অপরিচিত প্রিয়জন পর্ব-৪+৫

0
302

#অপরিচিত_প্রিয়জন
#পর্ব_৪
#এম_এ_নিশী

ইফাদের অট্টহাসি দেখে সকলের বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকা তার নজরে আসতেই সে থেমে যায়। মুহূর্তেই নিজের মুখে সেই চেনা পরিচিত গাম্ভীর্য টেনে এনে রূপসীর দিকে তাকিয়ে বলে,

–ঠিকাছে। চলো। আমিই তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবো তোমার বাড়িতে। সাদমান সাহেব, মেয়েটির ঠিকানা সংগ্রহ করেছেন?

–জি স্যার। এখুনি দিচ্ছি।

সাদমান রূপসীর ঠিকানা ইফাদকে দিতেই সে বলে,

–আরো একটু কষ্ট করে এদিক টা ম্যানেজ করুন সাদমান সাহেব। ইনশাআল্লাহ কাল সকালেই আমি উপস্থিত থাকব এখানে।

রূপসী খুশিতে হাততালি দেয়। ইফাদ সেদিকে এক নজর তাকিয়ে হনহন করে হাঁটা দেয়। সে ও পিছু পিছু হাঁটতে থাকে। গাড়ির কাছে আসতেই রূপসীকে গাড়িতে উঠতে বলে নিজে ড্রাইভিং সিটের দিকে এগিয়ে যায়। এদিকে রূপসী গাড়িটিকে মনোযোগ সহকারে দেখছে। কোনদিকে, কিভাবে ঢুকবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না সে। গাড়ির দরজার হাতল ধরে কিছুক্ষণ ঠুকাঠোকি করতে থাকে। তা দেখে ইফাদ ভ্রু কুঁচকে বলে,

–এমন কুটুরকুটুর করছো কেন? উঠে বসো।

–কোনদিক দিয়া ঢুকমু? উপর দিয়া নাকি তলা দিয়া?

রূপসীর কথা শুনে ইফাদ তাজ্জব বনে যায়। পরক্ষণেই ভাবে মেয়েটা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হওয়ায় হয়তো এই গাড়ি সম্পর্কে খুব একটা আইডিয়া নেই। তাই সে নিজেই এগিয়ে এসে দরজা খুলে দিয়ে রূপসীকে বসিয়ে দেয়। রূপসী অবাক দৃষ্টিতে গাড়ির ভিতরটা পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। সে এরকম গাড়ি একবার দেখেছিল যখন তাদের স্কুলের একটা অনুষ্ঠানে উপজেলার এক অফিসার এসেছিলেন তখন। কিন্তু তাকে সে গাড়ি থেকে নামতেও দেখেনি উঠতেও দেখেনি তাই এসব গাড়ি থেকে উঠানামা করার ব্যপারে কোনো আইডিয়া তার নেই। তবে এসব গাড়ির বাইরের চেয়ে ভিতরটা যে আরো সুন্দর হয় তা সে ভাবতে পারেনি। হা করে দেখছে সবকিছু আর ভাবছে, শুধু উনার গাড়িই এতো সুন্দর নাকি সবার গাড়িই এমন হয়? রূপসীর ভাবনার ঘোর কাটলো যখন ইফাদকে তার ওপর ঝুঁকে আসতে দেখে। আচমকা ইফাদের এমন আচরণে রূপসী চমকে যায়। ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। ঠুকঠাস আওয়াজ শুনে এক চোখ হালকা খুলে তাকিয়ে দেখে ইফাদ কিছু একটা লাগাচ্ছে। লাগানো হলেই সে সরে যায়। ভালোভাবে চোখ খুলে দেখে একটা লম্বা ফিতা কোনাকুনি ভাবে বাঁধা আছে তার শরীরে। সে বুঝতে পারছে না এটা কি জিনিস? সে ভাবলো হয়তো এটা দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাই কৌতুহল নিয়ে সেটা টানাটানি শুরু করে দেয়। ইফাদ সামনের দিকে মনোযোগ রেখেই গাড়ি চালাচ্ছিল। রূপসীর অতিরিক্ত নড়াচড়া দেখে পাশ ফিরে তাকাতেই বিরক্তিতে ভরে ওঠে তার মুখ। তীক্ষ্ণ কন্ঠে ধমকে উঠে বলে,

–এই মেয়ে এটা টানাটানি করছো কেন?

–এইডা কি আগে কন? আমারে বাইন্ধা রাখছেন ক্যান? আপনে আবার আমারে পাচার কইরা দিবেন না তো? আপনে তো ম্যাজিস্ট্রেট। আপনারে তো ভালো মানুষ ভাবছিলাম। আপনেও কি ওগুলান খচ্চর বেডাগোর মতোন? আপনে কি ভালা না? ভালা মাইনষে কি এমন কইরা বাইন্ধা রাখে? আপনি কি করবার চান আমারে কন? আমারে নামাইয়া দেন আমি যামুনা আপনের লগে।

হুট করেই ব্রেক কষে ইফাদ গাড়ি থামায়। রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় রূপসীর দিকে। রূপসী ভড়কে যায়। ইফাদ নিজের সিট বেল্ট খুলে ফেলে। রূপসী তা লক্ষ্য করে বুঝতে পারে এটা হয়তো গাড়ির কোনো প্রয়োজনীয় জিনিস। যা গাড়িতে উঠলে সবাইকেই এভাবে বাঁধতে হয়। কিন্তু তার বুঝতে খানিকটা দেরি হয়ে গেলো। ততক্ষণে ইফাদ আবার তার দিকে ঝুঁকে এলো। ভয়ে রূপসীর মুখটা আরো চুপসে গেলো। জীবনে প্রথম কোনো পুরুষকে সে এতোটা কাছাকাছি অনুভব করছে। তার ভিতরটা অস্থির অস্থির লাগছে। শ্বাস আটকে বসে থাকে। বিন্দু পরিমাণ নড়নচড়ন নেই। যেন নড়লেই মানুষটা তাকে কি না কি করে ফেলে। ইফাদের চোখে চোখ রাখতেই তার মনে হলো সে বুঝি এবার মারাই যাবে। ইফাদ আস্তে করে রূপসীর সিট বেল্ট খুলে দিয়ে ঠাস করে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। তারপর ঝড়ের গতিতে নিজের সিটে ফিরে বসে দৃষ্টি সামনে রেখে বলে,

–যাও নেমে পড়ো।

রূপসী গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে থাকে। ইফাদের দৃষ্টি তখনো সম্মুখেই স্থির। ধীর কন্ঠে বলে,

–কি হলো? তুমি না বললে আমার সাথে যাবে না। তাহলে বসে আছো কেন? যাও।

রূপসী যেন বিপদেই পড়ে গেলো। এখন সে কি করবে? সে যে ইফাদকে বেশ রাগিয়ে দিয়েছে তা সে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু এই মুহুর্তে তার কি করণীয় তা ঠাওর করে উঠতে পারছে না সে। ইফাদ এবার রূপসীর দিকে ঘুরে তাকিয়ে কঠিনস্বরে ধমক দিয়ে বলে,

–কি সমস্যা তোমার? নামতে বলেছি না তোমাকে? নামোওও।

ইফাদের ধমকে রূপসী কেঁপে ওঠে। ধীর পায়ে নেমে পড়ে গাড়ি থেকে। ইফাদ ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ছুটে চলে যায় গাড়ি নিয়ে। রূপসী করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। এখন সে কি করবে? কোথায় যাবে? এই শহর তো তার অচেনা। এখানে সে কাওকে চেনেও না। এবার সে কিভাবে বাড়ি ফিরবে? ওদিকে কোয়ার্টার থেকেও বেশ খানিকটা দূরেই এসে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে তার। নইলে সেখানে ফিরে গিয়েও তো পুলিশগুলোর সাহায্য নেওয়া যেতো। রূপসী এদিকওদিক এলোমেলো দৃষ্টিতে তাকায়। একটু দূরেই দেখতে পায় তিনটে ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে। আর বাজে নজরে তার দিকে তাকাচ্ছে। রূপসীর ভয় হতে থাকে। আবার কোনো বাজে লোকের পাল্লায় না পড়ে যায় এই ভেবে সে যেদিকে ইফাদের গাড়ি গিয়েছে সেদিকে ছুট লাগায়। প্রথমে বেশ জোরে জোরে হাঁটছিলো কিন্তু যখনই পেছনে ফিরে ছেলেগুলোকেও তার পেছন পেছন আসতে দেখে সে এবার জোরেশোরে দৌড়াতে থাকে। ছুটতে ছুটতে ধাম করে বারি খেয়ে রাস্তায় উল্টে পড়ে গেলো।

–বাবাগো! হাড্ডিগুলান বুঝি ভাইঙ্গাই গেলো। উফফ!

রূপসী দু হাত ঝেড়ে ময়লা পরিষ্কার করতে করতে বারি খাওয়ার উৎস খুঁজতে সামনে তাকায়। খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকা ইফাদকে দেখে সে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে ওভাবেই। ইফাদ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রূপসীর দিকে। হঠাৎ করে মুখের সামনে হাত দেখতে পেয়ে মুখ তুলে তাকায় রূপসী। দেখতে পায় ইফাদ ওর দিকে হাত বাড়িয়ে আছে। কিন্তু কেন বাড়িয়ে আছে বুঝতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। ইফাদ কিছু না বলে নিজেই রূপসীর হাতটা ধরে হেঁচকা টানে উঠে দাঁড় করায়। রূপসী উঠে দাঁড়িয়ে নিজের জামা কাপড় ঝাড়তে থাকে। ইফাদ শান্ত ভাবেই চোখ তুলে তাকায় রূপসীর পিছনে থাকা ছেলে তিনটের দিকে। তার ওই শান্ত দৃষ্টিতেও যেন ভয়ংকর কিছু প্রতিফলিত হচ্ছিল যা ছেলে তিনটির অন্তর আত্মা কাঁপিয়ে দিতে সক্ষম হয়। তারা উল্টো ফিরে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। ইফাদ এবার রূপসীর দিকে তাকিয়ে বলে,

–তো কি সিদ্ধান্ত নিলে? একা একাই ফিরবে? নাকি আমার সাথে যাবে?

রূপসী মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলে,

–আপনের লগেই যামু।

ইফাদ কিছু না বলে গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়ায়। রূপসী মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে ইফাদ এক হাতে গাড়ির দরজার হাতল ধরে আরেক হাত পকেটে গুঁজে দূরে দৃষ্টি রেখে দাঁড়িয়ে আছে। তার এই দাঁড়িয়ে থাকার তেজও যেন ভস্ম করে দিতে চায় সবকিছু। রূপসী গুটিগুটি পায়ে হেটে গিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে।

__________

গাড়ি যেন ঝড়ের গতিতে ছুটছে। ইফাদ চাচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব মেয়েটিকে পৌঁছে দিতে। ফিরতে দেরি হলে তার কাজে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে এতো দ্রুত গাড়ি ছোটায় রূপসীর ভয় হয়। কিন্তু কিছু বলতে পারে না। মাঝে মাঝে এবড়োখেবড়ো রাস্তায় গাড়ির ঝাঁকুনিতে ভয়ে সে এটা ওটা চেপে ধরছে। ইফাদ সেটা লক্ষ্য করে। গাড়ির গতি কমিয়ে দেয়। আড়চোখে একবার তাকিয়ে থমথমে গলায় প্রশ্ন করে,

–নাম কী তোমার?

অনেকটা সময় একসাথে আছে। অথচ মেয়েটার নামটাই জানা হয়নি তার। রূপসী ঘুরে তাকায়। তার মনে পড়ে এই মানুষটাকে তো সে তার নাম বলেনি। তাই তার তো না জানারি কথা। সে মুখ ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলে,

–রূপসী।

–পড়াশোনা করো?

–হ।

–কোন ক্লাস?

–মেট্রিক দিছি এইবার।

–বাড়িতে কে কে আছেন?

–আব্বা, আম্মা আর মৌটুসী।

–মৌটুসী কি ছোট বোন?

–হ।

পুনরায় দুজনের নিরবতায় ছেয়ে যায় চারপাশ। ইফাদ বুঝতে পারে রূপসী তাকে ভয় পাচ্ছে। নইলে ছুটন্ত রেলগাড়ি এতোটাও স্থবির হয়ে থাকার কথা নয়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে চললো। ইফাদ এখনো গ্রামের আশেপাশেও পৌঁছাতে পারলো না। তাই বারবার সময় দেখছে আর ভ্রু কুঁচকে যাচ্ছে তার। পথিমধ্যে গাড়িটা খারাপ হয়ে যাওয়ায় বেশ অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তাই এতো দেরি হয়ে গেলো। হুট করেই রূপসী চিৎকার করে গাড়ি থামাতে বলে। ইফাদ দ্রুত ব্রেক কষে। রূপসীর দিকে তাকিয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

–কি হয়েছে? গাড়ি থামাতে বললে কেন? কোনো সমস্যা?

–ম্যাজিস্ট্রেট স্যার, ওই দেহেন কত্তো আলো। আমি জীবনেও এত্তো আলো দেহিনাই। আমারে বাইর করেন না আমি দেখমু।

–এখানে দেরি করলে তোমার গ্রামে পৌঁছাতে আরো দেরি হয়ে যাবে কিন্তু। অলরেডি সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।

–না না না আমি দেখমু দেখমু দেখমু।

–ওকেএএ ওকে। জাস্ট ৫ মিনিট দেখবে। তবে এখান থেকে নয়। সামনে একটা ফ্লাইওভার রয়েছে। ওখান থেকে দেখতে বেশ ভালো লাগবে।

–আইচ্ছা।

ইফাদ ফ্লাইওভারে উঠে এক কোনায় গাড়ি পার্ক করে নেমে এসে রূপসীকে নামায়। তীরের বেগে লাফিয়ে নেমে পড়ে সে। ছুটে গিয়ে ফুটপাতের ওপর দাঁড়িয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখতে থাকে রাতের শহর৷ রাতের শহর যে এতো সুন্দর তা কখনো ধারণা করেনি রূপসী। চারপাশে উঁচু উঁচু দালান। সেসব দালানে কত রং বেরং এর আলোর ছড়াছড়ি। রাতের কালো আকাশের নিচে এই আলোর শহর রূপসীকে অন্য ভূবনে হারিয়ে নিয়ে গেলো। সে যেন চোখ ফেরাতে পারছে না। একবার লাফিয়ে উঠে বলে,

–আল্লাহ রে! এত্তো সুন্দওওওওওওররররর!

ইফাদ রূপসীর ছুটে যাওয়া দেখে দেখে মনে মনে বলে, সবসময় বাঁদরের মতো লাফিয়ে বেড়াবে। এই মেয়ে তো বাঁদরকেও হার মানাবে মনে হচ্ছে। ভাবতে ভাবতে গাড়ি লক করে রূপসীর পাশে এসে দাঁড়ায়। হেলান দিয়ে দু হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ রূপসীর সৌন্দর্য উপভোগ করা দেখে। মেয়েটি এমন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে যেন সৌরজগতের কোনো গ্রহ তার সামনে নেমে এসেছে। ইফাদের তা-ই ধারণা হলো। অবশ্য এসব রাতের শহর বা তার সৌন্দর্য কোনোটাই ওর ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। সে বরাবরই কাটখোট্টা টাইপ মানুষ। ছোটোবেলা থেকেই সবসময় পড়াশোনায় ডুবে থাকার জন্য ‘আঁতেল’ শব্দটি তার জন্য বরাদ্দ হয়ে গিয়েছিল। বড় হওয়ার পরও সে জগতের ধরাবাঁধা নিয়মনীতির মধ্যেই নিজেকে বেঁধে ফেলে। বাইরের প্রকৃতি কখনোই তাকে টানে নি। এমনকি টানেনি কখনো কোনো আবেগী অনুভূতিও। যেই অনুভূতিটি হয়ে থাকে বিশেষ কারো জন্য বিশেষ অনুভূতি। সে মনে করে এমন অনুভূতি তার জীবনে কখনোই আসবে না। কারণ সে আসতে দিবে না। নিজেকে শক্ত খোলসে আবদ্ধ রাখাটাই শ্রেয় মনে করে সে। গম্ভীর, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, অনুভূতিহীন এই শব্দগুলোই না হয় তার লাইফের ‘মেইন ওয়ার্ড’ হয়েই থাকুক। ২৮ টা বছর যখন পেরিয়েছে। আরো ২৮ টা বছরও নির্বিঘ্নে পেরিয়ে যাবে। নিজের ভাবনায় ইফাদ এতোটাই ডুবে ছিলো কখন যে পাশ থেকে রূপসী সরে গিয়েছে তা বুঝতেই পারেনি সে। ধ্যান ভাঙে তার রূপসীর ডাকে।

–ম্যাজিস্ট্রেট স্যাআআর! এইখান থেইকা শহর ম্যালাআআআ সুন্দর দেখোন যায়।

ইফাদ চমকে উঠে রূপসীর ডাক শুনে। এদিক সেদিক তাকিয়ে রূপসীর দিকে চোখ পড়তেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তার। ফ্লাইওভারের মাঝে রোড ডিভাইডারের উপর এলোমেলো পা ফেলে হাঁটছে। দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে যেন সে হাঁটছে না উড়ছে। ইফাদের বুকটা ধ্বক করে ওঠে। এটা ওর গ্রামের মাটির রাস্তার ওপর বানানো সেতু বা সাঁকো নয় যে ধার ধরে ছুটে বেড়াবে। দু পাশে যানবাহনের চলাচল। ব্যস্ত রাস্তা। কোনোভাবে পা পিছলে এপারে বা ওপারে যদি পড়ে যায় তবে গাড়ির চাপে পিষ্ট হয়ে নিঃশেষ হয়ে যেতে সময় লাগবে না মেয়েটার। ইফাদের হাত পা যেন স্থির হয়ে গিয়েছে। হৃদপিণ্ডের গতি হয়েছে দ্রুত। তার তো ছুটে মেয়েটার কাছে যাওয়া উচিত, ওকে টেনে রাস্তার একপাশে নিরাপদে নিয়ে আসা উচিত। কিন্তু সে নড়তে পারছে না। গলার স্বরটাও যেন আটকে আছে। বারবার মনে হচ্ছে যদি মেয়েটার কিছু হয়ে যায় সে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। ইফাদের ভয়কে সত্যি করতেই কিনা কে জানে আচমকাই রূপসী পিছলে গেলো। উল্টো দিক থেকো তীব্র গতিতে ছুটে আসছে একটি বিশাল ট্রাক। নিজের সর্বশক্তি ব্যয় করে চিৎকার করে উঠে ইফাদ,

–রূপওওসীইইইই!

চলবে……

#অপরিচিত_প্রিয়জন
#পর্ব_৫
#এম_এ_নিশী

রূপসী পিছলে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে রাস্তার এক কোনায় কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। গাড়িগুলো সব তার পাশ ঘেষে যাচ্ছে। তবে দ্রুত গতিতে ছুটে যাওয়ায় রূপসীর ভয় হচ্ছে ভিষণ। সে না পারছে ওপারে যেতে না পারছে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে। ইফাদ নিজেকে ধাতস্থ করে নেয়। কালবিলম্ব না করে ছুটে গিয়ে রূপসীকে হেঁচকা টানে ফুটপাতের ওপর নিয়ে আসে। রূপসী একবার ইফাদের দিকে তাকায়। অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আছে সে। রাগের বর্ষণ হতে যেন সময় লাগবে না আর। রূপসী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে তার। ইফাদ চাপা স্বরে খেঁকিয়ে ওঠে,

–সমস্যা কি তোমার? হ্যা? এটা তোমার গ্রাম পেয়েছো যে যেখানে সেখানে নেচে বেড়াবে। চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসবে। আর একবারও যদি গাড়ি থেকে নামার জেদ করেছো তো সোজা রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসবো। গট ইট?

আকাশ গটগট পায়ে হেটে গিয়ে গাড়ি আনলক করে দরজা খুলে দেয়। রূপসী দ্রুত বেগে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে। তার ম্যাজিস্ট্রেট স্যারকে সে আর ক্ষেপাতে চায় না। ইফাদও উঠে এসে গাড়ি ছোটাতে শুরু করে। মাঝেমাঝে আড়চোখে ইফাদকে দেখার চেষ্টা করছে রূপসী। থমথমে মুখে বসে আছে সে। হয়তো এখনো রেগে আছে। রূপসীর এভাবে চুপচাপ বসে থাকতে হাসফাঁস লাগছে। অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করছে তার। তবে ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না সে। তাই অযথাই কখনো একাত হয়ে বসছে কখনো ওকাতে। কখনো বা পা তুলে বসছে। একটুপর বিরক্তি নিয়ে আবার দুদিকে পা ছড়িয়ে বসে। সবটাই ইফাদ লক্ষ্য করছে কিন্তু কিছু বলছে না। মেয়েটাকে তার ভালোভাবে চেনা হয়ে গেছে। চঞ্চলতার মূর্ত প্রতীক সে।
এইতো দুপুরের দিকে গাড়িটা যখন খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তখন আশেপাশে মেকানিকের খোঁজ চালাচ্ছিল সে। মেকানিক পেয়ে যেতেই একটু রিল্যাক্স হয়ে খেয়াল করে দেখে রূপসী নেই। ভয় পেয়ে গিয়েছিল ভিষণ। এদিক ওদিক খুঁজতে গিয়ে দেখে একটু দূরেই ঝোঁপের আড়ালে থাকা এক বিশাল গাছ বেয়ে ওপরে উঠছে সে। ইফাদ আহাম্মক হয়ে যায়। এ কি মানুষ নাকি বাঁদর?

–এই মেয়ে তুমি ওভাবে গাছে উঠেছো কেন? নেমে এসো, নেমে এসো বলছি।

–ম্যাজিস্ট্রেট স্যার এইহানে কি সুন্দর একখান পাখির বাসা। পাখি আবার ম্যালাগুলান ডিম পাড়ছে। কি সুন্দওওরর!

–তো কি হয়েছে? সেসব পাখির ডিম তোমার ডিম নয়। নেমে এসো।

ইফাদের কথাকে খুব একটা গুরুত্ব না দিয়ে সে মনের সুখে পাখির বাসাটা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ইফাদ চুপচাপ দেখতে থাকে রূপসীর কান্ডকারখানা। একটুপর মেকানিক এসে বলে কাজ হয়ে গিয়েছে। এবার সে রূপসীর দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে ওঠে,

–এই মেয়ে তুমি নেমে আসবে? নাকি আমি তোমাকে এখানে ফেলেই চলে যাব?

রূপসী ভয় পেয়ে জলদি নেমে পড়ে। তারপর দুহাত ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,

–আইচ্ছা চলেন।

হাঁটতে হাঁটতে আবার রূপসী চিৎকার করে ডেকে ওঠে।

–ম্যাজিস্ট্রেট স্যাআআরর!

ইফাদ চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখে রূপসী একটা ফড়িংকে ধরার জন্য ছুটছে। ইফাদ চরম বিরক্ত হয়। শক্ত করে রূপসীর হাতটা ধরে বলে,

–ব্যস! অনেক হয়েছে। একদম জ্বালাবে না আর।

বলেই টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। রূপসী মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলেও ইফাদ তা খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। তবে একটু পর পরই বিরক্ত হয়ে সে এটা ওটা ঠোকাঠুকি করতে শুরু করে দেয়। কখনো সামনে ঝুঁকে ওঝাদের মতো পাগলাটে আচরণ করতে থাকে। কখনো বা পিছনে হেলান দিয়ে চিৎপটাং হয়ে পড়ে থাকার ভান ধরে থাকে। ইফাদ মেয়েটার ছটফটানি বুঝতে পেরে জানালার গ্লাস নামিয়ে দেয়। রূপসী জানালার ওপর মুখ রেখে বাইরে তাকাতেই প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেলো। এরপর বেশ অনেকটা সময় ধরেই শান্ত ছিলো সে। এসব ভাবতে ভাবতেই হুট করে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে তার। রূপসী সেটা দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে যায়। মানুষটা তো রেগে ছিলো তাহলে হাসছে কেন? জ্বীনে ধরলো না তো। এসব ভরসন্ধ্যায় আবার প্রচুর জ্বীনের আনাগোনা থাকে। রূপসী ভয়ে আরেকটু দূরে সরে বসে। ইফাদ তাকিয়ে বলে,

–কি হয়েছে?

–আপনে কেডা?

–হোয়াট? দেখতে পাচ্ছো না আমি কে?

–আপনে কি ম্যাজিস্ট্রেট স্যার?

–না তোমার ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের আব্বা। কেন কোনো সমস্যা?

–আপনি না রাগে আছিলেন তাইলে হাসতাছেন ক্যান? আপনারে জ্বীনে ধরেনাই তো?

–কিইহহ! জ্বীন? হাও ফানি। আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে যে আমাকে জ্বীনে ধরেছে?

রূপসী সরে এসে আঙুল দিয়ে ইফাদের হাত ছুঁয়ে দেখলো। ইফাদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

–কি করছো?

–আপনে সত্যিই ম্যাজিস্ট্রেট স্যার কিনা দেখতাছি।

–দেখা হয়ে গেছে? তো কি বুঝছো?

–হ বুঝছি। আপনারে জ্বীনে ধরেনাই। ধইরলে তো আপনে আমারে এখনই মাইরা ফালাইতেন। উফফ! আল্লাহ বাঁচাইছে।

ইফাদ এদিক ওদিক নজর বুলিয়ে এক সাইডে এসে গাড়ি দাঁড় করায়। রূপসীর দিকে তাকিয়ে বলে,

–তোমার ক্ষিদে পেয়েছে? কিছু খাবে?

–হ! ম্যালাআআআ ক্ষিদা লাগছে।

–চলো তাহলে কিছু খেয়ে নেওয়া যাক।

ইফাদ নেমে এসে দরজা খুলে দেয়। রূপসী নেমে চারপাশে তাকাতেই তার চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায়। এতো বড় বড় বাড়ি, এতো এতো আলো। সবটাই কি সুন্দর লাগছে দেখতে। মোহনীয় দৃষ্টিতে দেখতে থাকে সে। ইফাদ এগিয়ে এসে বলে,

–দাঁড়িয়ে আছো কেন? এসো।

–এত্তো বড় বড় সুন্দর সুন্দর বাড়িগুলান কাগো বাড়ি?

–এগুলো বাড়ি নয়। কিছু অফিস, কিছু ফ্ল্যাট বাড়ি, কিছু শপিং মল।

রূপসীর মাথায় শব্দগুলো ঠিকঠাক প্রবেশ করলো না। সে চারপাশ মুগ্ধ হয়ে দেখতে দেখতে ইফাদের পিছু পিছু রেস্টুরেন্টে ঢোকে। বিশাল বড় রেস্টুরেন্ট বিভিন্ন রং এর আলো দিয়ে সাজানো। নানারকম কারুকার্যে শোভিত চারপাশ। কৃত্রিম ফুল, লতাপাতা দিয়ে সাজানো দেয়াল, টেবিল সবকিছু দেখে রূপসীর চোখ দুটোর সাথে সাথে মুখখানাও বিশাল ‘হা’ রূপ ধারণ করেছে। সে ছুটে ইফাদের পাশাপাশি গিয়ে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে,

–ম্যাজিস্ট্রেট স্যার, এই এত্তো বড় বাড়িখান কার?

–এটা বাড়ি নয় বেকুব। এটা একটা রেস্টুরেন্ট।

–হেইডা আবার কী?

–মানে এটা একটা হোটেল যেখানে বসে মানুষ খাওয়া দাওয়া করে।

–ওওও আইচ্ছা, চায়ের দোকান। আমাগো গেরামে আছিলো লিটু কাকার দোকান। লিটু কাকা চায়ের লগে সিংগারা, পুরিও বানাইতো। আব্বার লগে যহন হাটে যাইতাম কাকার দোকানে বইসা গরম গরম পুরি আর চা। আহা কি স্বাদ! আইচ্ছা এইহানে কি পুরি-চা পাওন যায়?

–এটা গ্রামের হাট-বাজারের চায়ের দোকান নয়। চাইনিজ রেস্টুরেন্ট।

–কই এইহানে তো কাওরে চা বানাইতে দেখন যায় না। বসবার লাইগা তো বেঞ্চিও দেয়নাই। লিটু কাকার দোকানে তো তিনডা বেঞ্চি আছিলো।

ইফাদ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
–এখানে এতোগুলো টেবিল-চেয়ার কি তোমার চোখে পড়ছে না। সবাই যে বসে বসে খাচ্ছে তা কি দেখতে পাচ্ছো না? আর এসব রেস্টুরেন্টে রান্নাটা ভিতরে হাইজিনিক ভাবে রান্না করা হয়। বাইরে নয় যে তুমি দেখতে পাবে।

ইফাদ একটি চেয়ার টেনে ইশারায় রূপসীকে বসতে বলে নিজেও একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে। রূপসী আস্তে আস্তে চেয়ারে বসে। ফোমের নরম চেয়ারে বসতেই রূপসী বেশ মজা পেল। সে ঝট করে উঠে দাঁড়ায়। ইফাদ বলে,

–কি হলো আবার দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?

রূপসী জবাব না দিয়ে আবার ঠাস করে বসে পড়ে। সেকেন্ড কয়েকের মধ্যে আবার দাঁড়ায় আবার বসে। তার খুব আনন্দ হচ্ছে। ইফাদ আশেপাশে নজর বুলিয়ে দেখে বেশ কয়েকজন আড়চোখে তাদের দেখছে আর মুখ টিপে হাসছে। ইফাদ কড়া চোখে রূপসীর দিকে তাকায়। রূপসী সেদিকে তাকাতেই তার মুখ ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যায়। সে চুপচাপ বসে পড়ে। টেবিলে একটি টিস্যু বক্স, টুথপিক রাখা একটি কৌটো, ছোট একটি ফ্লাওয়ার ভাস রয়েছে। রূপসী সেগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে থাকে। তারপর আবার চারপাশে চোখ বুলায়। মাথার ওপরে থাকা বড় বড় ঝাড়বাতিগুলো দেখে তার খুব ছুঁতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু অনেক উঁচুতে হওয়ায় সে ইচ্ছে দমিয়েই রাখতে হয় তাকে। একজন ওয়েটার এসে ইফাদকে বলে,

–হ্যালো স্যার! আপনার অর্ডারটা প্লিজ!

ফট করে রূপসী বলে উঠে,
–আপনাগো এইহানে চা-পুরি নাই?

রূপসীর কথা শুনে ইফাদ আঙুল দিয়ে কপাল ঘষতে ঘষতে বলে, “ব্যস! হয়ে গেলো। সব জায়গায় আমাকে বিপাকে না ফেললে এই মেয়ের শান্তি হবে না মনে হচ্ছে।”

ওয়েটার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
–স্যরি ম্যাম।

ইফাদ দ্রুত বলে ওঠে,
–ওর কথা বাদ দিন।

মেন্যু কার্ডটা দেখতে দেখতে বলে,

— দুটো ভেজিটেবল পিৎজা, ফিস কাটলেট দুটো আর দুটো কফি এন্ড নট কোল্ড ড্রিংকস, প্লিজ।

–ওকে স্যার।

রূপসী তখনো রেস্টুরেন্ট দেখতেই ব্যস্ত। ইফাদ পকেট থেকে ফোন বের করে। সারাদিন মায়ের কতো কতো কল যে এসেছে আজ হিসেব নেই। মাকে সামলাতে তার বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ইফাদের অর্ডারকৃত খাবার এসে যায়। রূপসী কপাল কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে বলে,

–এগুলান আবার কি?

–হয়তো এর আগে তুমি কখনোই এসব খাওনি। তবে আজ খেয়ে দেখো। এগুলো শহরের খাবার। আশা করি তোমার খারাপ লাগবে না।

ইফাদ রূপসীর প্লেটে খাবারগুলো সাজিয়ে দিয়ে তার দিকে এগিয়ে দেয়। সে জানে রূপসী চামচ দিয়ে শহুরে কায়দায় খেতে পারবে না। তাই নিজেও হাত দিয়ে খেতে থাকে আর রূপসীকে দেখিয়ে দেয় কিভাবে খেতে হবে। রূপসী তা অনুসরণ করে সেভাবেই খেতে থাকে। এই শহুরে খাবারগুলো রূপসীর কাছে অসাধারণ লাগে। তাই সে বেশ মজা করে খাচ্ছে। আশেপাশের সবাই বাঁকা নজরে দেখছে যা ইফাদকে অস্বস্তিতে ফেললেও এই মুহুর্তে রূপসীর কথা ভেবে সে সেটা হজম করে নিচ্ছে। খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই বিল পে করে ইফাদ বেরিয়ে আসে রূপসীকে নিয়ে। রেস্টুরেন্টের কাছেই একটা মেলা হচ্ছে। সম্ভবত বিজ্ঞান মেলা। রূপসী সেদিকে তাকিয়ে বেশ মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। হঠাৎ তার চোখ যায় হাওয়ায় মিঠাই এর দিকে। সে লাফিয়ে উঠে বলে,

–টুকটুকি ফুল!

ইফাদ আশেপাশে তাকিয়ে বলে,
–মানে কি?

–ওই যে ওইগুলান।
রূপসীর আঙুলের ইশারা অনুসরণ করে তাকিয়ে ইফাদ বলে,

–ওহহ! ওগুলো তো হাওয়ায় মিঠাই।

–হ জানি। আমি ওগুলারে টুকটুকি ফুল কই। নতুন বউ যেমন লজ্জা পাইলে টুকটুক হইয়া থাকে তখন বউএর গালগুলান আমার কাছে ওই হাওয়ায় মিঠাই এর রংএর মতোন লাগে আর ওগুলান দেখতেও ফুলের মতোন তাই আমি টুকটুকি ফুলই কই।

–হাওয়ায় মিঠাই তোমার পছন্দ?

–ম্যালাআআআআআ!

–আচ্ছা, এখানেই দাঁড়াও চুপচাপ আমি আসছি।

ইফাদ এগিয়ে যায় হাওয়ায় মিঠাই বিক্রেতার কাছে। আকাশে আতশবাজি ফুটছে। মেলাতেই ফোটানো হচ্ছে। তা দেখে রূপসী বিস্ময় নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। আতশবাজি ফোটানোর উৎস খুঁজতে এদিক ওদিক তাকাতেই ইফাদ ফিরে আসে। রূপসীর হাতে হাওয়ায় মিঠাই দিতেই সে ভিষণ খুশি হয়ে যায়। ইফাদ বলে,

–তুমি দাঁড়াও। আমি গাড়িটা এখানেই নিয়ে আসছি।

–আইচ্ছা।

ইফাদ গাড়ি নিয়ে এসে নেমে রূপসীকে ডাকতে গিয়ে দেখে জায়গাটা ফাঁকা। এদিক ওদিক ভালোভাবে তাকিয়ে ভাবে, “নাহ! এখানেই তো দাঁড়িয়ে ছিলো।” একটু থেমে ক্লান্ত সুরে বলে উঠে,

–আবাআআর গায়েএএবব!

চলবে….