অন্তরালে কুয়াশার ধোঁয়া পর্ব-০২

0
747

#অন্তরালে_কুয়াশার_ধোঁয়া
#পর্ব_2
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


সাত বছর পর এক সকালে,,
হুররে,,হিহি,ইয়পি।
বলেই আমি ট্রলি নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এয়ার পোর্ট থেকে বের হতে লাগলাম।
Mom,,you are going too fast..
ট্রলির উপর একটা স্কুল ব্যাগ কাধে নিয়ে,শার্ট আর শর্ট প্যান্ট পরে,চুল গুলো হালকা লম্বা, হাতে একটা বই নিয়ে পা ঝুলিয়ে বসে আমার কোলে আসা সেই ছেলেটি বললো।

ঝুম,,তোমাকে বলছি না আমাকে আম্মু বলে ডাকবে! ইংরেজদের সাথে থেকে থেকে ইংরেজ হয়ে গেছো?বাংলায় কথা বলবে বুঝতে পেরেছো।(আমি আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে)

Whatever!(ঝুম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাত বাজ করে বসে)

আমি মুচকি হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।

Mom!(ঝুম)

হুহ?(আমি কপাল কুচকে)

সরি আম্মু,দেখো আমার চুল কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।(ঝুম মাথায় হাত দিয়ে)

আমি ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে অতীতের কথা ভাবতে লাগলাম।
সেদিন আমাদের দুজনের জীবন বাঁচাতে আমাদের দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।আজ সাত বছর পর ঝুমের সপ্তম জন্মদিনে আবার আমরা দেশে এসেছি।অনেক প্রশ্নের জবাবে আমায় জানতে হবে!আর সাথে আমাকে এও জানতে হবে ঝুমকে? ঝুমের মাকে কে মারতে চেয়েছে?
এই সাত বছর এই সব প্রশ্নের জবাব জানার ইচ্ছে আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।ঝুম জানে আমিই ওর মা।ছেলেটা বয়সের তুলনায় অনেক বেশী জ্ঞানী।ওর বাবা মাও হয়তো এমন ইন্টেলিজেন্ট হবে।না হলে ছেলে এমন বুদ্ধিমান কি করে হবে?
কোনোদিন ও ওর বাবার সম্পর্কে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।যদি আমি বলতাম বাবার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করো না কেনো?তাহলে বলতো,প্রয়োজন হলে তুমি নিজেই বলতে।
কোনোদিন কোনো বড়ো আবদারও করেনি।ওকে কোলে নিয়ে আমি আমার পথ চলা শুরু করি।এখন আমাদের এই ছোটো দুনিয়াতে আমরা খুবই সুখে আছি।তবে মাঝে মধ্যে মনে হয় ঝুমের পরিবার ওকে নিতে আসলে কি হবে?আমি কি করবো?ঝুম কি যাবে উনাদের সাথে?আমাকে ছাড়া যেই ছেলে কোনো দিন একদিনও কাটাতে পারে না,যে আমাকে জড়িয়ে না ধরে ঘুমালে ঘুম আসে না,সে কি আমাকে সত্যিই ছেড়ে চলে যাবে?আচ্ছা ঝুম যখন জানবে ওর মার মৃত্যুর জন্য একটু হলেও আমি দায়ী তখনও কি ও আমাকে এমন ভালোবাসবে?

আমি ঝুমের দিকে তাকিয়ে এইসব কথা ভাবছি তখনই ঝুম বলে উঠলো,,
আম্মু আমরা কি এখানেই দাড়িয়ে থাকবো?(আধো আধো বাংলায়)

না।আমার এক ফ্রেন্ড এখানে আমাকে রিসিভ করার কথা ছিল!(আমি চারপাশ খুঁজে)

Mom,, এইটা তোমার প্রথম বাংলাদেশে আসা,তাই না?।তুমি বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু জানো না? এখান থেকে হোটেলে কি করে যাবে সেটাও তোমার অজানা!তাইনা?(ঝুম বাকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে)

এই ছেলে আমার বাংলাদেশে আসার সাথে দেশ সম্পর্কে জানা বা না জানার সম্পর্ক কি?(আমি ঝুমের মাথায় হালকা থাপ্পড় দিয়ে)

ওকে ওকে।why are you hitting me?(ঝুম মাথায় হাত দিয়ে)

হায় আল্লাহ।একে বাংলা শেখাতে শেখাতে কোন দিন যেনো আমি বাংলা ভুলে যাই!(আমি মাথায় হাত দিয়ে)

আচ্ছা আম্মু।উনি তোমার কেমন বন্ধু?(ঝুম খুব কষ্ট করে বাংলা বলতে বলতে)

(আসলে ঝুম বাংলা পড়তে পারে,লিখতেও পারে।কিন্তু ওর উচ্চারণে একটু সমস্যা হয়।বিদেশে একমাত্র ঝুমুরই ছিলো যার সাথে ঝুম বাংলায় কথা বলতো।বেশি প্রেকটিস নেই বলে ওর উচ্চারণ একটু সমস্যা হয়।)

উনি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড!আর তুমি জানো আম্মু আর ঝুমের নামে,আম্মু যেই রেস্টুরেন্ট কিনেছি ওইটা উনাদেরই।(আমি ঝুমের সামনে হাঁটু মুড়ে বসলাম)

ও I almost forgot,,(ঝুম)

কি?(আমি অবাক হয়ে)

তোমার ঐ ফ্রেন্ড আসতে আসতে,, I can read my book,,
বলেই ঝুম ট্রলির উপর বসে বসে বই পড়তে লাগলো।

আমি উঠে দাঁড়ালাম।দাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও খুব মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে।আসলে ও বই পড়তে অনেক ভালোবাসে।একদম আমার বিপরীত।আমার তো বই দেখলেও মাথা ঘুরায়।যদিও এখন আমি খুব পরিচিত একজন শেফ। সাত বছর আগে শুধু বাবাকে হারায় নি,হারিয়েছি নিজের পরিচয়ও।এমন একটা পেশা বেছে নিয়েছি যেটায় কোনো দিন আমার পরিচয় তুলে ধরতে পারবে না।কেউ ভাবতেও পারবে না,যে পিয়াস চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে ঝুমুর চৌধুরী কোনো এক রেস্টুরেন্টের সামান্য একজন শেফ।নিজের পরিচয় যথা সম্ভব লুকাতে চেয়েছি।সেদিনের পর আরিফ আর জয়ের আর কোনো খবর আমি পাইনি। বেচেঁ আছে না মরে গেছে তাও জানি না!শুধু এইটুকু জানি যারা আমার বাবাকে খুন করেছে তারা তন্ন তন্ন করে আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।এমনকি বিদেশে যেই বোর্ডিং স্কুলে আমি থাকতাম।সেই স্কুলকেও ছাড় দেয়নি।আমাকে পেলেই তারা খুন করবে।সেদিন দেশ ছেড়ে এক অন্য জগতে অন্য শহরে চলে গেছি।যাওয়ার আগে জয় আর আরিফ আমাকে ভালো টাকা পয়সা দিয়েছিল। তা দিয়ে হয়তো দুইতিন বছর আমাদের অনায়াসে চলে যেতো।তবে আমি সেগুলোর বেশির ভাগই রেখে দিয়েছি।কিছু টাকা দিয়ে সামান্য একটা বাড়ি ভাড়া নেই আর ঝুমের জন্য একটা আয়া রাখি।
তখন মাত্র আমার সতেরো বছর ছিলো।এতো অল্প বয়সে একটা বাচ্চাকে নিয়ে নতুন শহরে কি করবো আমার জানা ছিলো না? কোথাও গেলে সার্টিফিকেট চাইতো।কিন্তু আমার সব সার্টিফিকেট আর কাগজ পত্র ছিলো বোর্ডিং স্কুলে।সেখানে গেলে নির্ঘাত তারা আমাকে ধরে ফেলতো।আর একবার ধরা পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত তখন বাচ্চাটার কি হতো?কোনো ভাবে কারো সাথে যোগাযোগ করে সার্টিফিকেট আনার চেষ্টা করতাম আর তারা জেনে যেত তাহলেও ধরা পড়ে যেতাম।অনেক ভয় ছিলো সেই ছোট্ট বয়সে।অবশেষে সার্টিফিকেট দিয়ে বড়ো কিছু হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে দিলাম।ভর্তি হলাম কুকিং শেখার স্কুলে।আগে থেকেই আমি একটু আকটু পারতাম।কেক,পাউরুটি,বিস্কুট,আরো অনেক বেকিং করা আমি জানতাম।যা আমি বোর্ডিং স্কুলে মাঝে মধ্যে করেছি।ধীরে ধীরে আমি দেশী, বিদেশী বিভিন্ন রকম রান্না শিখি।সেখানকার এক শিক্ষকের সাহায্য আমি একটা বড়ো রেস্টুরেন্টে শেফ হিসেবে জব পাই।শুরু হয় আমার পথ চলা।এই সাত বছরে আমি অনেক কিছু শিখেছি,একা আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক পথ চলেছি, সার্টিফিকেট ছাড়াই এখন আমি কয়েকটা রেস্টুরেন্টের মালিক।এখন আর আমাকে কেউ পিয়াস চৌধুরীর মেয়ের নামে না ঝুম ঝুমুর রেস্টুরেন্টের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে চিনে!আজ আমি শুধু ঝুমুর।ঝুমুর চৌধুরী না।
এখানেও আমি নিজের ঝুম ঝুমুর রেস্টুরেন্ট একটা শাখা খুলেছি।আর সেই সুবাদেই এখানে আসা।আজ এখানে এর গ্র্যান্ড ওপেনিং আবার আমার ছেলে ঝুমের জন্মদিন পালন হবে।নিজের দেশে আজ আমি নিজের পরিচয়ে।এখন আর আমাকে পালাতে হবে না।এখন শুধু আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই।

সব কিছু ভাবতেই আকাশের দিকে তাকালাম।আজকে আকাশটা অনেক পরিষ্কার।এই প্রথম নিজের দেশে দাড়িয়ে আকাশ দেখছি।হটাৎ পেছন থেকে একটা হাত কাধে স্পর্শ করলো।আমি চমকে তাকিয়েই দেখি আমার সেই ফ্রেন্ড।

আসসালমুআলাইকুম।মিতালী(আমি হাসিমুখে)

অলাইকুম আসসালাম।আমি ভাবছি বিদেশ থেকে এসেছো।hi হেলো বলবে?(মিতালিও হাসি দিয়ে)

Mom loves her culture and traditions।
বলেই ঝুম লাফ দিয়ে নিচে নামলো। নেমেই মিতালীর দিকে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,,
Hello, nice to meet you,,I am jhum jhumur,,

মিতালীর চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে এইটুকু একটা ছেলের এতো বড় অ্যাটিটিউড দেখে ও খুব বড়ো সরো ভেবাচেকা খেয়ে গেছে।আসলে আমার ছেলেটাই এমন বয়স থেকে একটু বেশিই জ্ঞানী।

আমি ওর কান টেনে বললাম
আমি তোমাকে কি বলছি? মনে আছে ঝুম?

ওহ।হা? আসসালমুআলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন?(ঝুম আধো আধো বাংলায়)

অলাইকুম আসসালাম।ভালো আছি বাবা!তোমার বাংলা বলতে সমস্যা হলে তুমি ইংলিশে কথা বলতে পারো।(মিতালী ঝুমের মাথায় হাত বুলিয়ে)

আরে না কী বলছো মিতালী?এমন হলে ওর বাংলা কিছুতেই ঠিক হবে না।(আমি)

তাও ঠিক।তবে ধীরে ধীরে আমাদের ঝুম ঠিক বাংলা বলা শিখে যাবে।
বলেই মিতালী ঝুমকে চুমু দেয়ার জন্য এগিয়ে আসতে লাগলো তখনই ঝুম আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

কিছু মনে করো না মিতালী!ঝুম খুব কমই মানুষের মিশতে পারে।(বলেই আমি ঝুমকে কোলে তুলে নিলাম)

ব্যাপার না।আমরাও খুব ভালো বন্ধু হয়ে যাবো তাইনা ঝুম?(বলেই মিতালী ঝুমের গাল টেনে দিলো)

ঝুম আমার গলা জড়িয়ে বললো,
আম্মু।I am hungry!

ঠিক আছে বাবা চলো।(আমি)

আমি ট্রলি নিয়ে যাচ্ছি তুমি ঝুমকে কোলে নিয়ে যাও।
বলেই মিতালী ট্রলি নিয়ে আমাদের সাথে হাঁটতে শুরু করলো।

মিতালী আসলে আমার সমবয়সী।যদিও ওর সাথে আমার পরিচয় ফেস বুকে তবুও ও আমার অনেক সাহায্য করেছে।ওর কাছ থেকেই আমি আমাদের রেস্টুরেন্ট কিনেছি।


গাড়িতে
ঝুমুর?(মিতালী)

হুম!(আমি)

এখন কোথায় যাবে?(মিতালী)

হোটেলে যাবো।রুম বুক করা আছে!(আমি)

সেকি?হোটেলে থাকতে হবে না।তুমি আমার সাথে আমার বাড়িতে চলো!আমার বাড়িতে আমি আর মা ছাড়া কেউ নেই।বাবা ব্যাবসার কাজে শহরের বাহিরে গেছে ফিরতে পনেরো দিন পর।তাই তুমি আমাদের বাড়িতেই থাকো।(মিতালী)

আমরা কালকেই আমাদের ফ্ল্যাটে উঠবো!আজকে ফ্ল্যাট দেখতে যাবো কি কি ফার্নিচার লাগবে?তারপর সন্ধ্যায় ঝুমের জন্মদিন পালন করবো।তোমাদের অযথা কষ্ট করার কোনো দরকার নেই।একদিনের জন্য হোটেলেই থাকতে পারবো।(আমি)

এখন তুমি হোটেলে গিয়ে আবার ছেলেটাকে নিয়ে ফ্ল্যাট দেখতে যাবে?এমনি বাচ্চাটা অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে।দেখো কি শুকনো লাগছে ওর মুখটা!তুমি বরং ওকে আমাদের বাড়িতে আমার মার কাছে রেখে যাও।পড়ে আমি আর তুমি গিয়েই না হয় তোমার ফ্ল্যাট দেখে আসবো।সেখান থেকে রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে সব প্রস্তুতি নেবো।তারপর সন্ধ্যায় ঝুম কে নিয়ে যাবো,জন্মদিন পালন করতে।এতে ছেলেটাও একটু রেস্ট করার সুযোগ পাবে।(মিতালী)

আমি মিতালীর কথায় ঝুমের দিকে তাকালাম।
ও আমার কোলে ঘুমাচ্ছে।সত্যিই ওর মুখটা অনেক শুকনো লাগছে।যতই নিজেকে শক্ত প্রমাণ করার চেষ্টা করুক না কেনো?ও তো আসলেই একটা বাচ্চা।ওকে এতো জায়গায় জার্নি করানোটা ঠিক হবে না।

ঠিক আছে মিতালী!তবে তোমার একটু কষ্ট হবে!(আমি শুকনো হাসি দিয়ে)

আরে বন্ধু যদি বন্ধুর সাহায্য না করে তবে কে করবে!(মিতালী মুচকি হেসে)


পরেই আমরা মিতালীর বাসায় পৌছালাম সকাল সাড়ে এগাোটায়।
আমরা যেতে যেতেই ঝুম ঘুম থেকে উঠে পড়লো।পরেই ফ্রেশ হয়ে ঝুম কে খাইয়ে,নিজে খেয়ে একটু রেস্ট নিলাম।
দুপুরে ঝুমকে আন্টির কাছে রেখে আমি আর মিতালী বেরিয়ে পড়লাম।আন্টি অনেক ভালো মানুষ।উনাকে দেখেই কেউ বলবে না যে আমাদের প্রথমবার দেখা হয়েছে।ঝুম ও উনার সাথে মিশে যাচ্ছে।


আমরা ফ্ল্যাট দেখে এখন বাহিরে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে জুস খাচ্ছি।

ফ্ল্যাটটা কেমন?(আমি খেতে খেতে)

অনেক সুন্দর। এরিয়াটাও খুব ভালো।যতই হোক হাই সোসাইটির লোক থাকে ওরকম ফ্ল্যাটে!(মিতালী)

হুম। ঝুমের এরকম জায়গাই বেশি পছন্দ।তাই কিনলাম ফ্ল্যাটটা।(আমি মুচকি হেসে)

একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?যদি কিছু মনে না করো!(মিতালী কৌতূহল নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে)

হুম করো।(আমি ওর দিকে তাকিয়ে)

ঝুমের বাবা কোথায়?তোমার ফ্যামিলি কোথায়? ঝুমের বাবার ফ্যামিলি কোথায়?আমি তোমাকে যতটুকু চিনি তোমার দুনিয়া ঝুম থেকে শুরু আর ঝুমের মধ্যে শেষ।(মিতালী)

ঝুমের বাবা কোথায় আমি জানি না?না জানি ওর বাবার পরিবারের কথা!আর আমার কথা বলতে গেলে,আমি অনাথ। ঝুমই আমার একমাত্র পরিবার।(আমি জুসের বোতল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে)

তোমাকে দেখে আমি সত্যিই অবাক হই।তুমি একজন মেয়ে হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছো।নিজের ছেলেকে একা মানুষ করছো।ঝুম কিন্তু অনেক লক্ষী একটা ছেলে।ওকে দেখলেই বোঝা যায় তুমি কতটা যত্ন আর ভালোবাস দিয়ে ওকে মানুষ করছো।(মিতালী আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে)

ঝুম এমনি অনেক লক্ষী ছেলে।যাইহোক ওইসব বাদ দাও।আচ্ছা।নিশানা লাগবে?(আমি টপিক চেঞ্জ করার চেষ্টা করে)

কিহ?(মিতালী অবাক হয়ে গেলো আমার কথা শুনে)

চলো।তুমি আর আমি আমাদের এই জুসের প্যাকেট দিয়ে নিশানা প্র্যাক্টিস করি।ওই যে ওই রাস্তার ওপারে যে ডাস্টবিন দেখছো।ঐটাতে এই বোতল ফেলতে হবে।ঠিক আছে?(আমি)

ঝুমুর তুমি কি বাচ্চা হয়ে গেছো নাকি?(মিতালী)

আরে ঝুমের সাথে থাকতে থাকতে আমিও বাচ্চা হয়ে গেছি। চলো না অনেক মজা হবে।(আমি)

ওকে ওকে।(মিতালী)

আমরা যেখানে দাড়িয়ে আছি সেখানে অনেক শান্ত একটা জায়গা।রাস্তায় গাড়ি নেই বললেই চলে।

আমি ডাস্টবিন নিশানা করে বোতল ছুঁড়ে মারলাম।ঠিক তখনই কোথা থেকে যেনো একটা কালো গাড়ি ডাস্টবিনের সামনে এসে থামলো।মুহূর্তের মধ্যে সেখান থেকে একটা সাদা শার্ট আর নীল জিন্স প্যান্ট পড়া একটা লোক নামলো।লোকটা নেমে নিজের চোখ থেকে কালো চশমা খুলতেই আমার ছুঁড়ে মারা বোতল লাগলো তার কপাল বরাবর।

সাথে সাথে আমি কপালে হাত দিয়ে বড়ো বড় চোখ করে তাকালাম আর মিতালী দুহাতে মুখ চেপে ধরলো।

লোকটা চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে।লোকটা কপালে হাত দিয়ে আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো একমাত্র আমরাই সেখানে উপস্থিত।আর মিতালী আমার দিকে তাকিয়ে আছে।লোকটা অতি বুদ্ধিমান মুহূর্তের মধ্যেই বুঝে গেলো যে অপরাধী আমিই। আমার দিকে তাকিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে বললো
তুমি করেছো,তাই না?
বলেই আমার দিকে তেড়ে আসতে লাগলো।কিন্তু উনি যেই আসতে যাবে ওমনি উনার সামনে আরেকটা গাড়ি চলে আসে।আর এই ফাঁকে আমরা হাওয়া।


চলবে,,,