#আঁধারে_আলো
[৪র্থ পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ (সবুজ)
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে নিলীমা তার শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে রইল। নিলীমার শ্বাশুড়ি কাথা বালিশ নিচে দেখে নিলীমাকে জিজ্ঞেস করলো — বউমা তোমাদের মধ্যে কি হইছে দুই জন কি দুই যায়গায় ঘুমাও নাকি?
নিশান একটু ভয় পেয়ে গেছে কথাটা শুনে। নিলীমা বলল — আসলে মা কাল কে আপনার ছেলের সাথে একটু ঝগড়া হইছে তাই আমি রাগ করে নিচে ঘুমিয়ে ছিলাম।
— এই হতচ্ছাড়া কি তোমার রাগ ভেঙে দিতে পারে না?
— রাগ তো ভাঙাতেও চেষ্টা করে নাই।
— ও হয়েছে তার বাপের মতো। যাই হোক মা নিশান কে টাইট দিয়ে রাখবে। যেমন আমি ওর বাবাকে টাইট দিয়ে রাখি।
হঠাৎ নিশানের বাবা এসে বলল — কি নিয়ে কথা হচ্ছে? তুমি আবার আমার সাথে কি করলে?
— কি আর করব তোমার ছেলেও তোমার মতই হইছে সেটাই বললাম আর কি।
— আমার ছেলে তো আমারি মতই হবে।
— হুম বউয়ের রাগ ভাঙাতে পারে না। ঝগড়া করতে ঠিকি পারে।
নিশানের মায়ের কথা শুনে সবাই হেসে দিল। নিশানের বাবা বলল — কি কিরছো এসব বাচ্চাদের সামনে এসব বলতে নেই তুমি রুমে আসো।
তারপর তারা বের হয়ে চলে গেলো। তারা চলে যাওয়ার পরে দুই জনে আর নিজের হাসি ধরে রাখতে পারলোনা খিলখিল করে হেসে দিল।
একটু পরে নিশান বলল — ধন্যবাদ।
— কিসের?
— এমন একটা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। আমি তো মনে করছি ধরা খেয়ে গেলাম বুঝি। আর দরজা কি বন্ধ ছিলনা?
— মনে হয় কাল রাতে দরজা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়ছিলাম।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
— উঠন আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন এবার।
নিশান উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে সবাই এক সাথে বসে নাস্তা খেয়ে আবার যে যার রুমে চলে গেলো। দেখতে দেখতে বিকাল হয়ে গেলো। নিশান আর নিলীমা বাসা থেকে বের হয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেলো। দুজনেই বসে বসে রাইসার অপেক্ষা করে বসে আছে। অনেক্ষন পরে রাইসা আসলো। রাইশা নিশানকে আর নিলীমাকে এক সাথে দেখে জেলাস ফিল করছিল।
এবার নিশান নিলীমার পাশ থেকে উঠে রাইসার পাশে গিয়ে বসল। নিশান দুজনের পরিচয় করিয়ে দিল। রাইসা নিলীমাকে তেমন একটা সহ্য করতে পারছেনা।
নিশান — রাইসা তুমি কি এখনও আমার উপরে অবিশ্বাস করে আছো?
রাইসা — অবিশ্বাস এর কি আছে অদ্ভুত! যেটা সত্যি আমি সেটাই বলছি।
নিলীমা — আপু আপনি সঠিকটা বলছেন না। উনি আপনাকে সত্যি অনেক ভালোবাসে। আমার একি রুমে থাকলেও আমাদের মধ্যে কখনও স্বামী স্ত্রীর বন্ধন হয়ে উঠিনি। আমরা কাগজে কলমে স্বামী স্ত্রী হলেই আমাদের মাঝে ওই রকম কোনো সম্পর্ক হয়নি। আর জানেন ভালোবাসার মধ্যে সব থেকে আসল হচ্ছে বিশ্বাস।
নিলীমার কথা গুলো শুনে রাইসা কেমন একটা হয়ে যাচ্ছে। নিলীমার কথা গুলো রাইসার কাছে তেমন একটা ভালো লাগছেনা। নিলীমা ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বলল — আপনারা কথা বলুন আমি অন্য টেবিলে গিয়ে বসছি।
নিলীমার কথা গুলো রাইসার কাছে ভালো না লাগলেই নিশানের কাছে খুব ভালোই লেগেছে।কারণ কথা গুলো তো সত্য৷ হয়তো রাইসা রাগের জন্য অন্ধ হয়ে আছে। তাই তার কাছে ভালো কথাও আজ বিষের মতো লাগছে৷
নিলীমা উঠে যাবে এমন সময় নিশান নিলীমার হাত ধরে বলল এখানেই থাকো তুমি।
নিলীমা বলল — আপনাদের মাঝে আমি থাকতে চাইনা। আপনারা কথা বলুন।
রাইসা নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিলীমাকে বলল – সমস্যা নেই আপনি আমাদের সাথেই বসুন।
তারপর সবাই মিলে নাস্তা খেলো। নাস্তা খেয়ে তিন জনে বেরিয়ে গিয়ে একটা পার্কে গেল। সবাই চুপ হয়ে বসে আছে।
নিলীমা বলল — রাইসা আপু। আমি আপনাদের মাঝে বাধা হয়ে থাকবোনা। আর আপনার ভালোবাসার মানুষটা শুধুই আপনারি থাকবে। আমি তা কখনো ছিনিয়ে নেবো। আমি বুঝতে পারছি আমাকে নিয়ে আপনাদের মধ্যে অনেক ঝামেলা হইছে৷ আপনারা কথা বলুন আমি একটু পার্কটা ঘুরে দেখি।
তারপর নিলীমা উঠে চলে গেলো। নিশান রাইসাকে বলল — এখনো কি রাগ করে থাকবে?
— রাগের কি আছে? আর সব তো দেখলামি। বউয়ের জন্য কি ভালোবাসা।
— কিসের ভালোবাসা?
— কিছুর না। ওর হাত ধরতে গেলে কেন তুমি?
— ও চলে যাচ্ছিল তাই হাত ধরছি।
— আসলে সব ছেলেরাই এক সব সময় সুযোগ খুঁজে। তোমাকে আমার খুব ভালো করে চেনা হয়ে গেছে।
— বেশি বলে ফেলছ এবার তুমি। আমি কোনো খারাপ মতলব নিয়ে ওর হাত ধরতে চাইনি। ওর মধ্যে আর তোমার মধ্যে তফাত টা কি জানো? ওই মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে হইছে মাত্র কয়েক দিন হলো। কিন্তু এই মেয়েটা আমাকে অনেক বিশ্বাস করে। আর তুমি?
— ওহহহ, এখন তো আমি খারাপ হয়ে গেছি তাইনা? হওয়া টাই সাভাবিক, এখন তো নতুন কেউ আসছে। তাকে নিয়ে এক সাথে থাকা হয়। আমাকে কি আর এখন সহ্য হবে নাকি?
রাইসার কথা শুনে নিশানের রাগ উঠে গেলো। হাত তুলতে গিয়েও হাত থামিয়ে নিল নিশান। সে তার নিজের রাগ কন্ট্রোল করে রাইসাকে বলল — রাইসা বেশি বাড়াবাড়ি ভালো না মনে রাখবে।
— আরে এখানে বাড়াবাড়ির কি আছে? যেটা সত্যি সেটাই তো আমি বললাম। আর আমার গায়ে হাত তুলে থামলে কেন? মারো আমাকে। এখন আমার উপরে তোমার হাত তুলতেও কোনো দ্বিধাবোধ হয়না। ভালো থেকো তুমি।
এই কথা বলে রাইসা কান্না করতে করতে চলে গেলো। তারপর নিশান নিলীমাকে নিয়ে শপিং না করে বাসায় চলে গেলো। নিলীমা কিছুই বললনা কারণ নিলীমা কিছুটা বুঝতে পারছে। বাসায় গিয়ে নিশান মন খারাপ করে বসে আছে। নিলীমা নিশান কে সান্ত্বনা দিয়ে বলল — দেখুন উনি রাগ করে আছে। রাগ কোমলে দেখবেন আবার সব ঠিক হয়ে গেছে।
— আমাকে একটু একা থাকতে দাও। আমি একটা থাকতে চাই।
নিলীমা কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে তার শ্বাশুড়িকে সাহায্য করতে চলে গেলো। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো। নিশান রাইসার ফোনে বার বার কল দিচ্ছে। কিন্তু রাইসা ফোন রিসিভ না করে বার বার ফোন কেটে দিচ্ছে।
একটু পরে নিলীমা রুমে এসে বলল — খাবার খেতে আসুন। অনেক রাত হয়েছে।
— আমি খাবোনা খিদে নেই আমার।
— খিদে না থাকলেও খেতে হবে। আসুন বলছি।
— বলছি আমি খাবোনা। জোর করবেনা একদম আমাকে। তুমি খেয়ে নাও।
নিলীমা নিশানের হাতের ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে নিশান রাইসার নাম্বারে বার বার কল দিচ্ছে। কিন্তু রাইসা ফোন কেটে দিচ্ছে।
নিলীমা আবার বলল — প্লিজ খেতে আসুন না হলে আপনার শরীর খারাপ করবে।
নিশান এবার রাগি কণ্ঠে বলল — আমাকে নিয়ে তোমার এতো চিন্তা করতে হবেনা। নিজের খাবার নিজে খাও। আমার জন্য এতো দরদ দেখাতে হবেনা। আর তুমি আমার এমন কেউনা যে তোমার কথা আমাকে মেনে চলতে হবে। সো আমাকে আমার মতো থাকতে দাও। আর তোমার জন্য সব কিছু হচ্ছে। কেন তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলে? আমার অনেক টাকা আছে সেই জন্য? তুমি আমার লাইফে না আসলে আজ এতো কিছু হতোনা। তোমার জন্য রাইসা আমাকে ভুল বুঝতাছে । তোমাকে বিয়ে করা টাই আমার সব থেকে বড় ভুল ছিলো। আমার সামনে থেকে চলে যাও। তোমাকে আমি সহ্য করতে পারছিনা।
নিলীমা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে শুধুই চোখের পানি ফেলছে। বিনা দোষে তাকে কতো কথা শুনতে হচ্ছে।
— কথা বললে কি কানে যায়না? আমার সামনে থেকে এখনি চলে যাও। আর কখনো আমার সামনে আসবে না তুমি।
নিলীমা আর কোনো কথা না বলে কান্না করতে করতে বের হয়ে চলে গেলো। অনেক্ষন পরে নিলীমা রুমে এসে দেখে নিশান ঘুমিয়ে পড়ছে। নিলীমা নিশানের ফোন থেকে রাইসার নাম্বার নিল।আর সে বেলকনিতে চলে গেলো। বেলকনিতে গিয়ে নিলীমা রাইসার নাম্বারে কল দিল। রাত তখন একটা বাজে।
চলবে??