#আঁধারে_আলো
[পর্ব – ৬]
লেখক – শহীদ উল্লাহ (সবুজ)
নিশানের বাবা নিশানের মায়ের চোখে পানি দিয়ে তার জ্ঞান ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করল — কি হইছে তোমার এই ভাবে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে কে?
— নিশান,
নিশানের নাম নিয়ে আবার কান্না করে দিল।
— নিশানের কি হইছে?
— নিশান আর বউমা নাকি হাসপাতালে, তাদের গাড়ি নাকি এক্সিডেন্ট করছে।
— কি বলছ এসব? ওরা এখন কেমন আছে?
— জানিনা বলল ওদের নাকি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। এখম তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলুন।
তারপর দুজনেই হাসপাতালের দিকে রওনা দিল।
এই দিকে নিলীমার জ্ঞান ফিরছে। নিলীমার কপালে ব্যান্ডের করা হয়েছে। নিলীমা উঠে তার কেবিন থেকে বের হতে যাবে তখন একটা নার্স এসে তাকে আটকে দিয়ে বলল — আপনি এই শরীর নিয়ে উঠলেন কেন? আপনার শরীর এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন।
— আমার কথা ভাব্বেন না নিশান কেমন আছে সেটা বলুন।
— ওবার চিকিৎসা চলছে চিন্তা করবেন না উনি ঠিক হয়ে আবে। আর আপনার বাড়ির লোকদের খবর দেওয়া হয়ে গেছে তারা এসে পড়বে।
— আমি একবার ওনাকে দেখতে চাই প্লজ।
— না এখন পারবেন না আপনি রেস্ট করুন।
তারপর নিলীমাকে শুইয়ে দিয়ে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে দিলো আর সে ঘুমিয়ে গেলো। অনেক্ষন পরে নিশানের বাবা-মা হাসপাতালে চলে আসলো।
তারা নিলীমার কেবিনে গিয়ে দেখে নিলীমা ঘুমিয়ে আছে। নিলীমার মাথায় হাত রাখতেই সে চোখ খুলে ফেললো।
নিলীমার শ্বাশুড়ি তার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিতে দিতে বলল — তুমি এখন কেমন আছো মা?
— আমি ভালো আছি উনি কেমন আছে?
— ডাক্তারের সাথে কথা বলছিলাম বলল ওর চিকিৎসা চলছে। এখন কিছু বলতে পারছেনা।
তারপর নিলীমা উঠে বসে বলল — চলুন ওনার আমি ডাক্তারের কাছে যাবো।
তারপর সবাই গিয়ে নিশানের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে রইল।একটু পরে ডাক্তার বের হয়ে এসে বলল — ওনার অবস্থা তেমন একটা ভালো না। মাথায় আঘাত পেয়েছে। এখনো জ্ঞান ফিরে আসেনি। ২৪ ঘন্টা অপেক্ষা করুন তারপর বলতে পারবো। ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি জ্ঞান না ফিরে আসে তাহলে আমরা সরি।
ডাক্তারের কথা শুনে নিশানের মা কান্না করে দিল।নিশানের বাবা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল — আমাদের ছেলের কিছু হবেনা। দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে।
দেখতে দেখতে ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেলো। আর নিশানের ও জ্ঞান ফিরে এসেছে।
ডাক্তার বলল — রোগীর জ্ঞান ফিরে এসেছে। কিন্তু রোগী কিছুদিনের জন্য কোমায় চলে গিয়েছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। এটা ঠিক ভাবে রোগীর খেয়াল রাখলে খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। আমি যে ওষুধ লিখে দিয়েছি ওই গুলা টাইম মতো খাওয়াবেন। আর আপনারা ইচ্ছে করলে রোগীকে যে কোনো সময় বাসায় নিয়ে যেতে পারেন। রোগীর দেখাশোনা করার জন্য আপনারা চাইলে আমি একটা নার্স দিতে পারি।
নিলীমা বলল — ডাক্তার কোনো নার্স লাগবেনা। আমি ওনার সব রকম খেয়াল রাখবো।
— তাহলে তো ভালোই হয়।
তারপর ডাক্তার চলে গেলো। নিলীমা তার শ্বশুর শ্বাশুড়িকে বলল — আপনারা বাসায় চলে যান। আমি এখানে ওনার কাছে আছি।
— মা তুমি তো এখনো অসুস্থ তুমি পারবেনা আমিও থাকি।
— না মা,আমি পারবো কোনো সমস্যা হবেনা। আর আপনি রাত জাগলে আপনিও অসুস্থ হয়ে যাবেন।
তারপর অনেক বুঝিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো নিলীমা। এবার নিলীমা নিশানের কেবিনে ঢুকে দেখে নিশান ঘুমিয়ে আছে। নিলীমা নিশানের পাশে বসে রইলো। দেখতে দেখতে সকাল হয়ে গেলো। নিশান কে নাস্তা খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিল। আর নিশানের সব রকম খেয়াল রাখতে শুরু করে দিল। পরের দিন নিশান কে নিয়ে বাড়িতে চলে গেলো নিলীমা। তারপর নিশানের সব রকম খেয়াল রাখা শুরু করল। নিলীমার সেবা যত্নে নিশান আগের থেকে মোটামুটি অনেক টাই সুস্থ হয়ে গিয়েছে। রাইসা নিশানের অসুস্থতার কথা শুনেও একটি বারের জন্যও দেখতে আসেনি।
নিশান শুয়ে আছে তখন নিশানের মা তার রুমে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো – বাবা তুই এখন কেমন আছিস?
— এইতো আগের থেকে মোটামুটি ভালো আছি।
— জানিস বাবা আমাদের ভাগ্য খুব ভালো তাই নিলীমার মতো একটা মেয়ে পেয়েছি। মেয়েটা না ঘুমিয়ে ঠিক ঠাক ভাবে না খেয়ে সব সময় তোকে নিয়ে পড়ে ছিলো। এমন একটা বউ ভাগে জোটে না। মেয়েটাকে কখনো কষ্ট দিস না তুই।
এই কথা বলে নিশানের মা চলে গেলো। নিশানের মনে এই কয়েক দিনে নিলীমা একটা যায়গা করে নিয়েছে। নিলীমা ও নিশানকে ভালোবাসতে শুরু করে দিয়েছে। নিশান শুয়ে শুয়ে নিলীমার কথা ভাবছে এমন সময় নিলীমা চলে আসলো। নিলীমা এসে বলল — কি করছেন?
— এই তো!
— ঠিক আছেন এখন?
— হুম।
— আপনার জন্য একটা খুশির খবর আছে।
মুখে একটা হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করল নিশান — কি খুশির খবর?
— রাইসা আপনার সাথে দেখা করতে আসবে।
রাইসার কথা শুনেই নিশানের মুখের হাসি উড়ে চলে গিয়েছে।
— আপনাদের দুজনকে খুব ভালো মানাবে।
এই কথা বলে নিলীমা নিশানের রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো। পরের দিন রাইসা ফলফ্রুট নিয়ে নিশানকে দেখতে আসলো। রাইসা নিশানের বাসার সামনে এসে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতে নিশানের আম্মু এসে দরজা খুলে দিল।
মেয়েটাকে এর আগে উনি কখনো দেখেনি। তাই জিজ্ঞেস করলো — কে তুমি মা?
— আন্টি আমি রাইসা আপনি কি নিশানের আম্মু?
— হুম কেন? তোমাকে তো চিনলাম না।
— আসলে আন্টি,,,
এমন সময় নিলীমা এসে রাইসা কে আটকে দিয়ে বলল — আরে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভিতরে এসে বসো।
রাইসা কে দেখে মোটেও খুশি হতে পারেনি নিশানের মা। এবার রাইসাকে নিয়ে নিশানের রুমে চলে গেলো নিলীমা।
নিলীমা নিশানের কাছে গিয়ে বলল — দেখুন কে এসেছে!
নিশান সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে রাইসা। রাইসা একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিশানের পাশে এসে বসলো আর বলল — নিশান কেমন আছো তুমি?
নিশান কোনো কথা না বলে চুপচাপ হয়ে রইল। নিলীমা এবার বলল — আপনারা কথা বলুন আমি বাহিরে আছি৷
তারপর নিলীমা বাহিরে গিয়ে দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে চোখের পানি মুছতে থাকে। মেয়েটা এ কদিনে নিশান কে ভালোবেসে ফেলছে। কিন্তু সে চায় নিশান সুখে থাকুক। হঠাৎ করে নিশানের মা নিলীমার সামনে চলে আসলো। নিলীমা তাকে দেখে নিজের চোখের পানি তাড়াতাড়ি করে মুছে ফেললো।
— নিলীমা তোমার চোখে পানি কেন? কি হইছে তোমার?
— না কিছু হয়নি তো। চোখে মনে হয় কিছু একটা পড়ছে।
— আমার সাথে মিথ্যা বলতে তোমার খারাপ লাগছেনা? আর ওই মেয়েটা কে?
— মেয়েটা নিশানের ফ্রেন্ড। নিশানকে দেখতে আসছে।
— তোমার চোখ অন্য কথা বলছে। কি হইছে সব আমাকে বলো। নিজের মা মনে করে।
— বলব সব কিছু তার আগে আপনি আমাকে একটা কথা দিতে হবে যে এই টা আপনি আর কাওকে বলবেন না। কথাটা শুধু আপনার আর আমার মধ্যে থাকবে।
— ঠিক আছে কথা দিলাম।
তারপর নিলীমা সব কিছু তার শ্বাশুড়িকে বলল। নিশান আর রাইসার ব্যাপারে, আর বিয়ের পর থেকে যা যা হতে হয়েছে সব কিছু। নিলীমার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল শ্বাশুড়ি। নিলীমার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে। ওনার মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
চলবে,,,