আঁধারে আলো পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব

0
593

#আঁধারে_আলো
[৭ও শেষ পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ (সবুজ)

নিলীমার কথা শুনে তার শ্বাশুড়ি হতবাক হয়ে গেলো। যেনো সে নিজের কান কেও বিশ্বাস করতে পারছেনা।

অন্যদিকে রাইসা গিয়ে নিশান কে বলল — কেমন আছো তুমি?

— ভালো তা আজ হঠাৎ কি মনে করে আশা হলো?

— তুমি অসুস্থ তাই দেখতে আসলাম।

— ওহ আচ্ছা! এখন সুস্থ হয়েছি শুনে দেখতে আসলে এর আগে তো আসলেনা! এর আগে কি আমার কথা মনে পড়েনি তোমার?

রাইসা নিশানের কথার উত্তর না দিয়ে কথা ঘুরিয়ে বলল — ওষুধ খাইছো তুমি?

— হুম খেয়েছি।

— নিশান তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

— কি কথা?

— আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। আর বিয়েটা খুব তাড়াতাড়ি করতেই চাই।

— এতো তাড়া কিসের?

— আমার বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করছে। ছেলেও দেখা শুরু হয়েছে।

— ওহ আচ্ছা, তা হলে বিয়ে কিরে ফেলো!

— মানে কি? আমি তোমাকে ভালোবাসি নিশান, আমি অন্য কাওকে বিয়ে করব কেন?

— ভালোবাসা! হাহাহা,

— হাসো কেন তুমি?

— এমনি বাদ দাও এসব আমি তোমাকে বিয়ে করব সমস্যা নেই।

— তুমি ওই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দাও। ওই মেয়েকে আমার একদম সহ্য হয়না।

— ওহ।

— হুম। আমরা কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে করবো আমি আমার ফ্যামিলির সাথে কথা বলব।

এমন সময় নিলীমা রাইসার জন্য নাস্তা নিয়ে আসলো আর সে সব শুনতে পায়। নিলীমা ভিতরে না গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর নিজের অজান্তেই তার চোখ বেয়ে পানি পড়তে শুরু করে দিল। কিছুক্ষণ পরে নিলীমা নিজের চোখ মুছে হাসি মুখে নাস্তা নিয়ে ভিতরে গেলো আর তাদের নাস্তা দিয়ে আবার বের হয়ে চলে গেলো।

তারা দুজনেই নাস্তা খেয়ে নিল। রাইসা আবার বলল — নিশান তুমি নিলীমাকে কবে ডিভোর্স দিবে?

— সময় হলেই দিয়ে দেবো।

— তাড়াতাড়ি দিবে।

তারপর তারা আরো কিছুক্ষণ কথা বলে রাইসা চলে গেলো। এই ভাবে ৫ দিন কেটে গেলো। নিশান এখন পুরোপুরি সুস্থ। নিশান রুমের ভিতরে শুয়ে আছে তখন তার মা রুমে আসে।

নিশান জিজ্ঞেস করল — কিছু বলবে নাকি মা?

— হুম,

— কি বলবে?

— বাবা একটা কথা মনে রাখিস। কখনো অন্যকে কষ্ট দিয়ে সুখি হতে পারবিনা। আমাদের মাঝে কিছু জিনিস আছে যা আমাদের সামনে থাকে কিন্তু আমরা সেটা দেখতে পাইনা। আবার এমন কিছু জিনিস আছে যেটা আমরা দেখতে পাই আর সেটা আমাদের দেখানো হয়। আসলে সেটা হলো মরিচীকা।

— তোমার কথার মানেটা ঠিক বুঝলাম না!

— সময় হলে ঠিকি বুঝতে পারবি। আমার কাজ আছে আশি।

তারপর তিনি চলে গেলেন। নিশান বসে বসে ভাবতে থাকে কি বলে গেল তার মা। অনেক্ষন ভাবার পরেও সে কিছুই বুঝতে পারল না। নিশান মনে মনে ভাবতে থাকে এবার সবাইকে সত্যি কথাটা বলে দেওয়া দরকার। এই ভাবে আর কতোদিন মিথ্যে নিয়ে থাকবো আমি? সেদিন রাতে সবাই এক সাথে খেতে বসে। হঠাৎ করে নিশান বলল সবার সাথে তার কিছু কথা আছে সবাই যেনো খাওয়ার পরে একটু বসে থাকে। তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে সোফায় গিয়ে বসল।

এবার নিশান বলল — বাবা মা, তোমাদের আমি একটা কথা বলতে চাই। এটা তোমাদের আরো আগে বলার দরকার ছিল। কিন্তু আমি বলতে পারিনি। আজ না বললে হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে।

— কি বলবি বল? (বাবা)

— বাবা নিলীমা আমার বিয়ে করা বউ হলেও আমি নিলীমাকে কখনো নিজের স্ত্রীর অধিকার দেইনি। কারণ আমি অন্য একটা মেয়েকে ভালো বাসতাম।

— মানে কি নিশান? মাথা খারাপ নাকি তোর?

— না বাবা সবি ঠিক আছে। আমি তোমাদের একটা কথা জানাতে এসেছি। আগামী শুক্রবার আমার আর রাইসার বিয়ে।

— এসব কি ধরনের কথা? নিলীমা এখনো তোর বউ। আর তুই এখন আরো একটা বিয়ে করতে চাইছিস?

— আমি ডিভোর্স পেপার নিয়ে আসছি। আর নিলীমা সব কিছুই জানে।

তারপর নিশান নিলীমার হাতে একটা ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দিয়ে বলল — সরি নিলীমা আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিয়।

এই কথা বলে নিশান রুমে চলে গেলো। নিলীমা পাহাড় পরিমাণ কষ্ট বুকে নিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে। নিশানের বাবা বলল — মা আমার জন্য সব কিছু হলো তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস।

এই কথা বলে উনিও চলে গেলেন। নিশানের মা নিলীমার কাছে এসে তার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বলল — আমি জানি তুই নিশান কে ভালোবাসিস। নিজের ভালোবাসার উপরে বিশ্বাস রাখিস। দেখবি আল্লাহ তোর সাথে কোনো খারাপ কিছু হতে দিবেনা।

তারপর নিলীমা তার শ্বাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। নিলীমার কান্না দেখে তার শ্বাশুড়ির চোখ দিয়েও পানি পড়তে থাকে।

নিলীমা নিজের চোখের পানি মুছে তার রুমে গিয়ে দেখে নিশান বসে আছে। নিলীমা নিশানের সামনে গিয়ে বলল — আমার একটা কথা রাখবেন প্লিজ?

— কি কথা?

— আমি আপনাদের মাঝে কখনো বাধা হয়ে আসবো না বিশ্বাস রাখুন। আমাকে শুধু এই বাড়ির একটা কোণে থাকার সুযোগ করে দিবেন প্লিজ? আমি দরকার হলে এই বাড়ির সব কাজ করে দেবো। আমার মা-বাবা যদি এসব জানে তারা সত্যিই মরে যাবে। আমাকে প্লিজ এই বাড়ি থেকে বের করে দিবেন না। আমি আপনার কাছে হাত জোর করে অনুরোধ করছি৷

— নিশান অনেক্ষন চুপ থেকে বলল ঠিক আছে।

নিশান একটা নিশ্বাস নিয়ে নিশানকে ধন্যবাদ দিয়ে একটা কাথা আর বালিশ নিয়ে রুম থেকে বের হতে যাবে এমন সময় নিশান নিলীমাকে ডাক দিয়ে বলল তোমাকে কোথাও যেতে হবেনা তুমি এখানেই থাকো।

— না এই ঘর একান্তই আপনার, আমার আর থাকার কোনো অধিকার নেই।

নিশান ধমক দিয়ে বলল — আমি যেটা বলছি সেটাই করো। বেশি কথা আমার পছন্দ না।

নিলীমা আর কিছু না বলে ওখানেই রয়ে গেছে। এর পরে কেটে গেলো আরো কিছু দিন দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো। আগামী কাল নিশানের দ্বিতীয় বিয়ে৷ রাত প্রায় একটা বাজে তখন নিশান নিজের রুমে বসে আছে। তখন নিশানের মা তার রুমে এসে বলল — নিশান তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিল বাবা।

— হুম বলো।

— বাবা মেয়েটা অনেক কষ্ট পাচ্ছে। আর কষ্ট দিস না মেয়ে টাকে।

— কষ্ট ওর পাওয়ার দরকার আছে।

— মেয়েটার দিকে তাকানো যায়না। কান্না করতে করতে চোখের নিচে কালো দাগ পেলে দিছে। খাওয়া দাওয়া ঠিক করে করছেনা।

— আর তো মাত্র একদিন তারপরেই তো সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে। আর এক দিন না হয়ে কান্না করুন এটাই তার শাস্তি।

— তোর যেটা ভালো লাগে তুই সেটাই কর আমি গেলাম।

তারপর সবাই ঘুমিয়ে গেলো। পরের দিন বিয়ের সব আয়োজন শুরু হয়ে গেলো। বাড়িতে অনেক বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এই দিকে নিশানের আম্মু নিলীমার কাছে একটা লাল শাড়ি নিয়ে গেলো।

— এটা পড়ে নাও তোমার জন্য আমি নিয়ে এসেছি।

— আমার এসবের দরকার নেই মা। আমি এমনি ঠিক আছি।

— তোমাকে পড়তে বলছি পড়ে নাও। কতো মানুষ আসবে এখানে। এটা পড়ে রেডি হয়ে থেকো।

এটা বলে নিলীমার শ্বাশুড়ি চলে গেলো। একটু পরে কিছু মানুষের শব্দ শোনা গেলো বউ এসেছে বউ এসেছে এমন। নিলীমা বুঝতে পেরেছে। নিশান আজকের পর থেকে অন্য কারো হয়ে যাবে। তাই নিলীমা শাড়ি টা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
হঠাৎ নিলীমার গাড়ের উপরে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে তাকিয়ে সেতো হতবাক হয়ে গেলো। কারণ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিশান। নিশান কে দেখে তাড়াতাড়ি করে নিজের চোখ মুছে ফেললো নিলীমা।

তখন নিশান বলল — হইছে আর কান্না লুকাতে হবে না। তুমি রেডি হওনি কেন?

— আপনি আপনার বউকে রেখে এখানে চলে আসলেন কেন?

— আমার বউকে নিয়ে যেতে।

— মানে? আপনার বউ কি এখানে নাকি?

— হুম সে তো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

— বুঝলাম না আমি কোনো কিছুই!

— তোমার এতো কিছু বুঝতে হবেনা। কাজি সাহেব অপেক্ষা করে বসে আছে আমাদের বিয়ে পড়াবে বলে।

— আমাদের বলতে?

— আমার আর তোমার।

— রাইসা আপুর কি হবে?

— রাইসার সাথে আমি অনেক আগেই সব শেষ করে দিয়েছি।

— তাহলে এসব করলেন কেন? কেনো এই বিয়ের অভিনয় করলেন?

— তোমাকে কষ্ট দেবো বলে।

— কেন? আমি কি করছি?

— তুমি আমাকে ভালোবাস সেটা আমাকে বললেনা কেন? তুমি আমার থেকে অনেক কিছুই লুকিয়ে ছিলে। এবং তোমার আগেও একবার বিয়ে হয়েছে সেটাও লুকালে আমার থেকে তার জন্য এই শাস্তি দিলাম তোমাকে। সেদিন মা আমাকে সব বলেছে। আমি ছেয়েছিলাম তোমার মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শুনবো। কিন্তু তুমি তো এমনি বলবেনা তাই এতো অভিনয় করতে হয়েছে আনাকে।

— আপনি একটা,

— কি আমি একটা?

— কিছু না। যান তো এখান থেকে।

নিশান এবার নিলীমাকে একটা টান মেরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এসে বলল — আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা।

নিলীমা নিশানকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল — আপনার সাথে তো আমার ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে! এখন আমি আপনার বউনা।

— হাহাহা, ওটা নকল চিল।

এই কথা বলে নিশান খিল খিল করে হেসে দিল। নিলীমা রেগে গিয়ে নিশানকে মারতে শুরু করলো। নিশান নিলীমার হাত ধরে বলল — এই হাত মারার জন্য না আমাকে আদর করার জন্য।

নিশানের কথা শুনে নিলীমা খুব লজ্জা পেয়ে গেলো। আর নিশান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল — আমি আপনাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি।

— আমি জানিনা ভালোবাসা কি! কতোটুকু ভালোবাসলে সেটাকে ভালোবাসা বলে?
কিন্তু আমি প্রতিদিন বার বার বলতে চাই আমি তোমাকে ভালোবাসি।

তারপর তারা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে রাখলো। তারপর থেকে শুরু হলো নতুন এক ভালোবাসার বন্ধন।

________সমাপ্ত_________