অন্তরিন প্রণয় পর্ব-১৬+১৭

0
428

#অন্তরিন_প্রণয়
#পলি_আনান
#পর্ব_১৬

দীর্ঘ দিন পর আজ রোদের দেখা মিলেছে।সেহেরিশ বিছানায় হেলান দিয়ে আফীফের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।তার মুখের উপর আছড়ে পড়ছে সকালের সেই মিষ্টি রোদ।কেইন তুন্দ্র তার পাশে বসে আছে দুজনেই সমান তালে সেহেরিশকে জিজ্ঞাসাবাদে ব্যস্ত।

– হোয়াটি’স দিস সেহেরিশ?

কেইনের রাগান্বিত স্বরের কথায় হাসি থামিয়ে দেয় সেহেরিশ।কেইনের উপর পূর্ণ দৃষ্টি রেখে সহসা জবাব দেয়,

– কি হয়েছে হঠাৎ রেগে গেলি কেন?
– তোকে তখন থেকে বার বার একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছি এন্সার দিচ্ছিস না কেন?আর এত হাসির কি হলো?
– ক…কি জানতে চাইছিস আবার বল।

সেহেরিশের এমন হেলাফেলা কথায় ফস করে শ্বাস ছাড়লো তুন্দ্র।সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত সেহেরিশের পাশে বসে তার হাতে হাত রাখলো।

– তোর মাথার এই বেহাল দশা কি করে হলো? তুই বলেছিস পা পিছলে পুকুর পাড়ে পড়েছিস কিন্তু আমার বিশ্বাস হয়নি।আর এত সকাল সকাল ঘুম থেকে তোকে আমি উঠতে খুব কম দেখেছি তবে আজ কেন উঠলি?
– এমনি আমার ঘুম আসছিল না তাই উঠে গিয়ে একটু বাইরে পাইচারি করছিলাম।আমি ঠিক আছি তোরা চিন্তা করিস না।

সেহেরিশের কথা শেষ হতেই ক্ষিপ্র গতিতে তার পাশে এসে দাঁড়ালো কেইন।রাগে ফসফস করতে করতে সেহেরিশের দিকে আরক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,

– চিন্তা করবো না মানে কি?তোর কতখানি লেগেছে তুই জানিস?আঙ্কেল-আন্টি ফুফি অলরেডি কান্না করতে করতে বেহুশ হওয়ার উপক্রম আর তুই হাসছিস?তুই জানিস তোর জন্য আমাদের কতটা চিন্তা হচ্ছে।

– তুই ঠিক বলেছিস কেইন। সামান্য হাতে চোট পেলে আমাদের কান গরম করে ছাড়ে আর এই মেয়ের আজ মাথা এতটা ফেটে গেছে অথচ সে মিটিমিটি হাসছে।ইচ্ছে করছে থাপড়ে গাল লাল করে দিতে।

তুন্দ্রের ধমকে নিজেকে শুধরে নেয় সেহেরিশ।আফীফ সোফায় হেলান দিয়ে এতক্ষণ সেহেরিশের ওষুধ গুলো চেক করছিল।সেহেরিশের মুখের হাসিটা মোটেও তার কাছে স্বস্তির লাগে নি বরং বিষদিগ্ধ লেগেছিল।আফীফ উঠে দাঁড়ায় খুড়ে খুড়ে সেহেরিশের সামনে দাঁড়িয়ে আদেশ বাণী ছুড়ে দেয়,

– আপনার মেডিসিন গুলো আমি চেক করে নিয়েছি।টাইম টু টাইম মেডিসিন নেবেন।আর মর্জিনা খালাকে বলছি আপনার জন্য স্যুপ করে পাঠাবে।

আফীফ আবারো খুড়ে খুড়ে হাটতে শুরু করে তার হাটার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে যায় তুন্দ্রের।তার মাথার ভেতরে সন্দেহের বাতি জ্বলে উঠেছে।

– এক সেকেন্ড ব্রো।
তুন্দ্রের কথায় পেছনে ঘুরে তাকায় আফীফ।তৎক্ষনাৎ তুন্দ্র তার সামনে এসে দাঁড়ায়।
– কাল তোমার পায়ের এই অবস্থা আর আজ সেহেরিশের।ওইদিন বাড়ির কুকুর গুলোর এমন অবস্থা মানে আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।এই বাড়িতে এত বিপদ এক সঙ্গে কেন?তাছাড়া তোমার পায়ের ক্ষতটা কি করে হলো, কাউকে বললে না তো?
আফীফ ঘুরে সেহেরিশের দিকে তাকায়।তারপর আবার তুন্দ্রের দিকে চোখ ছোট করে গমগম সুরে বলে,
– পায়ের ক্ষতটা করেছে একটা জংলী বিল্লি।

আফীফ খুড়ে খুড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।এদিকে সেহেরিশ,কেইন,তুন্দ্র হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে আফীফের দিকে।

—-

ভরদুপুর আফীফ গ্রামের খুটিনাটি কাজ শেষে বাড়ি ফিরেছে।ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতেই কাকাতুয়ার ডাক তার কানে আসে,

– রাজা তোমার ফুলপরি।রাজা তোমার ফুলপরি।
কাকাতুয়ার কথায় তড়াক করে উঠে বসে
আফীফ।কাকাতুয়া পাখিটি জানলার রেলিঙের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আর নিচের দিকে তাকিয়ে সমান তালে কথা বলছে।

– কিরে কি বলছিস তুই?ফুলপরি কোথায়?
– রাজা তোমার ফুলপরি বাগানে।
– কি?এই মেয়ের সাহস কম না এখন বাগানে কি করে সকালেই হামলা হয়েছে আর এখন..উফফ কাকে বোঝাই আমি দুঃখের কথা।

আফীফ উঠে যায়।তখনি পাখিটি উড়ে এসে আফীফের কাধে চড়ে বসে।
– এই তুই যাবি না কি আমার সঙ্গে?
– যাবো যাবো ফুলপরির কাছে যাবো।
– চুপ খবরদার সেহেরিশের সামনে তাকে ফুলপরি বলবি না তাহলে তার অতীত মনে পড়ে যাবে সে বুঝে যাবে আমি তাকে চিনে ফেলেছি।
– তবে তাই হবে তাই হবে।
– হুম চল।

আফীফের কাধে চড়ে পাখিটি এই প্রথমবার সেহেরিশের মুখোমুখি হবে।গত কয়েকবছর আফীফ পাখিটিকে সেহেরিশের সম্পর্কে সব বুলি ফুটিয়ে নিয়েছে।অতীতে সেহেরিশের কাকাতুয়া পাখিটি মেরে আফীফ যে ভুল করেছে তা নিয়ে একটুও আফসোস হয় না তার।কেননা আফীফের ভুলের মাধ্যেমেই সে কুলে ফিরেছে।সেহেরিশকে তার জীবনে পেয়েছে।

সেহেরিশ আর মৌ বাগানের দোলনায় দুলছে।বাড়ির দৌবারিকদের কঠোর পাহারা থাকায় নির্দেশ দিয়ে এগিয়ে আসে আফীফ।

– এই মেয়ে এখানে কি?তোমার বিশ্রাম নেওয়ার কথা ছিল।
আফীফের কন্ঠে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সেহেরিশ। আফীফ মৌয়ের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই এক দৌড়ে মৌ সেখান থেকে চলে যায়।

– মৌ চলে গেল কেন?
সেহেরিশের ঝাঝালো কন্ঠে আফীফ এক পা দু পা করে এগিয়ে আসে।
– বড়দের কথার মাঝে বাচ্চাদের উপস্থিত আমি পছন্দ করি না।

“ঠিক বলেছো রাজা ঠিক বলেছো!

আফীফের কথায় তাল মেলায় পাখিটি আর সেদিকে তাকিয়ে হা করে তাকিয়ে থাকে সেহেরিশ।সেহেরিশ উঠে দাঁড়াতেই পাখিটি উড়ে সেহেরিশের কাধে চড়ে বসে।
– ওয়াও! কি কিউট।
– তোমার নাম বলো তাকে দেখবে সে তোমার সাথে কথা বলবে।

সেহেরিশ তার নামটা কাকাতুয়ার উদ্দেশ্য বলতেই কাকাতুয়া সেহেরিশের নাম ডেকে প্রত্যুত্তর করলো।সঙ্গে সঙ্গে খিলখিল করে হেসে উঠলো সেহেরিশ।পাখিটির সাথে এতটাই খুনশুটিতে মেতে ছিল সে যে মুখ ফসকে আফীফকে অতীতের কথা বলে বসে,
– জানেন আমার একটা পাখি ছিল কিন্তু পাখিটিকে একটা….

সেহেরিশ থেমে গেলো।আফীফ তার দিকে তাকিয়ে আছে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে।
– একটা?
– না কিছু না।
– সকালে তখন হাসছিলে কেন?
– হাসছিলাম কারন গতকাল আমাকে খুনি বলেছেন কারন আপনার পায়ে ছুরিটা পড়ায় কিন্তু আজ সকালে আমাকে এখানে ডেকে এনে এইভাবে ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিলেন।রিভেঞ্জ নিয়েছেন বুঝি এখন কি আমি আপনাকে খুনি বলবো?
– কি সব যা তা বলছো তুমি?তোমার মাথা ফাটাবো কেন আমি?
– কাল যে আপনার পায়ে আমি ভুলবশত ছুরির কোপ দিয়েছিলাম হয়তো সেই রিভেঞ্জ নিলেন।

সেহেরিশের এমন যুক্তিহীন কথায় বেশ রাগ হলো আফীফের।রাগান্বিত হয়ে সেহেরিশের সামনে দু পা এগিয়ে ঘাড় নামিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

– ইচ্ছে করছে কষিয়ে দুইটা চড় দিতে।

আফীফের ধমকে সেহেরিশ হকচকিয়ে উঠে।আফীফ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে সেহেরিশের কানের সামনে মুখ নিয়ে বলে,

– এখন তো আমার অধিকার নেই যদি কখনো অধিকার থাকেও তবে ভুলেও তোমার গায়ে হাত তোলার সাহস করবো না।যদি অতিরিক্ত মাত্রায় সীমা লঙ্ঘন করো তবে আমার কিচ্ছু করার নেই। নিজের অজান্তে হলেও দু-চারটা চড় তোমার গালে পড়তে পারে।আফীফ দেওয়ানের দৈর্য্য সম্পর্কে তুমি জানো না আমাকে দৈর্য্যহীন করার জন্য তোমার এই বোকা বোকা কথা গুলাই যথেষ্ট।আর আমার দৈর্য্যর বাদ ভেঙ্গে গেলে কি হয় তুমি নিজেও জানো না।

আফীফের এমন কথায় কোন প্রত্যুত্তর করতে পারলো না সেহেরিশ।শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
___

চন্দনপুরে সেহেরিশের আরো বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে এদিকে অনন্তপুরের রমিজ মিয়ার আসার কোন নাম নেই তার অপেক্ষায় দিন গুনছে মুরশীদ আনওয়ার।আফীফ আর সেহেরিশের সম্পর্কটা এখন কিছুটা স্বাভাবিক।আড়াল থেকে সেহেরিশ নিজেই এখন আফীফকে অনুসরণ করে।আফীফের ধমক, বারণ,গম্ভীরতা,হাসি,খেয়াল রাখা, সব কিছুই সেহেরিশের মাঝে অন্যরকম অনুভূতির জানান দেয়।এদিকে কেইন সেহেরিশের বেখেয়ালি আচরণ বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে কিন্তু কেন এমন হচ্ছে সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না।

কিন্তু মারুফা সবটাই বেশ সুক্ষ্ম নজরে খেয়াল করেছেন তাই তিনি আজ সেহেরিশকে আলাদা করে বাড়ির বাইরে নিয়ে যান। গ্রামের রাস্তায় হাটতে হাটতে প্রথমেই কথা শুরু করে সেহেরিশ।

– এই গ্রামটা আসলেও সুন্দর তাই না ফুফু?
– হুম।জানিস সেহেরিশ আমাদের পাশের গ্রামটাই ছিল অন্ততপুর।সেখানেই আমি বড় হয়েছি তোর বাবা বড় হয়েছে।তারপর তোর বাবার বিয়ে হয় কয়েক বছর পর আমাদের ঘর আলো করে তুই এলি এর মাঝে আমার বিয়েটা হয়ে যায় তোর ফুফার সঙ্গে।আমাদের কোন দিক দিয়েই অভাব ছিল না।আমরা সে সময়ে ছিলাম সমৃদ্ধশালী পরিবার।হুট করেই বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় আমাদের গাড়িটা এক্সিডেন্ট করে।তুই,ভাবি আর ভাইজান তখন তোর নানার বাড়ি ছিলি।আমি আর আব্বা,আম্মা তোর ফুফা মিলে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম।শহরের কাছাকাছি হাসপাতাল।। আসতে যেতে সময় লাগতো বেশ। বাসের জার্নি আম্মার সহ্য হতো না। যেহেতু আম্মা অপারেশনের রোগী ছিলেন তাই আমরা মাইক্রোবাস ভাড়া করি।নিয়তির বিচারে আসার পথেই এক্সিডেন করি আমি বেঁচে গেলেও বাকিরা বেঁচে ফিরে নি।সেইসব কথা মনে পড়লে এখনো আমার আসমান জমিন ভাগ হয়ে যায়।এই জীবনে মাত্র আল্প কয়েক বছর সংসার করেছি তারপরেই আমার জীবনটা হয়ে গেলো সাদা কাপড়ে বন্ধি।

মারুফা থামলো তার চোখের কোনে জল চিকচিক করলেও চোখের কার্নিশ বেয়ে তা বের হলো না।পুরনো কথা মনে পড়ায় সেহেরিশের বেশ মন খারাপ হলো।

– ফুফি আবার এইসব ভেবে কষ্ট কেন পাচ্ছো তুমি?
– সেহেরিশ আমি তোর আর আফীফের ঘনিষ্টতা লক্ষ্য করেছি।আমায় যদি মূল্য দিয়ে থাকিস তবে আল্লাহর দোহায় তুই এই ছেলের সাথে মেলামেশা ছেড়ে দে।আফীফ দেওয়ান যে তোকে চিনে ফেলেছে তুই কি তা বুঝতে পারছিস না?

– ক.কি বলছো এইসব?
– ঠিক বলছি আমি।একবার ভেবে দেখ যেই পুরো গ্রাম দখলে রেখে পরিচালনা করে।সে তোকে চিনবে না এতই সোজা নাকি।তোকে দেখার দুইদিনের মাথায় এত আদর সোহাগ ভাব সেই ছেলের কি কোন সাধারণ মতলব আছে।যে ছেলে এতটা সূক্ষ্ম মস্তিষ্কের অধিকারী সেই ছেলে বুঝি তোকে ভুলে গেছে মাত্র আট বছরে?তোকে ফেস টু ফেস দেখে হলেও চেনার কথা
ভুলে গেছিস পারভিনের কথা?পারভিন আমায় বলেছিল যাকে আফীফ দেওয়ান শাস্তির কাঠগড়ায় দাড় করায় তাকে শাস্তি দিয়েই ছাড়ে কিন্তু তোকে মাফ করার কারন কী?তোর সাথে খারাপ কিছু করেনি বরং নিজের কাছে রাখতে চেয়েছে।এই ছেলে যে তোকে চিনতে পেরেছে আমি ভালো করেই জানি।

– এইসবের মানে কি ফুফি তুমি আমায় আগে বলো নি কেন?
– আমি জানি তোকে জানালে তুই তখনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য প্রতিক্রিয়া করবি।এতে আফীফ আমাদের উপর রেগে যাবে।সে যে আমাদের কৌশলে ওই বাড়িতে বন্ধি করে রেখেছে আমি বেশ ভালো করে বুঝতে পারছি।একটা কথা বলি আফীফের সঙ্গ ছেড়ে দে।আমি তোকে ছোট থেকে মানুষ করেছি।আমি জানি তুই কেমন মেয়ে। তুই যে ভালোবাসার কাঙাল সেটা আমি বুঝি।তাই আফীফের যত্নগুলো তোর মাঝে ভালোবাসার রূপ নিতে চাইছে।
এই দেওয়ান বাড়ির শত্রুর অভাব নেই।তুই সেদিন দেখলি না কি কান্ড হলো।বাড়ির কুকুর গুলোকে কে মারলো?আমি ভাইজানের সঙ্গে কথা বলেছি এই বাড়ি থেকে খুব শীঘ্রই বিদায় নেবো।দেখ এই গ্রাম দেখলে আমার যেমন অতীতের আনন্দময় দিন মনে পড়ে ঠিক ততটা বিস্বাদ,তিক্ত স্মৃতি মনে পড়ে।আমি চাইনা তোর উছিলায় হলেও এই দেশে,এই গ্রামেগুলোতে আমাদের আসতে হয়।আগে যদি জানতাম সত্যি সত্যি আমাদের গ্রামে আসতে হবে তবে কখনোই তোকে জোর করতাম না।

সেহেরিশকে চুপচাপ থাকতে দেখে আবারো মুখ খুললেন মারুফা।

– তুই আমাদের বাড়ির একমাত্র মেয়ে।যেহেতু আমরা ইতালিতে থাকি সেহেতু এত দুরে ভাইজান কখনোই তোর বিয়ে দেবেন না।আর এই বাড়ির শত্রুর অভাব নেই কখন জানি আফীফের আপনজন হিসেবে তোর উপর বিপদ ভর করে কে জানে।আমার তো সন্দেহ লাগছে এই ছেলে যা চতুর।তোর ভাষ্য মতে বাড়ির সব লোক আগের মতো থাকলেও তবে পারভিন কোথায়?তার খোঁজ নেই কেন?তোকে পালাতে সাহায্য করার দায়ে যদি ধরা পড়ে সে, আফীফ তাকে তবে এমনি এমনি ছাড়বেনা।তাই ভালোই ভালোই বলছি তোকে, আফীফের প্রতি অনুভূতি শেষ করে দে আর এমন ভাবে দিন কাটাবি আফীফ যেন তোর প্রতি আসক্ত না হয়।
– তুমি ঠিক বলেছো ফুফি আমি নিজ হাতে বিপদ আনার কোন মানে নেই।খুব শীঘ্রই আমি ফিরে যেতে চাই ইতালি।

-ভাইজান বলেছে অনন্তপুরের জমি গুলোর মালিকানা পেয়ে গেলে শীঘ্রই চলে যাবে।তুই সাবধানে থাকিস।
– হুম।
.

সারা বাড়ি জুড়ে সেহেরিশের দেখা না পেয়ে ভ্রু কুচকে যায় আফীফের।কিচেনের দিকে পা বাড়াতেই ফাহমিদাকে দেখে রাস্তা আটকে ধরে,

– আম্মা কোথায় যাচ্ছো?
– কি প্রয়োজন সেটা বল।
– সেহেরিশ কোথায় আম্মা?
– তার ফুফুর সাথে বেরিয়েছে।
– কোথায়?
– তা জানি না।

আফীফ সরে আসে কিচেনের সামনে থেকে।মনে মনে বেশ রাগ লাগছে তার নিরাপত্তা ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়ার সাহস করলো কি করে?যদি কিছু হয়ে যায়।
#চলবে…

#অন্তরিন_প্রণয়
#পলি_আনান
#পর্ব_১৭

গুরুগম্ভীর চিন্তিত মুখ নিয়ে ফাতেমার রুমে বসে আছেন বাড়ির সকলেই।ফাতেমার অসুস্থতা আজ আবার বেড়েছে।আফীফ ডাক্তারকে পৌছে দিতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ হলো।আহনাফ দেওয়ান চিন্তিত মুখ করে বসে আছেন সোফায়।সেহেরিশ মৌকে নিয়ে সবার পেছনে আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে জড়োসড়ো হয়ে।আফীফ তার কাজ সেরে রুমে ডুকতেই সেহেরিশের দিকে আড় চোখে তাকালো।সেহেরিশ আফীফের দৃষ্টি বুঝতে পেরে নিজেকে আড়াল করে নেয়।গত কয়েকদিন সেহেরিশ আফীফের থেকে বেশ দূরত্ব নিয়ে চলেছে আগের মতো হুট হাট তর্ক বির্তকে জড়ায়নি।নিজেকে মানিয়ে নিতে সম্পূন্ন চেষ্টা করেছে সে।

– দাদুভাইরে আমার পাশে একটু আয়।তুই আমার মরণ চাস।কোন দিন আমার কোন কথাই রাখস না।যেদিন মরমু সেদিন বুঝবি।

ফাতেমার এমন যুক্তিহীন কথায় রাগ লাগলো আফীফের কিন্তু রাগটা প্রকাশ না করে দ্রুত তার দাদীজানের পাশে বসে যায়।
– এইসব কি কথা দাদী?তোমার কোন কথা আমি না রেখেছি একটু বলবে।
– তুই বিয়ে-শাদী কর।আমি আমার নাতির ঘরে ছেলে-মেয়ে দেখে যেতে চাই।আমার কথা এবার শুন তুই আর কত থাকবি এমন।

ফাতেমার কথা শেষ হতেই সবার আড়ালে আফীফ আড় চোখে একবার সেহেরিশের দিকে তাকালো।বিষটি মারুফার চোখে তৎক্ষনাৎ ধরা পড়ে।সহসা তিনি বুঝে নেন আফীফ খুব করেই সেহেরিশকে চাইছে।
.

খুরশীদ আনওয়ারের রুমে আজ আলোচনায় বসেছেন মারুফা,খুরশীদ এবং ফাহমিদা।মারুফা নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে হলেও এই বাড়িতে সেহেরিশের বিয়ে আটকাবেন বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন।
– ভাইজান তোমায় কিছু কথা বলার ছিল।ভাবী জানে আমি ভাবীকে বলেছি।
– কী কথা বল।
– দেওয়ান বাড়ির সদস্যরা চাইবে আফীফের বউ হিসেবে সেহেরিশ এই বাড়িতে আসুক।কিন্তু তুমি কিছুতেই তাদের প্রস্তাবে রাজি হবে না।
– কি বলছিল এইসব?তোর কেন মনে হলো যে তারা আমাদের সেহেরিশকে চাইবে?
– এত প্রশ্ন কেন করছো ভাইজান যেটা বলছি সেটা শুনো।আমরা সেহেরিশকে এই বাড়ির বউ করবো না।কিছুতেই না।
– আফীফ পাত্র হিসেবে যথেষ্ট ভালো।ব্যক্তিগত ভাবে আমি নিজেও ছেলেটাকে পছন্দ করি আমার মেয়ে তার হাতে তুলে দিতে আমি দ্বিধাবোধ করবো কেন?

খুরশীদ আনওয়ারের কথায় ফস করে শ্বাস ছাড়লো মারুফা।উত্তেজিত হয়ে টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে দ্রুত গিলে বিছানায় বসে যায়।

– দেখো ভাইজান যা বলছি মন দিয়ে শুনো। বিয়ে ছেলে খেলা না।এতে সারাটা জীবন জড়িত।সুবিধা-অসুবিধা,মানানসই অবস্থান প্রয়োজন।তাই তোমার ব্যক্তিগত পছন্দ আর চোখের দেখায় মেয়েটাকে এইভাবে বিয়ে দিতে সম্মোতি জানাবে না আশা করি।
– মারুফা তুই যা বলছিস বুঝিয়ে বল।তোর কথার যুক্তি আমি বুঝতে পারছি না।

– সেহেরিশ আমাদের একমাত্র মেয়ে।তুমি কখনো চাইবে তোমার মেয়েকে বিপদবহুল জায়গায় বিয়ে দিতে?দেখো এটা জমিদার বাড়ি তাদের শত্রুর অভাব নেই।আহনাফ দেওয়ানের পর জমিদারিতে হাত লাগাবে আফীফ দেওয়ান।কিন্তু আফীফের বাবা এইসব জমিদারিতে গা লাগায়নি।আমি যতদূর শুনেছি ঝামেলা বিবাদ তিনি মোটেও পছন্দ করেন না।তিনি শান্তিপ্রিয় মানুষ।বাড়ির ব্যবসায় তিনি ভূমিকা রাখছেন।কিন্তু আফীফ তো শত্রু পক্ষ নিয়ে খেলছে।তার শত্রুর অভাব নেই।মনে আছে ভাইজান আম্মা-আব্বা বলেছিলো।পাশের গ্রামের আহনাফ দেওয়ানের বাবাও কিন্তু তার শত্রুদের হাতে মারা যান।
তাই এই বাড়ির শত্রুর অভাব নেই।সেদিন দেখলে না কুকুরগুলোকে কিভাবে মেরে চলে গেছে।আফীফকে দমন করতে আগে কিন্তু তার দূর্বল জায়গা গুলো খুজবে শত্রুরা।তাই বলি কি যা করবে ভেবে চিন্তে করবে।

মারুফা থামে।তার কথায় সায় দিয়ে মাথা দুলালেন
খুরশীদ।ফাহমিদা এগিয়ে এসে গমগম সুরে বলেন,

– দেখো এত শত কারন দরকার নেই আমি আমার মেয়েকে কিছুতেই এতদূরে বিয়ে দেবো না।আমরা থাকবো দেশের বাইরে আর মেয়ে আমার এখানে পড়ে থাকবে কিছুতেই না।আমার একমাত্র মেয়ে আমার কলিজার টুকরা।তাছাড়া গ্রামের বউদের নিয়মকানুনের কথা তুমি ভালো করেই জানো।এখন হয়তো অতিথি হিসেবে আমার মেয়েটাকে আদর-যত্ন করছে কিন্তু বাড়ির বউ হিসেবে তখন একশ একটা দোষ খুঁজবে বিচারের পর বিচার আসবে।আমার সাদাসিধা মেয়ে পড়াশোনা ছাড়া কোন কিছুতেই মন বসায় নি।তাই তারা প্রস্তাব পাঠালেও তুমি বারণ করবে।প্রয়োজনে মিথ্যা বলবে।তুমি বলে দিও আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক।যা বলেছি তাই এই বাড়িতে আমার মেয়ের বিয়ে আমি দেবো না।

ফাহমিদার কথায় মাথা নাড়িয়ে ঈষৎ হাসলেন খুরশীদ।
– বেশ তবে তাই হবে। তোমাদের কথার অমান্য আমি কখনো করিনি এখনো করবো না।

.

কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে আফীফ।তার পাশে একের পর এক গুনগান শুনিয়ে যাচ্ছেন সেজুঁতি।কিন্তু আফীফ সেদিকে কোন পাত্তাই দিচ্ছেন না।মায়ের উপর রাগ দেখাতে না পেরে চুপচাপ সবটা শ্রবণ করছে সে।

– দেখ বাবা আর কত দিন এইভাবে চলবে?তোর দাদীজান যে আজ রেগে গেলো সেই খবর কি আছে তোর?তোর তাকিয়া যখন দেশে এসেছে তুই সবটা মিটমাট করে বিয়ের প্রস্তাব দে।তোকে কিচ্ছু করতে হবে না তোর আব্বা আর দাদাজান মিলে সবটা সামলে নেবে।
– এত কথা কিসের।তাকিয়ার এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি তার বাবা মা এখন তার বিয়ে দেবেন না।সব কিছু ভেবে প্রস্তাব দেওয়া উচিত আমাদের।
– পড়াশোনা শেষ হয়নি তো কি হয়েছে বিয়ের পর পড়বে এতটা চাপ নেওয়ার কিছুই নেই।
– আমি এই দেশে আর তোমার ছেলের বউ ওই দেশে থাকবে?এইসব ধ্যান ধারনা নিয়ে তুমি চলো।দেখো মা বিয়ের সাব্জেক্ট পরে। এখন দাদীজানের সুস্থতা কামনা করো।

আফীফের গুরুগম্ভীর প্রত্যুত্তরে থামলো সেজুঁতি।কিন্তু মনের মাঝে এখনো খচখচ করছে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা পড়িয়ে দায়মুক্ত হতে চান তিনি।আহনাফ দেওয়ানকে রুমে প্রবেশ করতে দেখে তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ান সেজুঁতি।

– বাবা কিছু বলবেন?
– আফীফের সঙ্গে কথা ছিল।তুমি যাওয়ার দরকার নেই এখানেই থাকো।

আহনাফ দেওয়ানের সম্মোতিতে সরে দাঁড়ালেন সেজুঁতি।আফীফ এখনো একই ভাবেই বসে আছে।তার পিঠ চাপড়ে আহনাফ দেওয়ান হাস্যোদ্দীপক হয়ে বলেন,

– ব্যাটা বিয়ে করবি কবে?এত নাটক করছিস কেন?মেয়ে মানুষের অভাব তোর জন্য নেই আমি জানি। কিন্তু মনের মানুষের অভাব ছিল তা এতদিন বুঝেছিলাম তবে এখন কেন বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিস না?সেহেরিশ তো দেশেই ফিরেছে।
– সেহেরিশ তো আর আমাকে বিয়ে কর‍তে দেশে ফিরে আসে নি।তার এখনো পড়া বাকি।আঙ্কেল আন্টি যে কিছুতেই তার বিয়ের মত দিবেন না আমি জানি।
– এত চিন্তা করছিস কেন?তোর দাদাজান আছে না। তারা রাজি না হলে তুলে এনে বাপ মেয়েকে বিয়ের আসরে বসাবো।দেখি বিয়ে কি করে না হয়।
– দাদাজান বিয়ে আমি জোর জবরদস্তির করে কর‍তে পারবো না।দুজনের এটলিস্ট মনের মিলটা থাকা প্রয়োজন।
– তুই ঠিক বলেছিস।তবে এটা আমি ভালো করেই জানি যে আফীফ আট বছর একটি মেয়ের আশায় থাকতে পারে সেই মেয়েকে আফীফ বউ না বানিয়ে ছাড়বে না।যাই হোক আমি চাইছি তোর বাবা আর আমি তাদের কাছে প্রস্তাবটা পেশ কর‍তে।
– এখন না দাদাজান আমি…

আফীফের কথা শেষ হওয়ার আগেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন সেজুঁতি।
– দেখলেন আব্বা দেখলেন এই ছেলে কি চাইছে আমি কিছুই বুঝিনা।
– আহ আম্মা আমাকে একটু সময় দাও।
– বেশ দাদু ভাই তোমাকে সময় দিলাম তার আগেই আমি যেন পজিটিভ নিউজ পাই।
– ইনশাআল্লাহ দাদাজান।

.
পুকুর পাড়ে বসে জুহির সাথে কল আড্ডায় মেতে আছে তিন বন্ধু তাদের টপিক আজ বাঙালী সাজ।গ্রাম্য ছবির ফটোগ্রাফি শেষে এবার তুন্দ্রের মাথায় বুদ্ধি এসেছে গ্রামবাংলার বউ সাজে সেহেরিশকে দিয়ে ফটোশ্যুট করাবে কিন্তু এইসব কিছুতে ফেসাদে পড়েছে সে।এদিকে জুহি তাদের সবার সঙ্গে ভিডিও কলে তর্ক বির্তকে লেগে আছে।

– দেখ সেহেরিশ শাড়ি,চুড়ি,কাজল পড়লে তোকে সুন্দর লাগবে এত নাক উচু করছিস কেন?
– নারে জুহি শাড়ির সাথে লম্বা চুল মানানসই। আর কাজলতো আমি জ্ঞান হওয়ার পর কখনো লাগাই নি।শাড়ি পড়তে অসহ্য লাগে আমি পারবো না তুই তুন্দ্রকে বল এইসব টপিক যেন বাদ দেয়।

সেহেরিশের তিক্ত মুখের কথায় রাগ লাগলো তুন্দ্রের।গলায় ঝুলে থাকা ক্যামরাটা রাগ দেখিয়ে ছুড়ে মারলো কেইনের দিকে।হনহন করে পুকুর পাড় ছেড়ে উঠে গিয়ে বাড়ির ভেতরে ডুকে যায়।কেইন আহাম্মক বনে তাকিয়ে আছে সেহেরিশের দিকে।
– এই সেহেরিশ তুন্দ্র তো ক্ষেপেছে।
– ধর তুই জুহির সাথে কথা বলা আমি ওর রাগ ভাঙাই।

সেহেরিশ এক ছুটে তুন্দ্রের পেছনে দৌড় লাগায়।দোতলায় উঠার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে তুন্দ্রের জ্যাকেট টেনে ধরে সেহেরিশ।
– প্লিজ তুন্দ্র আমি ফটোশ্যুট করবো।তুই যেভাবে বলবি সেই ভাবেই সাজবো রাগিস না তুই।
– ছাড় আমায় সেহেরিশ তোকে আমার কথা শুনতে হবে না।
– না না না শুনবো আমি প্লিজ তুই রাগ করিস না।আমি চন্দনা আন্টির কাছে এখনি যাবো তিনি আমায় সাজিয়ে দেবেন।প্রয়োজনে যা যা লাগবে বাজার থেকে নিয়ে আসবে তবুও রাগ করিস না। আমি জানি তুই রাগলে সহজে থামবি না।

তুন্দ্র সেহেরিশের কথা কানে নিলো না বরং সেহেরিশকে ছাড়িয়ে উপরে উঠতে চাইলো।তুন্দ্রের কান্ডে বেশ রাগ লাগলো সেহেরিশের। রাগ ভাঙাতে এসে উল্টো নিজেই রেগে গেলো সেহেরিশ যার দরুনে তুন্দ্রের হাত ছোড়াছুড়ি দেখে বাম হাতে কামড় বসায় সে।
– আহহ সেহেরিশ কি করছিস কি তুই?
– যা করছি বেশ করছি এতবার বলার পরেও কেন আমার কথা শুনছিস না?
– তাই বলে কামড়াবি?
– হ্যা কামড়াবো।এবার বল রাগ থেমেছে?
– বিকেলে রেডি থাকিস।

দুপুরের পরেই সেহেরিশ নিজের অনিচ্ছা স্বত্তেও টুকটুকে লাল শাড়ি।হাত ভর্তি চুড়ি চোখে কাজল পায়ে পায়েল,আলতা, টিপ,চুলে গাজরা পড়ে তৈরি হয়ে নেয়।চন্দনার সাহায্য পুরো সাজটাই শেষ করে সে।

সেহেরিশ নিজের রুমে বসে আবারো সবটা সাজ দেখছি তখনি তার রুমে প্রবেশ করে কেইন, তুন্দ্র, মুনিফ।
– এটা কে রে? আমাদের সেহেরিশ তো নয়।এটাতো হুরপরী।
কেইনের কথায় কিঞ্চিৎ হাসে সেহেরিশ।তুন্দ্র, কেইন সেহেরিশকে নিয়ে কথায় ব্যস্ত থাকলেও মুনিফ দুচোখ ভরে দেখছে তাকে।আজ যেন মেয়েটার মাঝে অন্য রকম সৌন্দর্য ভর করেছে।একদম নব বধূ!

– সেহেরিশ তুই ছাদে আয় আমরা বরং যাই।
তুন্দ্র সবাইকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় এদিকে সেহেরিশ তার সব কিছু ঠিক ঠাক করে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে ছাদের উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়।কিছু দূর যাওয়ার পর তার হাতে টান পড়তেই অন্ধকার একটি রুমে ছিটকে পড়ে।

– কে কে ওখানে?
– তোমার হবু বর!

গুরুগম্ভীর কারো কন্ঠে শিউরে উঠে সেহেরিশ।এই কন্ঠের মালিক কে সে চেনে।খুব ভালো করেই চেনে।এটা তো আফীফ।
– আপনি এমন করলেন কেন?আমাকে এই অন্ধকার রুমে আনার মানে টা কী?
– খুব সোজা এই রুমের বাইরে যেতে পারবে না ঠিক ততক্ষণ যতক্ষন তোমার এই সাজ পোশাকে থাকবে।
– আরে আজব আমার ইচ্ছা আমি সেজেছি আপনার জ্বলছে কেন?আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
– সমস্যা নেই রুম সাউন্ড প্রুফ।
সেহেরিশ বিরক্ত হয়ে যায়।অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে দরজা খুলতে গিয়ে থমকে যায়।আফীফ তার দুই হাত আকড়ে ধরে নিয়েছে।

– এইসব কেন করছেন আফীফ দেওয়ান।
সেহেরিশের দাতে দাত চেপে কথায় হালকা করে তার মুখে ফু দিলো আফীফ।
– এই সাজে তোমায় কেমন লাগছে যানো?না তোমার জেনে কাজ নেই।
– আপনি পাগল হয়ে গেছেন যেতে দিন আমাকে।

সেহেরিশ আফীফকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই আফীফ আবারো সেহেরিশকে আকড়ে ধরে।
– ছুটাছুটি একদম করবেনা বলে দিচ্ছি।
সেহেরিশ শুনলো না বরং আফীফের হাতে কামড় বসিয়ে তাকে থু থু ছুড়ে মারে।আফীফের বেশ রাগলো।অন্ধকারেও সেহেরিশের অবস্থান বুঝতে পেরে এক পা দু পা তার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

– অতীতের অব্যক্ত প্রণয় তবে আবার শুরু হোক!

#চলবে….