অসমাপ্ত ভালোবাসার শৃঙ্খচীল পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব

0
1047

#অসমাপ্ত_ভালোবাসার_শৃঙ্খচীল
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ7
,
,
,
,
অরণ্য তাহার এমন ব্যবহারে অবাক হয় সে ভেবেছিলো হয়তো সব শুনে তাহা তাকে ঘৃণা করবে কিন্তু তাহার চোখে সে ঘৃণা টা দেখতে পারছেনা সে চোখে শুধু আছে এক আকাশ সমান ভালোবাসা আর মায়া।যে মায়াতে ডুবে সে পারি দিতে পারে হাজার জন্ম।

অরণ্যঃতুই আমার উপর রাগ করিস নি রোজ।
তাহাঃযে ছেলেটা নিজের মনে এতোটা ঘৃণা থাকার স্বর্তেও আমাকে এই ১ টা বছর ভালোবাসার চাদরে মুরিয়ে রেখেছিলো হ্যা জানি আপনি চেয়েছিলেন আমাকে আঘাত করতে। চেয়েছিলেন নিজের প্রতি দুর্বল করে তারপরে আমাকে ছেড়ে দূর কোথায় পারি দিবেন।কিন্তু তার আগেই আমার মাঝেই চলে এলো আপনার অংশ।

অরণ্য অবাক হয়ে শুনছে তার ব্লাক রোজ এর কথা। সে কোন দিন ভাবে নি কেউ কাউকে এতোটা ভালোবাসতে পারে।

অরণ্যঃকেন আমি আগে দেখিনি রে তোর চোখে আমার জন্যে এক আকাশ সমান ভালোবাসা টা।
তাহাঃকারন তখন আপনার চোখে ঘৃণার চাদর ছিলো যেটা এখন নেই।

অরণ্য তাহাকে নিজের বুকের মাঝে আগলে নিলো যেনো ছাড়লেই হারিয়ে যাবে দূর অজানাই।তাহাও চুপটি করে মিশে থাকলো অরণ্যের বুকে।এক হাত অরণ্যের পিঠে অপরটা নিজের পেটে

তাহাঃআজকে আমার সফল বেবি। আজকে আমরা আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ স্থান পেয়েছি। এখন আর তোমার বাবাই তোমাকে ভালোবাসার মিথ্যা নাটক করবে না এখন হয়তো তোমার বাবাই নিজে থেকে আমার খেয়াল রাখবে।

#আমাদের_অসমাপ্ত_ভালোবাসার_শৃঙ্খচীল আজকে আজাদ।কেউ নেই তার ডানা কাটার জন্য।

,
,
,
,
পুরো রেজওয়ান মঞ্জিল সুন্দর করে লাইটিং করা। চারপাশে ঝাড়বাতি জ্বলছে।ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে যেনো চারি পাশ।মিস্টার রেজওয়ান আজকে খুবই খুশি কারন তার মেয়ে নিজ ইচ্ছাই বিয়েতে মত দিয়েছেন।তিনি এবার আর লুকিয়ে দিচ্ছেন না মেয়ের বিয়ে।ঢাকার সকল বড় বড় হস্তি বিজনেস ম্যান সবাই উপস্থিত আছে সেখানে।

কণ্যা সাজে আরও একবার নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে তনু। ঠোঁটের কোনে তার হাসি নেই। আয়নাতে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।সে জানে সে যেটা করতে যাচ্ছে ভুল। কিন্তু তবুও করছে।সে জানে আজকে অনেক বড় ধামাকা হবে। হয়তো সব কিছু ওলোট পালোট হয়ে যাবে তবুও সে রাজি।আরও একবার না হয় ব্যবহার করা হক তাকে এতে যদি কেউ খুশি হয় তাহলে সেটাই শ্রেয়।

তনু বিয়ের পিরিতে বসানো হয়েছে।তার সামনেই তার হবু বর বসে আছে।কাজী তার কাজ করছে।কিছুক্ষন পরেই কাজী দোয়া পরে ছেলেকে কবুল বলতে বলে।ছেলেটা কবুল বলতে যাবে তার আগেই হল রুমের লাইট ওফ হয়ে যায়।তনু নিজেকে শক্ত করে নেয়।কারন এর পরে যা ঘটবে সেটা দেখা তার পক্ষে সম্ভব না।

কিছু সময় পেরুনোর পরেই সেখানে বড় পর্দায় চালু হয় কিছু ভিডিও।ধীরে ধীরে মিস্টার রেজওয়ান আর তার ছেলের সমস্ত কাজ সবার সামনে এসে যায়।ঘৃণায় চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয় তনু।তার পক্ষে সম্ভব না নিজের ভাই আর বাবার এই সব কাজ দেখার।

অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এলো এবার অয়ন।চোখ মুখে তার রাগে গম্ভির।

অয়ন কে দেখে মিস্টার রেজওয়ান আর তার ছেলের বুঝতে বাকি নেয় তাদের পাপের কলস ভর্তি।

___
অয়নঃএকা একা চন্দ্র বিলাস করা হচ্ছে আমাকে ছাড়া বউ তো ভালোনা
(পিছন থেকে তনুকে জরিয়ে ধরে)

তনুর কোন হেলদোল দেখতে পায়না অয়ন যেনো পাথর কে ধরে রেখেছে সে।
অয়নঃএখনো রেগে আছো আমার উপর
তনুঃআপনি ওদের জেলে দিলেন কেন মেরে ফেললেন না কেন
অয়নঃকারন তাদের জন্য আমি এই পিচ্চিটাকে পেয়েছি।আর কি লাগে আমার তাদের শাস্তি নাহয় আইন দিলো।

অয়ন এর কথার বিপরীতে তনু টু শব্দ ও করেনা যেনো বোবা হয়ে গেছে সে।
অয়ন তনুকে নিজের দিকে ঘুরায় তনুর কপালে কিস করে

অয়নঃতোমার এই নিশ্চুপ থাকা টা যে আমাকে বড্ড পিরা দিচ্ছে।তোমার ওই হাসি মুখ ছাড়া যে আমার কিছু ভালো লাগেনা

তনুঃআমি কিছু সময় চায়।

________
৫ বছর পরে,,,

ছোট ৩ টা বাচ্চা দৌড়ে দৌড়ে খেলছে। ৩ জনার মুখেই মন কারা মুগ্ধকর হাসি।

তাদের কে দূর থেকে দেখছে এক কপোত কপোতি।দুই জনার মুখে তৃপ্তির ছোয়া।
অয়ন তনুর মাথাটা নিজের ঘাড় থেকে তুলে নিজের সামনে আনে।
তনুর চোখে পানি
অয়নঃকি হয়েছে পিচ্চি সোনা টা(তনুর গালে হাত দিয়ে)
তনুঃভালোবাসি অয়ন খুব বেশি ভালোবাসি এই তুমি টাকে। জানিনা তোমাকে কতোটা কষ্ট দিয়েছি কিন্তু তুমি তার বিনিময়ে আমাকে ভালোবাসায় ভরায় দিয়েছো।বাচ্চার মতো আগলে রেখেছো
জানিনা কি এমন ভালো কাজ করেছিলাম যার বিনিময়ে আল্লাহ এমন একটা মানুষ আমাকে দিয়েছে। ভাবতেই নিজের প্রতি হিংসা হয় অয়ন খুব হিংসা হয়।
অয়নঃআমি তোমাকে যতোটা না আগলে রেখেছি তার চেয়ে দ্বিগুন খুশি হিসেবে এই দুই টা শয়তান আমাকে দিয়েছো। কতো টা কষ্ট সহ্য করেছো মৃতু যন্ত্রণা ভোগ করে আমাকে এই দুইটা স্বর্গ এনে দিয়েছো আর কি কছু দরকার আছে।

তনুঃএই ভাবেই যেনো আমাদের ভালোবাসার শৃঙ্খচীল টা উড়তে থাকে অসমাপ্ত ভালোবাসার।

অয়নঃঅরণ্য আর বনু তো গেলো তাদের 3rd হানিমুনে গেছে আর আমাদের দায়িত্ব দিয়ে গেছে এই ৩ শয়তানের। আসুক খালি এবার আমরা যাবো।

তনুঃচুপ নিজের বোনের নামের কেউ এগুলো বলে।
অয়নঃরাখো তো বোন
চলো ৩ বানর এর কাছে।
তনুঃহাম চলো(হেসে দিয়ে)

_____
(৫ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। তনু পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে তাদের দুইটা বেবি আছে টুইন্স একটা ছেলে এক মেয়ে।
মেয়ের নাম অয়না। আর ছেলের নাম তানিফ।মেয়েটা হয়েছে বাবা মায়ের মিশ্রণে।আর ছেলেটা মায়ের মতো হয়েছে একদম দুষ্টু।ওদের বয়স ৩ বছর।

অরণ্য আর তাহার জীবন টা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।তাদের এক ছেলে আছে রুহান।বয়স ৫ বছর

________

পাহারের চূড়াই দাঁড়িয়ে আছে অরণ্য আর তাহা।দুইজন এমন ভাবে দাড়িয়েছে একটু ঊনিশ বিশ হলেই পাহারের নিচে।অরণ্য তাহাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তাহা একটুও ভয় পায়না। অরণ্য ডান হাত দিয়ে তাহার হাত ধরে।

অরণ্যঃকি গো প্রিয়সী ভয় লাগেনা যদি একটু হাত টা ঢিল হয় তাহলে একদম উপরে
তাহাঃপারবা আমাকে ছাড়া থাকতে। তোমার প্রতিটা নিশ্বাসে আমার বসবাস।
অরণ্যঃএতোটা বিশ্বাস
তাহাঃতুমি অর্জন করে নিয়েছো
অরণ্যঃযদি সত্যি ফেলে দি
তাহাঃনিজেকে সৌভাগ্যবতী ভাববো কইজনার বা এমন সৌভাগ্য হয় প্রিয়মানুষ টার হাতে মরার
অরণ্যঃভালোবাসি জীবনের শেষ নিশ্বাস অব্দি শুধু তোকেই ভালোবাসি
তাহাঃযদি কোন দিন কিছু যায় বা আমি মারা যায় তাহলে কিন্তু আর কাউকে এই ভাবে ভালোবাসবেন না সহ্য হয়না আমার
অরণ্যঃতোমাকে ছাড়া অন্য কারো ছায়াও আমার সহ্য সীমার বাহিরে
তাহাঃভালোবাসি
অরণ্যঃআই লাভ ইউ মোর দেন এনিথিং
আমাদের অসমাপ্ত ভালোবাসার শৃঙ্খচীল

অরণ্য তাহা কে তুলে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।তাহা দুই হাত দিয়ে অরন্যকে ঝাপটে ধরলো যেনো ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে বহু দূরে
তাহা নিজেকে শান্ত রাখলেও মনে মনে অস্থির হয়ে উঠেছিলো। সে জানতো তার অরণ্য তাকে ছাড়বে না কিন্তু যদি প্রাকিতি কেড়ে নিতো তখন কি করতো কি করে দেখবে সে তাকে। কি করে ছুতো তাকে অনুভর করতো তাকে।

অরণ্যঃভয় পেয়ে গেছিলা তাই না
তাহাঃতোমার থেকে দূরে যাওয়ার ভয় সবসময় তারা করে আমাকে

দুইজনে আবার একে অপরকে জরিয়ে ধরে নিবিড় ভাবে।।।।

সমাপ্তি!!!!

আল্লাহ হাফেজ।।।