অপরিচিত প্রিয়জন পর্ব-১৪+১৫

0
265

#অপরিচিত_প্রিয়জন
#পর্ব_১৪
#এম_এ_নিশী

ভোরের স্নিগ্ধ পরিবেশ এক অন্য রকম মোহমায়া তৈরি করে দেয়। সেই পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকলে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। দূরে.. বহুদূরে…। সকালের স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন মৃদুমন্দ বাতাস আলতো করে গা ছুঁয়ে যায়। চোখ বুজে তার সবটুকু নিজের মধ্যে টেনে নিয়ে অনুভব করতে থাকে এর স্নিগ্ধতা। সৌন্দর্য তখনও কিছুটা অনুভব করা বাকি। তবে তাতে বিঘ্ন ঘটে যায় কলিং বেলের ক্যাটক্যাটে আওয়াজে। গায়ে থাকা ওড়নাটা ভালোভাবে গায়ে মাথায় জড়িয়ে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে যায় দরজার দিকে। কটকট আওয়াজে খুলে যায় দরজা। দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা এক সুঠাম দেহী পুরুষ যার দৃষ্টি ছিলো বিক্ষিপ্ত আচমকা এক অভূতপূর্ব সৌন্দর্য সম্মুখে প্রকট হওয়ায় দৃষ্টি স্থির নিবদ্ধ হয় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কন্যাটির ওপর। অস্পষ্ট ভাবে ঠোঁটে মেলে উচ্চারিত হয়, “রূপসী কন্যা!” ওপাশ থেকে কঠোর স্বরে ভেসে আশা শব্দগুচ্ছ কর্ণগোচর হয়,

–জি বলুন, কাকে চাই?

বিস্ময়ের পর বিস্ময় পেয়ে বসেছে মানুষটিকে। তার সামনে দাঁড়ানো সুন্দরী রমনীর কাটা কাটা ভাবে উচ্চারিত শুদ্ধ, বলা ভালো পরিশুদ্ধ বাংলা ভাষার উচ্চারণ তাকে বিমোহিত করছে। তবে আরো একটি বিষয় তাকে অবাক করছে, যে কন্ঠে কোমলতা আশা করেছিল সেই কন্ঠে এমন রুক্ষতা কেন? বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,

–কেমন আছো, রূপসী?

–জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। কিন্তু আপনি কে?

মেয়েটা কি তাকে সত্যিই চিনতে পারছে না নাকি সবটাই নাটকীয়তা। বোধগম্য না হওয়ায় পুনরায় প্রশ্ন করে,

–তুমি কি আমায় চিনতে পারছো না? তোমার ম্যাজিস্ট্রেট স্যারকেই চিনতে পারছো না?

প্রশ্ন শুনে রমনীর কপাল কুঁচকে যায় যা স্পষ্ট বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ। বিরক্তি ধরে রেখেই উল্টো প্রশ্নে করে,

–আমার কি আপনাকে চেনার কথা ছিলো?

এমন কঠিন স্বরের কাটখোট্টা প্রশ্নের কোনো জবাব খুঁজে পেলো না ইফাদ। কেবল অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রূপসীর দিকে। একি সেই রূপসী? দুই বছর আগে যাকে রেখে গিয়েছিল এখানে? তার যাওয়ার সময় কেমন কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে রেখেছিলো। সেই রূপসী আর এই রূপসীর মধ্যে কোনো মিল ই নেই যেন। মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ দুটো আলাদা মানুষ। পেছন থেকে মারিয়ার আওয়াজ ভেসে আসায় বিস্ময়ের ঘোর কাটতে বাধ্য হয় ইফাদের।

–ভাই, তুই চলে এসেছিস? ভিতরে আয় না। বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

রূপসী দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে ভিতরে প্রবেশের জায়গা করে দেয় ইফাদকে। মারিয়ার সাথে ভালো মন্দ নিয়ে কথা বলতে থাকে ইফাদ। সেই ফাঁকে রূপসী ঘরে চলে যায়।

এলার্ম-ঘড়ির তীক্ষ্ণ আওয়াজে টিকতে না পেরে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে মিষ্টি। চোখ তখনো বন্ধ। মাথায় চটাস করে চাটি পড়তেই চোখ মেলে তাকায় সে। রূপসী ভ্রু নাচিয়ে বলে,

–কিরে! কতো ঘুমানো লাগে তোর? যা হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।

–সারপ্রাইইইজজ! এই রূপ বল না বল না কি সারপ্রাইজ।

রূপসী পড়ার টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। ল্যাপটপটা অন করে চেয়ার টেনে বসে পড়ে। স্ক্রীনে চোখ রেখেই জবাব দেয়,

–তোর ক্রাশ এসেছে।

মিষ্টি কপালে ভাঁজ ফেলে চিন্তা করতে বসে কোন ক্রাশ? তার পরপরই ভাবে এ বাসায় তো তার একটা ক্রাশেরই আগমন ঘটে তাও কালেভদ্রে। তার কথা মাথায় আসতেই লাফিয়ে খাট থেকে নেমে যায় সে। চিৎকার করে বলে,

–ইফাদ ভাইয়াআআআ!

–হিশশশ! আস্তে মিষ্টি। উনি ড্রয়িং রুমেই বসে আছেন। শুনতে পাবেন তো।

–ওয়াও রূপ! তুই ভাবতে পারছিস? পাক্কা ২ বছর পর ইফাদ ভাইয়াকে দেখব। আহা! আমার তো খুশিতে মরেই যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।

–ল্যাপটপের চার্জারটা এদিকে পাস করে দিয়ে তারপর মর।

–কাম অন ইয়ার! ফাজলামি করিস না তো।

–কি করব বল? তোর মতো খুশিতে মরে যাওয়ার মতো কোনো কারণ তো ঘটেনি আমার সাথে তাই না।

–ওকে! তুই বস। আমি দু মিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসছি।

মিষ্টি চলে যেতেই রূপসী ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ সরায়। দৃষ্টি দরজায় বাইরে নিক্ষেপ করে। এখান থেকে ড্রয়িংরুমের বেশ কিছুটা অংশ চোখে পড়ে। এই মুহুর্তে সেখানে সিঙ্গেল সোফার ওপর পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকা ইফাদকে স্পষ্ট নজরে আসছে। এক হাত প্রসারিত করে রাখা আরেক হাতে ফোন। চোখ দুটো ফোনের স্ক্রিনে। রূপসী প্রাণভরে দেখতে থাকে মানুষটিকে। দু বছর ধরে চাতক পাখির মতো তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকা চোখ দুটো পিপাসা মেটানোর চেষ্টায় মত্ত। এ পিপাসা তো আর এটুকুতে মেটে না। তবে অভিমানী মন এতেই সন্তুষ্টি লাভের তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎই ইফাদের সোজাসুজি দৃষ্টি এসে পড়ে তার ওপর। কোনোরকম নড়নচড়ন ছাড়াই চোখ ফিরিয়ে এমনভাবে তাকিয়েছে তার দিকে যে সে দৃষ্টি ফেরানোর সময়টুকুও পেলানো। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঝট করে উঠে দাঁড়ায় সে। মুহূর্তেই ত্যাগ করে সেই স্থান। ইফাদের ঠোঁটে খেলে যায় মুচকি হাসি।

নিজেকে পরিপাটি করে সাজিয়ে ইফাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে মিষ্টি। নরম স্বরে টেনে টেনে জিজ্ঞেস করে,

–কেমন আছেন, ইফাদ ভাইয়া।

ইফাদ চোখ তুলে একবার দেখে নিয়ে পুনরায় দৃষ্টি ফোনের স্ক্রিনে রাখে। মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়,

–হুম ভালো!

জবাব শুনে আর মুখের ভঙ্গিমা দেখে মিষ্টির মুখখানা ফাটা বেলুনের মতোই চুপসে গেলো। শুধু “হুম ভালো” একবার জিজ্ঞেসও করলো না মিষ্টিকে সে কেমন আছে। মনে মনে বলে, এমন এটিটিউড ওয়ালাকে কোন পাগলে বিয়ে করবে আল্লাহ ভালো জানে। টেবিলের চেয়ার টেনে বসে পড়ে চিৎকার করে মারিয়াকে ডেকে বলে,

–ভাবি খাবার দাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে কোচিং এর।

–ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছিস কেন?

কন্ঠস্বর শুনে মিষ্টির সাথে সাথে ইফাদও চোখ তুলে তাকায়। গাঢ় বেগুনি রং এর সালোয়ার কামিজ ফর্সা শরীরে ভিষণ ফুটে উঠেছে। ঘন, কালো, লম্বা চুলগুলো বিনুনি করে রাখা। চোখের পাপড়ি গুলো হালকা ভেজা, হয়তো মুখ ধুয়ে এসেছে একটু আগেই। গালের দুপাশে হালকা লাল আভা। মুখে কোনো বাড়তি প্রসাধনী নেই। এতেই কি অপরূপা লাগছে মেয়েটিকে। ইফাদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। রূপসী এসে মিষ্টির পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ে। মারিয়া এসে খাবার বেড়ে দিতে দিতে বলে,

–আজকাল খুব অধৈর্য্য হয়ে যাচ্ছিস তুই মিষ্টি।

ফট করে রূপসী বলে উঠে,

–অধৈর্য্য বলে অধৈর্য্য। জানো মারিয়াবু ও কাল কি করেছে?

–কি করেছে রে?

–পেন কিনতে গিয়েছি দোকানে। প্রচুর ভিড়। দোকানদারকে দু তিনবার বলা সত্ত্বেও উনি অন্যদের দিচ্ছেন কিন্তু ওকে দিচ্ছে না। দোকানদার বেচারা হিমশিম খাচ্ছেন এতো কাস্টমার সামলাতে। ওকে বারবার বলছেন একটু অপেক্ষা করতে। হয়তো ৪-৫ মিনিট হলো অপেক্ষা করা। এই ধৈর্য্যহারা বান্দা হুট করেই দোকানে স্তুপ করে রাখা বইপত্র খাতা যা ছিলো সব মাটিতে ফেলে দিয়েছে। ফেলে দিয়েই ভোঁ দৌড়। আমি তো বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমাকেই সবকিছু আবার গুছিয়ে দিয়ে আসতে হলো।

–দেখেছিস কি সাংঘাতিক মেয়ে। এ কেমন স্বভাব হয়েছে তোর মিষ্টি?

–তুমি বলো ভাবি, ওই ব্যাটা সবার কথা শুনতে পারছে আর আমার বেলায় অপেক্ষা। ও কোন মালায়লাম হিরো যে আমি ওর জন্য অপেক্ষা করব?

–দেখেছো মারিয়াবু এই বস্তুকে সঙ্গে নিয়ে চলতে আমার যে কত জ্বালা, কিভাবে বুঝাবো?

ইফাদ একদৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে রূপসীকে। এই মানুষগুলোর সাথে কতটা সুন্দর ভাবে মিশে গেছে সে। যেন নিজের পরিবার। কত আপন তারা। এখন তো ইফাদের নিজেকেই মেহমান মনে হচ্ছে। তবে তার ভালোই লাগছে রূপসীকে এতোটা সহজ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে দেখে।

কোচিং শেষে মিষ্টি তার ফুফুর বাসায় চলে যায়। এই শহরে তারা নতুন এসেছেন। সম্ভবত কিছু সমস্যা হয়েছে। ওয়াহিদ ভাইয়া ব্যস্ত আর ওয়াহাব ভাইয়াও এখন এখানে নেই যার জন্য মিষ্টিকেই যেতে হয়েছে। তাই রূপসীকে একাই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। রাস্তার এক ধার ধরে হেঁটে যাচ্ছে সে। খেয়ালে তার ম্যাজিস্ট্রেট স্যার। আজ দুটো বছর পর মানুষটাকে দেখলো সে। তার কন্ঠস্বর শুনলো। রূপসীর কান্না পেয়ে গিয়েছিল। বহু কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছিল। ভাবতে ভাবতেই বেখেয়ালে হাঁটতে থাকে সে। আচমকা একটি গাড়ি এসে তার সামনে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে পড়ে। রূপসী ভয় পেয়ে দু পা পিছিয়ে যায়। গাড়ি থেকে নেমে আসা ব্যক্তিটিকে দেখেই ভয়টা কেটে গেলেও অভিমানটা এক বিন্দুও কমে না। মানুষটিকে পাশ কেটে এগিয়ে যায় সে যেন তাকে চেনেই না। পিছন থেকে ডেকে ওঠে ইফাদ,

–দাঁড়াও, রূপসী।

রূপসী দাঁড়িয়ে পড়ে। ইফাদ সামনে এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,

–চলো বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি তোমায়।

–নো থ্যাংকস। আমি চলে যেতে পারব।

–তুমি একা আছো। ওহিও নেই তোমার সঙ্গে। তাই তোমায় পৌঁছে দিতে চাচ্ছি।

রূপসী সরাসরি ইফাদের চোখের দিকে তাকায়। যদিও তার ভেতরটা কেঁপে ওঠে ওই চোখের দিকে তাকিয়েই কিন্তু নিজেকে সামলে শান্তস্বরে জবাব দেয়,

–দু বছরে বহুবার একা একাই যাওয়া আসা করেছি। পৌঁছে দেওয়ার জন্য কেউ আসেনি।

–কিন্তু এখন তো কেউ এসেছে, তাই না।

–সরি! একজন অচেনা অজানা অপরিচিত ব্যক্তির সাথে যেতে আমি এক বিন্দুও আগ্রহী নই।

রূপসী আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে হেঁটে চলে যেতে থাকে। সাথে সাথে পেছন থেকে রূপসীর হাত ধরে হেঁচকা টানে সরিয়ে আনে ইফাদ। এক টানে তাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে শক্ত করে। এদিকটা বেশ নির্জন। মানুষজনের খুব একটা আনাগোনা নেই। তাই ইফাদের এহেন কাজ করতে বিন্দু মাত্র সংকোচ হলো না। তবে ইফাদের এমন আচরণে রূপসী যথেষ্ট ভড়কে গেলো। এতোটা কাছে ইফাদের উপস্থিতি যেন সহ্য করতে পারছে না সে। দম বন্ধ লাগছে। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ইফাদের দিকে। ইফাদ চোখ মুখ শক্ত করে রেখেছে। দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করে,

–সমস্যা কি তোমার? আমার সাথে এমন ব্যবহারের কারণ কি? কি করেছি আমি যে তুমি আমাকে চিনেও না চিনার ভান করছো?

ইফাদের অগ্নি দৃষ্টি রূপসীকে ভীত করে তুললেও সে তা বাইরে প্রকাশ পেতে দেয় না। সে ও পাল্টা রাগ দেখিয়ে বলে,

–ছাড়ুন আমাকে।

ইফাদ আরো শক্ত ভাবে চেপে ধরে বলে,

–আন্সার মি ড্যাম ইট! এভাবে তুমি আমার সাথে যা খুশি তা ব্যবহার করতে পারো না। আমাকে অচেনা বানিয়ে দেওয়ার কারণ কি?

রূপসী এবার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় ইফাদকে। ইফাদ ছিটকে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। রূপসী কন্ঠে রাগ, অভিমান সবটা মিশিয়ে ক্ষীণ স্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

–অচেনা আমি আপনাকে বানিয়েছি? নাকি আপনি আমাকে বানিয়েছেন? খন্দকার ইফাদ আহমেদ! খুব দায়িত্ব দেখিয়ে এখানে নিয়ে এসেছিলেন আপনি আমাকে। অথচ এই দু বছরে দু মিনিটের জন্যও কোনো খোঁজ নেননি আপনি আমার। আরেহহ নিজ থেকে নাই বা খোঁজ নিলেন। কতশত বার আমি আপনাকে কল, ম্যাসেজ করেছি তার কোনো হিসেব আছে আপনার কাছে? একটাও জবাব দেননি আপনি। আননোন নাম্বার থেকে ফোন দিলে রিসিভ করে যখনই বুঝেছেন আমি ফোন দিয়েছি সাথে সাথে “ব্যস্ত আছি” বলে রেখে দিয়েছেন। একবারও দেখতেও আসেননি আমি কেমন আছি, কি অবস্থায় আছি। যেন একজনের ওপর আমার দায়িত্ব দিয়েই খালাস। নিজের ঘাড় থেকে বোঝা নামিয়ে ফেলেছেন। ব্যস! আর কি?

এটুকু বলে রূপসী থামে। হুট করেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে সে। এতোদিনের জমানো সমস্ত রাগ অভিমান উপড়ে দিয়েছে আজ সে ইফাদের ওপর। ইফাদ নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে রূপসীর দিকে। ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে আছে তার। অভিমানী রূপসীর অভিমানে ভরা প্রতিটি বাক্যের উচ্চারণ তার অন্তরে শীতলতার সৃষ্টি করছে। রূপসী এগিয়ে গিয়ে ইফাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,

–এই দু বছরে আপনার আমাকে একবারও মনে পড়েনি তাই না? নাকি মনেই রাখেননি আমাকে?

ভিতর কাঁপিয়ে কান্না আসছে তার। তবে ইফাদের সামনে কাঁদতে চায়না সে। তাই আর কিছু না বলে ধীরে ধীরে এক পা দু পা করে পিছিয়ে যায় অতঃপর পেছনে ফিরে ছুট লাগায় সে। ইফাদ সেদিকে দৃষ্টি রেখে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলে,
“এই দুই বছরে তোমাকে মনে করার কোনো প্রয়োজনই পড়েনি আমার। কারণ আমার মনের প্রতিটি কোনায় কোনায়, মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনে, রক্তের শিরা উপশিরায়, শুধু তুমি আর তুমিই ছিলে। আমার সবটা জুড়ে যে শুধুই তোমার বিচরণ ছিল, রূপসী কন্যা।”

চলবে……

#অপরিচিত_প্রিয়জন
#পর্ব_১৫
#এম_এ_নিশী

শেষ বিকেলের গোধূলি রাঙা আকাশের দেখা মিলছে না আজ। ধূসর মেঘেদের আনাগোনা আকাশটাকে বিমর্ষ করে রেখেছে। সেই সাথে বিমর্ষ হয়ে রয়েছে রূপসীর মন ও। ইফাদকে ওতো গুলো কথা শুনিয়ে দিয়ে এসে এখন নিজেই যেন শান্তিতে বসতে পারছে না। ঘরে ফিরেই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। বেখেয়ালে রাস্তায় চোখ পড়তেই দেখতে পেল, গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইফাদ। দৃষ্টি তার বারান্দার দিকেই। রূপসী তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের। দু’জনেই স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেও কোনো প্রতিক্রিয়া নেই দুজনের কারোরই। কয়েক সেকেন্ড দৃষ্টি বিনিময় শেষে ইফাদ মৃদু হেসে গাড়িতে উঠে চলে যায়। রূপসী তখনও একই ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে। তখন রূপসী ওভাবে ছুটে চলে আসায় ইফাদ এসেছিলো দেখতে সে ঠিকঠাক বাসায় পৌঁছালো কি না। দেখা হয়ে যাওয়ায় সে ও চলে যায়। রূপসী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিষন্ন আকাশে দৃষ্টি মেলে রাখে।
_____________

সকাল ৮ টা। ড্রয়িং রুমে বসে ইফাদ কফি খাচ্ছে। মনোযোগ ফোনে। হুট করে কলিং বেল বেজে ওঠায় উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয় সে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখেই যেন ইফাদের চক্ষু ছানাবড়া। বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করে,

–রূপসী! তুমি এখানে?

–সরে দাঁড়ান প্লিজ। ভেতরে যাব।

ইফাদ সরে দাঁড়াতেই রূপসী গটগট করে ভেতরে চলে গেল। ইফাদ হা করে ভ্যাবলার মতো চেয়ে রইল।

রূপসী রান্নাঘরে ঢুকে আফিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,

–মামনি কি করছো?

–আরে! রূপসী, তুই কখন এলি?

–এইতো এখনি। এই নাও ব্যাগটা নাও। মারিয়াবু কি যেন রান্না করে পাঠিয়েছে তোমাদের জন্য। সেসবই নিয়ে এলাম।

–তুই একা এলি? ওহি আসেনি?

–ও ওর এক ফুফুর বাড়ি গিয়েছিল। ওর ফুফু জোর করে রেখে দিয়েছে ওকে রাতের বেলা। এখনো ফেরেনি তো।

ইফাদের ছোটো চাচী এসে ঢুকতেই রূপসীকে দেখে জিজ্ঞেস করে,

–রূপসী তুই এসেছিস তাহলে?

–হ্যা গো ছোটো মা কেমন আছো তুমি?

–আমাদের খেয়াল খবর আর কে রাখে বল। সকলেই তো নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত।

–ও বাবা গো! ছোটো মায়ের কি অভিমান!

বলেই রূপসী তার ছোটো মায়ের গাল দুটো টেনে দেয়। ঠিক তখনই সেখানে ইফাদের আগমণ ঘটে। এদের কান্ডকারখানা ইফাদের কিছু বুঝে আসছে না। সে আফিয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

–মা, তোমরা ওকে চেনো?

ইফাদের ছোটোচাচী জবাব দেন,

–শোনো ছেলের কথা। ও তো আমাদের ঘরের মেয়ে হয়ে গিয়েছে রে। এতো মিষ্টি একটা মেয়ে। কত সহজেই সবাইকে আপন করে নিয়েছে।

এবার আফিয়া বলে,

–তুই চলে যাওয়ার পর ও তো প্রায় মারিয়ার সাথে আসতো আমাদের বাড়িতে। এলেই জনে জনে খোঁজ নেওয়া চায় তার, কার কি লাগবে সে সব দেখে বেড়ানো, কারো কোনো সমস্যা হলো তা লাফিয়ে গিয়ে সমাধান করে দেওয়া, কারো মন খারাপ হলে তার মন ভালো না করা পর্যন্ত তার পিছু না ছাড়া, সব জেনো ইনারই দায়িত্ব। সোনা মেয়ে আমার।

বলেই আফিয়া রূপসীর কপালে চুমু খেলেন। ইফাদের ছোট চাচী বলেন,

–মেয়ে নয় ভাবি মেয়ে নয়, মা আমাদের। বুড়ি মা একটা!

এদের কথপোকথন শুনে ইফাদ আহম্মক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পরক্ষনেই বলে উঠে,

–দুটো বছর বাড়িতে ছিলাম না এরই মধ্যে দেখি গল্প অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে।

আফিয়া জবাব দেন,

–তো কি ভেবেছিস, তোর জন্য আটকে থাকবে সব?

ফট করে রূপসী বলে ওঠে,

–কেন গো মামনি, দু বছর তোমার ছেলে বাড়িতে ছিলো না কেন?

–আর বলিস না, ওর বাবা এক মন্ত্রীর মেয়ের সাথে ওর বিয়ে দেওয়ার জন্য খুব তোড়জোড় করছিলেন।

একথা শুনে রূপসীর বুকটা ধ্বক করে ওঠে। আফিয়া পুনরায় বলে উঠেন,

–সে নিয়ে বাবা ছেলের মধ্যে এমন মনোমালিন্য হলো যে ছেলে রাগ করে আর ফিরেই না বাড়ি।

–তবে এখন যে ফিরে এলো?

–সাধে ফিরেছে। ওর বাবাই তো আদর সোহাগ করে ফিরিয়ে নিয়ে এলো।

রূপসীর মনটা হুট করেই খারাপ হয়ে যায়। সে ভেবেছিল ইফাদের চলে যাওয়া কিংবা এতোদিনে না ফেরার কারণটা যাই হয়ে থাক তবে তার ফিরে আসাটা হয়তো রূপসীর জন্যই ছিলো৷ একটু বেশিই ভাবে সে। এতোটা ভাবা তার উচিত নয়। মন খারাপ নিয়েই সে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। ইফাদ রূপসীকে লক্ষ্য করে মাথা চুলকিয়ে বলে,

–নাও ঠ্যালা! মেয়ে আবার এক লাইন বেশি বুঝে না বসে থাকে। আমার ফিরে আসা কেবল এবং কেবলই তার জন্যই যে ছিলো।

ইফাদের দাদী নূরজাহান বেগমের ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এগিয়ে যায় রূপসী। ঘরের দরজার কাছে এসেই থমকে যায় সে। ভেতরে ইফাদের ছোটো চাচা ইদরিস নূরজাহান বেগমের কাছে বসে আছেন। রূপসী আর ভেতরে না গিয়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই দেখতে পায় ইদরিস নূরজাহান বেগমকে কিছু একটা খাওয়ালেন। সম্ভবত কোনো ওষুধ। কিন্তু রূপসীর জানামতে এই সময়ে নূরজাহান বেগমের কোনো ওষুধ খাওয়ার নেই। তবে? যেহেতু নিজের ছেলেই খাইয়েছে রূপসী তাই আর সেটা নিয়ে বেশি মাথা ঘামায় না। মাথার পিছনে টোকা মারা অনুভব করতেই পেছনে ফিরে দেখতে পায় মারিয়ার ছোটো বোন মুনমুন। রূপসীর চেয়ে প্রায় ২ বছরের বড় সে। রূপসীকে তাকাতে দেখে ফিসফিস করে বলে,

–রূপু বেবি, ঘরে আয়।

রূপসী মুনমুনের পেছন পেছন তার ঘরে যেতেই সে এদিক ওদিক সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে রূপসীকে প্রশ্ন করে,

–কিরে কোনো আপডেট আছে নাকি?

–না মুনবু। আপাতত নেই।

–নেইই! সত্যি।

–এতোদিন ধরে তোমাদের দুজনের প্রেমকাহিনীর বার্তাবাহক হয়ে কাজ করছি কখনো মিথ্যে বলতে দেখেছো?

–ধূর! ছেলেটা এমন কেন বলতো? এতো অপেক্ষা কেন করায়?

–এতো কাহিনী না করে বিয়ে করে ফেললেই তো পারো।

–বলদটাকে এতো যে বলছি প্রস্তাব পাঠাতে তার তো কোনো হেলদোলই নেই।

–হি হি হি!

–হাসছিস? তোর মজা লাগছে?

রূপসী এগিয়ে এসে মুনমুনের কানেকানে ফিসফিস করে বলে,

–হয়তো আজ কোনো ভালো আপডেট পেতে পারো মুনবু। তৈরি থেকো।

রূপসী দুলে দুলে বেরিয়ে চলে গেলো। মুনমুন লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেললো।

______________

ইফাদদের বাড়ি থেকে এসে সারাটাদিন থম মেরেই বসে ছিলো রূপসী। তার ভালো লাগছে না কিছুই। কাল যখন ইফাদ জানলোই সে অভিমান করেছে তবে একবারও কেন এলো না অভিমান ভাঙাতে। আজকেও আসার সময় এমন একটা ভান করে ছিলো যেন রূপসীকে চেনেই না। মন খারাপ থাকলে সে ছাদে গিয়ে দাঁড়ায়। আজও দাঁড়িয়ে আছে। বেশ সুন্দর বাতাস বইছে চারিদিকে। মন ভালো করে দেওয়ার মতো। সূর্য ডুবে যাওয়ার পথে। পরিবেশ যেন আরো মোহনীয় হয়ে উঠেছে। এমন পরিবেশে রূপসীর মন ভালো হওয়ার কথা তবে তার মনটা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। চুপচাপ এক কোণায় অন্যমনষ্ক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে বুঝতেই পারলো না কখন তার পাশে ওয়াহাব এসে দাঁড়িয়েছে।

–কি ব্যপার সুইট গার্ল এর আজ মন খারাপ মনে হচ্ছে?

রূপসী চমকে উঠে। ওয়াহাবকে দেখে মলিন হাসে। কিছু বলে না। তাই ওয়াহাবই আবার বলে উঠে,

–কি হয়েছে? বলো আমাকে।

–কখন এলেন ভাইয়া।

–এইতো একটু আগেই।

–আজকে কি কোনো দায়িত্ব আছে আমার?

ওয়াহাব হেসে দেয়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নেয় কেউ আছে কি না। কারো উপস্থিতি নেই দেখে নীচুস্বরে বলে,

–পৌঁছে দিতে হবে।

রূপসী হাত বাড়িয়ে বলে,

–দেন।

ওয়াহাব পকেট থেকে একটা খাম বের করে রূপসীর হাতে দেয়। রূপসী সেটা নিতেই ওয়াহাব বলে,

–আচ্ছা আমি এখন যাই।

ওয়াহাব চলে যেতেই আচমকা রূপসীর হাতে টান পড়তেই সে ভয় পেয়ে যায়। ফিরে দেখে রক্তচক্ষু নিয়ে ইফাদ দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতের শক্ত মুঠোর মধ্যে রূপসীর নরম তুলতুলে হাত পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে যেন। রূপসী ব্যথায় কুঁকিয়ে ওঠে। ইফাদ সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রূপসীর হাত থেকে ওয়াহাবের দেওয়া খামটি কেড়ে নেয়। তীক্ষ্ণ স্বরে চেঁচিয়ে বলে,

–লজ্জা করে না এভাবে গোপন প্রেমলীলা চালাতে। যেই আপু তোমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়েছে নিজের বোনের মতো দেখছে তারই দেবরের সাথে এসব! কিভাবে পারলে তুমি রূপসী? বলো? এতো নিচে কিভাবে নামলে?

শেষ লাইনটা একটু জোরেই বলে ফেলে ইফাদ। রূপসী কেঁপে ওঠে। তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তার ম্যাজিস্ট্রেট স্যার তার সম্পর্কে এতো জঘন্য ধারণা করতে পারে সে কল্পনাও করেনি। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোতেই চাচ্ছে না।

সিঁড়ির নিচে ছিলো ওয়াহাব। একটা কাজ করছিল। ইফাদের চিৎকার তার কানে আসতেই সে দ্রুত ছাদে উঠে আসে। কারো পায়ের আওয়াজ পেতেই ইফাদ রূপসীকে ছেড়ে দেয়। ওয়াহাব এসে জিজ্ঞেস করে,

–কি হয়েছে ইফাদ ভাইয়া?

রূপসী ওয়াহাবের কাছে এসে বললো,

–ভাইয়া আপনার গাড়ির চাবিটা দিন তো।

–কেন?

–প্রশ্ন করলে আপনার ভান্ডা ফাটিয়ে দিব। চাবিটা দিন।

রূপসীর রাগী রূপ দেখে ওয়াহাব তাড়াহুড়ো করে চাবি বের করে রূপসীর হাতে দিয়ে দিলো। চাবি নিয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে যায় রূপসী। ওয়াহাব কিছু বুঝতে না পেরে মাথা চুলকাতে চুলকাতে নেমে গেলো ছাদ থেকে। ইফাদ হাতের খামটা খুলে দেখলো তাতে তিন জোড়া কানের দুল আর দু জোড়া পায়েল। আর একটা ছোট্ট চিরকুট। তাতে লেখা, “আমার মুনমুন পাখি! সব তোমারই জন্য।” এবার ইফাদের কাছে সবটা পরিষ্কার হয়ে যায়। ওয়াহাবের সাথে মুনমুনের গোপন প্রেমলীলা চলছে যা সম্পর্কে ইফাদ অবগত ছিলো না আর এদের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে রূপসী। ইফাদ বুঝতে পারে কি বড় ভুলটাই না করে ফেলেছে সে। ক্ষ্যাপা বাঘিনী গাড়ি নিয়ে কোথায় ছুটলেন আল্লাহ জানে। ভাবতে ভাবতে ইফাদও ছুট লাগায়।

সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। বাইরে বিপদেরা ওঁত পেতে রয়েছে সবসময়। আর এসময়েই রূপসী গাড়ি নিয়ে বেরোচ্ছে। ইফাদ ছুটে যেতে যেতেই রূপসী গাড়ি ছুটিয়ে নিয়ে চলে গেলো। মনে মনে ভাবছে ইফাদ, একে গাড়ি চালানো শেখালোটা কে? ভাবনাকে বেশিদূর গড়াতে না দিয়ে ইফাদও নিজের গাড়ি নিয়ে ছুটলো রূপসীর পেছনে পেছনে। রূপসীর গাড়ির স্পিড দেখে ইফাদের ভয় বেড়ে যায়। রাগের মাথায় না জানি মেয়েটা কি করে বসে। ইফাদও যথাসম্ভব দ্রুত গাড়ি চালিয়ে রূপসীর সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছে তবে কিছুতেই ছুঁতে পারছে না। নিজে নিজেই বলতে থাকে সে, “একবার গাড়ি থামাও আমার রূপসী কন্যা , ব্যস একবার! আর তোমাকে কষ্ট দেব না। তোমার সব অভিমান দূর করে দিব। শুধু একটা সুযোগ দাও প্লিজ। শুধু একবার গাড়িটা থামাও।”

হঠাৎ বিকট আওয়াজে থেমে যায় রূপসীর গাড়িটি।রাস্তার ধারে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইফাদের আত্মা যেন খাঁচাছাড়া হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। সে দ্রুত বেগে গাড়ি থেকে নেমে এসে রূপসীর গাড়ির কাছে যায়। দরজা খুলে রূপসীকে নামিয়ে নিয়ে আসে।
কালবিলম্ব না করে শক্ত করে জাপটে ধরে তাকে। মিশিয়ে নেয় একদম বুকের সাথে। আরেকটু হলেই সে হারিয়ে ফেলছিল তার এক মূল্যবান সম্পদ। ইফাদের এমন ব্যবহারে রূপসী বিস্ময়ে হা হয়ে যায়। ইফাদ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। ভাবতেই পারছে না রূপসী। ইফাদের ধরাস ধরাস করে জোরেজোরে লাফানো হৃদপিণ্ডের আওয়াজে তার বেশ অসুবিধাই হচ্ছে। কিন্তু ছোটার উপায় নেই। মানুষটা তাকে শক্ত বাঁধনে আবদ্ধ করে রেখেছে যেন একটু আলগা হলেই সে আবার হারিয়ে যাবে!

চলবে……