অন্তরালের অনুরাগ পর্ব-৩০+৩১

0
957

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৩০ ❤🔥❤

[ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যতিত না পড়ার অনুরোধ রইল। ]

নতুন বর-কনেকে নিয়ে সবাই এবার হইচইে মেতে উঠল। সমবয়সী থেকে ছোটরা সবাই ইতিমধ্যে বাসর জাগা নিয়ে সব প্ল্যান-ট্যান করে নিয়েছে। প্রিয়তীর কপাল গড়িয়ে নাকে এসে অর্ণবের দেওয়া সিঁদুর লেপটে রয়েছে। আর অর্ণব পাশ থেকে মুগ্ধ চোখে সেটা পরখ করছে। তার এখন এইসব নিয়মের বেড়াজালে আটকে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে হচ্ছে না। সে যে এখন নিজের সদ্য বিবাহিত বউকে কাছে চায়। নিজের একান্ত কাছে। এতদিনের জমিয়ে রাখা নিজের সবটুকু ভালোবাসা উজার করতে চায়। কিন্তু এত ইচ্ছা-শক্তি থাকা সত্বেও সে পারছে না। সামাজিক যতসব নিয়মের বেড়াজালে সে শক্তপোক্তভাবে আটকা পড়েছে। বুক চিড়ে এই কঠিন নিয়মের বিরুদ্ধে তার তপ্তশ্বাস বেড়িয়ে আসছে৷ আহা রে নিয়ম! প্রেমিক পুরুষের মন কি এসব নিয়ম-নীতি বুঝে? সে তো কেবলমাত্র প্রেম বুঝে।
প্রিয়তীর আচমকা অর্ণবের দিকে চোখ পরতেই সে তার নেশালো আঁখিযুগল দেখতে পেল। এতদিন সে প্রেমিক ছিল। কিন্তু আজ থেকে যে এই ছেলেটা তার সবটা জুড়ে বিচরণ করবে৷ তার অধিকার পুরোপুরিভাবে পুষিয়ে নিবে। এসব ভাবতেই প্রিয়তীর বুকটা ধক করে উঠল। সে দ্রুত চোখ সরিয়ে নতজানু হলো। অর্ণব ঘটে যাওয়া সবটাই পরখ করেছে। তাই সেও এবার ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে হাসতে লাগল।

.

বাসর জাগার জন্য আলাদা একটা বড় রুম সাজানো হয়েছে। পুরো রাত আড্ডা-মাস্তি করার জন্য গানের আসর সহ সবধরনের ব্যবস্তা ইতিমধ্যে করে নেওয়া হয়েছে। প্রিয়তী আর অর্ণবকে নিয়ে সবাই এবার সেদিকে ছুটল। নীলাও সবার পিছু পিছু ঐদিকে যেতে লাগল। কিন্তু আচমকা একটি ছোট পিচ্চি মেয়ে এসে তার হাত চেপে ধরল। নীলা ঘাড় ফিরিয়ে পিছনে তাকাতেই বাচ্চা মেয়েটিকে দেখতে পেল। মুখে হাসির রেখা নিয়েই সে হাঁটু গেড়ে নিচে বসল। আলতোভাবে গালে হাত রেখে জানতে চাইল,

— ‘ কি হয়েছে আপুনি? কিছু দরকার? ‘
— ‘ তোমাকে। ‘

পিচ্চি মেয়ের সরাসরি এমন বড়দের মতো কথা শুনে নীলা আবারও হাসল। আস্তে করে গালটা টেনে দিয়ে বলল,

— ‘ বুড়ি। আমাকে দিয়ে কি কাজ? ‘
— ‘ আমার কাজ নেই। আমার কাজের জন্য চকলেট পেয়ে গিয়েছি। দেখ কতগুলো চকলেট। ‘

বলেই বাচ্চা মেয়েটা নীলাকে তার ছোট ব্যাগ থেকে দুইহাতবর্তী করে চকলেট দেখাল। নীলা পাল্টা কিছু বলবে তার আগেই বাচ্চা মেয়ে ঝড়ের গতিতে গায়েব। নীলা ফ্যালফ্যাল করে তার গমনপথের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কি থেকে কি হয়ে গেল সবটা তার মাথার উপর দিয়ে গেল।
সে এবার পিছনে তাকালো। সবাই ইতিমধ্যে প্রিয়তীদের নিয়ে রুমে চলে গিয়েছে। পিচ্চি মেয়েটার জন্য নীলা পিছনে পড়ে গেল। ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে সে আবারও সামনে যাবার জন্য পা বাড়াল। কিন্তু এবারও বিফল। কিন্তু এবার আর বাচ্চা-কাচ্চা নয়। নীলার সমস্ত অস্তিত্বেজুড়ে বসবাসকারী ব্যক্তিটি তার সামনে বিদ্যামান। সাদিদ ডানহাতে নীলার কব্জিতে ধরে আছে। কেউ কোনো বাক্য উচ্চারণ করল না। কেননা সেই সময়টুকু দেওয়া হয়নি। নীলা এখন সাদিদের উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ। কিন্তু পাজোড়া তার মাটিতে অবস্থিত নয়। কেননা সাদিদ তাকে ইতিমধ্যে পাঁজাকোলে তুলে নিয়েছে। নীলা কিছু বলতে চায়ছে। কিন্তু কন্ঠস্বর যেন আটকে রয়েছে। কিছুতেই গলা দিয়ে শব্দ উচ্চারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা নীলা যে সাদিদের ঘোলাটে আঁখিযুগলের সম্মুখীন হয়েছে। এই চোখজোড়া নীলাকে শব্দহীন করে তোলে। কিন্তু তারপরও সে সাহস সঞ্চয় করে নিচুস্বরে বলল,

— ‘ কি করছেন? কেউ দেখবে। ‘

সাদিদ তাকে কোলে নিয়ে হাঁটারত অবস্থাতেই তার মুখপানে একপলক তাকালো। কিন্তু নিজের প্রতিউত্তর জানানো না। নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে সামনে হাঁটা দিলো। আশেপাশে কে দেখল আর কে না দেখল সাদিদের সেদিকে আপাতত খেয়াল নেই। সে যে এখন অস্থির হয়ে রয়েছে। আর তার মধ্যকার এই অস্থিরতা কমাতে অতি শীঘ্রই ঔষধ চায়। আর যেটা নীলা ব্যতিত অপর কারও কাছে নেই। তাই নিজের অস্থিরতা কমানোর জন্য সাদিদ এখন নীলাঞ্জনা নামক ঔষধ নিয়ে ব্যস্ত। বাদবাকি কোনোকিছুর তোয়াক্কা করার সময় তার এখন আছে নাকি?
সাদিদ তাকে নিয়ে সোজা নিজের জন্য বরাদ্দকৃত রিসোর্টের রুমে আসলো। রুমে প্রবেশ করা মাত্রই সে দ্রুত নীলাকে নিচে নামালো। এবং চোখের পলকে দরজাটা লক করল। এবং চোখের পলকে নীলার হাতে হেঁচকা টান দিয়ে দরজার সাথে তাকে চেপে ধরল। এবং চোখের পলকেই নীলা নিজের অধরযুগলে সাদিদের উষ্ণ অধরের ছোঁয়া পেল। সবগুলো কাজই এত দ্রুত তার সহিত ঘটেছে যে নীলা তাতে পুরোপুরি হতভম্ব। সে নিজের হুঁশ ফিরে পায় অধরযুগলে সাদিদের রুডলি আদরে। নীলা মৃদু ব্যাথা পাচ্ছে। কিন্তু সাদিদের সেদিকে হুঁশ নেই। দুইহাত নীলার কানের পিছনে রেখে সে তাকে নিজের আরও কাছে টেনে আনল। বিরামহীনভাবে ঠোঁট আদর দিতে লাগল।
নীলার এতক্ষণ আবেশে চোখজোড়া বন্ধ থাকলেও এবার প্রায় শ্বাস আটকে যাবার অবস্থা। কিন্তু সাদিদের সেসব দিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। সে এখন নীলাতে মত্ত। নীলা না পেরে চোখ খোলে সাদিদের দিকে তাকালো। সাদিদের আঁখিদ্বয় পূর্বেকার ন্যায় বন্ধ রয়েছে। চোখ বন্ধ রেখে সে নীলার কোমল ঠোঁটজোড়া নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের মধ্যে নিতে ব্যস্ত। নীলা এই মুহূর্তে ঠিক কি করবে সেটা বুঝে উঠতে পারছে না। সাদিদকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে দূরে সরাতে গেলে সে উল্টো নীলাকে আরও চেপে ধরল। সে এবার বাম হাতটা কানের পিছন থেকে সরিয়ে এনে শাড়ি বেধ করে নীলার কোমড় চেপে ধরল।
ইশশ ঠোঁটে ব্যাথা কোমড়ে ব্যাথা, এই ছেলেটা আজকে সবকিছু ব্যাথায় ভরিয়ে দিচ্ছে। নীলার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু লজ্জায় সে সাদিদের সাথে রেসপন্সও করতে পারছে না। সে কখনই সাদিদের এসব আদরে নিজে রেসপন্স করে না৷ সাদিদ নীলাকে বুঝতে পারে। তাই এই নিয়ে কখনও তাকে জোর করে না৷ যখন নীলা নিজ থেকে চাইবে তখনই তাকে আদর করবে। সাদিদ অধির আগ্রহে সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু কখনও নীলাকে বুঝতে দেয় না। এমনকি জোরও করে না। থাক না কিছু না বলা কথা। না বলা চাওয়া-পাওয়ার সংখ্যা। ততদিন পর্যন্ত না হয় নিজের আদর-সোহাগেই নীলাকে পরিপূর্ণ রাখুক। দোষ কি তাতে? সাদিদ কি কোনো অংশে কম? দুইজনের আদর সে একাই পুষিয়ে নিতে পারে। বরং নীলার জন্য তাকে একা সামলাতেই হিমশিম খেতে হয়।
নীলা আবারও একপলক সাদিদের মুখপানে তাকালো। লজ্জা লাগছে ভীষণ। কিন্তু এইমুহূর্তে কিছু না করলে শ্বাস বোধহয় তার চিরতরে আটকে যাবে।
সাদিদ যখন নীলার ঠোঁটে মত্ত হয়ে নিজের ঠোঁটের আদর দিচ্ছে তখন হুট করে নিচের ঠোঁটে শক্ত কামড় অনুভব করলো। সে এতক্ষণে চোখ খুলল। এবং নীলার থেকে নিজেকে আলাদা করে তার মুখপানে তাকালো। নীলা ততক্ষণে ঘাড় ফিরিয়ে লজ্জায় নতজানু হয়ে মুখ লুকালো। সাদিদ হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নিজের ঠোঁট মুছে নিলো। কেননা নীলার দেওয়া লাল রঙা লিপস্টিক সাদিদের ঠোঁটেও খানিকটা লেগে গিয়েছে। সাদিদের নিঃশ্বাস দ্রুত উঠানামা করছে। নীলাও এতক্ষণ পর রেহাই পেয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানছে।

সাদিদের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নীলা এবার মুখ উঠিয়ে তার দিকে তাকালো। সে ভেবেছিল সাদিদ বোধহয় জোরে কামড় দেওয়াতে রাগ করেছে। অনুতপ্ততাবোধ নিয়ে চোখ উঠিয়ে তাকাতেই সে আবারও একটা বড়সড় ধাক্কা খেল।
সাদিদ রাগ করবে কি? সে এতক্ষণ নিজের কাজে ব্যস্ত ছিল। পাঞ্জাবিটা খোলে ফেলাতে সাদিদের লোমশ বুকটা নীলার চোখের সামনে উন্মুক্ত হলো। অনেকবারই সাদিদকে এই অবস্থায় সে দেখেছে। তারপরও কেন যেন খুব লজ্জা লাগে। যেমনটা এখনও লাগছে। নীলার চোখ-মুখ, ঠোঁট সব তরতর করে কাঁপছে। তারউপর লজ্জার লাল আভা মুখে যেন আলাদা এক সৌন্দর্য বহন করে চলেছে। সাদিদ নিষ্পলক প্রাণপাখির সৌন্দর্যেভরা মুখশ্রীতে পলক বুলিয়ে আচমকা হেঁচকা টানে তাকে কাঁধে নিয়ে নিলো।
নীলার চোখ বেড়িয়ে আসার জোগাড়! কি হচ্ছে কি এসব? আর সবথেকে বড় কথা সাদিদের কি হয়েছে? এমন পাগল-উন্মাদের ন্যায় আচরণ করছে কেন?
নীলার হতবিহ্বল দৃষ্টির মধ্যেই সাদিদ তাকে নিয়ে বিছানার কাছে চলে আসলো। নীলাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সাদিদ নিজের ভরটুকু তার উপর দিলো। আবারও হালকা ব্যাথায় নীলা ব্যাথাজনক শব্দ করল। সাদিদ নীলার দিকে তাকিয়ে নিজের মুখটা তার গলায় নিয়ে গেল। গুটিকয়েক উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে নেশালো তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠল,

— ‘ আমাকে এত পুড়িয়েও তোর শান্তি হয় না? আমি যে জ্বলে পুড়ে কয়লা হচ্ছি সেটা তোর নজরে আসে না? এত কষ্ট দিয়ে আরও কষ্ট দিতে চাস! এতো নির্দয় কেন তুই? এতটা প্রাণনাশিনী না হলে কি হতো না? আমি যে মরে যাচ্ছি পাখি। তুই আমাকে নিজের জন্য পুরোপুরি মেরে দিচ্ছিস। দেখ আমি নিজের মধ্যকার অস্থিরতা কমাতে পারছি না। ভিতর থেকে ছটফট করছি। তুই আমার একি সর্বনাশ করলি? আমি যে এখন তোকে ছাড়া একটা সেকেন্ডও কল্পনা করতে পারি না। ‘

বাক্যটুকু সমাপ্ত করেই ভালোবাসার শাস্তিস্বরূপ সাদিদ নীলার গলার একপাশে নিজের ধারালো দাঁত ছুঁয়ালো। এতক্ষণের নিস্তব্ধতার পর সাদিদের থেকে এমন ভয়ংকর কথাবার্তা শুনে নীলার ভয়ে ভিতর পর্যন্ত শুকিয়ে কাঠ৷ তারউপর সাদিদের তুই বলে সম্বোধন করা। নীলা যে নিজেকে সামলাতে পারছে না। তার কাছে সবটাই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস বলে মনে হচ্ছে। শরীরটাতে যেন ইতিমধ্যে ভূমিকম্পের ন্যায় অনুভব হচ্ছে। নিজেকে সামলাতে সে বিছানার চাদর শক্ত হাতে খামচে ধরল। কিন্তু তারপরও যেন ঠিকঠাক সামলাতে পারছে না। থেকে থেকে কেঁপে উঠছে।
নীলার এমন করুণীয় অবস্থার মধ্যেই সাদিদ নীলার একটা হাত বিছানার সাথে শক্ত করে চেপে ধরল। নিজের অপর হাতটা নীলার কাঁধে রেখে আবারও নেশাক্ত স্বরে বলল,

— ‘ কিন্তু এর জন্য তোকেও যে শাস্তি পেতে হবে। ভালোবাসার ভয়ংকর যন্ত্রণাময় শাস্তি। আমি শুধু কষ্টে ব্যাথিত হবো এমনটা তো ঠিক নয়। তোকেও যে আমার ভালোবাসায় কষ্ট ভোগ করতে হবে। তবেই না হিসাব বরাবর হবে। ‘

নিজের হিসাবনিকাশের পাঠ পূর্ণ করে সাদিদ নীলার শাড়ির আঁচলটা বুক থেকে সরিয়ে দিলো। লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়ে সাথেসাথেই সাদিদকে মৃদু সরিয়ে নীলা উল্টো ঘুরল।
সাদিদ নীলার লজ্জামাখা আচরণ দেখে এতক্ষণে ঠোঁট কামড়ে হাসল। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে নীলার দিকে এগিয়ে গেল। নিষ্পলক কিছুক্ষণ প্রাণপাখির দবদবে সাদা পিঠের দিকে তাকিয়ে থেকে ব্লাইজের খোলা অংশে নিজের বলিষ্ঠ হাতটা স্থাপন করল। স্বামীর আদরমাখা স্পর্শে নীলার পিঠটা সাথেসাথেই খানিকটা কুঁচকে এলো। সাদিদ ক্রমশ নিচু হয়ে নীলার পিঠের উন্মুক্ত অংশে নিজের ঠোঁটদ্বয় স্পর্শ করল। সঙ্গে সঙ্গেই নীলা চোখ খিঁচে বন্ধ করে চাদর খামচে ধরল। নীলার শরীরে বহমান কম্পন সাদিদও অনুভব করতে পারছে। যা তাকে নীলার প্রতি আরও আকর্ষিত করছে। সাদিদ পিছন থেকে একপলক নীলার একপাশের দৃশ্যমান মুখশ্রীতে নজর বুলিয়ে ব্লাউজের ফিতাটা খোলে দিলো। নীলার অবস্থা সূচনীয়। সাদিদের এমন অত্যাচারে তার দম আটকে আসছে।
বাহিরে এখনও আবছা অন্ধকার রয়ে গিয়েছে। ভোরের আলো ফুটতে আরও কিছুটা সময় বাকি। তাই ডিমলাইটের হালকা আলোতে পরিবেশটা যেন পরিস্থিতির সঙ্গে পুরোপুরি মিলিয়ে গিয়েছে।
সাদিদ অনবরত নীলার উন্মুক্ত পিঠে নিজের উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ বিলিয়ে দিতে লাগল। নীলা এবার সহ্য করতে না পেরে আটকে যাওয়া কন্ঠে বলে উঠল,

— ‘ প্লিজ ছে..ড়ে দিন। সহ্য ক..রতে পার..ছি না। ‘
— ‘ এতো তাড়াতাড়ি? এখনও যে পুরো হিসাবটাই বাকি রয়েছে জান। সহ্য করতে না পাড়লেও যে করতে হবে। আমাকে পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে নিজে আরামে ঘুরে বেড়াবে সেটাতো হতে দেওয়া যায় না। তোমাকেও আমার ভালোবাসার আগুনে পুড়ে কয়লা হতে হবে। তার আগে নো ছাড়াছাড়ি। অনলি কাছে আসা-আসি হবে। ‘

বলেই সাদিদ নিজের গাল দিয়ে নীলার পিঠে হালকা ঘষা দিলো। ধারালো খোঁচা দাঁড়ির আঘাতে মৃদু ব্যাথায় নীলা ব্যাথাজনক আওয়াজ করে উঠল,

— ‘ আহ্। ‘

সাদিদ বুঝতে পেরে ব্যাথার জায়গায় মলম দেওয়া শুরু করল। ঠোঁটের আদরে প্রিয়তমার সমস্ত পিঠ পূর্ণ করতে লাগল।
ক্রমশ শিহরিত হয়ে শাড়িতে মোচড়ামুচড়ি করতে থাকা নীলাকে সাদিদ এবার নিজের দিকে ফিরাল। সে নতজানু হয়ে শাড়ির আঁচল ধরতে গেলেই সাদিদ নিঃশব্দে ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে নিয়ে তাকে নিজের কাজে বাঁধা প্রধান করল। নীলা লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়ে চোখ পিটপিট করছে। দুষ্টু সাদিদ তাকে আরও লজ্জায় ফেলতে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,

— ‘ আমার সামনে এতো ঢেকে রাখার কি আছে? আমি কি তোমার পর না-কি? ‘

নীলা উত্তর দেওয়ার সাহস খোঁজে পেল না। বরং আবারও শাড়ির আঁচলে ধরতে গেলে সাদিদ তার হাত নিজের মুঠিতে পুরে নিলো। বয়ঃসন্ধিতে বেড়ে উঠা নীলার শরীরের কার্ভে সাদিদের উষ্ণ ঠোঁটের পরশ পরতেই নীলা আরও লজ্জা পেল। তার ইচ্ছে হচ্ছে এখনই নিজেকে নামহীন অচেনা জায়গায় লুকিয়ে ফেলতে। যেখানে অন্ততপক্ষে সাদিদের চোখাচোখি তাকে হতে হবে না।
অপরদিকে নীলার বর্তমান অবস্থা দেখে সাদিদ আবারও নিঃশব্দে হাসল। আরেকবার নিজের উষ্ণ ঠোঁটের পরশ বুলিয়ে দিয়ে সে ফিচেল কন্ঠে বলল,

— ‘ আর তাছাড়া তোমার তো এসব ঢেকে রাখার আরও কারণ নেই। কেননা আমি শুনেছিলাম বিয়ের পর নাকি স্বামীদের বলিষ্ঠ স্পর্শে স্ত্রীদের এই মূল্যবান সম্পদের আকার পরিবর্তন হয়। ড্যাবেলপ বলা যায় আরকি। কিন্তু আমার বউয়ের তো এখনও সব বাঁচা বাঁচা-ই রয়ে গিয়েছে। ‘

ইশশ এই ছেলের মুখ মাশাল্লাহ দিলে বাংলার পাঁচ। চরম মাত্রার অসভ্য। নীলা রুদ্ধশ্বাস কন্ঠে আটকে যাওয়া গলায় বলল,

— ‘ অসভ্য লো..ক। ‘
— ‘ অসভ্য আর হতে দিলে কোথায়? ছোঁয়ার আগেই তো লজ্জায় জড়সড় হয়ে যাও। তাইতো সব বাচ্চাই রয়ে গেল৷ এই ক্ষেত্রে কিন্তু সম্পূর্ণ দোষ তোমার। এত লজ্জা কোথায় থেকে পাও জান? আমি তো তোমার লজ্জা ভাঙতে ভাঙতে কাহিল৷ তারপরও তোমার লজ্জার শেষ সীমানা খোঁজে পাই না৷ ‘
— ‘ ছাড়ুন বলছি। যতসব অশ্লীল কথাবার্তা। ‘
— ‘ ছাড়ার জন্য ধরেছি নাকি? নাকি বিয়ে করেছি সাধুসন্ন্যাসী হয়ে থাকার জন্য? ‘

দুষ্টু সাদিদ কথাটুকু বলেই শক্ত হাতে নীলার কোমড়ের একপাশে জোরে চাপ দিলো।

— ‘ আউচ। ব্যাথা পাই না বুঝি? হাত তো নয় যেন লোহা৷ ‘

সাদিদ নীলার কথায় মৃদু হাসল। নাকে নাক ঘষে ঘোরলাগা কন্ঠে বলল,

— ‘ এখনও তো কোনো ব্যাথা-ই দেয়নি৷ তোমার অপরাধের শাস্তি সবটুকুই এখনও বাকি রয়েছে জান। সুদেআসলে সবটুকু ফিরিয়ে দিব। ‘

বলেই সে ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হাসি হাসতে লাগল। নীলা কথার সারমর্ম বুঝতে পেরে তার উন্মুক্ত বুকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে লজ্জারাঙা মুখে বলল,

— ‘ প্লিজ ছাড়ুন। সবাই হয়তো আমাদের খোঁজ করছে। না পেলে মন্দ ভাববে৷ ‘

সাদিদ নীলার কথার ধার ধারল না। বুক থেকে নীলার হাতটা তুলে নিয়ে নিজের মুখের সামনে আনলো। আবছা আলোতেও নীলার আলতা রাঙা হাতটা সাদিদের চোখের সামনে ঝলঝল করছে। সে প্রিয়তমার আলতা রাঙানো হাতের আঙ্গুলে চুমু খেল। হাতের তালুতেও চুমু খেয়ে নীলার মুখপানে তাকিয়ে মুগ্ধতায় ভরা চোখ নিয়ে প্রশ্ন করল,

— ‘ পায়েও দিয়েছ? ‘

নীলা লজ্জা পেল খুব৷ নতজানু হয়ে উত্তর জানাতে নিঃশব্দে মাথা উপর নিচ করল। সাদিদ উত্তর বুঝতে পেরে তার উপর থেকে সরে এসে এবার পায়ের কাছে আসলো৷ শাড়ি টুকু একটু উপরে তুলতেই প্রিয়তমার আলতা রাঙানো পাগুলোও চোখের সামনে দৃশ্যমান হলো। সাদিদ আলতো হাতে নীলার পায়ে হাত বুলাতেই সে পা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে দ্রুত বলল,

— ‘ কি করছেন আপনি? প্লিজ পায়ে হাত দিবেন না৷ ‘

অবাধ্য সাদিদ এবারও তার বারণ শুনলো না। মাথা নিচু করে প্রিয়তমার পায়েও চুমু খেল। নীলা শিহরিত হয়ে বারবার পা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। কিন্তু সাদিদের কাছে বারবার হার মানতে বাধ্য। অবশেষে অজস্র চুমু খেয়ে সাদিদ নিজের ঠোঁটজোড়া নীলার পায়ের থেকে সরিয়ে আনলো। কিন্তু উঠল না। শুধু মাথা উঠিয়ে নীলার মুখপানে একবার তাকালো। নীলা চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে রয়েছে। সাদিদ ঠোঁট কামড়ে নীলার শাড়িতে হাত দিলো। উপরে উঠাতে নিলেই নীলা দুর্বল হাতে তাকে বাধা দিলো।
সাদিদ এবারও তার কথা না শুনে উল্টো নিজের ঠোঁট স্পর্শ করল।
ইশশ নীলা বোধহয় আজ মরেই যাবে। সাদিদ কি তাকে মেরে ফেলার জন্য এমনটা করছে?
সাদিদ নীলার শাড়িটা হাঁটু পর্যন্ত উঠিয়ে থামল। উন্মুক্ত পায়ে গুটিকয়েক উষ্ণ চুমু খেয়ে একটু উপরে এসে নীলার পেটে হাত রাখল। উন্মুক্ত পেটেও আলতো হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। নীলা এমন অত্যাচারে অনবরত কাঁপছে।
কিন্তু সাদিদ যে আজ থামবে না। তার আচরণে এমনটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে নীলার সমস্ত পেটসহ নাভির আশেপাশে অসংখ্য চুমু খেল। নীলা এবার দাপাদাপি শুরু করেছে। সাদিদও তার দিকটা বুঝতে পারছে৷ তাই এখন যন্ত্রণার পাঠ চুকিয়ে ফেলতে চাইল৷ সে উন্মুক্ত পেটে গভীর একটা চুমু খেয়ে নীলার মুখোমুখি হলো। তার গালে নিজের বলিষ্ঠ হাত আলতো করে রেখে আবারও ঠোঁট আদর করল।
কিন্তু এবার রুডলি নয়। বরং খুব সফটলি প্রিয়তমার অধরযুগলে নিজের অধর ছুঁয়ে দিতে লাগল। নীলার শরীরে কম্পন বয়ছে। কিন্তু আবেশে তার হাতদুটো নিজ থেকেই সাদিদের উন্মুক্ত পিঠ আঁকড়ে ধরল। সেখানে গুটিকয়েক নখের আঁচড়ও লাগল। যা সাদিদকে নীলাতে আরও মত্ত করে তুলল। নিজের অস্তিত্বের সাথে প্রিয়তমা স্ত্রীকে পুরোপুরি মিশিয়ে নিতে সাদিদ তাকে আরও কাছে টেনে নিতে লাগল।
রাতের শেষ প্রহর চলছে। কিন্তু ভালোবাসাময় কাপলের জন্য যেন নব্য সূচনা। সদ্য ভালোবাসায় জড়িত হওয়া কাপলযুগলের ন্যায় তারা আজ একে অপরকে ভালোবাসা বিলিয়ে দিতে ব্যস্ত। একে অপরের ভালোবাসার রঙে নিজেদের পরিপূর্ণ করতে ব্যস্ত। ব্যস্ত তারা, জীবন নামক সুখপাখিটাকে ভালোবাসার রংধনু রূপে সাজিয়ে তুলতে।

#চলবে…

গল্পঃ #অন্তরালের_অনুরাগ
লেখনীতেঃ #নাহিদা_নীলা
#পর্বঃ ৩১

পুরো রাত হইহট্টগোল করে ক্লান্ত সবাই এবার কিছুটা চুপসে এলো। ঘুমুঘুমু চোখ নিয়ে সবাই প্রায় একে অপরের দিকে ঝুকে পড়ছে। প্রিয়তীও সেই বহুক্ষণ আগেই ক্লান্ত হয়ে অর্ণবের কাঁধে মাথা রেখেছে। বিয়ের এতো ধকল, তার উপর ফাজিলগুলোর অত্যাচারে বেচারি একেবারে মিইয়ে পড়েছে। অর্ণব তাকে একহাতে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে আগলে রেখেছে। আর পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ঢাকায়-ই এখন প্রায় শীত শীত আবহাওয়া। আর সেখানে শ্রীমঙ্গল হলে তো অবস্থা খারাপ। বেশ ঠান্ডা পড়েছে এখানে। অর্ণব পাশ থেকে চাদর নিয়ে নিজেকে সহ প্রিয়তীকে একি চাদরে জড়িয়ে নিলো। উষ্ণতা পেয়ে প্রিয়তীও অর্ণবের বুকে একেবারে মুখ লুকিয়ে বসেছে। অর্ণব নিঃশব্দে হেসে নিজের সদ্য বিবাহিত বউয়ের মাথায় ভালোবাসার দীর্ঘ চুমু খেল।
প্রিয়তীর বন্ধ আখিঁদ্বয়েই খুশির রেখা ঝলমল করল। সেটা অদৃশ্যমান হলেও গালের লাল আভাটা অর্ণবের নজর এড়ালো না। সেও নিঃশব্দে হেসে তাকে আরও শক্তহাতে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
মোটামোটি আর সবাই এতক্ষণে ঘুমে তলিয়ে গেলেও অর্ণবের সঙ্গে আরও দুইজনের চোখে এখনও ঘুমের লেশমাত্র নেই। তানবীর আড়চোখে অর্ণবকে প্রিয়তীর মাথায় চুমু খেতে দেখে নিয়েছে। তাই সে এবার বসা থেকে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। এতটুকু বুঝার বয়স তো তার এখন হয়েছে। সুতরাং শুধু শুধু তাদেরকে বিরক্ত করার মানে কি?
তানবীর যাবার কয়েকমুহূর্ত পর শান্তও রুম থেকে কেটে পড়ল। বিবাহিত দম্পতির সাথে এই মুহূর্তে বসে থাকতে তারও ভীষণ লজ্জা লাগছে।
বাহিরে বেশ শীত পড়েছে। কিন্তু তানবীর তারপরও গরম কাপড় ছাড়াই বাহিরে চলে এসেছে। সেই জন্য ঠান্ডার তাপে পুরুষ মানুষ হয়েও হালকা শীত লাগছে। কিন্তু সে আপাতত ঐদিকে পাত্তা দিতে চাইছে না৷ ভোর হবে মাত্রই। তাই সূর্যাদয়টা উপভোগ করতে চায়।
শান্ত তানবীরের থেকে বেশ অনেকটা দূরে এসে দাঁড়াল। পিছন থেকেই তানবীরকে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পেন্টের পকেটে দুইহাত দিয়ে একদৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে থাকতে দেখল। সে তার দিকে দুইকদম এগিয়ে আবার থেমে গেল।
সন্ধ্যার ঘটনা মনে হতেই তার ভয় লাগছে। তানবীরের উগ্র রূপটা তার হজমশক্তির বাহিরে। কিন্তু তারপরও কিসের এক অদৃশ্য শক্তি এসে তার এই ভয়কে আজ কাবু করে নিয়েছে। যার ধরুন সবকিছুকে ছাপিয়ে সে গুটিগুটি পায়ে তানবীরের পিছনে গিয়ে দাঁড়াল।
তানবীর সামনে তাকিয়ে থাকলেও বুঝতে পাড়ল কারও উপস্থিতি। এবং সেই ব্যক্তিটি কে হতে পারে সেটাও সে শতভাগ নিশ্চিত। কেননা তার শরীরের ঘ্রাণ, নুপুরের রিনিঝিনি, চুলের মন মনমাতানো সুভাস সবটাই তানবীরের নিকট ভীষণ পরিচিত। কিন্তু সে কোনো শব্দ উচ্চারণ করল না। না রাগ কিংবা জেদ দেখাল। কেবল ঠাঁই আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল।
দেখতে দেখতেই সূর্যের লাল আভা পৃথিবীর বুকে ঢলে পড়ল। শান্ত এবার পায়ের গতি আরও খানিকটা বাড়িয়ে একেবারে তানবীরের পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল। আল্লাহ জানে তার এতো সাহস আজ কোথায় থেকে উদয় হলো? কয়েকঘন্টা আগেও তো এই ছেলেটাকে দেখলেই সে ভয়ে চুপসে যেত। আর তার করা অপরাধের শাস্তি স্বরূপ নিজের মধ্যে এই ব্যক্তির জন্য রাগ-অভিমানের পাহাড়ও গড়ে তুলেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তার কি হয়ে গেল? কোথায় গেল সবকিছু?
কিসের জন্য তার এতো পরিবর্তন?

— ‘ নিজের জন্য কোনো কৈফিয়ত দিতে আসিনি। শুধু এতটুকুই বলার ছিল, সবসময় আমরা চোখে যা দেখি সেটাই সত্যি হয় না। চোখের দেখাতেও ভুল থাকতে পারে। বিষয়টা বিশ্বাসের। যদি বিশ্বাস না থাকে তাহলে লোকমুখে শুনা কথাতেও মিথ্যাকে সত্য মনে করা যায়। ‘

বাক্যটুকু সমাপ্ত করে শান্ত ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার যেটুকু বলার ছিল সেটা বলা হয়ে গিয়েছে। এখনও যদি তানবীর নিজের মধ্যকার রাগ পুষে রেখে তাকে ঘৃণা করে তবে এক্ষেত্রে তার আর কিছু করার নেই। সে যেই পথে এসেছিল আবারও একি পথে পদযুগল চালিয়ে নিলো। কিন্তু বেশি একটা দূরত্ব তৈরি করতে পারেনি। কেননা শক্তপোক্ত একটা হাত তার নরম হাতের কব্জিতে ধরে নিয়েছে।
শান্ত বিস্ফোরিত চোখে পিছনে ফিরল। তানবীরকে নিজের হাত ধরে রাখতে দেখে তার চমকের মাত্রা আরও বেড়ে গেল। এমনটা সে কোনোকালে ভাবতেও হয়তো পারেনি।
তানবীর এতক্ষণ চোখ নিচু করে ছিল। এবার শান্তর মুখশ্রীতে নজর বুলালো। সদ্য ফোটা ভোরের স্নিগ্ধ রক্তিম আলোতে শান্তর উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মুখটা যেন আরও মায়াবী হয়ে উঠেছে। রাতের গুছিয়ে রাখা চুলগুলো এখন খানিকটা এলোমেলো। কিছু চুল উড়ে এসে সমানে তার মুখের উপর পড়ছে।
শান্তর এসবে নজর নেই। সে কেবল একদৃষ্টিতে তানবীরের চোখে দৃষ্টিপাত করে রয়েছে। কি হচ্ছে সে আপাতত সেটা বুঝতে চায়ছে।
তানবীর শান্তর ধরে রাখার হাতের দিকে একপলক তাকিয়ে আবারও তার চোখে নিজের চোখ স্থাপন করল। সে ইতিমধ্যে নিজের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। আর কোনো কিছুর বাধা সে মানবে না। যা হয় হোক কিন্তু সে নিজেকে আর আটকে রাখবে না। খোলা পাখির ন্যায় নিজেকে মুক্ত করবে।
খাঁচার ভেতর থেকে বেড়িয়ে এসে পাখিটি যেমন হাস্যউজ্জ্বল হয়ে পৃথিবীর আলো-বাতাসকে গ্রহণ করে, তেমনিভাবে তানবীরও শান্তকে শক্ত হাতে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে তার প্রবাহমান হৃদকম্পন অনুভব করছে। অনুভব করছে নিজের বুকপাজঁরের সাথে ঝাপটে জড়িয়ে রাখা এই মেয়েটির পুরো শরীরের মাতাল করা ঘ্রাণকে। তার শিহরিত শরীরের অনবরত কম্পনকে। নরম দেহটা যেন শিতের হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় থরথর করে কাঁপছে।
কিন্তু তানবীর তবুও নিজেকে শান্তর থেকে দূরে সরাল না৷ আর কত দূরত্ব বজায় রেখে চলবে? এবার যে কাছে আসার সময়। ভালোবাসার সময়। একেঅপরকে ভালোবাসায় বেঁধে নিয়ে সব কষ্টকে ঘুচে নেবার সময়। তাই নিজের বলিষ্ঠ শরীরের বাহুর শক্ত বন্ধন সে আরও জুড়ালো করল। আগলে নিয়ে তাকে ভূমি থেকে উপরে তুলল। এই মেয়েটার সবটুকু ভার নিজের উপর নিয়ে সে তাকে নিজের সাথে পুরোপুরি মিশিয়ে নিলো।

বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত হতভম্ব। পুরোপুরি বাকরুদ্ধ! কিংকর্তব্যবিমুঢ়। এমন অপ্রস্তুত ঘটনার সম্মুখীন সে এই জীবনে বোধহয় আর হয়নি। মুখ ফুটে কিছু বলাও যাচ্ছে না। কন্ঠনালী যেন কেউ শক্ত করে চেপে ধরেছে তার৷ শব্দ উচ্চারণ তার জন্য এইমুহূর্তে অসম্ভব ব্যাপার-স্যাপার।
তানবীর-ই তাকে এই অবস্থা থেকে রেহাই দিতে এগিয়ে আসলো। শান্তর কাঁধ থেকে নিজের মুখ তুলে দুইজন মুখোমুখি হলো। তানবীর কিছুমুহূর্ত নিষ্পলক মায়াবতীর মুখপানে তাকিয়ে থেকে ললাটে এলোপাতাড়ি চুমু খেতে লাগল। আজ এই মুহূর্তে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে সে নিজের জমানো আদর শান্তকে বিলিয়ে দিতে ব্যস্ত।
আর অপরদিকে অপরজনের জন্য আজ বোধহয় চমকিত হয়ে ভ্যাবাচেকা খাওয়ার দিবস। নতুবা শান্ত বারবার এমন সব ভয়ংকর অবস্থায় পড়বে কেন?
নিজের সঙ্গে কি হচ্ছে সেটা অনুভব করতেই শান্তর শিরদাঁড়া বেড়ে শীতল বায়ু বেয়ে গেল। লোমকূপগুলোও থেকে থেকে দাঁড়াতে শুরু করল। কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও তাকে যেই বিষয়টা অস্থির করে ফেলছে সেটা হচ্ছে অস্বস্তি।
তার এই মুহূর্তে চরম লেবেলের অস্বস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু শান্তর সেটা বিন্দুমাত্র হচ্ছে না।
বরং শরীর মনজুড়ে তার শিহরণ বয়ছে৷ কিন্তু এমনটা তো হবার কথা নয়। কেননা কোনো ছেলে তাকে এতো কাছ থেকে স্পর্শ করছে। এখানে তার অস্বস্তি হওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেটা হচ্ছে না কেন?
শান্ত যখন নিজের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভ্যাবাচেকা খেয়ে ভাবনায় বিভোর, তখন তানবীর শান্তর কপালে নিজের শেষোক্ত দীর্ঘায়িত চুমুটা খেল। তারপর আস্তেধীরে এতক্ষণ পর তাকে ভূমিতে পদাচারণ করতে দিলো। কিন্তু নিজের থেকে আলাদা করল না। বরং তার দুইগালে নিজের বলিষ্ঠ হাতদুটো স্থাপন করে কপালে কপাল ঠেকিয়ে, রূদ্ধশ্বাস কন্ঠে এতক্ষণের নীরবতার ছেদ ঘটিয়ে বলে উঠল,

— ‘ বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু জীবনে এত খারাপভাবে ঠকে গিয়েছি যে বিশ্বাস শব্দটাতেও ঘৃণা চলে এসেছে। পারবে না শব্দটাকে আবারও ভালোলাগার সারিতে দাঁড় করাতে? পারবে না এই অগোছালো ছেলেটাকে দায়িত্ব নিয়ে গুছিয়ে দিতে? পারবে না একটু যত্নে আগলে রাখতে? ‘

শান্তর আঁখিপল্লব এতক্ষণে বন্ধ হয়ে এসেছে। তানবীরের তপ্ত নিঃশ্বাসগুলো তার চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে। তার শরীরজুড়ে অচেনা-অজানা এক ভালোলাগা বয়ে যাচ্ছে। ঠিক-ভুল, রাগ-ক্ষোভ সবকিছুকে ছাপিয়ে সে অবশেষে আটকে যাওয়া কন্ঠে অপ্রত্যশিত এক শব্দ উচ্চারণ করল।

— ‘ পা..রব। ‘

ছোট্ট একটা শব্দ। কিন্তু সবটা যেন শান্তর জন্য বিপরীত প্রতিক্রিয়া। উত্তরটা যেন অন্যরকম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হলো অন্যরকম। একেবারে ধরাছোঁয়ার বাহিরে।
তানবীরের কর্ণকোহরে শব্দটা পৌঁছাতেই সে চোখ খোলল। শান্তর মুখটা উঁচু করে চোখে চোখ রাখল। অতঃপর আবারও কপালে নিজের ঠোঁটের উষ্ণ পরশ বুলিয়ে দিলো।
শান্ত এবার বেশ লজ্জা পেল। তানবীরের বুকেই মুখ লুকিয়ে নতজানু হলো। তানবীর সেটা পরখ করে নিঃশব্দে হাসল। কিন্তু শান্ত লজ্জা পাবে বিধায় আর কিছু বলল না। শুধু নিজের পেশিবহুল হাতদুটো দিয়ে শান্তকে উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ করল। শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল মেয়েটাকে।
শান্ত যেন তানবীরের এমন কান্ডে আরও লজ্জা পেল। গাল দুটো টমেটোর ন্যায় লাল-হলুূদ হতে লাগল।
কোনো কনফেশন নেই। নেই কোনো প্রতিশ্রুতি। কিন্তু তারপরও তারা যেন আজ একে অপরের মন পড়তে পাড়ছে। নিজেদের অব্যক্ত কথাগুলো তারা আজ নিজেরাই বুঝে নিতে পাড়ছে। নীরব থেকেও যেন অনুভূতিগুলো তাদেরকে আজ একে অপরের সবটুকু বুঝিয়ে দিতে সক্ষম।

_________________

জানালার থাই গ্লাস ভেদ করে সদ্য ফোটা সূর্যের কিরণরেখা চোখে পড়তেই নীলার কপাল খানিকটা কুঁচকে এলো। সারারাত প্রায় নির্ঘুম। মিনিটখানিক হবে বোধহয় সে চোখটা বন্ধ করেছে। এরিমধ্য চোখের উপর স্নিগ্ধ আলোটাও নীলার কাছে এইমুহূর্তে বিরক্তিকর মনে হচ্ছে। সে চোখ পিটপিট করে খোলল। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও এখন উঠে গিয়ে পর্দাটা টেনে দিতে হবে। কিন্তু যেই না উঠতে যাবে বুকের উপর ভারি কিছুর অবস্থান টের পেল। চোখ নিচে নামাতেই কপালে চুল এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা ছোট্ট বাচ্চাটির ন্যায় ঘুমিয়ে থাকা সাদিদের মুখশ্রী চোখে পড়ল। ইশশ কি কিউট লাগছে!
সাদিদ নীলার বুকের উপর মুখ গোঁজে শুয়ে আছে। তার চোখগুলোও বন্ধ রয়েছে। তাই সজাগ না জেগে আছে এই মুহূর্তে সেটা বুঝা যাচ্ছে না।
হঠাৎ নিজেদের অবস্থান বোধগম্য হতেই লজ্জায় নীলা জড়সড় হতে লাগল। না সাদিদকে ডাকতে পারছে আর না নিজে নড়তে পারছে। কিন্তু এমনভাবে সাদিদের সাথে থাকতেও তার বড্ড লজ্জা লাগছে। নীলা খানিকটা নড়াচড়া করতেই সাদিদ চোখ বন্ধ রেখেই নীলার ডানহাতটা নিজের মুখের কাছে নিয়ে গেল। বন্ধ চোখেই খানিক বাদে বাদে তার আলতা রাঙা আঙ্গুলগুলোতে চুমু খেতে লাগল।
সাদিদের কর্মকান্ডে নীলার বোধগম্য হলো যে সাদিদও জেগে রয়েছে। তার চোখেও নীলার ন্যায় ঘুমেরা ধরা দিতে পারেনি। কিন্তু নীলা এখন কি করবে?
এইভাবে আর কত সময়? সে এবার নিঃশব্দে বুক থেকে সাদিদকে সরাতে গেল। সাদিদ পরমুহূর্তেই চোখ তোলে নীলার দিকে দৃষ্টিপাত করল। অতঃপর ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,

— ‘ কি হয়েছে? এমন নড়াচড়া করছ কেন? ‘
— ‘ একটু উঠব। ‘

নিচুস্বরে কথাটা বলেই সে আবারও নতজানু হলো। সাদিদ কিছু একটা অনুমান করে তার উপর থেকে সরে আসলো৷ এবং নিজের বালিশে উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। নীলা আর একমুহূর্তও নষ্ট করতে চাইল না। দ্রুত পাশ থেকে শাড়িটা নিয়ে নিজের শরীরে ভালোভাবে পেঁচিয়ে নিলো। ঘুম যেহেতু ভেঙেই গিয়েছে তাই আর ঘুমানোর চিন্তাটা বাদ দিলো। কিন্তু সাদিদের অসুবিধা যেন না হয় তাই পর্দাটা ঠিকঠাক টেনে দিয়ে সে ওয়াসরুমে চলে গেল।
অনেকটা সময় নিয়ে ফ্রেশ হলো। কিন্তু কাপড় পরতে গিয়ে বাধল বিপত্তি। এটাতো তার জন্য বরাদ্দকৃত রুম নয়। তাই এখানে নিজের কাপড় পাওয়া ইম্পসিবল। তাই পুরোনো শাড়িটাই আপাতত কোনোভাবে পরে রুমে গিয়ে চেইঞ্জ করার চিন্তা করল।
নীলা ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে সে একপলক খাটে উবু হয়ে শুয়ে থাকা সাদিদের দিকে তাকালো। পরমুহূর্তেই লাজুক হেসে মাথা নিচু করল। এখন কি শান্ত দেখাচ্ছে। আর এতক্ষণ?

— ‘ অসভ্য। ‘

বিড়বিড় করে কথাটা সম্পূর্ণ করেই সে ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলো। না সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে। এবার শুধু সবার নজর এড়িয়ে কোনোভাবে রুমে পৌঁছাতে পাড়লেই চলে। সে ভেজা চুলে হালকা চিরুনি বুলিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু দরজা খোলতে গিয়েও পাড়ল না। গুটি পায়ে এগিয়ে আসলো বিছানার দিকে। সাদিদ কি জেগে রয়েছে? নাকি সজাগ?
নীলা ঠিক বুঝতে পারছে না। বলে গেলে ভালো হতো। কিন্তু ডেকে বলে যাবে না-কি না সেটা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে। সে সাদিদের দিকে কিছুটা ঝুঁকে আসলো। তীক্ষ্ণ চোখে বুঝার চেষ্টা করল সে ঠিক কোন অবস্থায় রয়েছে। যখন বুঝতে পাড়ল সে গভীর ঘুমে তলিয়ে রয়েছে তখন তাকে সজাগ না করার সিদ্ধান্ত নিলো।
পাশ ফিরে যখনই চলে যেতে নিবে হাতের মুঠিতে কারও শক্ত হাতের অস্তিত্ব টের পেল। নীলা কিছুটা চমকিত দৃষ্টি নিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। সাদিদ ঘুমু ঢুলুঢুলু চোখ নিয়ে ভ্রুজোড়া কুঁচকে নীলার দিকেই তাকিয়ে আছে। অবশেষে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,

— ‘ কোথায় যাও? ‘
— ‘ না মানে পাশের রুমে। সবাই উঠে যাবে। আর আপনাকে আর আমাকে…

সাদিদ তাকে বাক্যটা সম্পূর্ণ করতে দিলো না। হেঁচকা টানে নিজের বুকে এনে ফেলল।
আচমকা এমন আক্রমণে নীলা তাল সামলাতে পারেনি। তাই বেশ জোরেই সাদিদের উপর এসে পড়ল। সে মৃদু ব্যাথা পেয়েছে। কিন্তু তার থেকে কয়েকগুণ বেশি ব্যাথা বোধহয় সাদিদ এইমুহূর্তে অনুভব করছে। কিন্তু তার চোখে-মুখে সেটার লেশমাত্র বহিঃপ্রকাশ নেই। নীলা হকচকানো স্বরেই বলে উঠল,

— ‘ এমনটা কেউ করে? ব্যাথা পেয়েছেন নিশ্চয়ই? ‘

সাদিদ নীলার চিন্তিত মুখ দেখে মিষ্টি হাসল। ভালোবাসার মানুষের চোখে নিজের জন্য চিন্তাশীলতা দেখলে মনের কোঠাতে এক অন্যরকম প্রশান্তি জাগে। যা সাদিদ এইমুহূর্তে তীব্রভাবে অনুভব করতে পারছে।
সে নীলার গালে নিজের ডানহাতটা আলতো করে বুলিয়ে দিতে লাগল। আবেশে নীলার চোখজোড়া মিটমিট করছে৷ একসময় আঁখিপল্লব সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হলো যখন কপালের মাঝ বরাবর প্রিয়তম স্বামীর উষ্ণ ভালোবাসা পেল।
দিনের শুরুটা যদি কোনো স্ত্রীর এভাবে শুরু হয় তাহলে সংসার জীবন মধুময় হতে আর কি প্রয়োজন?
জীবনে চলার পথে হয়তো অর্থ-বিত্ত, প্রাচুর্য্যের প্রয়োজন পড়ে৷ কিন্তু ব্যক্তিসত্তার প্রশান্তির জন্য সব থেকে বেশি যেটার প্রয়োজন, ভালোবাসা তাদের মধ্যে অন্যতম।
সেটা কেবল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার ভালোবাসা নয়। সেটা হতে পারে ভাইয়ের জন্য বোনের, বোনের ভাইয়ের জন্য, সন্তানের পিতামাতার জন্য অথবা পিতামাতার সন্তানের জন্য। সবকথার এককথা ভালোবাসাটা খুব প্রয়োজন। সম্পর্কভেদে হয়তো ভালোবাসার ভিন্নতা চলে আসে। কিন্তু অনুভূতিটা কিন্তু সব ক্ষেত্রেই একই থাকে। কেননা ভালোবাসা যে শুধুই ভালোবাসা। হাজারও জাতিসত্তার ভিন্নতার আধলে গড়ে উঠা এক চিরন্তন সত্য অনুভূতি।
দীর্ঘ ভালোবাসাময় চুম্বনের শেষে সাদিদ নীলাকে খুব যত্নে বক্ষপিঞ্জরের উপর চেপে ধরল। নীলাও অজান্তেই স্বামীর উন্মুক্ত বুকে কোমল হাত স্থাপন করল। কেটে গেল শব্দহীন কিছুমুহূর্ত। এইটুকু সময়ে কেবল একটি আওয়াজই নীলার কর্ণকোহরে বেজে গিয়েছে। আর সেটা হচ্ছে প্রিয় মানুষটার বুকের ধকধক করা সুমধুর হৃদস্পন্দন। যা কাল্পনিক অর্থে নীলাকে যেন অনবরত বলে চলেছে এটা তারই নামের হৃদযন্ত্রের শব্দের প্রতিফলন। নীলার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটল। নীরবতার চাদর সরিয়ে সে সাদিদের উন্মুক্ত বুকপাঁজরে এলোমেলো আঁকিবুঁকি করে বলল,

— ‘ এবার ছাড়ুন। সবাই উঠে পড়বে। তার আগে আমার রুমে যাওয়া দরকার। ‘
— ‘ চুপ। ‘
— ‘ কিসের চুপ? ছাড়ুন না। এবার সত্যিই যেতে হবে। ‘
— ‘ চুপ থাকতে বলেছি না? ‘

বলেই সাদিদ নীলাকে ধরে রাখা হাতের বাঁধনটা আরও মজবুত করল। শুধু পারে না মেয়েটাকে বোধহয় বুকের ভিতর লুকিয়ে রাখতে। ইশশ এমন ব্যবস্থা কেন নেই? থাকলে তো সাদিদ এখন এই মহাখুশিতে আনন্দ উল্লাস করত।
সাদিদ যখন নিজের এই অদ্ভুত ভাবনায় মগ্ন নীলা তখন নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পুরোপুরি ব্যস্ত। সাদিদের শক্ত হাতের সাথে সে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। তারপরও অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যেতে যেতে বলল,

— ‘ এইমুহূর্তে আমি চুপ থাকলে পরমুহূর্তেই দুই পরিবারের সবাই ঢাকঢোল বাজানো শুরু করবে। তাই প্লিজ ছাড়ুন। ‘

নীলা কথাটা দুইজনের ভালো ভেবে বললেও সাদিদ সেটা কানেই তুলল না। উল্টো চোখের পলকে নীলাকে নিজের বুকের উপর থেকে বিছানায় শুইয়ে তার উপর আধশোয়া হলো। নীলা খানিকটা হকচকিয়ে গেল।
আর সাথে এসে যোগ হলো একরাশ বিরক্তি। এই ছেলেটা তার কোনো কথা শুনতে চায় না কেন?
নীলা মুখে বিরক্তির স্পষ্ট ছাপ নিয়েই বলল,

— ‘ কি করছেন কি? আমার কথা বুঝতে পারছেন? ‘
— ‘ হুম পারছি। কিন্তু তুমি পারছ না। ‘

দুষ্টু সাদিদ মৃদু হেসে নীলার নিচের ঠোঁটে বৃদ্ধঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে কথাটুকু বলে উঠল। নীলার মুখের বিরক্তির রেশটা নিমিষেই গায়েব হয়ে তাতে লজ্জার আভা ফুটে উঠল।
সাদিদ ঠোঁট কামড়ে হাসল। নীলা তার সামনে কঠোর হতে চেয়েও পারে না। অবশ্য পারবে কি করে? সাদিদ কি তাকে সেই সুযোগ দেয়? কোমল
ঠোঁটে সাদিদের অনবরত স্লাইডে নীলার শরীর ক্রমশ শিহরিত হয়ে উঠছে। সে আটকে যাওয়া গলায় বলল,

— ‘ প্লিজ বুঝা..র চেষ্টা করুন। আমা..র এখন সত্যিই যাওয়া প্রয়ো..জন। ‘
— ‘ কোনো যাওয়া-যাওয়ি হবে না। এখন চুপ করো তো৷ আমাকে আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে দাও। ‘

বলেই সে নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত হলো। নীলার এইমুহূর্তে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। প্রথমত সাদিদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের ধরণ দেখে প্রচুর হাসি পাচ্ছে। দ্বিতীয়ত পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। এখনও এই স্পর্শগুলো নীলার সমস্ত শরীরকে অবশ করে তুলে। লোমকূপগুলো মুহূর্তেই নিজেদেরকে আলোড়িত করে দাঁড়িয়ে যায়। নীলা কাঁপা হাতটা নিয়ে সাদিদের পিছনের চুলগুলো আকড়ে ধরল। নিজেকে সামলে নিতে বেশ জোরেই ধরেছে।
অপরদিকে নীলার অবস্থায় সাদিদ তাকে নিজের সাথে আরও শক্ত করে আগলে নিলো। গলায় একহাত আর অপরহাতটি শাড়ি সরিয়ে নীলার উন্মুক্ত পেটে চেপে ধরে, সে প্রাণপাখির অধরযুগলে নিজের ঠোঁটযুগলের উষ্ণ পরশ বুলিয়ে দিতে লাগল।
ভালোবাসাময় কিছু সুখ মুহূর্ত পার করে সাদিদ নিজেকে নীলার অধর থেকে সরিয়ে আনলো। কিন্তু পুরোপুরি নয়। এখনও তার হাতের অবস্থান একই জায়গায় রয়ে গিয়েছে। সে নিষ্পলক নীলার বন্ধ আখিঁদ্বয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। রাতের দেওয়া লিপস্টিক এখন পুরোপুরি মুছে গিয়েছে। খালি ঠোঁটও সাদিদের ভালোবাসার অত্যাচারে এই মুহূর্তে লালবর্ণ ধারণ করেছে।
মেয়েটাকে শান্তিতে একটুও আদর করা যায় না। এখানে সেখানে সমস্যা লেগেই থাকে। নতুবা ঠোঁটযুগল রক্তিমবর্ণ ধারণ করবে নতুবা এখানে-সেখানে স্পট পড়ে যাবে।
সাদিদ ঠোঁট কামড়ে হাসল। লোভ সামলাতে না পেরে আবারও মাথা নিচু করে নীলার কাঁপা ঠোঁটজোড়া নিজের মধ্যে নিলো। সাথেসাথেই নীলা ধারালো নখের আঁচড়ে সাদিদের উন্মুক্ত পিঠে ভালোবাসাময় যন্ত্রণার মধুর চিত্র অংকন করল। সাদিদ বারকয়েক উষ্ণ আদর বুলিয়ে নীলাকে তবেই ছাড়ল। অতঃপর কপালে এবং গালেও ভালোবাসার চুম্বন একে দিয়ে বিছানায় শুয়ে, নিজের বুকের সাথে তাকে মিশিয়ে নিলো। কিছুটা ভালোবাসাময় আধলে গড়া গম্ভীরস্বরে বলল,

— ‘ পাখি, আর একটাও কথা নয়। চোখ বন্ধ করে চুপচাপ ঘুমাও। একেবারে আমার সাথে উঠবে। তার আগে যেন নড়াচড়া না দেখি৷ ‘

শীতল কন্ঠের তীক্ষ্ণ ধমকে নীলার আর সাহস কুলিয়ে উঠল না প্রতিউত্তরে না-বোধক কিছু বলার। সে চুপচাপ সাদিদের বুকেই চোখ বন্ধ করল। সাদিদ তার মাথায় খুব যত্নে বিলি কাটছে। রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি বিধায় এতো আরামে অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই নীলা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল৷ সাদিদ এতক্ষণ শুধু নীলার ঘুমের অপেক্ষাতেই ছিল৷ তাকে ঘন শ্বাস ফেলতে দেখে সে নিঃশব্দে হাসল। তারপর প্রিয়তমার মাথায় গভীর চুমু দিয়ে হাতের বাঁধনটা শক্ত করে নিজেও চোখ বন্ধ করল।

________________________

প্রিয়তীরা সবাই ঢাকা ফিরে যাবার জন্য গোছগাছ করে নিচ্ছে৷ সবাইও মোটামোটি নিজেদের ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে নিয়ে যাবার জন্য এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। কেননা বিয়ের পরবর্তী সকল অনুষ্ঠান তারা ঢাকায় করার ব্যবস্থা করেছে। তাই সবাই আজকেই ঢাকায় ব্রেক করবে৷ ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই তারা রিসোর্ট থেকে চেক আউট করবে। নাস্তার পর্ব চুকিয়ে ফেলতে দুই পরিবারের সবাই এখন খাবার টেবিলে উপস্থিত। বড়রা নিজেদের মতো করে একপাশে সরে গিয়েছে। আর ছোটরাও নিজেদের দলবল নিয়ে একপাশে বসেছে। তাই বলাবাহুল্য এখানে হইহট্টগোল অবশ্যই রয়েছে। তাদের খাওয়া শুরু করার কিছু মুহূর্তের মধ্যেই সাদিদ নীলাকে নিয়ে সেখানে হাজির হলো।
নীলা গুটিগুটি পায়ে সাদিদের পিছন পিছন আসছে৷ তার দৃষ্টি এদিক-ওদিক। কেউ তাদেরকে তীক্ষ্ণ চোখে দেখছে কি-না এটা নিয়েই তার যত ভয়। কিন্তু তার কারণবশত ভয়ের দিকে বিন্দুমাত্র কারও খেয়াল নেই। সবাই যার যার মতো করে নিজেদের কাজে ব্যস্ত। সাদিদ এগিয়ে এসে নীলার জন্য আগে চেয়ার টানল। সে বসতেই নিজেও তার পাশের চেয়ারে বসল। তাকে দেখেই অর্ণবের চাপা অভিযোগ,

— ‘ কিরে? কোথায় ছিলি তুই? তোকে আমরা চিরুনি খোঁজা খোঁজেছি। তারপরও তোর হদিস পাওয়া গেল না। কোথায় ভেবেছিলাম নিজের বাসরটা তোর গান দিয়ে শুরু করব। কিন্তু ধ্যাত, কিছুই হলো না৷ ‘

সাদিদ কোনো প্রতিউত্তর জানালো না। নিজের মতো করে প্লেটে খাবার নিতে ব্যস্ত। কিন্তু তানবীর চুপ থাকল না। সে বেশ রসিয়ে কষিয়ে বলে উঠল,

— ‘ তার কি আর তোর বাসর জাগা নিয়ে মাথাব্যাথা আছে? গিয়ে দেখ সে হয়তো নিজের বাসর নিয়েই ব্যস্ত ছিল। ‘

সাদিদ চমকিত দৃষ্টিতে সামনের চেয়ারে বসা তানবীরের দিকে তাকালো।
তানবীর ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হাসছে।
সবাই যখন সাদিদের খোঁজ করছিল তখন তানবীরও ফোনে তাকে না পেয়ে তার খোঁজে রুম পর্যন্ত গিয়েছিল। তারা একই রুমে উঠেছে। যখনই সে রুমে চেক করতে যায় সেটা যে ভিতর থেকে লক করা সেটা বুঝতে পারে। নীলাও সাদিদের সঙ্গে একইসাথে গায়েব রয়েছে। তাদের বিষয়টা আর কেউ না জানলেও তার নিকট তো অজানা নয়। তাই বিষয়টা সে তখনই বুঝে যায়। কিন্তু সবার সামনে সেটা প্রকাশ করেনি৷ মোট কথা ছোট্ট একটা সত্য লুকিয়ে গিয়েছে।
এখন তানবীরের এভাবে হাসার কারণ আর অপবাদটা অপর কেউ বুঝতে না পারুক কিন্তু সাদিদের নিকট পুরোপুরি ক্লিয়ার। সেও হেসে দিয়ে সামনের ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিয়ে তার দিকে ছুঁড়ে মারল।
তানবীর সেটা ক্যাচ করে হাসি মুখেই তাতে কামড় বসাল। চিবুতে চিবুতে দুষ্টু কন্ঠে বলল,

— ‘ মামমা, সো সুইট। ‘

বলেই সাদিদকে চোখ টিপ দিলো। সাদিদ হাসতে হাসতেই তাকে হাত উঠিয়ে থাপ্পড় দেখাল। দুই বন্ধুর নিজেদের বলা ইশারার কথোপকথন এবার নীলার নিকটও স্পষ্ট হলো। আর লজ্জায় সে মুহূর্তেই নতজানু হলো। সব দোষ এই সাদিদ নামক ছেলেটার। তার জন্যই নীলাকে এসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। নীলা মনে মনে সাদিদসহ তার চৌদ্দ গুষ্টির গালমন্দ করল।
কিন্তু পরিশেষে যখন বুঝতে সক্ষম হলো এখন সেও এই গুষ্টির একজন সদস্য তখন সবকিছু আবার ফিরিয়ে নিতে ব্যস্ত হলো।
আপন ভালো পাগলেও বুঝে। আর সেক্ষেত্রে নীলাতো সুস্থ-সবল স্বাভাবিক একজন মানুষ। তাহলে তার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেন হবে?

#চলবে…

[ পাঠকগণ আপনাদের পাঠপ্রতিক্রিয়াগুলো আমাকে জানাবেন। আমি আপনাদের ভালোলাগা-মন্দলাগাগুলো জানতে আগ্রহী। ]