অভিমানী প্রেয়সী পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
365

#অভিমানী প্রেয়সী
#মিশকাতুল
পর্ব:অন্তিম

তন্ময় ফিরছে না কেন?

ঝিলের প্রশ্নের উত্তর কেউ দিল না।
দ্বিপ :ঝিল চিন্তা করিস না। ও এখনি চলে আসবে।হয়তো কোন কাজে আটকে গেছে তাই সময় নিচ্ছে।

নেহা:হ্যাঁ। ঝিল চিন্তা করিস না।দ্বিপ ভাইয়া তুই একটু যা গিয়ে দেখ মহারাজা কই আছে?

ঝিল:আমি যাই সাথে?

দ্বিপ :না আমি দেখছি তুই এখানেই থাক।

ঝিল:না আমি তোর সাথে যাব।

দ্বিপ :আচ্ছা চল।তোমরা সবাই ওয়েট করো।আমি আর ঝিল গিয়ে নিয়ে আসছি।এত চিন্তা করতে হবে না।

ঝিল কে নিয়ে দ্বিপ বেরিয়ে পরেছে।দ্বিপ সামনে বসে ড্রাইভ করছে আর ঝিল পেছনে বসে কান্না করছে বার বার তন্ময়ের নাম্বারে কল করছে কিন্তু কল ঢুকছেইনা।

সামনে অনেক মানুষের ভীর দেখে দ্বিপ গাড়ি থেকে নামে।
ঝিল পাশের একজন কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে একটা ছেলে গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছিলো। তাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে এখন গাড়ি টা সবাই মিলে রাস্তার মাঝখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ঝিল এর এই কথা শুনে অন্তর আত্তা কেপে উঠে। আবার ওর তন্ময়ের কিছু হয়ে যায়নি তো?

দ্বিপ ফিরে এসে ঝিল কে নিয়ে বাসায় যায়। ঝিল
বার বার বলছে।তন্ময় এর গাড়ি ছিল?কার এক্সিডেন্ট হয়েছে আর তুই এখনি আমাকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছিস কেন?

দ্বিপ:তন্ময় এর কিছু হয়নি রে।

ঝিল:তাহলে ও ফিরছে না কেন?

দ্বিপ :সারপ্রাইজ।

ঝিল:আমাকে সারপ্রাইজ দিতে ও দেরি করছে?

দ্বিপ :হুম কান্না থামা।

ঝিল:আচ্ছা।
হনুমান, বজ্জাত ওর সাথে দেখিস আর কখনো কথাই বলবো না।

দ্বিপ :আচ্ছা বলিস না।শুধু শুধু আমার নতুন বউকে একা রেখে আসতে হয়েছে।দেখিস ওকেও আমি ছারছিনা।
ঝিল!
বসে থাকতে থাকতে রাত হয়ে গেছে। কাজিকে এখনো দ্বিপ যেতে দেয় নি।আত্নিয়রা সব দূরের গুলি চলে গেছে।তন্ময় দের বাসায় সবাই ফিরে এসেছে।ঝিল অপেক্ষা করছে তন্ময় ফিরবে।

অবশেষে রাত ১২ টা বাজলেই তন্ময় বাসায় ফিরে আসে।

ঝিল:কিরে এতক্ষন কই ছিলি?

তন্ময়:হাসপাতালে।

ঝিল:কেন?কি হয়েছে তোর?

তন্ময়:…………

ঝিল: আমাকে বলবি না?তুই আমাকে বিয়ে করার কথা বলে চলে গেলি?আর এখন আসার সময় হলো?

ঝিল:আমি আর তোর সাথে কথাই বলবো না

তন্ময়:এটুকুতেই এত অভিমানী প্রেয়সীর?

ঝিল:কেন? আমার কল কি দেখতে পারিস না?

তন্ময়:দেখ তোর চুলের খোপায় বেলি ফুলের মালা আনতে গেছিলাম।কিন্তু আসার সময় রাস্তায় একটা ছেলে গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে তাই তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছিলাম।তুই ই বল ডাক্টার দের কি কাউকে চিকিৎসা করা জরুরী নয়?

ঝিল:তাই বলে আমাকে বলা যাবে না?

তন্ময়:বলা যাবে।কিন্তু আমার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিলো।

ঝিল:হয়েছে আর বলতে হবে না।
আমি কত সুন্দর করে সেজেছিলাম তোর জন্য কান্না করতে করতে আমার সব সাজ শেষ হয়ে গেছে।

তন্ময়:নেহা……..

নিশি:নেহা নেই। শশুর বাড়ি চলে গেছে।

তন্ময়:কি?ওর এত বড় সাহস?আমার বউ কে না সাজিয়েই চলে গেছে?

নিলিমা:আমি আছি কিসের জন্য?

তন্ময়:হ্যাঁ তাইত!

নিলিমা:আমি সাজিয়ে দিচ্ছি ঝিল কে।

ঝিল: না আর সাজবোনা।ও দেরি করেছে ওর বউ না সেজেই ওর ঘড়ে যাবে।

তন্ময়:ওক্কে মহারানী। আমার বিয়েটা তো আগে করতে হবে চল ঝিল।

কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন।

………
বাসর ঘরে ঝিল বসে আছে।আর তন্ময় আবার দেরি করে ফেলছে।

ঝিল:তুই কি আজকে বাড়ান্দা থেকে আসবি নাকি?

তন্ময়:না।

ঝিল:তাহলে আমি আসবো?

তন্ময়:আয়।

ঝিল:বল কি বলবি?

তন্ময়:এখানে বস।

ঝিল: এখন বল কি বলবি?

তন্ময়:তোর জন্য একটা গিফট কিনেছিলাম সেই যখন তুই ক্লাস সেভেনে ছিলি।তখন

ঝিল:কিহ? এত দিন তোর কাছে ছিল?
কি গিফট দেখি!

তন্ময়:তোর পা দেখা।

ঝিল ওর পা তন্ময়ের কাছে দেখাল।তন্ময় পকেটে হাত দিয়ে একটা প্যাকেট বের করছে।তার ভিতর রয়েছে এক জোড়া নুপুর।

ঝিল:এই নুপু……

তন্ময়:হ্যাঁ। তুই বিলেছিলি…..যে আমি যেন আমার বউ কে তোর পছন্দের নুপুর বিয়ের রাতে পায়ে পড়িয়ে দেই।আমি সেদিন কিনেছিলাম। কিন্তু তোকে দেখাই নি।কারন তুই যেমন মেয়ে। সেই কবেই আমার থেকে নিয়ে পরে নিতি।তাহলে আজকে আর আমি তোকে তোর দেওয়া কথাই রাখতে পারতাম না।

ঝিল:বেশ করেছিস।চল এখন ঘুমাই।

তন্ময়:না।আজ আমি তোর সাথে এই জোসনার আলোতে বসে গল্প করতে চাই করবি না?

ঝিল:বাহ বাহ আজ নিজেই গল্প করতে চাইছিস।ওকে বল আমি শুনি।

তন্ময়:যেদিন তুই জন্ম নিলি তখন আমি তোকে দেখে আম্মুর কাছে বায়না ধরেছিলাম আম্মু এই বাচ্চাটাকে আমাদের সাথে আমাদের বাসায় নিয়ে যাব।আমার কাছে রেখে দেব তুই দেখতে এত সুন্দর ছিলি।যে আমি তখন থেকেই তোর প্রতি দুর্বল ছিলাম।তুই কাছে থাকলে মনে হতো যেন আকাশের চাঁদ রয়েছে আমার কাছে।
কিন্তু ফুফিমনি তার ও তুই একটা মাত্র মেয়ে ছিলি।তাই জানতাম ফুফিমনি তোকে কখনোই আমাদের বাসায় রেখে যাবে না।
কিন্তু আমি যেমন তোর পাশে থাকতে পছন্দ করতাম তুই ও তেমনি আমার পাশেই থাকতে পছন্দ করতি।

কখনো তোর আশে পাশে অন্য কোন ছেলেকে দেখতে পারতাম না।যে ছেলে তোর পাশাপাশি আসতে চেয়েছে তাদেরই আমি তোর পাশ থেকে সরিয়ে দিয়েছি।কিন্তু তোর আব্বু বলেছিল।তার মেয়েকে সে যোগ্য ছেলের হাতে তুলে দিবেন।তাই আমাকে এত গুলি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।

তাতে কি? এত কিছুর পর যে আমি আমার সেই #অভিমানী প্রেয়সীকে নিজের করে পেয়েছি এতেই সব পুর্নতা আমার।

ঝিল: আমিও তোমাকে খুব করে চাই ভাইয়া।আই লাভ ইউ।
আমি সারাজীবন তোমার প্রেয়সী হয়েই থাকতে চাই।

সমাপ্ত