অভিমানী প্রেয়সী পর্ব-১৩

0
258

#অভিমানী প্রেয়সী
#মিশকাতুল
পর্ব:১৩

তন্ময় কে দেখে সবাই এগিয়ে আসে।এত রাত হয়ে গেছে বলে তন্ময়ের বাবা তন্ময়কে অনেক কথা শুনায়।তারপর চোখ যায় তন্ময়ের পেছনে দুজনের উপরে।

ঝিল আর ঝিনুক পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।তাদের কে দেখে রায়হান দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায়। ঝিনুক কে বুকে টেনে নেয়। কত বছর পর সে তার প্রিয়তমার মুখ দেখছে এও খুশির চেয়ে কম কিসে?

তন্ময়ের বাবা আর আমেনাও তাকে দেখে তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিল।
দ্বিপালি আর আবির রহমান ও এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন।

সব শেষে ঝিল আর তন্ময়ের বিয়ের কথা তাকে বলা হয়।এবার যেন ঝিনুকের খুশি আর ধরেনা।তিনি অত্যান্ত মনের গভীরে থেকে চাইতেন তন্ময়ের হাতে তার মেয়ের হাত তুলে দেবেন।

রাত অনেক হয়েছে বিধায় ঝিনুক কে নিয়ে ঝিল তার রুমের দিকে ঘুমাতে যায়।আজ অনেক দিন পর ঝিল তার মায়ের কাছে ঘুমিয়ে আছে।ঝিনুক সুস্থ হয়েছেন কিছুদিন আগে।ওত গুলি বছর আমেরিকাতে তন্ময়ই তার দেখা শুনা করেছেন।তার পা দুটিতে অসার হয়ে গেছিলেন।চলাফেরা করতে পারতেন না।কিন্তু তন্ময়ের সেবার কাছে সব হার মেনে গেছে।প্রথমত ঝিনুকের ক্যান্সার ধরা পরে তারপর উন্নত চিকিৎসা করার মাধ্যমে তা থেকে তিনি আরোগ্য লাভ করেন।পরবর্তীতে তার স্বামীর বিজনেস পার্টনার আলম সাহেব ঝিনুক কে হত্যা করার চেষ্টা করেন। কেননা ঝিনুকের নামেই রায়হানের সব বিজনেস।
যদি ঝিনুক মারা যায় তাহলে সব সম্পত্তির উপর অধিকার পাবে রায়হান আর তখন আলমের বোনকে তার সাথে বিয়ে করিয়ে নিজে সব কিছুর মালিক হতে চেয়েছিলেন।কিন্তু তার ধারনা ভুল ছিলো সেরকম ভাবে কিছুই হয়নি।আলমেএ বোনকে রায়হানে শুধু ১০ দিনের জন্য আগে থাকতে বলেছিলেন।কিন্তু সে এসেই রায়হানেএ ব্রেন ওয়াশ করে এবং ঝিল কে অত্যাচার করে বাসা থেকে চলে যেতে বাধ্য করেন।তারপর যখন বিয়ে করতে বলেন তখন রায়হান তার সত্তার কাছে হার মেনে যায় আর ঝিলের কাছে ছুটে চলে আসে।।

সকাল সকাল সারা বাড়িতে ঘুরে ঘুরে দেখছে ঝিল।নেহা এখনো ঘুম থেকেই জাগেনি।নিশিটাও বাসায় নেই সে থাকলে এই সময় নিশির পাশে বসে থাকতো ঝিল।খুব মিস করছে নিশিকে।

দ্বিপ এর রুমের দিকে উকি দিয়ে দেখে তার গুনধর ভাই সকাল সকাল ফোনে ব্যাস্ত। বুঝতে বাকি নেই কার সাথে কথা বলছে।নিশ্চয় নিলিমার সাথেই।আর মাত্র কয়দিন তারপরই নিলিমা এ বাসায় আসবে সে আর ঝিল একদম মিলে যায়।

অন্যদিকে নেহা সারারাত নাইমের সাথে কথা বলে এখন ঘুমুচ্ছে।
আমেনার রুমের দিকের সামনে দিয়ে যেতেই তার মনে পরে যায় এই কয়দিনের সব কিছু।হ্যাঁ এই মহিলাকে সে সব সময় ভয় পেলেও এখন আর ভয় করছেনা। কারন কয়েক দিন আগেই সে ঝিলের থেকে ক্ষমা চেয়ে নিছে।আর ঝিল ও তাকে আপন করে নিয়েছে।সাথে সাথে সব ধিরে ধিরে মনে পরে যাচ্ছে।তার গাড়ির সাথে ধাক্কা খাওয়া কে নিয়ে এসেছিলো সেদিন গাড়ি? মনে পরতেই ঝিল ছুটে যায় আবির রহমানের রুমের দিকে।

ঝিল: মামা!

আবির:হ্যাঁ রে আয় মা কিছু বলবি?

ঝিল: কেন করলেন? সেদিন?এমন?

আবির: ক কি? কি? করেছি?

ঝিল: কেন? সেদিন ধাক্কা দিলেন? আমাকে শেষ করে দেওয়া কি এতই প্রয়োজন ছিল আপনার কাছে??

আবির : কি বলছিস তুই? এসব? সেদিন আমি নই ওহির গাড়ির সাথে তোর ধাক্কা লেগে গেছিলো।

ঝিল: ছিহ মামা।আমার আপনাকে মামা বলতেও ঘৃনা লাগছে।সামান্য সম্পত্তির লোভে আপনি আমার জীবন নিতে চেয়েছিলেন? আমার মায়ের জীবন ও আপনিই সেদিন আলম কাকা কে দিয়ে কেড়ে নিতে চেয়েছিলেন। কি ভেবেছিলেন আমার এসব কখনো মনে পরবেনা?

এদের চেচামেচির আওয়াজ কানে যেতেই সকলেই আবিরের রুমের দিকে চলে আসে।
ঝিলের কথার মানে কেউ বুঝতে পারছেনা।আবির রহমানও কোন কথাই বলছেন না।তাই তন্ময় ঝিল কে চুপ থাকতে বলে।নিজেই বলে,

ছোট মা তুই সকল কে আপন করে নিতে পারলেও ছোটআব্বু কখনো আমাদের করে নিতে পারে নি।দ্বিপ তুই আমায় ভুল বুঝিস না।কেউ না জানুক তুই ঠিক জানিস আমি কতটা তোকে ভালোবাসি।আমি সব সময় চেষ্টা করেছি যাতে সবার সামনে এই দিন না আসে।কিন্ত্য না সত্যি সবার সামনে চলেই আসে।সেদিন, যেদিন ঝিল কে বাসা থেকে ফুফিমনি নিতে আসে সেদিন কাকা বাসায় ছিলেন না।কিন্তু সেই পেছন থেকে সব করে গেছে।সেদিন ফুফি চলে গেলে কাকা ওদের সাথে দেখা করে তারপর ঝিল কে নিয়ে নিজের কাছেই রাখে। ফুফির অবস্থা ভালো ছিল না।তখন তাকে কাকা হাসপাতালে নিয়ে যায়। আংকেলকেও বলেন সাথে যেতে কিন্তু আংকেল ঝিল কে নিয়ে বাসায় ই থেকে যায়৷ বলেছিলেন সকালে যাবেন।সকালে যাওয়ার পর সে দেখে ফুফি মনি নেই।আর তার সাথে একটা কাগজ রেখে যায়।কিন্ত্য কাকার আগেই আমি ফুফি মনি কে নিজের কাছে নিয়ে আসি।তারপর ফুফিমনিকে নিয়ে আমেরিকা চলে যাই।সেখানেই ফুফিমনির চিকিৎসা করাই।আর এদিকে, কাকা পাগলের মতো ফুফিকে খুজতে থাকে।কারন কাকা আমার বাবা আর ফুফি মনিকে মারতে পারলেই সে সব সম্পত্তির অধিকারী হয়ে যেতেন।আব্বুকেও তিনি মাঝে মাঝে হালকা পরিমানে বিসাক্ত ডোজ দিতেন যখন আব্বু বাসায় থাকতেন না।
কিন্তু মাঝখান থেকে আমি সব জেনে যাই। আর তাই কাকা ঝিল কে নিজের কাছে রাখতে চায়। যদিও ছোটমাএসব কিছুই জানেনা।

ছোটমা অন্য পরিবার থেকে এসেও আমাদের আপন করে নিতে পেরেছে।আর তুমি?? জন্ম নেওয়ার পর থেকেই এই বাসায় রয়ে গেছ। তাহলে তুমি কেন আপন করে নিতে পারছোনা?

দ্বিপ : মানে?

তন্ময়: আব্বু আর কাকা আলাদা। তারা আপন ভাই নয়।আব্বু যখন অল্প বয়সের তখন ছোট আব্বুর মা-বাবা এক্সিডে করে মারা যায়।তারপর তাকে দাদু আমাদের বাসায় নিয়ে আসে। আর এক সাথে বড় করে তোলে। তার জন্য দাদু এনাদের মাঝে সব সম্পত্তি দুই ভাগ করে দেন।আর ফুফি একাই বেশি পেয়ে যায়।আর তাই ফুফি মনিকে শেষ করে দিতে চায় তোর আব্বু।শুধু তাই নয় ঝিলের বাবার সব বিজনেস ঝিনুক ফুফির নামে করেছে আংকেল।তার জন্যও সেই সুযোগ নিয়েছে।

আবির: আমার ভুল হয়ে গেছে তন্ময়।আমি পরে বুঝতে পেরে সত্য ঝিল কে নিজের মেয়ের চোখেই দেখেছি।সেদিন আমি ইচ্ছে করে ঝিল কে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দেই নি।ওহি আমাকে বলেছিল।যদি আমি ধাক্কা না দেই তাহলেও সবাইকে আমার করা অপরাধের কথা বলে দেবে।।

তন্ময়:জানি। আমি। তুমি নিজেকে শুধরিয়ে নিয়েছ।সে যাই হোক জানিনা ফুফি মনি তোমাকে আজ ক্ষমা করবেন কি না?

আবির: ঝিনুক বোন আমার প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দে।

ঝিনুক: কেন করলে? কেন? আমার সব সম্পত্তি তোমার লাগবে তুমি আমাকে বলে দিলেই আমি সব দিয়ে দিতাম।তুই ভাই হওয়ার যোগ্য নয়।দ্বিপ তুই আমায় ভুল বুঝিস না আজ আমি কিছুতেই তোর বাবাকে ক্ষমা করতে পারবোনা।

দ্বিপ : করবেনা ফুফি।একদম ক্ষমা করবেনা।আমি সবাইকে আর বলতে পারবোনা।আমার বাবা খুব ভালো সে আমাকে অনেক ভালোবাসে।আমার ফ্যামিলি নিয়ে আমি খুব খুশি ছিলাম ফুফি বাবা যা করেছে তোমার সাথে তার জন্য আমার মন থেকে বাবা ডাক টা মুছে যাবে আজকে থেকে।চাইনা আমার এমন পিতা।

নেহা:ছিহ বাবা।সামান্য কয়েকটি টাকার জন্য তুমি নিজের বোনের সাথে এমন করলে?ঝিল কে মেরব ফেলে দিতে চাইছিলে?

আবির : আমার ভুল হয়ে গেছে রে মা।আমায় ক্ষমা করে দে।
ঝিনুক:ঝিল চল আমার সাথে।

সবাই যার যার রুমে চলে গেছে। সকলেই শান্ত হয়ে বসে আছে।আজ যা সবাই জানতে পেরেছে তাতে আর আবিরের সামনে কেউ আসেনি।দ্বিপালি নেহাকে নিয়ে বসে বসে কাদছে দ্বিপ তন্ময়ের সাথে আছে দ্বিপের ও মন খারাপ তাই তন্ময় মন ভালো করতে নানা কথা বলে যাচ্ছে দ্বিপের সাথে।

ঝিনুক দরজা খুলে বাইরে এসে দেখে আবির বসে আছে।ধির পায়ে তার কাছে যায় ঝিনুক তারপর আবিরের চোখের জল মুছে দেয়।বোনকে দেখে আবির রহমান ও ঝিনুকের দিকে ফিরে তাকায়। ক্ষমা করে দেয় ঝিনুক।ছোট থেকেই ঝিনুক আকাশের থেকে আবিরকে বেশি ভালোবাসে।কারন ঝিনুক বুঝে আবির একা। খুব একা।তাই এত ভুল থাকা সত্ত্বেও ভাইকে ক্ষমা করে দেন তিনি।

ঝিনুক: আজ কান্না নয় ভাইয়া।আর মাত্র দুই দিন পর বাসায় বিয়ের অনুষ্ঠান এক সাথে ৩জোড়া বিয়ে হবে!

আবির:হ্যাঁ রে বোন হ্যাঁ।

চলবে?