অসমাপ্ত ভালোবাসার শৃঙ্খচীল পর্ব-০৫

0
770

#অসমাপ্ত_ভালোবাসার_শৃঙ্খচীল
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৫

,
,
,
আরিফ রেজওয়ান নামক ঝড় এসে হানা দেয় অয়ন এর জীবনে।সে আগে গ্যাংস্টার ছিলো না আর না ছিলো আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে কোন সম্পর্ক। ছোট খাটো একটা জব করতো এই জবেই সন্তুষ্ট ছিলো সে আর তার প্রিয়তমা। ফ্যামিলির আড়ালে আলাদা এক জগৎ তৈরি করেছিলো তারা অয়ন আর তার আফিয়া। আফিয়ার বাবা মা কেউ ছিলোনা ছোট বেলা থেকেই একা মানুষ সে। অয়ন আর তার পরিচয় তাদের কর্মস্থলেই হয়।

কিন্তু তারা যেখানে কাজ করতো সেটা ছিলো মিস্টার রেজওয়ান এর বড় ছেলে আরিফ রেজওয়ান এর। আরিফ এর কু দৃষ্টি ছিলো আফিয়ার উপরে।

কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতো না সে। আফিয়া আর অয়ন ও সেটা বুঝতে পারেনি। ধীরে ধীরে সম্পর্ক টা মজবুত হতে লাগলো।অয়ন আফিয়াকে ছাড়া কিছু বুঝার ক্ষমতা হারয়েছিলো।

১৪ ফ্রেবুয়ারী ছিলো সেদিন। ভালোবাসার দিবস হিসেবে যে দিনটাকে সবাই যানতো। যে দিনে সবাই তার ভালোবাসার মানুষ এর সাথে কাটাতে চাইতো। অয়ন ও চেয়েছিলো খুব সুন্দর করে সব প্ল্যান করেছিলো কিন্তু কি করে আরিফ এর কানে পৌঁছে যায় কথাটা যে আফিয়া আর অয়ন সম্পর্কে আছে।

সেদিন সে যেয়ে পৌঁছে অয়ন আর আফিয়ার বাসায়। অয়ন তখন ততোটা শক্তিশালী ছিলোনা আর না তেমন একটা প্রতিরোধক ক্ষমতা ছিলো তার। আরিফ তাকে খুব সহজে তাকে প্যারালাইজড করে তার চোখের সামনে আফিয়াকে রেপ করে।সেদিন আফিয়ায় একেক আত্নচিৎকার বাচার জন্য ছোটফোটানি এখনো অয়ন এর মনে আছে।

,
,
,
২ দিন আই সি উ তে থাকতে হয়েছিলো।আফিয়া সুস্থ হতেই অয়ন আর আফিয়া কোর্যে এপ্রিল করে বাট মিস্টার অঙ্কুশ রেজওয়ান টাকার জোরে উকিল থেকে শুরু করে সবাইকে কিনে নেয়। সবার সামনে অপমান করা আফিয়া কে।সহ্য করতে পারেনা আফিয়া সেদিন রাতেই আত্নহত্যা করে।

অয়ন পাথর হয়ে যায়। নিজেকে ধীরে ধীরে প্রতিশোধ এর আগুনে পুরাতে লাগে। এক সময় পুরাতে পুরাতে সে ধারালো অস্ত্র হয়ে যায়। আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে ভয়ংকর গ্যাংস্টার এ পরিনত হয়।তারপর প্রতিশোধ এর প্রথম ধাপ শুরু করে তনুকে নিজের দিকে করে।তার প্ল্যান ছিলো বার বার তনু পালাবে আর এতে রেজওয়ান দের অপমান হবে তার মেয়ের বদনাম হবে কিন্তু পরে প্ল্যান টা চেঞ্জ করে এখন তার প্ল্যান আগে কার চেয়েও ভয়ংকর হয়ে যায়।

কিন্তু এতো বছর তনুর সাথে থাকতে থাকতে একটা মায়া বসে গেছে।তনু মেয়েটাই এমন যার উপরে সহজেই যার তার মায়া পরে যাবে।

——-

অরণ্য মেয়েটার কেবিনে গেলো।মেয়েটা ঘুমাচ্ছে শান্তিতে।
অরণ্য মেয়েটার পাশে বসতেই মেয়েটা চোখ মেলে তাকালো।ভুল করে দুইজনার চোখা চোখি হয়ে গেলো।অরণ্য সাথে সাথে চোখ নামায় নিলেও মেয়েটা অরণ্যর দিকেই তাকিয়ে আছে।

লালচে ঠোঁট দুধে আলতা মুখশ্রী তীক্ষ্ণ চোখ জোড়া ।জিম করা সুঠাম দেহ। স্টাইল করা চুল। যেকোন মেয়েকে আকর্ষণ করতে সক্ষম।
মেয়েটার ধ্যান ভাংগে অরণ্যের ডাকে।

অরণ্যঃতো ম্যাডাম এখন কেমন আছেন।বাই দা ওয় অনেক সাহসী আপনি কাউকে বাচাতে য্যে নিজেকে রক্তাক্ত করে ফেললেন।

মেয়েটাঃআপনার জন্য একবার কেন হাজার বার রক্তাক্ত হতে রাজি আছি (মনে মনে)ধনাবাদ। আর আমার নাম রামিসা।

অরণ্যঃনাইস নেম মিস রামিসা।
তো এখন কেমন লাগছে
রামিসাঃএখন ঠিক আছে কিন্তু হাত টা ব্যাথা করছে
অরণ্যঃহুম ডাক্তার বলেছে কিছু দিন ফুল রেস্টে রাখতে হবে হাত টা

রামিসা আর অরণ্যের আলাপের মাঝেই সেখানে একজন নার্স আসে খাবার নিয়ে।

রামিসা খাবার নিজের হাতে নিলেই ব্যাথাতে আহ করে উঠে। অরণ্য সেটা থেকে খাবারের বাটিটা নিজের হাতে নিয়ে নেই।

নার্সঃস্যার আমাকে দিন আমি খাওয়ায় দিচ্ছি।(বাটিটার দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে)
অরণ্যঃকোন প্রয়োজন নেয় আমি খাওয়াই দিচ্ছি।

নার্স টা হাত গুটিয়ে নিলো রামিসার চোখ দুইটা খুশিতে চোক চোক করে উঠলো।অরণ্য খাওয়া দিতে লাগলো নার্স টা এক হাত দিয়ে স্যালাইন ক্যানোলা টা ঠিক করছিলো আরেক হাত দিয়ে চাকু ধরে রেখেছিলো। ধারালো চাকু হওয়ায় সহজে নার্স টার হাত কেটে রক্ত চুয়াতে শুরু করে দিয়েছিলো।

খাওয়া শেষ হলে নার্স টা খাবারের ট্রলিটা নিয়ে যায় কিন্তু হাত কেটে যাওয়ার কারনে হাত চুয়ে রক্ত এক ফোটা এক ফোটা করে ফ্লোরে পড়ছিলো।অরণ্য দেখে নেয় সেটা আৎকে উঠে সে । তাড়াতাড়ি বাহিরে এসে দেখে সেখানে কেউ নেই।

অরণ্য পাগলের মতো নার্স টাকে খুজতে লাগে।কিন্তু কোথাও পায়না। বুকের বা পাশটাই কেন যেনো ব্যাথা করছে তার সে বুঝতে পারছেনা কেন তার এতো খারাপ লাগছে কেন তার বুকের বা পাশটাই চিনচিন ব্যাথা করছে।
মনে হচ্ছে খুব আপন কেউ খুব ব্যাথা পেয়েছে।

ফুটপাতের উপর দিয়ে হাটতে হাটতে যাচ্ছে তাহা।কিছুটা রাস্তা অতিক্রম করতেই একটা অনাথাশ্রম দেখতে পায়।

তাহা যেয়ে বসে পরে সেখান কার একটা ব্রেঞ্চে।সামনে কিছু বাচ্চা ছেলে মেয়ে খেলছে।

তাহাঃতোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় নিয়ে আর বাচতে পারছিনা আমি। প্রতিটা নিশ্বাসে তোমাকে চায়।কিন্তু তুমি চেয়েও বুঝোনা।তোমাকে হারানোর ভয় তোমার চোখে নিজের জন্য করুনা দেখার থেকে নিজের মৃত্যু টাই সহজ। একবার মারা গেলে এই ভয়ভার ঘিরে ধরতে পারবেনা আমাকে আর না পারবে তোমার চোখে নিজের জন্য দয়া বা ঘৃণা দেখতে।

তাহা উঠে যায়। চোখের সামনে থাকা ১০ তালা বিল্ডিং এর দিকে চোখ যায়। সে দিকেই পা বারায়।অরণ্য রক্তর দাগ এর পিছে করতে করতে অনাথ আশ্রমে পৌছে যায় কি মনে করে বিল্ডিং এর দিকে যায়।আর যেতেই দেখে তাহা লিফটে উঠছে হাত তার রক্তে ভিজা। অরণ্য আর সময় নষ্ট না করে অপজিট লিফটে উঠে যায়।

অরণ্য ছাদে উঠে দেখে তাহা একদম কর্ণারে দাঁড়ায়ে আছে একটু হের ফের হলেই যে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

অরণ্য দৌড়ে যায় একটুর জন্য তাহা বিল্ডিং এর নিচে না পরে অরণ্যের বুকে জায়গা পায়।
অরণ্য তাহাকে সামনে এনে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে দেয়।দিয়ে পুনরায় বুকে জরায় ধরে।তাহা হাউমাউ করে কেদে উঠে।

অরণ্যঃকি করতে যাচ্ছিলি হ্যা যদি আমি সঠিক সময়ে না আসতাম তো কি হতো কল্পনা করতে পারছিস।
তাহাঃমরে যেতাম। আমি তো সেটাই চাই মরতে চাই আমি আর পারছি না আমি প্রতিনিয়ত তোমাকে হারানোর ভয় পেয়ে বাচতে পারছিনা তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছিনা তোমার চোখে আমার জন্য ঘৃণা দেখতে পারছিনা নিজের ভালোবাসার মানুষ কে অন্যকারো সাথে দেখতে।(হাউমাউ করে কাদতে কাদতে বলে উঠে যার কারনে কথা গুলো বেধে যাচ্ছিলো বার বার)

—-
——-
অরণ্য তাহার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে।আর তাহা চুপটি করে বসে আছে।

অরণ্যঃকি অবস্থা করেছিস হ্যা হাত টার বিচ্ছিরি অবস্থা এসব পাগলামী কি করে শিখলি তুই হ্যা
(রাগে ধমক দিয়ে)
তাহাঃতো কি করতাম আমার চোখের সামনে অনে মেয়েকে খাওয়াই দিবা আর আমি তালি দিবো
(ভেংচি দিয়ে)
অরণ্যঃপাগলী
তাহাঃতোমার জন্য
অরণ্যঃছাতা
তাহাঃতোমার মাথার
অরণ্যঃওইটা দিয়ে দিবো বাড়ি
তাহাঃএহ আইসে।
অরণ্যঃবড্ড বেরেছিস
তাহাঃতো কম ছিলাম কবে
অরণ্যঃবইন মাফ কর তোর সাথে আমি কোন দিন ও কথায় পারবোনা
তাহাঃএই খবরদার বইন কবা না আমি আমাদের ফিউচার বাচ্চাদের মুখে ফুফি ডাক শুনতে ইচ্ছুক না (ঠোঁট উলটে)

তাহা বক বক করেই যাচ্ছে তো করেই যাচ্ছে অরণ্য আর না পেরে তাহার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবায় দিলো।তাহা চুপ চোখ দুইটা বড় বড় করে অরণ্যর দিকে তাকিয়ে থাকলো।

চলবে!!!