমাইয়ার পাশে বসলো
প্রিয় — সুমাইয়া
সুমাইয়া — হুম
প্রিয় — সব মনে হয় স্বপ্ন মনে হচ্ছে। এএ,এটা কোনো স্বপ্ন না তো, যদি এখন ভেঙ্গে যায়,তুমি আমাকে একবার জোরিয়ে ধরবে, আআ,আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না
সুমাইয়া লাজুক হেসে, প্রিয়র গালে ঠোটের স্পর্শ ছুড়িয়ে বলল
সুমাইয়া — এবার বিশ্বাস হয়েছে😘
প্রিয় গালে হাত দিয়ে হেসে বলল
প্রিয় — 100%😍
সুমাইয়া খিলখিল করে হেসে দিল।
প্রিয় — চল বারান্দায় যাই
সুমাইয়া – কেন
প্রিয় — চন্দ্রবিলাশ করব
সুমাইয়া — ওকে

ওরা বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো,,
প্রিয় — আশা করি আমাদের আগামী দিন গুলো খুব ভালো কাটবে
সুমাইয়া — হুম, সব ঠিক হয়ে গেছে আপু আর ভাইয়াও এক হয়ে গেছে
প্রিয় — হুম,কিন্তু আমাদের বাসর রাত এখানে কেন হচ্ছে
সুমাইয়া — কারণ আমি চাই
প্রিয় — তাহলে আমাদের বাড়ীতে গিয়েও তোমাকে আবার বউ সেজে আবার বাসর রাত করতে হবে।
সুমাইয়া — ঠিক আছে
প্রিয় — সত্যি
সুমাইয়া — হুম সত্যি
প্রিয় — এবার বল
সুমাইয়া — কি
প্রিয় — আমি যা শুনতে চাই
সুমাইয়া — ও তুমি আগে বল তারপর আমি উওর দিচ্ছি
প্রিয় — I love you so much suna
সুমাইয়া — l love you 100
প্রিয় — আমি কি কম ভালোবাসি নাকি,Love you 200
সুুমাইয়া — 300
প্রিয় — 400
সুমাইয়া — আআআআআআআআ বলাম না আমি বেশী ভালোবাসি
প্রিয় — ওকে আমরা দুইজন দুইজনকে অনেক ভালোবাসি হ্যাপি
সুমাইয়া — হুম
প্রিয় — বাবা কি ঝগড়ুটে মেয়ে
সুমাইয়া — আর তুমি ভদ্র লোক তাই না
প্রিয় — হুম
সুমাইয়া — দাড়াও দেখাচ্ছি মজা

অন্যদিকে,,,,,,,,
ইতিকে রুমে বসিয়ে রেখেছে,,,কিছুখন পর ফারদিন রুমে ঢুকলো।ইতির কাছে গিয়ে বসলো তারপর হাতটা আলতো করে ছুড়ে হাতে নিজের ঠোটের স্পর্শ ছুড়িয়ে দিল,ইতি কিছুটা কেপে উঠলো।
ইতি — এএ,এই সব কিভাবে হলো
ফারদিন — হুম আসলেই সব কিছু গল্পের মতো,আমারও বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুই আর আমি এখন স্বামী স্রী, আমরা সারা জীবনের জন্য একে ওপেরর হয়ে গিয়েছি।
ইতি — কিন্তু এসব হলো কিভাবে
ফারদিন — তাহলে শোন

ফারদিন বলতে শুরু করলো,,,,,,,,
,,,,অতীত,,,,,,,,

ফারদিন ছাদে দাড়িয়ে কান্না করছে তখনি পিছন থেকে ইতির বাবা ওর কাধে হাত রাখলো।
ফারদিন — ছোট আব্বু তু,,তুমি এখানে ককক,কখন আসলা
ইতির বাবা — এত ভালোবাসিস যখন বলতে পারতি
ফারদিন — না মানে আআ,আসলে ছোট আব্বু
ইতির বাবা — চুপ আর মিথ্যে বলিস না, প্রিয় আর সুমাইয়া আমাকে সব বলে দিয়েছে।
ফারদিন — ছোট আআ,আব্বু আমি
ইতির বাবা — আমি ভাইয়া আর ভাবির সাথে কথা বলেছি,ওনারাও অমত জানায় নিই
ফারদিন — মানে
ইতির বাবা — কাল বর সেজে রেডি থাকিস, আমার কলিজাটা তোর হাতে দিয়ে দেব, অযত্ন করিস না কিন্তু
ফারদিন অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, ইতির বাবার দিকে,ইতির বাবা হেসে বলল
ইতির বাবা — বোকা ছেলে চল নিচে, আর মুখ চোখ ঠিক কর কি হাল করেছিস নিজের

বলেই ইতির বাবা নিচে চলে গেল,আর ফারদিন খুশিতে আকাশের দিকে তাকালো।

,,,,,,,,,,,বর্তমান,,,,,,,,,,,,,,,,

ফারদিন — এই হয়ে ছিল
ইতি — আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, আআ,আমি আসলেই বিশ্বাস করতে পারছি না
বলেই ফারদিনকে জোরিয়ে ধরে বলতে লাগল
ইতি — আআ,আমি ভেবে ছিলাম আর তোমাকে দেখতে পাব না,খুব ভালোবাসি তোমায়
ফারদিন — আমিও🥰
ইতি — আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমাকে মাফ করে দেও
ফারদিন — আমি তো কম কষ্ট দেই নিই তোকে,
বলেই ইতির দুই গাল আলতো করে ছুড়ে বলতে লাগল
ফারদিন — পিছনের সব কিছু ভুলে যা, আমরা আমাদের জীবন নতুন ভাবে শুরু করবো,কেউ কাউকে কষ্ট দেব না,দুইজন দুইজনকে শুধু ভালোবাসবো,আমাদের এই লাল নীল সংসারে ভালোবাসা ছাড়া আর অন্য কিছুর স্থান নেই।নিজেদের এক নতুন জগত সাজাবো আমরা, আমাদের ভালোবাসা দিয়ে জগতটাকে ভরিয়ে তুলবো যেন কোনো দিন সেখানে কষ্ট পৌছাতে না পারে।
ইতির যেন মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না,আনন্দের অশ্রুতে দুই জোয়া আখি ভরে উঠেছে,শুধু মাথা নাড়িয়ে বলল হুম
ফারদিন ইতির কপালের সাথে নিজের কপাল লাগিয়ে হেসে বলল
ফারদিন — কাদছিস কেন পাগলী
ইতি — জানি না কিন্তু কিন্তু আমি এইসব একদম আশা করি নি,,,,
ফারদিন — চুপ আর কিছু বলতে হবে না তোর মনের খবর আমি জানি
ইতি — খুব ভালোবাসি তোমায়
ফারদিন — আমিও খুব ভালোবাসি তোকে।
তারপর ফারদিন ইতিকে নিজের বুক পাজোরে জরিয়ে ধরলো,ইতি নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে আগলে ধরলো,,,,,,,

———–ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন———-