অভিমানী প্রেয়সী৷ পর্ব-১২

0
254

#অভিমানী প্রেয়সী
#মিশকাতুল
#পর্ব:১২

বিয়ের কথা শুনেই ঝিলের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।কি বলছে এই তন্ময় ভাই? ঝিল কে তন্ময় বিয়ে করবে?

ঝিল: দেখ ভাইয়া তুই আমার সাথে এসব নোংরা কথা বলছিস কেন? তুই না আমার ভাই হোস?

তন্ময়: তাতে কি? কাজিনের মাঝে কি বিয়ে হয় না?

ঝিল: হয়। কিন্তু আমি তোকে বিয়ে করবো না।

তন্ময়: তাহলে অন্যদের সাথে আমাকে দেখে মানতে পারিস না কেন?

ঝিল: কেন তুই আমাকে ছাড়া অন্য মেয়েদের এত সময় দিবি কেন?

তন্ময়: কেন? আবার তুই যখন আমায় বিয়েই করবি না।তখন আমার বউ কি তোর সাথে আমাকে এত সময় দিতে দিবে? আর আমিই বা তোকে কখন পাত্তা দিব?

ঝিল:তুই অন্য কাউকে বিয়ে করবি? এ্যা এ্যা এ্যা

তন্ময়: আরে কাদছিস কেন? আমায় বিয়ে করতে হবে না?

ঝিল: না। তুই সারাজীবন দেবদাস হয়ে থাকবি।

নেহা: হায় হায়। দুজনের মুখে এসব কি কথা হচ্ছে? এই যে ভাইয়া তুমি ঔষধ লাগিয়ে দাও আমি যাচ্ছি।আমার অনেক কাজ পরে আছে।

ঝিল: যাস না নেহা।

নেহা: কেন?

ঝিল: তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বল? তন্ময় ভাইয়া নাকি আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে।আমি কি নিয়ে বাচঁবো রে নেহা?

নেহা: কি নিয়ে আবার? তুই ই তার চেয়ে ভাইয়াকে বিয়ে করে নে।তাহলেই সব সমাধান হয়ে যায়।

ঝিল: তাহলে আর কি মামী কি আমায় মেনে নেবে?

দ্বিপ : সে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।আমি বড় মায়ের সাথে কথা বলছি।

তন্ময়: হুম বল।


রায়হানের সাথে তন্ময়ের মা-বাবার কথা হয়েছে।খুব শিঘ্রই ঝিল আর তন্ময়ের বিয়ে দিয়ে দিতে চাচ্ছেন তারা।এই বিয়েতেই ঝিনুক কে সামনে এক নজর দেখতে পাবেন রায়হান।তার যে খুব করে ঝিনুক কে দেখতে মোন চাইছে।
কিন্তু বেটা তন্ময় যে পর্যন্ত না ঝিল কে বিয়ে করবে তার আগ পর্যন্ত ঝিনুক কেও সামনে আনবে না।

তাই যত তারাতাড়ি পারে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয়।
বিয়ের দিন করা হয়েছে সামনের শুক্রবারে।

ঝিল:আচ্ছা নেহা দেশে কি সব মেয়ের বিয়ে শুক্রবারে এই হয়?

নেহা:তা নয়।কিন্তু মুসলমানদের জন্য ওই দিনটা সব থেকে বেস্ট। কারন সেদিন জুম্মা মোবারক। তাই ওই বিশেষ দিনকেই ঘিরে আয়জোন করা হয়।

ঝিল :তা বুঝলাম। কিন্তু আম্মু কি আসবে না? এখনো কাজ শেষ হয় নি তার.?

নেহা: কাজ শেষ হোক আর না হোক এত দিন পর যে ফুফিকে দেখতে পারবো এতেই আমরা সকলে বেজায় খুশি।আচ্ছা চল যাবিনা?

ঝিল: কোথায়?

নেহা: কোথায় আবার? সেই ভাইয়ার সাথে দেখা করতে!!

ঝিল: সেই ভাইয়া মানে?

নেহা:আরে!! নাইম ভাইয়ার সাথে আজকে দেখা করার কথা ছিল না? ভুলে গেলি?

ঝিল: ওহ। না চল আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।তুই রেডি হয়ে নে।।।

নেহা: হুম।

দুই বোন সেজে গুজে বাইরে যাচ্ছে।দ্বিপ দেখেই জিজ্ঞেস করে নেহাকে।

দ্বিপ :করে কই যাচ্ছিস এভাবে?

ঝিল:দেখা করতে.

দ্বিপ :দেখা করতে? কার সাথে?

তন্ময়:তা যেনে তুই কি করবি? তুই যা আমি যাচ্ছি ওদের সাথে।

দ্বিপ :হ্যাঁ। যা আমার আবার একজনের সাথে দ্বখা করতে যেতে হবে।

তন্ময়:তুই আবার কার সাথে দেখা করতে যাবি?

দ্বিপ :সে পরে বলবো। এখন তুই যা।

*
নিলিমা কই যাচ্ছিস তুই?

নিলিমা:ভাইয়া আসলে আমি আমার এক বন্ধুর সাথে কফি সপে দ্বখা করতে যাচ্ছি।

নাইম: চল আমিও যাচ্ছি।আজ তোকে এক জনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।

নিলিমা: আচ্ছা চলো।

নিলিমা আর নাইম এক সাথেই বের হয়েছে।নিলিমার মুখটা একটু শুকনো দেখাচ্ছে।

এদিকে ঝিল,নেহা আর তন্ময় কফি সপে এসেই দেখে নাইম আর নিলিমা দাঁড়িয়ে আছে।তন্ময় ঝিলের হাত ধরে নেহাকে নিয়ে সেদিকে এগিয়ে যায়

তন্ময়: এই যে নে সামলা তোর গার্লফ্রেন্ড কে।আমরা যাচ্ছি।

নিলিমা: গার্লফ্রেন্ড? ভাইয়ার? তাও আবার নেহা?

নাইম:হ্যাঁ। আমাই আজ ওর সাথেই তোর দেখা করতে চেয়েছিলাম।।
পছন্দ হয়েছে?

নিলিমা:হ্যাঁ আমার খুব পছন্দের নেহা।

নাইম:তুই ওকে আগে থেকেই চিনিস? আমি আবার তোকে কখন নেহার কথা বললাম।

নিলিমা:তুই বলিস নি তবে আমি চিনি নেহাকে।

এর মাঝেই দ্বিপ এসেছে ওদের সামনে।দ্বিপ কে দেখে রীতি অনুযায়ী কাপা কাপি শুরু করে দিয়েছে নেহা।হাজার হোক তার বড় ভাই।

নেহাকে নাইমের সাথে দেখে দ্বিপ অবাক হয়ে গেছে।এদিকে নিলিমাও দ্বিপ কে দেখে ভয় পাচ্ছে এই বুঝি তার ভাই দ্বিপ কে দেখে তেলে বাগুনে জ্বলে ওঠে। তার আগেই নিলিমা বলে ফেলে।

নিলিমা: ভাইয়া। দ্বিপের কোন দোষ৷ নেই আমি ই দ্বিপ কে আসতে বলেছিলাম।আমি দ্বিপ কে খুব ভালোবাসি ভাইয়া।

নাইম:কি? তুই আমার বোন হয়ে আমার বন্ধুকে আমার ই আড়ালে প্রেম করে বেরাচ্ছিস?

দ্বিপ :আর তুই? তুই কি করছিস?

নাইম:ইয়ে…… আসলে……………

তন্ময় এদের দেখে এগিয়ে আসে।

তন্ময়: ঠিক হয়েছে।আমি এটাই চাচ্ছিলাম।সে এক্সাই হোক আমার সাথে সাথে তোদের ও বিয়ে হচ্ছে।আর সব ব্যাবস্থা মনে কর হয়ে গেছে।এখন আমি আর ঝিল একটু বাইরে যাচ্ছি। তোদের যা মনে চায় কর। বাই।

ঝিল কে নিয়ে তন্ময় চলে এসেছে। ক্যাফের ভেতরে হালকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত থাকলেও বাইরে প্রচুর গরম পরেছে।তাই লং ড্রাইভ করলে মন্দ হয় না।ঝিল আর তন্ময় গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে নদির বন্দরে।ঢাকা থেকে একদম সিরাজগঞ্জ। যমুনার তীরে বসে আছে। দুই জনে।সাম্নের নদির পানিতে অনেকে অনেক কাজ করছে ঢাকায় সাধারনত সকল বাচ্চারা সুইমিংপুলের পানিতেই সাতার কাটে কিন্তু এখানকার বাচ্চারা নদীর পানিতে অবাধ সাতার কাটছ। মহিলারা কাপড় ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে।বিকাল হয়ে এসেছে।আবার ফিরতে হবে কিন্তু ফেরার নাম গন্ধই নিচ্ছেনা।

একটা লোক এসে তন্ময় কে জিজ্ঞেস করলো,

এখানে তোমাদের আগে কখনো দেখেনাই তো বাবা!

তন্ময়:হ্যাঁ আসলে শহরের মাঝ থেকে খানিকটা দুরে এসে ভালো লাগছে।

তা বাসায় যাইবানা সন্ধ্যা হইয়া আইলো।

তন্ময়:হ্যাঁ চাচা যাব।ঝিল ওঠে গাড়িতে যা আমি আসছি।

ঝিল কে নিয়ে আবার ফিরে আসে নিজের বাসায়।আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে গেছে।

বাসার সকলেই যেনো এতক্ষন তাদের অপেক্ষায় ছিলেন।

তন্ময় কে দেখে সবাই এগিয়ে আসে।এত রাত হয়ে গেছে বলে তন্ময়ের বাবা তন্ময়কে অনেক কথা শুনায়।তারপর চোখ যায় তন্ময়ের পেছনে দুজনের উপরে।

চলবে?