অপরাজিতা ২ পর্ব-০১

0
333

#অপরাজিতা_২(অপরাজিতা গল্পের পরের অংশ)
#১ম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

আজ নিলার বিয়ে৷ রাজিতা তৈরি হচ্ছে সেখানে যাওয়ার জন্য। রিমি বারবার ওকে কল করছে৷
এই মেয়েটা না পারেও! এতবার কল করার কি আছে! আমরাতো রেডি হচ্ছিই যাওয়ার জন্য! ভাবতে থাকে রাজিতা।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল আচড়াচ্ছিল রাজিতা৷ কালকে সারাদিন অনেক ব্যস্ত ছিল। সারাদিন নিলার সাথে থাকতে হয়েছে, ওর চাচিকে সাহায্য করতে হয়েছে৷ আবার আজকেও রিমির ফোনে পাগল হয়ে যাচ্ছে বেচারী ! সকালে না গেলে নাকি হবে না!আরে ভাই একটু দেরি হলে কি হবে!

আনান ফ্রেস হয়ে রেডি হতে-হতে রাজিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“তোমার জন্য একটা গিফট আছে৷ ভেরি স্পেশাল গিফট ! ”

রাজিতা আনানের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বলল,

–“কি এমন স্পেশাল গিফট আছে শুনি? সেটা কি আজকে দেওয়ার জন্যই রেখেছিলে নাকি?”

আনান রাজিতার কাছাকাছি এসে ওর পিঠের দিক থেকে চুলগুলো সরিয়ে একটা চেইন পড়িয়ে দিলো। রাজিতা গলায় হাত দিয়ে বলতে লাগলো,

–“আজ আবার চেইন কেন? মাতো বিয়ের গয়নাগুলো পড়তে বলেছে। আর তোমার খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই শুধু দামী গিফট দিতে হবে? আমি তোমাকে বলেছি আজ এইসব গিফট করতে!টাকা আছে বলে কি সবসময় তা আজেবাজে খরচ করতে হবে নাকি!সবকিছু হিসেব করে খরচ করতে হয়।”

রাজিতার কথাগুলো শুনে আনান কিছুটা মন খারাপ করে বলল,

–“না দেখেই তুমি লেকচার দেওয়া শুরু করে দিলে! আরে বাবা আগে লকেটটা ভালো করে দেখো! তারপর যদি তোমার মনে হয় এটা অপচয় তবে আমাকে দিয়ে দাও৷ শশুর-শাশুড়ীর স্মৃতি না হয় আমার গলাতেই বয়ে বেড়াবো!”

বলেই আনান রাজিতার গলা থেকে চেইনটা খুলতে গেলো৷রাজিতা এতক্ষণ খেয়াল-ই করেনি যে চেইনটার সাথে একটা লকেট আছে। আর সেটা ওর নিজের-ই! রাজিতা একলাফে টুল থেকে উঠে লকেটটা খুলে অবাক হয়ে গেলো৷ তারপর আনানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। আর খুশিমনে বলতে লাগলো,

–“এই লকেটটা তুমি কোথায় পেলে? এটাতো সেদিন ছিনতাই হয়ে গিয়েছিলো? ”

আনান রাজিতার কপালে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বলল,

–“তোমার জন্য কি এইটুকুও করতে পারবো না? সেদিন যেটা রক্ষা করতে পারিনি সেটা উদ্ধারও যদি না করতে পারি তাহলে কেমন স্বামী বলো?”

–“কিন্তু ছিনতাইকারী এটা ফেরত দিলো কেন? আর কবেই বা ফেরত দিলো? আমাকে কিছু বলোনি কেন?”

আনান মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,

–“তোমার কি মনে হয়, ছিনতাইকারী নিজে এসে আমাকে লকেটটা দিয়ে গেছে এই বলে যে,’ আনান ভাই! এই নিন আপনার বউয়ের লকেট! আমি সেদিন ভুল করে নিয়ে গিয়েছিলাম! তাই আজ ফেরত দিতে এসেছি!’… না মিসেস! এটা উদ্ধার করতে আমার পুলিশ বন্ধুর বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছি! কত যে রিকুয়েষ্ট করতে হয়েছে! বাপরে বাপ! শেষ পর্যন্ত লকেটটা পেয়েছি এই অনেক! পরশুই এটা এনেছি৷ আজকে তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য রেখেছিলাম। ”

রাজিতার চোখে পানি চলে এসেছে। যদিও তা খুশির কান্না৷ তারপরেও আনান ওর চোখে পানি দেখে বলল,

–“ভালো হয়েছে যে সাজগোজ করার আগেই কান্না করে নিচ্ছো!নইলে আবার সাজতে হতো!… তা এবার আমার রিটার্ন গিফট কই? এত সুন্দর একটা গিফট দিলাম! ”

রাজিতা একগাল হেসে লাজুক ভঙ্গিতে আনানের দিকে তাকিয়ে বলল,

–“পুরো আমিটাকে-ইতো আনান সাহেবকে দিয়ে দিয়েছি! আমার আর কি আছে যে তোমাকে দেবো! আর এই গিফটের রিটার্ন গিফট দেওয়ার মতো কিছু আমার কাছে নেই! এটা পেয়ে যে আমি কি পরিমাণ খুশি হয়েছি তা বলে বুঝাতে পারবো না।”

আনান কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই ওর ফোনটা বেজে উঠলো। আনান কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নিয়ন বলে উঠলো,

–“কি ব্যাপার আনান, রাজিতা ফোন তুলছে না কেন? রিমি কল করছে, আমি করছি। আর তোমরা কখন আসবে? সকালের নাস্তাতো এখানে এসে করার কথা৷ অথচ তোমাদের কোনো খোজ-খবর নেই!”

–“এইতো আসছি ভাইয়া। রাজিতা রেডি হচ্ছে৷ জানেন-ইতো মেয়েদের রেডি হতে একটু টাইম লাগে! আমি বলছি ওকে তাড়াতাড়ি করতে!”

–“আচ্ছা বলো। সাজ-গোজতো এখানে এসে করলেও চলবে! তাড়াতাড়ি চলে আসো৷ একসাথে নাস্তা করবো!”

আনান “আচ্ছা” বলতেই নিয়ন কল কেটে দিলো৷ আনান দেখতে পেলো যে রাজিতা রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

–“ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমি কি ভুল কিছু বলেছি? যাও তাড়াতাড়ি রেডি হও!”

রাজিতা রাগীসুরে বলল,

–“আমি এতক্ষণ রেডি হয়ে যেতাম!তুমিইতো সারপ্রাইজ গিফট এনে দেরি করিয়ে দিলে। এটা কাল দিতে কি হয়েছিলো! তাহলেইতো আর দেরি হয়না!”

–“তা এখনো কি এখানে দাঁড়িয়ে লেকচার দিবে নাকি রেডি হবে?…. আমি কিন্তু রেডি। দেখি মা-বাবা রেডি হয়েছে কিনা!”

বলেই আনান রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রাজিতা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলো।

রাজিতারা পৌঁছে একসাথে সবাই নাস্তা করে নিলো৷ আনান আর রাজিতার বিয়ের পর আজ প্রথম আনানের মা আর বাবা এসেছে নিলাদের বাসায়। নিলার মা আনানের মা-বাবাকে অনেক আদর-আপ্যায়ন করছে৷ এতলোকের ভীড়েও আলাদা করে আতিথেয়তা করাচ্ছেন। রাজিতার খুব ভালো লাগলো ব্যাপারটা দেখে।

রিমিকে আজ খুব হাসি-খুশি দেখে রাজিতার ভীষণ ভালো লাগছে। কয়েকদিন বেচারী খুব ভেঙে পড়েছিলো৷ রাজিতা মাঝেমধ্যে এসেই ওকে বুঝাতো যেন ভেঙে না পড়ে৷ ওরতো কেবল জীবনের শুরু! শুরুতেই ভেঙে পড়লে শেষটা অবশ্যই সুখকর হবে না! তুহিন অনেকবার কল করেছে রিমিকে, কিন্তু রিমি ওর সাথে আর কথা বলেনি৷ তুহিন দেখা করার চেষ্টাও করেছে কিন্তু রিমি সেইদিনের বলা কথাগুলো কিছুতেই ভুলতে পারছে না। আসলে ভালো মুহূর্তের রেশ আমাদের মনে বেশিক্ষণ না থাকলেও খারাপ মুহুর্তের রেশ থেকে যায় অনেকদিন পর্যন্ত! আর তা থেকে সহজে বের হওয়া যায়না৷ রিমিও ব্যাপারটা থেকে বের হতে পারছিলো না। তবে আজকে ওর স্বাভাবিকতা দেখে মনে হচ্ছে যে, ও অনেকটা বেড়িয়ে এসেছে তুহিন নামক মায়াজাল থেকে৷ হয়তো এটাই ওর জন্য ভালো!

রাজিতা আর রিমি নিলার রুমে ছিলো। নিলার আরসব কাজিনরাও আছে। নিলার বিয়ের জিনিসপত্র আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে যেন অনেকটা সময় নিয়ে তৈরি হতে পারে। পার্লার থেকে দু’টি মেয়ে এসেছে নিলাকে সাজানোর জন্য। দুপুরের মধ্যেই নিলা তৈরি হয়ে গেলো৷

নিলাদের পুরো বাড়িতে লোকজন গিজগিজ করছে। বোঝাই যাচ্ছে যে, এটা একটা বিয়ে বাড়ি৷ সবাই অনেক আনন্দ করছে, মজা করছে। বর‍যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে। আনান নিয়নের সাথে সবকিছু দেখাশোনা করছে। নিশাদ বারবার বলেছিল বরযাত্রী হয়ে আসতে। কিন্তু রাজিতার অনুরোধে কনে পক্ষেই থেকে গেছে! নিশাদ এতে একটু মন খারাপ করেছে!

বর এসেছে শুনেই নিলার মুখে লাজুকতা ফুটে উঠলো। রাজিতা তা খেয়াল করে বলল,

–“আপু, ভাইয়াকে দেখবেনা? শেরওয়ানিতে কেমন লাগছে? তুমি কি লুকিয়ে দেখবে? নাকি ছবি তুলে আনবো? কিছুক্ষণ পরে অবশ্য এমনিতেই দেখতে পাবে! ”

কথাগুলো বলেই রাজিতা হাসতে লাগলো৷ রাজিতা একা নিলার পাশে বসে আছে৷ বাকি সবাই চলে গেছে বর দেখতে। রাজিতার কথার উত্তরে নিলা বলল,

–“বড়বোনকে এসব বলতে তোর লজ্জা করছে না? যা এখান থেকে! সবাই গেছে বর দেখতে! তুই এখানে কি করছিস?”

–“বরতো আর নতুন নয়! বরের আর কি দেখবো! তারচেয়ে বরং আমি কনেকেই পাহারা দেই! সে যদি আবার একা-একা লুকিয়ে বর দেখতে চলে যায়!”

–“দেবো না একটা! ”

রাজিতার দিকে হাত উঁচিয়ে কথাটা বলেই লজ্জায় নুইয়ে পড়ে নিলা।

বরপক্ষ এসেছে অনেকটা সময় হয়ে গেছে৷ সবার খাওয়া-দাওয়ার পর্বও শেষ। রাজিতা, রিমি সবাই নিলার পাশে বসে আছে৷ বিয়ে পড়ানো শুরু হবে। কিন্তু তখনি ওরা রুমের বাইরে সবার চেঁচামেচি শুনতে পেলো। বিয়ে-বাড়িতে চেঁচামেচি হবে এটাই স্বাভাবিক! কিন্তু আস্তে-আস্তে সেই চিল্লাপাল্লা যেন বাড়তে লাগলো!

রাজিতারা বাইরে গিয়ে দেখতে পেলো যে, নিশাদের দুলাভাই তৌফিক সাহেব, নিয়ন আর আনানের সাথে কিছু একটা নিয়ে তর্ক করছে৷ নিশাদও উঠে এসেছে। আস্তে-আস্তে বড়-ছোট সবাই জমা হতে লাগলো।

তৌফিক বারবার শুধু একটা কথাই বলে যাচ্ছে যে,

–“এই বিয়েটা আমি কিছুতেই হতে দেবো না। এটাই আমার শেষ কথা! নিশাদ এই বিয়ে করবে না! ”

চলবে….?
(অনেকেই বলেছেন যে, অপরাজিতা গল্পটা অসমাপ্ত রয়ে গেছে৷ তাই আপনাদের পছন্দের গল্প নিয়ে আবার ফিরে আসলাম এটা সম্পূর্ণ করার জন্য।….আপনাদের মতামত জানাবেন। ধন্যবাদ!)

অপরাজিতা সিজন-১ গল্পটি পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন।