আঁধারে আলো পর্ব-০৫

0
264

#আঁধারে _আলো
[৫ম পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ (সবুজ)

নিলীমা রাইসাকে কল দিল। কিছুক্ষণ পরে রাইসা কল রিসিভ করে বলল — হ্যালো কে আপনি?

— আমি নিলীমা।

— আপনি এতো রাতে আমাকে কল দিলেন কেন?

— তোমার সাথে আমার একটু কথা ছিল।

— আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই রাখলাম।

— আপু প্লিজ আমার কথাটা একটু শোনো। আমাকে একটু সময় দাও প্লিজ।

— আচ্ছা বলুন কি বলবেন?

— আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে। কাল একটু দেখা করতে পারবে আমার সাথে?

— ঠিক আছে।

— ধন্যবাদ বোন। রাখলাম ভালো থেকো।

— ঠিক আছে।

তারপর কল রেখে দিয়ে নিলীমা নিচে বিছানা করে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে নিলীমা নাস্তা তৈরি করতে চলে গেলো। অন্যদিকে নিশান এখনো ঘুমিয়ে আছে। নিলীমা রান্না করছে এমন সময় তার শ্বাশুড়ি এসে দাঁড়িয়ে বলল — বউমা তুমি এতো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলে কেন?

— ঘুম ভেঙে তাই ভাবলাম আজ আমি সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে নেই। আজকে আমার হাতের নাস্তা খাবে সবাই।

— আচ্ছা এবার তুমি যাও বাকিটা আমি দেখতেছি।

— না মা আজ সব আমি করবো। আপনি আজ রেস্ট করুন।

ঠিক আছে নিলীমার শ্বাশুড়ি রান্না ঘর থেকে বের হয়ে সোফায় গিয়ে বসল। তারপর নিলীমা রান্না করতে থাকে।

এই দিকে নিশান ঘুম থেকে উঠে নিচে তাকিয়ে দেখে নিলীমা নেই। হঠাৎ করে কাল রাতের কথা গুলো নিশানের মনে পড়ে গেলো। আর সে মনে মনে ভাবতে থাকে – কাল রাতে আমি খুব খারাপ ব্যবহার করছি মেয়েটার সাথে। ওকে বেশিই বলে ফেললাম। যে ভাবেই হোক আমি নিলীমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। মেয়েটা মনে হয় আমার কথায় কষ্ট পেয়ে এই রুমেই আসেনি।

এসব ভাবতে ভাবতে নিশান রুম থেকে বের হয়ে নিলীমাকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু সে নিলীমাকে কোথাও না পেয়ে তার মাকে জিজ্ঞেস করল নিলীমার কথা। এবার নিশান রান্না ঘরে চলে গেলো। রান্না ঘরে গিয়ে দেখে নিলীমা রান্না করছে।

— তোমার সাথে আমার কথা আছে একটু রুমে এসো।

— ঠিক আছে।

তারপর নিশান রুমে গিয়ে নিলীমার অপেক্ষা করে বসে রইল। অনেক্ষন পরে নিলীমা রুমে আসলো। এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নিশান বলল – নিলীমা I an sorry.

— সরি কেন?

— আসলে কাল রাতে তোমার সাথে এমন ব্যবহার করা আমার ঠিক হয়নি। আসলে অনেক রাগ উঠে গিয়েছিল তাই৷

— সমস্যা নেই। আমি কিছু মনে করিনি। আসি আমার অনেক কাজ আছে।

এই কথা বলে নিলীমা রুন থেকে আবার বের হয়ে গেলো। একটু পরে নিশান ফ্রেশ হয়ে নিল। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে সবাই ঘুমিয়ে গেলো, কাওকে কিছু না বলে নিলীমা বাসা থেকে বের হয়ে রাইসার সাথে দেখা করতে চলে গেলো। নিলীমা রাইসার অপেক্ষায় অনেক্ষন বসে থাকার পরে রাইসা আসলো।

রাইসা নিলীমার সামনে বসে জিজ্ঞেস করল — কি বলবেন বলেন?

— আপু নিশান তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসে। তোমার জন্য উনি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তোমরা সব কিছু ঠিক করে নাও।

— সরি আপু আমি পারবোনা। আমার পরিবার থেকে আমার জন্য বিয়ে ঠিক করছে।

— এটা কি বলছো তুমি? তুমিনা নিশান কে ভালোবাসো? এখন অন্য কাওকে বিয়ে করবে কি ভাবে?

— ভালোবাসতাম এখন আর বাসিনা। আমার আব্বু আম্মু যেখানে আমার বিয়ে ঠিক করবে আমি শেখাইনেই বিয়ে করব।

— আমি এই ভাবে বলোনা। প্লিজ তোমাদের সব ঝামেলা মিটিয়ে নাও। তোমাদের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলে আমি আছি।

— আমাদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার মূল কারণ তো আপনি। আপনার জন্যই তো এতো কিছু হলো আপনি নিশানের জীবন থেকে চলে যাচ্ছেন না কেন? আপনি চলে গেলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

রাইসার কথা শুনে নিলীমা অনেক কষ্ট ফেলো আর তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করে দিল। নিলীমা নিজের চোখের পানি মুছে বলল — আপু আমি চলে যাবো তোমাদের জীবন থেকে চিন্তা করোনা। আমি চাই তোমরা সুখে থাকো। তোমরা সব আবার আগের মতো করে ঠিক করে নাও।

— আপনি যখন ওদের বাসা থেকে চলে যাবেন তারপর সব ঠিক হবে। আর আপনি যত তাড়াতাড়ি নিশান কে ডিভোর্স দিবেন তত আমাদের জন্য ভালো হয়।

এই কথা বলেই রাইসা উঠে চলে গেলো। নিলীমা ওখানে বসেই আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। অন্যদিকে বাসায় নিলীমাকে খুঁজে কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা বার বার নিলীমার নাম্বারে কল দেওয়ার পরেও নিলীমা ফোন রিসিভ করছেনা। সবাই খুব ভয় পেয়ে আছে। বেশি ভয় পাচ্ছে নিশান। নিশান মনে মনে ভাবছে তার ব্যবহারের জন্যই নিলীমা বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেলো। নিশান এবার নিলীমার বাবার বাড়িতে ফোন দিল। ওখানেও সে যায়নি। হঠাৎ করে দরজার কলিং বেলের শব্দ শুনে নিশান তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে। দরজা খুলে দেখে নিলীমা বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।

— তুমি কাওকে কিছু না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলে? আর এতো গুলো ফোন দিয়েছি রিসিভ করলে না কেন?

নিলীমা বেগ থেকে ফোন বের করে দেখে ফোন সাইলেন্ট করা দেখে বলল — আসলে আমার ফোন সাইলেন্ট করা ছিল। আর আমি আমার একটা ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে গিয়েছি।

— বাসা থেকে বের হলে যে কাওকে বলে বের হতে হয় সেটা কি তুমি জানোনা?

— সবাই ঘুমিয়ে ছিল তাই আর কাওকে বলিনি, ভাবিনি এতো সময় লাগবে।

— ঠিক আছে যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। আমরা বের হবো।

— কোথায় সাবেন?

— শপিংমলে, কেনাকাটা করতে হবে।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

তারপর নিলীমা ফ্রেশ হয়ে আসলো। আর দুজনেই বের হয়ে গেলো শপিং করার উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা একটা বড় শপিংমলের সামনে গিয়ে নামলো। তারপর সব শপিং শেষ করে তারা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার খেয়ে বের হয়ে বাসার দিকে রওনা দিল। নিশানি গাড়ি ড্রাইভিং করছে। অনেক দূর যাওয়ার পরে হঠাৎ করে তাদের গাড়ির সামনে একটা বড় গাড়ি এসে পড়ে। নিশান গাড়ি টা দেখে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে। আর তাদের ওই গাড়ির মুখোমুখি একটা ধাক্কা খায়। ধাক্কা টা বেশ জোরেই লাগে। যার কারণে দুইজনেই আঘাত হয়ে পায়। নিলীমার কপাল থেকে রক্ত বের হতে থাকে। নিলীমার থেকে আঘাত বেশি পায় নিশান। নিশানের পুরো শরীর রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে। এই দিকে নিলীমা অজ্ঞান হয়ে গেছে। নিশান রক্তাক্ত অবস্থায় নিলীমার দিকে তাকিয়ে দেখে নিলীমা অজ্ঞান হয়ে গেছে।

নিশান নিলীমাকে ডাকতে থাকে — নিলীমা তুমি ঠিক আছো? কথা বলো প্লিজ।

কিন্তু নিলীমার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে নিশান জরে জরে চিৎকার করতে থাকে। একটু পরে নিশান সব কিছুই অন্ধকার দেখতে থাকে। যানো সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসছে। সে আর চেষ্টা করেও নিজের চোখ খুলে রাখতে পারছেনা। এবার সেও নিজের চোখ বন্ধ কিরে নেয়। আর সেও অজ্ঞান হয়ে যায়। এক্সিডেন্ট দেখে এখানে অনেক মানুষ ঝোড়ো হয়ে যায়। তারা নিশান আর নিলীমাকে নিয়ে একটা বড় হাসপাতালে চলে যায়। তাদের দুই জনের অবস্থা খুব খারাপ। সব থেকে বেশি অবস্থা খারাপ নিশানের। তাদের দুইজনকেউ ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এই দিকে একজন লোক নিশানের ফোন চেক করে তার মায়ের নাম্বার বের করে কল দিয়ে বলল তাদের গাড়ি এক্সিডেন্ট হইছে। কোন হাসপাতালে নিয়ে আসা হিয়েছে সেটাও বলল।

ফোন রেখে একটা চিৎকার দিয়ে নিশানের মা অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরের উপরে পড়ে যায়। নিশামের বাবা চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি করে এসে দেখে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।

চলবে,,,