অন্তরালে কুয়াশার ধোঁয়া পর্ব-০৮

0
575

#অন্তরালে_কুয়াশার_ধোঁয়া
#পর্ব_8
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


আমি আর একটুও দেরি না করে বেরিয়ে গেলাম। যাই হোক দেখা যাবে আমি আগে আমার ছেলেকে বাঁচাবো।আর কিছু না।এখন আর কিচ্ছু আমার মাথায় আসছে না।
হাত ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।


নিচে
ড্রাইভার গাড়ির পাশে দাড়িয়ে ছিলো।আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো,,
আম্মা?আপনি কোথায় যাচ্ছেন?আপনি উঠুন আমি নিয়ে যাচ্ছি।

না কাকা লাগবে না।আপনি গাড়ির চাবি দেন!আমি নিজেই যেতে পারবো।
বলেই আমি উনার হাত থেকে থাবা দিয়ে চাবিটা নিয়ে গাড়িতে বসলাম।আমার হাত পা প্রচন্ড কাপছে।কারণ সেই সাত বছর আগের অ্যাকসিডেন্ট করার পর আমি গাড়ি চালানো তো দূর গাড়ির সামনে বসতেও ভয় পেতাম।কিন্তু আজ আমাকে সাত বছর পর আবার গাড়ি চালাতে হচ্ছে।তবে এইবার আমি আর কোনো ভুল করবো না।আমি ঝুমের মাকে কথা দিয়েছি ঝুমের কিছু হতে দেবো না।কিছু না।
বলেই চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললাম।
কাপা কাপা হাতে গাড়িতে চাবি লাগলাম।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেলাম।জানি না কি আছে আমার কপালে?তবে যা আছে দেখা যাবে! বেচেঁ ফিরবো কি ফিরবো না তাও জানি না!


কিছুক্ষণ পর অভ্র খাবার নিয়ে বিল্ডিং এ ঢুকলো
ঝুমুরের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখলো ফ্ল্যাটের দরজা খোলা।অভ্র ভয় পেয়ে গেলো।অভ্র তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢুকে সারা বাড়ি ঝুমুরকে খুজতে লাগলো কোথাও ঝুমুর নেই।
অভ্র তাড়াতাড়ি পুলিশকে ফোন দিয়ে বললো সব কিছু।অভ্র হন্তদন্ত হয়ে বাহিরে বের হতেই সামনে পড়লো ড্রাইভারের সাথে ওর দেখা হলো।

ড্রাইভার কাকা! ঝুমুর কোথায়?(অভ্র চিন্তিত হয়ে)

ঝুমুর আম্মা।খুব টেনশনে গাড়ি চালাতে চালাতে কই জানি গেলো।আমি কইছি লইয়া যাই।আমারে যাইতে দিলো না।(ড্রাইভার)

কাকা আপনি জানেন,ঝুমুর গাড়ি চালাতে পারে না।ওর ভয় লাগে।আমাকে ঝুম বলেছে ওর এতো ভয় লাগে যে ও সামনের সিটেও বসতে চায় না।(অভ্র নিজের চুল টানতে টানতে)

আমি জানতাম না বাবা!(ড্রাইভার চিন্তিত)

আচ্ছা কাকা!আপনি যান আমি দেখছি।(বলেই অভ্র ভাবতে লাগলো)

কিছুক্ষণ পর
পুলিশ অভ্রকে ফোন করে জানায় তারা ঝুমুরের ফোনের লোকেশন ট্রেস করতে পেরেছে।আর সেই নম্বরটাও পাওয়া গেছে।তবে সেই নম্বরটা লাস্ট লোকশন এর ঐদিকে যেদিকে ঝুমুর যাচ্ছে।
অভ্র পুলিশের কাছ থেকে লোকেশনটা নিয়ে গাড়ি নিয়ে সেদিকে ছুটে গেলো।


অন্যদিকে
আজ যেনো রাস্তা শেষ হতেই চাচ্ছে না।যতো অফিসটার কাছে যাচ্ছি ততই আমার মনটা ভারী হয়ে আসছে।অস্থির লাগছে মনের মধ্যে। ঝুমকে দেখার ইচ্ছাটা তীব্র হচ্ছে।আমি কি ঝুমকে দেখতে পারবো নাকি ওকে দেখার আগেই আমাকে বিদায় নিতে হবে এই ভুবন থেকে।ঝুম আমাকে ছাড়া কি করে থাকবে!

এইসব ভাবতেই আমি দেখলাম আমি প্রায় এসেই পড়েছি।এখন থেকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে।কারণ সাত বছরে অফিসটার অনেক অংশ ভেঙ্গে পড়ে আছে।আশ্চর্য ব্যাপার হলো এখানেও হয়তো আগুন লেগেছে।বাবার সব ফ্যাক্টরি,সব অফিস সব কিছু আগুনে পোড়া।কেউ খুব ঘৃনা নিয়ে সবকিছু পুড়িয়ে ফেলেছে।কে এতো ঘৃনা করতে পারে তা আমার সত্যিই অজানা।তবে এইটা বলতে পারি সে যদি আমাকে পায় তাহলে আমাকে নিশ্চয়ই জানে মেরে ফেলবে।নিজের জানের ভয় সবারই হয় তেমনি আমারও হচ্ছে।বাহিরে থেকে যতোই শক্ত হইনা কেনো?ভেতর থেকে আমি খুবই ভীতু একটা মেয়ে।


ঝুমুর where the hell are you?(অভ্র রাগে গাড়ি চালিয়ে)

কিছুক্ষণ পর
অভ্রকে একজন অফিসার ফোন করলো।

হ্যালো অফিসার!কিছু খোঁজ পেলেন?(অভ্র ফোন ধরে)

জ্বি!JK গ্রুপের মালিকের আসল নাম।জহির খান।উনার সাথে পিয়াস চৌধুরীর অনেক পুরনো শত্রুতা।এক সময় জহির খান আর পিয়াস চৌধুরী বিজনেস পার্টনার ছিলো।আসলে শত্রুতা শুরু যখন পিয়াস চৌধুরীর কারণে উনার বোন আত্মহত্যা করে।

সুইসাইড করে?কিন্তু কেনো?(অভ্র অবাক হয়ে)

কারণ উনার বোন পিয়াস চৌধুরীকে খুব ভালোবাসত।কিন্তু পিয়াস চৌধুরী তাকে বিয়ে না করে ঝুমুরের মাকে বিয়ে করেছিল।এই জন্য উনার বোন আত্মহত্যা করে।আর এই কারণে উনাদের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।এক সময় পিয়াস চৌধুরী নিজের ব্যবসা আলাদা করতে চায়।আর এই কারণে খান কোম্পানি লসে চলে যায়।এখন তারই জের ধরে উনি প্রতিশোধ নিচ্ছেন।উনি প্রথমে পিয়াস চৌধুরীর ব্যবসা বরবাদ করে তারপর উনাকে মেরে আত্মহত্যার নাম দেন।তারপর পিয়াস চৌধুরীর সব কিনে নেন।তবুও তার বদলা পূরণ হয়নি।কারণ উনি পিয়াস চৌধুরীর জন্য নিজের বোনকে হারিয়েছেন যে ছিলো উনার একমাত্র পরিবার তাই উনি পিয়াস চৌধুরীর এক মাত্র মেয়েকে মেরে নির্বংশ করতে চায়।আর এই ভয়েই পিয়াস চৌধুরী নিজের মেয়েকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।আর অনেকের ধারণা পিয়াস চৌধুরীর স্ত্রীকেও নাকি জহির খুন করেছে।পিয়াস চৌধুরী যথাসম্ভব চেষ্টা করেছিল নিজের মেয়ে এইসব থেকে দূরে রাখার কিন্তু পারেনি।(অফিসার)

এতো কষ্টের মধ্যে দিয়ে ছিলো মেয়েটা!আর আমি জানতেও পারলাম না।এতো হাসিখুশি মেয়েটার মনে এতো কষ্ট।আর কত সুন্দর করে ও ঝুমকে আগলে রেখেছে।ওকে দেখলে কেউ বুঝতেও পারবে না। ও নিজে কোনোদিন কারো আদর পায়নি।মেয়েরা সত্যিই অনেক স্ট্রং(অভ্র মনে মনে)

মিস্টার অভ্র?আপনি কি শুনতে পারছেন?(অফিসার)

হুম।আমি শুনতে পারছি।আচ্ছা আপনি কি এইটা জানতে পারেন যে ঝুমুরের স্বামী। আই মিন ঝুমের বাবাকে?(অভ্র)

সরি মিস্টার অভ্র। গত সাত বছর মিস ঝুমুরের সাথে কি কি হয়েছে সবই কেমন যেনো ধোঁয়াশা!কেউই বলতে পারছে না।এইটা একমাত্র ঝুমুরই বলতে পারে।আর ঝুমের বাবা সম্পর্কে শুধু এইটুকুই জেনেছি যে ঝুমের বাবা মারা গেছে।যখন ঝুম ঝুমুরের গর্বে ছিলো।(অফিসার)

অভ্র চুপ করে রইলো তাদের কথা শুনে।

মিস্টার অভ্র আপনি কি আছেন?(অফিসার)

জ্বি অফিসার।আচ্ছা আপনি কি ঝুমের কোনো খোঁজ পেয়েছেন?(অভ্র)

আমরা মনে করছি ওরা ঝুমকে শহরের বাহিরে একটা ফার্ম হাউসে রেখেছে।আমরা এক টীম সেখানে আরেক টীম মিস ঝুমুরের কাছে পাঠিয়েছি।(অফিসার)

আচ্ছা।আমি তাহলে ঝুমকে রেসকিউ করার টীমে সংযুক্ত হই।কারণ ঝুমকে ছাড়া আমি ঝুমুরের সামনে যেতে পারবো না।(অভ্র)

ঠিক আছে তাহলে আপনি যান।আমি মিস ঝুমুরের কাছে যাচ্ছি।
বলেই অফিসার ফোনটা কেটে দিলো।

ঝুম বাবা।গুড আঙ্কেল আসছে।তোমাকে তোমার মমের কাছে ফিরিয়ে দিতে।
বলেই অভ্র গাড়ি ঘুরালো।আর কিছুক্ষণ পর অফিসার ফার্ম হাউসের এড্রেসটা অভ্রর ফোনে পাঠিয়ে দিলো।


অন্যদিকে
আমি একতলা দুতলা করতে করতে আস্তে আস্তে পাঁচ তোলা পর্যন্ত উঠে গেলাম।চারদিকে পোড়া গন্ধ আমার দম যেনো বন্ধ করে দিয়েছে।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে ভয়ে। গা ছমছম করা একটা পরিবেশ তারউপর এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আশপাশ খুবই নিগুম।চারপাশে মানুষ জন নেই।কারণ এই অফিসটা অনেকটুকু এলাকা জুড়ে রয়েছে।এখন এখানে মানুষ কম জন্তু জানোয়ার বেশি।আর সব চেয়ে বেশি ভয়ংকর মানুষ রূপি জানোয়াররা।আমি গা ছমছম করা পরিবেশে গুলিয়ে যাচ্ছি তখনই কেউ একজন পেছন থেকে বললো,,,
গুড এভিং মিস ঝুমুর চৌধুরী!(লোকটা)

আমি পেছনে তাকাতেই দেখি চারপাশ আলোকিত হয়ে আছে।এতক্ষন বেশি অন্ধকার না থাকলেও যথেষ্ট অন্ধকার ছিলো যা দিয়ে কিছু কিছু আবসা দেখা যেতো।কিন্তু এখন চারপাশ আলোকিত হওয়ায় আমি সামনের মানুষকে স্পষ্ট দেখতে পারছি।আর সামনের মানুষ দেখেই আমি থমকে গেলাম।কারণ যে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে উনি আর কেউ নন আমারই ড্রাইভার কাকা।এখন বুঝতে পারছি উনি কি করে আমার সব খোজ খবর পেতো।কারণ উনি তো আমার ড্রাইভার ছিলো।আর ড্রাইভার তো জানবেই আমি কোথায়?কি করি?কোথায় যাই?তবে কি ওই ফ্যাক্টরিতে উনিই বোম্ব ব্লাস্ট করিয়েছেন?যখন আমি ওই দারোয়ানের সাথে কথা বলছিলাম?
আমি আমার কল্পনা জগতে ছিলাম তখনই লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,,

কি খুবই আশ্চর্য হলে আম্মা? আমিই JK গ্রুপের মালিক।জহির খান!(জহির খান শয়তানি হাসি দিয়ে)

আমার ঝুম কোথায়?কোথায় রেখেছেন ওকে?আমার কাছে ফেরত দিন।(আমি শক্ত গলায় বললাম,যদিও ভয়ে আমার পা কাপছে।তবুও কথা যেনো কথা বলার শক্তি পাচ্ছি।আসলে মায়েরা এমনি সন্তানের উপর কোনো আঁচ আসলে নিজের ভয়কে জয় করে তারা রুক্ষে দাড়ায়)

আসবে আসবে।তোমার সোনা মনি তোমার কাছেই আসবে কিন্তু তোমার লাশের কাছে!(বলেই উনি হাসতে লাগলো।আর উনার সাথে থাকা উনার ছেলেপিলে গুলোসহ)

মানে?(আমি অবাক হয়ে)

মানে?যদি তুমি সুইসাইড করো।তাহলেই তোমার ছেলেকে আমি প্রাণে ছাড়বো।(জহির)


চলবে,,,