অসমাপ্ত ভালোবাসার শৃঙ্খচীল পর্ব-০৪

0
769

#অসমাপ্ত_ভালোবাসার_শৃঙ্খচীল
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৪
,
,
,
,
তনুশ্রী দেখে একটা বৃদ্ধ মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে আর তার দিকেই প্রচন্ড বেগে ধেয়ে আসছে একটা গাড়ি। তনু ভয়ে মুখে হাত দেয় কিন্তু অনেক সময় পার হয়ে যাওয়ার পরে ও কোন আওয়াজ না পেয়ে চোখ তুলে তাকায় আর দেখে একজন সুদর্শন ছেলে বৃদ্ধ লোকটার পায়ে লেগে থাকা ধুলো গুলো পরিষ্কার করছে।তনু অবাক হয়ে যায়।

১৭ বছরের তনুর মনে বেয়ে যায় আলাদা ভালো লাগার হাওয়া আলাদা এক শিহরণ। ভালোবাসা নামক অনূভুতি হঠাৎ ঘিরে ধরে তাকে।

তনুও সে বাতাসে নিজেকে মিলিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে সব কিছু জানতে শুরু করো। কাকতলীয় ভাবে বেশির ভাগ ই তাদের দেখা হতো। সেটা কি আদৌ কাকতলীয় ছিলো নাকি সব কিছুই প্ল্যান করা সেটা তনুর অবুঝ মনটা বুঝতে সক্ষম হয়েছিলো না।

—-
সকালেরর আলো মুখে পড়তেই ঘুম টা ভেংগে গেলো তাহার। কানের ধুক ধুক শব্দটা আসতেই জেনো চমকে উঠলো সে। পরক্ষনে নিজের উপস্তিতি কারো বুকে আবিষ্কার করতেই চমকালো সে। বেশিক্ষন সময় নেয় নি সে বুকের মালিক টা অনুধাবন করতে পারলো সে

তাহা মানুষ টার বাধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।অরণ্যের মুখটা রোদের আলোয় আরো আকর্ষণীয় লাগছে। তাহা আলতো হাতে দাড়ির উপরে হাত বুলায় দিলো।ইচ্ছা করছেনা মানুষ টার থেকে দূরে যেতে কিন্তু তাকে যে যেতেই হবে।

তাহা যেতে নিলেই তার চুলে টান পরে। পিছনে তাকায়ে দেখে তার চুল অরণ্যর শার্টের বোতামের সাথে পেচে আছে(ধুর এতো বড় চুল রেখেও কারো শার্টে আটকায় না)

তাহাঃনিজের কাছে আসলেও নাক ফুলাবে আবার যেতে নিলেও বাধা দিবে। পাগল টা কিন্তু পাগল টাকেই যে ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু এটা এরে কে বুঝায়(অরণ্যর গালে কিস করে)

তাহা অনেক চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা চুল টা ছাড়াতে যেনো চুল টাও চায়না অরণ্যর থেকে দূরে যেতে।

অনেক কষ্টে চুল টা ছাড়াতে সক্ষম হয়।অরণ্যর দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।তাহা চলে যেতেই অরণ্য চোখ খুলে।অরণ্যের ঘুম ভেংগে গেছিলো তাহার মাথা উঠানোর সাথে সাথে।

অরণ্যঃকিছু তো একটা আছে যা আমি চাই এ ও দেখতে পারছি কিন্তু বুঝতে পারছিনা।রোজার এমন বিহেভিয়ার আমার মাথায় ঢুকছেনা।যদি সে আমাকে না ভালোবাসে তাহলে কেনো এই ৪ বছর আমার বিবাহিত বউ হিসেবে ছিলো সে যেখানে আমিই ছিলাম না। আর যদি আমাকে ভালোবাসে থেকে তাহলে কেন ওমন করেছিলো।উফফ পাগল হয়ে যাবো আমি (দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে)

—-

অরণ্য নিজেকে ঠিক করে উঠে মেয়েটার কেবিনের সামনে আসতেই তার মাথায় বিগার চেপে বসে। দৌড়ে তাহা কে নিজের কাছে টেনে নেই। হঠাৎ অরণ্যর এমন কাজে তাহা আর তার সাথে থাকা ছেলে দুইজনেই চমকায়।

তাহাঃকি হয়েছে অরণ্য ভাইয়া
(অবাক কণ্ঠে)
অরণ্যঃকি করছিলি এখানে আর এই ছেলেটাই বা তোর এতো কাছে এসেছিলো কেন হোয়াই।
(তাহার বাহু চেপে ধরে).

তাহা মুচকি হেসে ছেলেটাকে যেতে বলে। ছেলেটাও মাথা নেড়ে চলে যায়।

তাহাঃছেলেটা আমার সাথে জার্নালিস্ট সেও। স্যার আজকের রিপোর্ট পাঠায়েছে সেটার ই আলোচনা করার জন্য এসেছিলো কালকে ওর সাথেই ছিলাম তাই ওই আমার লোকেশান জানে
অরণ্যঃভালো কথা কিন্তু এতো ক্লোজ আসার কি দরকার নাকি এখনো স্বভাব বদলে নি কোনটা। (রেগে যেয়ে)

তাহা অরণ্যর হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে যায় স্টোর রুমের সাইডে। অরণ্য ওইদিকে রাগে গজগজ করছে।

তাহাঃএই এতো রাগ করছো কেনো শুনি সে তো শুধু আমাকে ফাইল গুলো দেখাছিলো তাই হয়তো ক্লোজ এসে গেছিলো এখানে এতোও রিয়েক্ট করার কি আছে।
অরণ্যঃআই ডোন্ট কেয়ার এবাউট ইউর ওয়ার্ক। তোর আশেপাশে কেউ আসবে না আমি ছাড়া।তোকে কাছে টানবো আমি দূরেও সরাবো আমি। ঘৃণাও করবো আমি ভালোও বাসবো আমি বুঝলি তুই
তাহাঃহ্যা বাবা বুঝেছি এবার শান্ত হও তো দেখি কিসের এতো রাগ হাম (অরণ্যের গাল টেনে)

অরণ্যঃরাগ হয়না আমার উপর তোর
(নিজকে শান্ত করে)
তাহাঃকেনো কেনো
অরণ্যঃআমার রাগের আর জেদের জন্য আজকে মামু তোর থেকে দূরে মামি তোকে ঘৃণা করে(মাথা নিচু করে)
তাহাঃওহ এইজন্য এই ভালো ব্যবহার। আর আমি ধূর আমিও কতো বোকা তাই না আপনার দয়া দেখানোকে ভালোবাসা ভেবে বসেছিলাম।

তাহা সেখান থেকে চলে যায় চোখ মুছতে মুছতে। অরণ্য চেয়েও আটকাতে পারেনি। এমন না যে সে ওর সাথে ভালো ব্যবহার করছিলো তার অনুতাপের জন্য সে তার সাথে রুড বিভেব করছিলোনা কারন তার মন বলছে এখানে অন্য কোন রহস্য লুকিয়ে আছে।

অরণ্যঃজানিনা কোন দিকে যাবে এই সম্পর্ক কি হবে এর পরিনতি।কিন্তু আর না ৪টা বছর ঘৃণা করে করে এলে গেছি। নিজের মনের আর মস্তিষ্কের মাঝে আর পারছিনা লড়াই করতে। তুই যদি খারাপ হোস তাতেও আমি রাজি তবুও তোকে ভালোবাসবো আমাদের ভালোবাসা টা হবে অসমাপ্ত। এটা আমার প্রমিজ আমার রেড রোজ।

——

ছাদে দাড়িয়ে থেকে সিগারেটে একটার পর একটা টান দিয়েই যাচ্ছে অয়ন। চোখে তার অনুতাপ ঝলকে উঠলেও ঠোঁটে তার কিছু জয় করার হাসি।

আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অয়ন

অয়নঃপাখি আজকে আমার প্রতিশোধ পূরন হলো আজকে ঠিক একই ভাবে ওই লোকটা অপমানিত হচ্ছে যেমন ভাবে এক সময় তুমি হয়েছিলা। আজকে তোমার একেক টা চোখের পানির হিসাব উঠছে। চিন্তা করো না যে তোমাকে কাদিয়েছে তোমাকে জীবন্ত লাশ বানায়েছে আমি তার কলিজাকে তার চেয়ে দ্বিগুন কাদাবো। (ভয়ংকর চাহনী)
,
,
,
তনুশ্রী ঘুম থেকে উঠে দেখে অয়ন রুমে নেয়। অয়ন কে খুজতে খুজতে ছাদে এসে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে। এর আগে কোন দিন তাকে দেখেনি এই ভাবে। তনুর মন ঠিক বুঝে যায় সামনের মানুষ টার মনে বয়ে যাচ্ছে কোন এক ঝড়।

তনুশ্রী পিছন থেকে যেয়ে জড়িয়ে ধরে অয়ন কে। অয়ন এর হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে যায়। রাগ দাবানোর চেষ্ঠা করে কিন্তু সক্ষম হয়না

ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় তনুশ্রী কে নিজের কাছ থেকে।

অয়নঃকি সমস্যা তোমার হ্যা কথায় কথায় গায়ের উপর ঢলে পড়ো কেন তুমি হ্যা। এতো ব্যাহায়য়া পনা কেন এতো যখন শরীরের জ্বালা তো যা না পতিতা তলায়। (রেগে চিৎকার করে)

অয়ন এর চিৎকার তনুর গায়ে না লাগলেও অয়ন এর বলা কথা গুলো মস্তিষ্কে বারি খেতে লাগলো।সে কোন দিন ভাবেনি অয়ন তাকে এভাবে বলবে পা দুইটা কাপতে লাগলো এক পা দুই পা করে পিছাতে পিছাতে কখন সিড়ির সাথে পা বেধে পরে গেলো তনু বুঝতেও পারেনি।তার চোখ জোড়া তো অয়ন এর দিকে সীমাবদ্ধ কিন্তু অয়ন এর চোখ জোড়া যে অন্যদিকে।

প্রচন্ড রকমের আওয়াযে অয়ন এর টনক নড়ে।হাত পা আসাঢ় হয়ে আসে তার।পিছে ঘুরার সাহস হচ্ছেনা তার। মনে হচ্ছে কেউ শিকল দিয়ে তার পুরো শরীর আবদ্ধ করে রেখেছে।

——-

অপারেশন থেয়াটারের বাহিরে অনবরত পায়চারী করেই যাচ্ছে অয়ন। সে রাগের মাথায় যে কি বলেছে সে নিজেও বুঝতে পারেনি

অয়ন হাটু মুরে বসে পরে।মুখের সামনে ভেসে উঠে তনুর বাচ্চা মুখটা।

অয়ন ভেসে যায় অতীত এ
অয়ন তখন বাবা মা সবার থেকে দূরে নিজের প্রিয়তমাকে নিয়ে আর তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো হাজারো জল্পনা কল্পনা করতে লেগেছিলো কিন্তু সে কল্পনা আর জল্পনা মহূর্তে ভেংগে যায় অন্ধকার এর রাত্রীতে,,,,,,

চলবে,,,,,,