অনুরাগের ছোঁয়া পর্ব-১৭

0
421

#অনুরাগের ছোঁয়া
#নবনী-(লেখনীতে)
#পর্ব-১৭
||
হঠাৎ রিয়ার এভাবে বেড়িয়ে যাওয়ার কারন আবির বুঝতে পারল না।সেটা নিয়ে আবির বেশী কিছু একটা ভাবলো না।তারপর আবিরের চোখ গেলো রিয়ার রেখে যাওয়া ডায়রীটার উপর।সে উঠে গিয়ে ডায়রিটা হাতে নিলো।তার এখন কোন কাজে নাই বিধায় সে ঠিক করল ডায়রীটা পরবে।যদি ও কারো পার্সোনাল জিনিসে হাত দেওয়া ঠিক নয়।তবু ও গোপন জিনিসে আগ্রহ একটু বেশীই থাকে।যেমন ভাবা তেমন কাজ, সে ডায়রিটার প্রথম পাতা খুলে আতকে উঠল।

ফুটপাত দিয়ে এলোমেলো ভাবে হেঁটে যাচ্ছে রিয়া।তার চোখের জল যেন আজকে কোন ভাবেই বাধ মানছে না।এক তরফা ভালোবাসায় যে এতটা কষ্ট পেতে হয়, আগে যদি জানত তাহলে সে কোন দিন আবির স্যারকে ভালোবাসত না।চারপাশে গাড়ির হর্নের শব্দ শোনা যাচ্ছে।গাড়ির শব্দ ছাড়া ও রিয়ার মন ভাঙা কান্নার আওয়াজ যেন সেখানে শোনা যাচ্ছে।আশে পাশের মানুষ জন সবাই আড় চোখে রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।এতে রিয়ার কোন হুস নেই।অনেকে তো তাকে পাগল বলে সম্বোধন করছে।কারন রিয়ার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে,চোখের কাজল লেপ্টে গেছে তাকে দেখতে একদম পাগলের মতোই লাগছে।হাঁটতে হাঁটতে সে তার বাসার সামনে চলে এলো।তারপর দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিংবেল চাপতেই তার মা দরজা খুলে দিলো।তাকে দেখিই তার মার বুঁকটা কেঁপে উঠে।তার মা চিন্তিত হয়ে বলে….

–কিরে মা তোর চোখ মুখের এই অবস্হা কেন?কি হয়েছে তোর।

রিয়া নিজেকে সামলে বলে,

–কিছু হয়নি মা।

–তুই আমাকে মিথ্যা বলছিস।তুই আমাকে জন্ম দিস নাই আমি তোকে জন্ম দিসি। তোর চেহারা দেখে আমি বলে দিতে পারি আমার মেয়েটার কিছু একটা হয়েছে।

মার কথা শোনে রিয়া তার মাকে জরিয়ে হু হু করে কেঁদে দেয়।তার মা তাকে নিয়ে সোফায় বসায়।তারপর বলে..

–কি হয়েছে মা তুই বল আমাকে।তুই তো জানিস আমি তোর চোখের পানি সহ্য করতে পারি না।তোর বাবা মারা যাওয়ার পর আমি কত কষ্ট করে তোকে বড় করেছি।কোন কিছুর অভাব রাখিনি। তুই যেটা যখন চেয়েছিস তখনি সেটা এনে দিয়েছি।মাকে সব কিছু খুলে বল।

তার মাকে রিয়া আবীরের সম্পর্কে সবকিছু খুলে বলে।মা আবির স্যারকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।খুব ভালোবাসি তাকে।তার জন্যই তো আমি হসপিটালে চাকরিটা নিয়ে ছিলাম।

মেয়ের কষ্ট দেখে ইরা বেগমের ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে।স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি মেয়েটাকে নিয়ে আলাদা থেকেছেন।মেয়েটাকে কোন কষ্ট পেতে দেন নাই।ইরা বেগম রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে তাকে ঠান্ডা মাথায় অনেকক্ষন বুঝালেন।রিয়া ও তার মার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনছে।ইরা বেগম রিয়াকে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের একটি উক্তি বলে,

যে তোমার ছিলো না তাকে তুমি ছেড়ে দাও।মুক্ত পাখির মতো উড়তে দাও।যদি কখনো সে তোমার হয়ে থাকে একদিন না একদিন তোমার কাছে
ঠিকই ফিরে আসবে।

কথাটা শোনে রিয়ার মনটা হালকা ভালো লাগে।সে মনে মনে ভাবে সে আর কষ্ট পাবে না।যদি তার ভালোবাসা সত্যি হয় তবে একদিন না একদিন আবির স্যার তারই হবে কথাটা বলে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।তারপর তার মার কোল থেকে মাথাটা তুলে মাকে বলে..

–মা প্রচুর খিদে পেয়েছে।খাবার বাড়ো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

–ঠিক আছে তুই যা আমি বাড়ছি।

রিয়া চলে যেতেই তিনি আচল দিয়ে চোখ দুটো মুছে ফেলেন।তার মেয়ে যে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে এতেই তিনি খুশি হয়ে খাবার বাড়তে চলে যায়।
______________________

এই কয়েকদিনে অনুরাগ সবার সাথে স্বাভাবিক ব্যবহার করেছে যে ছোঁয়ার বিয়েতে তার কিছু আসে যায় না।তার ব্যবহার দেখে তার মা বাবা প্রথমে অভাক হলে ও পরে তারা খুশি হয়।তারা তো ভেবে ছিলো তার ছেলে ছোঁয়ার বিয়ে নিয়ে ঝামেলা করবে।কিন্তু এত সহজে মেনে নেবে তারা ভাবতে ও পারে নাই।অনুরাগের বাবার মনে বিষয়টা খটকা দিলে তিনি তার স্ত্রীর সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেন।তার স্ত্রী তাকে বলে যে এসব তার মনের ভুল।তাই আর তিনি এসব নিয়ে বেশী মাথা ঘামালেন না।

ডায়নিং টেবিলে অনুরাগ তার মা বাবার সাথে বসে লান্চ করছে।লান্চ করার মাঝে তার বাবা তাকে বলে..

–অনুরাগ কাল তো ছোঁয়ার মেহেন্দী। আমি আর তোমার মা তো যাব তোমার মত কি।তুমি কি যাবে।

অনুরাগ হেসে তার বাবাকে বলে,

–কেন নয় বাবা।আমি অবশ্যই যাবো।তোমরা আগে চলে যেও আমি সময় মতো পৌছে যাব এটা বলে সে খাবার শেষ করে উপরে চলে গেলো।

–তার বাবা মা হতবিহ্বল হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল।তার ভেবে ছিলো অনুরাগ যাবে না। কিন্তু তাদের অবাক করে দিয়ে অনুরাগ রাজি হয়ে গেলো।

উপরের এসে অনুরাগ তার রুমে গেলো।তারপর টেবিল থেকে তার মোবাইলটা নিয়ে কাউকে ফোন করল। ফোন রিসিপ করতেই ফোনের এপাশ থেকে অনুরাগ বলল..

–কাজ যাতে ঠিকমতো হয়ে যায়।আর আমি যা যা বলব তাই তাই যেন হয়।

ফোনের ওপাশ থেকে কেউ বলে,

–ঠিক আছে স্যার।

তারপর অনুরাগ কিছুক্ষন কথা বলে ফোন কেটে দিলো।ফোন কেটে সে মনে মনে বলল,

–অপেক্ষা করো ছোঁয়া তোমার জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ বাকি আছে। শুধু দেখো আগে আগে হোতা হে কেয়া পিকচার তো আবি বাকি হে।
__________________

দূর ঐ আকাশে এক বিশাল কালো মেঘ নীল আকাশের বুকে ভাসতে থাকা পাজা তুলোয় মেঘ গুলোকে ডেকে দিয়েছে।
পাজা তুলোর মেঘ গুলোকে দেখতে ভীষন মিস্টি লাগছে।ছোঁয়ার মনে হচ্ছে মেঘের মতো কালো মেঘের আস্তরনেরর মতো ছোঁয়ার জীবনটাকে ও কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে।

–অনুরাগ কেন আমার সাথে এরকম করলেন।

–আমি ও তো মানুষ। আমার কি ভাবনা নেই, রাগ নেই আপনি এত অপমানের পর আমি কি করে আপনার জীবনে আবার ফিরে যাই।আমার ও তো আত্মসম্মানবোধ আছে।আমি নিজের কাছে নিজেই হেরে যাচ্ছি অনুরাগ।কয়েদিন পর তো আমার বিয়ে। আপনার কি আমার জন্য একটু কষ্ট লাগবে না।আকাশ পানে কথাগুলো বলে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে ছোঁয়া।

–ভীষন কষ্ট হচ্ছে তার।

–ছোঁয়া

হঠাৎ কারে কথায় চোখ মুছে নিলাম।
পেছন ফিরে দেখি বাবা দাড়িয়ে আছে সাথে দুকাপ চা।

–বাবা তুমি এখানে।
–কি করছিস তুই।

–কিছু না বাবা আকাশ দেখছিলাম সুন্দর না আকাশ টা।

–হুম সুন্দর তুই কি কাঁদছিস মা।

–না তো বাবা।

–আমার থেকে লুকাচ্ছিস।নে ধর চা টা খা।

চায়ের কাপটা বাবার থেকে নিয়ে বললাম,

–বাবা তুমি কেন নিয়ে এসেছো।

–কেন আমি আনতে পারি না।আচ্ছা বল তুই কাঁদছিস কেন।

–অবশ্যই পারো।আসলে মনটা ভালো লাগছে না।

–তুমি মন খারাপ করলে আমাদের ভালো লাগবে।এখন একটু হাসে তো।

–ছোয়া হেসে তার বাবাকে জরিয়ে ধরে।

তারপর বাবা মেয়ে মিলে চা খেয়ে কিছুক্ষন গল্প করল।তারপর তার বাবা চলে। সে ও আর কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে নিচে চলে আসল।



#চলবে?

(ভুলত্রুটি মাফ করবেন রিচেক দেইনাই।হ্যাপি রিডিং)