অন্তরালে কুয়াশার ধোঁয়া পর্ব-০৪

0
595

#অন্তরালে_কুয়াশার_ধোঁয়া
#পর্ব_4
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


মাথার মধ্যে বারি দেয়ার পর,বুঝতে পারলাম আমি ভুল করেছি।তাই উনাকে তড়িঘড়ি করে হসপিটালে নিয়ে গেলাম।মাথাটা অনেকটুকু ফেঁটে গেছে। বারিটা খুব জোরেই মেরেছি।
লোকটাকে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে আসলাম।উনি সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ বসে আছে।আর ঝুম তার পাশেই বসে আছে।আমি বাজারগুলো নিয়ে সোজা রান্না ঘরে ঢুকে গেলাম।এখন প্রায় পাঁচটা বাজে। ঝুমকে হসপিটালে রুটি কলা দিয়েছিলাম।সেগুলোই খেয়ে ছিলো।আর আমি তো দুপুরে কিছু খাইনি। অবশ্য যেই কান্ড করেছি খাওয়া তো হাওয়া হয়ে গেছে।তবে এখন খিদে পেয়েছে খুব।তাই আমি আমার আর লোকটার জন্য হালকা কিছু বানালাম।সাথে ঝুমের জন্যও নাস্তা তৈরি করতে লাগলাম।


সোফায় বসে বসে
Good uncle,,does it hurt a lot??(ঝুম মাথার বেন্ডিস এর দিকে তাকিয়ে)

হুম চাম্প।তুমি তো বলেছিলে তোমার আম্মু সব সময় ঠান্ডা মাথায় কাজ করার কথা বলে কিন্তু নিজেও দেখি গুন্ডি।(অভ্র মাথায় হাত দিয়ে)

আমি বলেছি আম্মু বলে ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে আমি বলেনি যে উনি ঠান্ডা মাথায় কাজ করে। I am really sorry Good Uncle।(ঝুম অনুসূচনা করে)

আরে তুমি সরি বলছো কেনো?তুমি তো আমার good champ(বলেই অভ্র ঝুমের গাল টেনে দিলো)

এদিকে আমি রান্না ঘরে থেকে উনাদের সব কান্ডকারখানা দেখছি আর ভাবছি আমার মুডি ভাব নেয়া ছেলেটার কি হলো?লোকটার সাথে এতো ভাব হয়ে গেলো?লোকটা কি কোনো জাদু টোনা করছে নাকি,আমার কিউট ছেলেটার উপর?
আমিও কি ভাবছি?এইসব বিশ্বাস করতে নেই।সব কুসংস্কার।কিন্তু আমার ছেলেটা,এতো মিশুক হলো কি করে?(আমি মনে মনে কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে চিৎকার করে বললাম)

ঝুম।ফ্রেশ হয়ে নাও। বাম পাশের রুমে গিয়ে দেখো আলমারির দ্বিতীয় ড্রুয়ের মধ্যে তোমার জামা কাপর আছে। তা নিয়ে ফ্রেশ হতে যাও।তারপর এসে হোম ওয়ার্ক করো।কালকে স্কুল আছে।

ওকে আম্মু।
বলেই ঝুম এক দৌড় দিয়ে রুমে চলে গেলো।

আর উনি আমার দিকে তাকালো।

😒(আমি)

😎(উনি)


কিছুক্ষণ পর সোফায় বসে বসে ঝুম ওর বাড়ির কাজ করছিলো।আর ওই লোকটা(অভ্র)ওকে হেল্প করছিলো।আমি বলছি কোনো হেল্প লাগলে আমি করে দেই।কিন্তু আমার ছেলে কিছুতেই মানতে চাইলো না।
চাম্প!(অভ্র)

জ্বি গুড আঙ্কেল?(ঝুম)

তোমাদের বাড়িতে কে কে থাকে!(অভ্র)

Me and mom(ঝুম)

Where is your Dad?(অভ্র)

I don’t know,,(ঝুম ভাষাহীন চোখে অভ্রর দিকে তাকিয়ে)

অভ্র আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।কারণ ঝুমের ওই ভাষাহীন চোখ স্পষ্ট বলে দিচ্ছে যে ও ওর বাবার ব্যাপারে না জানতে চায়,না জানাতে চায়।হয়তো ওর বাবার প্রতি ওর অনেক অভিমান,হয়তো অনেক রাগ জমে আছে যেটা ওর ভাষাহীন চোখে অনুভূতি আকারে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।তাই অভ্র কিছুই বললো না।
তবে কেনো জানি এই ছেলের প্রতি ওর অনেক মায়া জমে গেছে।
এই ছেলের মধ্যে ও নিজের একাকীত্ব দেখে।নিজের ছোটো বেলা দেখে।যেটা ছিল সম্পূর্ন একা।কিন্তু ঝুম তো আর একা নয় ঝুমের সাথে ওর মা।তবুও কোথাও না কোথাও জানার একটা তীব্র ইচ্ছা থেকেই যায়।ঝুম ঝুমুরের কাহিনীটা জানার ইচ্ছা।অন্তরালে কুয়াশার ধোঁয়ার পেছনের কাহিনীটা কি?

Uncle I don’t understand this question!(ঝুম একটা গণিত প্রশ্ন দেখিয়ে)

দাও আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।
বলেই অভ্র ওকে বুঝিয়ে দিতে লাগলো।


এইযে এসে পড়েছি গরম গরম নাস্তা।
বলেই আমি টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখলাম।

ঝুম আর ওই লোকটা এসে টেবিলে বসলো।

আমি এতক্ষন ধরে ওই লোকটাকে নিজের বাড়িতে এনেছি।উনার সাথে এতো কিছু হয়েছে তবুও এখনও আমি উনার নাম জানি না।উনি বলে নি আর আমিও জিজ্ঞেস করিনি।

ওয়াও আম্মু নুডুলস।(বলেই ঝুম খেতে শুরু করলো)

ঝুম আস্তে।তোমার কিন্তু তাড়াতাড়ি খাবার খেতে গেলে গলায় আটকে যায়।আর তুমি কাশতে শুরু করো।(আমি)

ওকে মম!(ঝুম)

এই নেন।আপনার সুপ।এই অবস্থায় সুপটাই আপনার জন্য ভালো।(আমি)

ধন্যবাদ।আপনি এতো কেয়ারিং হতে পারেন আমার ভাবার বাহিরে ছিলো।(অভ্র হাসি দিয়ে)

সুপের বাটিটা উনার সামনে ধপ করে রেখে দাত চেপে বললাম
আপনার ভাবনার বাহিরে থাকাই আমি অধিক শ্রেয় মনে করি।

আমাদের মধ্যে চোখাচোখি বিশ্ব যুদ্ধ হচ্ছিলো তখনই ঝুম কাশতে শুরু করলো।

আমি হতদন্ত হয়ে ওর পাশে চেয়ার টেনে বসলাম।
দেখি বাবা।এই জুস টুকু খেয়ে নাও।
বলেই ওকে জুস খাইয়ে দিলাম।

জুস খাওয়ার পর।
ঝুম,তোমাকে আমি এর আগেও বলছিলাম তাড়াতাড়ি খেতে না। দাও আমি খাইয়ে দেই।সব সময় বলো তুমি বড়ো হয়ে গেছো কুচু হয়েছো।(আমি ঝুমকে খাওয়াতে খাওয়াতে)

Mom, what is কচু?(ঝুম কৌতূহল নিয়ে খেতে খেতে)

ঝুমের কথা শুনে লোকটা(অভ্র)ফিক করে হেসে দিলো।

খুব হাসি পাচ্ছে না,আপনার?(আমি উনার দিকে তাকিয়ে দাত চেপে)

না না।খুব ভালো হয়েছে সুপটা।দেখুন আমি পুরোটা শেষ করে ফেলেছি।(উনি আমাকে সুপের বাটি দেখিয়ে)

আরে হবে না আমার আম্মু মাস্টার শেফ।ঝুম ঝুমুর রেস্টুরেন্টের মালিক।টপ শেফ ইন দা ওয়ার্ড।(ঝুম প্রাউড ফিল করে)

ওর গর্ব করা দেখে খুবই ভালো লাগলো আমার।আমার ছেলে যেমন আমার গর্ব তেমন আমিও আমার ছেলের গর্ব।

তাহলে তো কথাই নেই।আমিও ভাবছি আমার রান্নার জন্য লোক লাগবে। কোথা থেকে জোগাড় করবো।যেহেতু আপনি আছেন তাই,,,

লোকটা কিছু বলার আগে আমি বলে উঠলাম,,

তাই? ঝুম ধরতো বাবা।সাবধানে আস্তে আস্তে খাবি।(বলেই নুডুলসের বাটিটা ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে দাড়িয়ে বললাম)
তাই কি হা?আমি গিয়ে এখন আপনার বাসায় রান্না করতে শুরু করবো।শুনন।শেফ ঝুমুরের অনেক কাজ আছে।আমি এখন আমার রেস্টুরেন্ট রেখে আপনার বাড়িতে গিয়ে রান্না করে আপনাকে খাওয়াবো।(আমি কোমরে হাত দিয়ে)

আরে আপনি ভুল বুঝছেন!আরেকটা কথা আপনি কিন্তু আমাকে একবার নয় দুইবার আহত করেছেন।একটু তো অনুসুচনা করুন!(লোকটা আমাকে বুঝ দেয়ার চেষ্টা করে)

দুইবার?আরেকবার কখন আম্মু?(ঝুম আমাদের ঝগড়ার মজা নিয়ে)

আসলে চাম্প,,,
লোকটা আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি বললাম

আসল নকল পরে দেখা যাবে।ঝুম তুমি খাও।খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।আর আপনি!
আপনার নাম কি?(আমি আঙুল দেখিয়ে)

আমি অভ্র আহমেদ!(অভ্র হাসিমুখে)

মিস্টার অভ্র,ভদ্র ভাবে বের হোন।বেশি রাত হলে বাসায় যেতে অসুবিধা হবে এমনি আপনি আহত।(আমি উনাকে দরজা দেখিয়ে)

আমার যেতে দুমিনিট ও লাগবে না।(অভ্র আরাম করে বসে)

মানে?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

মানে?আমি আপনার পাশের ফ্ল্যাটেই থাকি!(অভ্র)

কিহ?(আমি আর ঝুম একসাথে)

গুড আঙ্কেল তুমি আমাদের neighbour?(ঝুম খুশি হয়ে)

আরে রাখো ঝুম।এতো খুশি হওয়ার কিছুই নেই।আপনি আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন?(আমি অবাক হয়ে)

আমি তো জানতাম শুধু ঝুমের বাংলায় সমস্যা।এখন দেখি আপনিও বাংলা শুনতে পান না।(অভ্র টিটকারি মেরে)

এই কথা শুনে ঝুম ফিক করে হেসে দিল।আমি চোখ রাঙিয়ে ওর দিকে তাকাতেই দেখি ও কাচুমাচু হয়ে খাচ্ছে।

আমি বাংলা খুব ভালো জানি।এখন বলুন আপনি ওই ফ্ল্যাটে কি করেন?(আমি)

ফ্ল্যাট আমি কিনেছি!আমার ফ্ল্যাটে আমি থাকবো না তো কে থাকবে?এখন শুনুন আমি আপনাকে সব কথা বাংলায় বুঝিয়ে বলছি।আমি আমার ফ্ল্যাটে একা থাকি।রান্না করা আমি একদমই পারি না।নতুন শিফট হয়েছি বলে কোনো রান্নার লোকও রাখতে পারিনি।যেহেতু আপনি আমার পাশের ফ্ল্যাটে আর এতো সুন্দর রান্না করতে পারেন তাই আপনাকে বলছি।(অভ্র)

আমি আরো কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি আবার বলতে শুরু করলো।

আমি আমার ফ্ল্যাটে গিয়ে রান্না করতে বলিনি।আপনি যখন আপনার আর ঝুমের জন্য রান্না করবেন তখন আমার জন্যও করে ফেলবেন।একা মানুষ তো।আমি সকালে এসে আপনাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করবো আর দুপুরের খবর নিয়ে যাবো।রাতে এসে আবার আপনাদের সাথেই খাবো।একা মানুষ, সঙ্গ পেয়ে যাবো।আর এইসব আপনি ফ্রীতে করবেন না আমি আপনাকে টাকাও দেবো।(অভ্র)

কিন্তু,,
আমি আরো কিছু বলতে যাবো তার আগেই ঝুম বলে উঠলো

আম্মু।প্লিজ রাজি হয়ে যাও। আঙ্কেল আমাকে বলেছে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট শেখাবেন।উনি খুব ভালো মানুষ।আমার উনার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে।(ঝুম মনমরা হয়ে)

ঝুম কোনোদিন আমার কাছে কোনো কিছু নিয়ে আবদার করেনি। কারো সাথে তেমন মিশেও নি ও।কিন্তু হটাৎ ও এইভাবে আবদার করে বসলো।ঝুম কি উনার মধ্যে ওর বাবাকে খুঁজছে? ওরই বা কি দোষ!এই বয়সে বাচ্চারা ভালোবাসা খোঁজে।আমার ঝুম বেতিক্রম নয়।যদি আমার এই কাজে ঝুম খুশি থাকে তবে আমিও খুশি মনে কাজ করবো।(আমি মনে মনে)

আমি রাজি॥তবে আপনার টাকা দিতে হবে না।আমার ঝুমকে একটু সময় দিবেন।ও আপনার সাথে মিশুক হয়ে গেছে।(আমি)

অভ্র আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো
ভবিষ্যতে যদি ঝুম আপনার থেকে বেশি আমাকে ভালোবাসে তখন?আমি এই রিস্ক নিবেন?

আমি মুচকি হেসে বললাম
আমার কাছে বর্তমানই প্রাধান্য পায়।ভবিষ্যতের চিন্তা করে আমার ছেলেকে আমি বর্তমানে কষ্ট দিতে চাইনা।

অভ্র কথাটা শুনে খুব অবাক হয়ে গেলো।
আপনি মা হিসেবে অতুলনীয়।(অভ্র)

মায়েরা অতুলনীয়ই হয়।(আমি মুচকি হেসে)

Mom I’ve finished (ঝুম খাওয়া শেষ করে)

Very good। এখন বলতো আমার ঝুম রাতে কি খাবে?(আমি ঝুমের পাশে বসে)

গুড আঙ্কেল,তুমি কি খাবে?(ঝুম)

আমি?আজ যেহেতু আমার আর ঝুম চাম্পের প্রথম দেখা হয়েছে। তাই আর কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়ে সেলিব্রেট করবো।(অভ্র)

আম্মু কাচ্চি কি?(ঝুম)

ভুলেও কাচ্চি না?এমনি ঝুমের অ্যাসিডিটির সমস্যা!(আমি)

আম্মু আমি খাবো!প্লিজ।আর আমি মেডিসিন নিয়ে নিবো।তাহলে তো আর কোনো সমস্যা থাকবে না।প্লিজ মম রাজি হয়ে যাও।(ঝুম কিউট ফেস করে)

ঝুমের সাথে অভ্রও কিউট ফেস করে আছে।

আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে “ওকে” বলে রান্নাঘরে ঢুকলাম।

বাহিরে থেকে শুনলাম।অভ্র আর ঝুম বিজয়ের হাসি দিচ্ছে।
আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে! বাপ বেটা মিলে মাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।আমার আর কি করার?😩


#চলবে,,,,