আজকে শহর তোমার আমার পর্ব-০৮

0
592

#গল্পঃআজকে_শহর_তোমার_আমার
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৮

সকালে নাস্তা সেরে আলিফ,রুপ্সিতা আর মাহি বেরিয়েছে ঘুরতে।এখন আশপাশেটা ঘুরবে।দুপুরের পর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাবে ওরা।
পাহাড়ি উঁচু নিচু আঁকা-বাঁকা রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে তিনজনে।রুপ্সিতা হাটছে সামনের দিকে চোখ চারপাশে।এরকম হাটতে গিয়ে একবার হোঁচট খায়।পড়ে যাওয়ার আগে আলিফ হাত চেঁপে ধরে।
একটা ঝাঁড়ি দিয়ে বলে,চোখ কই থাকে তোমার?কিভাবে হাঁটো?

রুপ্সিতা মুখ কালো করে বলল,এরকম করেন কেন?আমি যদি চারপাশে না দেখি তো এখানে এসেছি কিসের জন্য?
আলিফ রুপ্সিতার হাত শক্ত করে ধরে বলল,দেখবা!কিন্তু আগে চলার পথে তাকাবা পরে আসেপাশে।

ওদের কাহিনী দেখে মাহি প্রচন্ড বিরক্ত।কি দরকার আলিফ ভাইয়ার এই মেয়েটাকে এভাবে ট্রিট করার?মেয়েটাকি ছোট নাকি?যত্তসব।
মাহি রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে আলিফের বাহু আঁকড়ে ধরে।আলিফ বিরক্ত হয়ে বলল,দুজন দুদিক থেকে আমাকে চেপে মেরে ফেল।তুই তো এসব রাস্তায় হেঁটে অভ্যস্ত তাহলে আজ তোর আবার হোঁচট খেতে হলো কেন?
আমার মনে হচ্ছে আমি ঘুরতে আসিনি নিজেকে মারতে এখানে এসেছি।
মাহি আলিফের বাহু আঁকড়ে ধরেছে দেখে রুপ্সিতার রাগ লাগলো।ও এবার ইচ্ছে করে রাস্তায় পড়ে গিয়ে পা ধরে বসে থাকলো।

আলিফ কোমরে হাত দিয়ে বলল,বেশ হয়েছে।আরো উল্লুকের মতো করে হাঁটো।রুপ্সিতা পা ধরে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল,আমি কি ইচ্ছে করে করেছি নাকি?
আলিফ নিচে বসে রুপ্সিতার পা চেক করে বলল,দেখি কোথায় ব্যথা পেয়েছো?
রুপ্সিতা পায়ের গোড়ালিতে হাত দিয়ে পা সরিয়ে নেয়।কেঁদে উঠে বলে লাগবেনা পা দেখা।পরে আমি আরো ব্যথা পাবো।

আলিফ বলল,আমাকে দেখতে তো দেবে পা মচকেছে কিনা?
রুপ্সিতা চমকে উঠে বলে না না না কিছু হয়নি।লাগবেনা পা চেক করা।রুপ্সিতা বুঝতে পেরেছে আলিফ এখন ওর পা ধরে মোচড় দিবে।তাই বলল,লাগবেনা আমি বাসায় গিয়ে মলম লাগিয়ে নেবো।

আলিফ বলল,তাহলে এখন বাসায় যাবে কি করে?ঘুরতেও তো পারবেনা এখন।
রুপ্সিতা মনে মনে বলে বেটা তোর কোলে উঠার জন্য এত কিছু করলাম আর তুই জিজ্ঞেস করিস বাসায় কিকরে যাবো?কিন্তু কাঁদো কাঁদো হয়ে মুখে বলল,আমি এখন এখান থেকে উঠতেও পারবোনা।

আলিফ কোনো উপায় না পেয়ে জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে রুপ্সিতাকে কোলে তুলে নিয়ে বাসার পথে হাঁটা দেয়।রুপ্সিতা দুহাত দিয়ে আলিফের গলা আঁকড়ে ধরে।
মাহির রাগ লাগছে এবার।ও আলিফকে একটু একটু পছন্দ করে কিন্তু আলিফ সেটা বোঝার চেষ্টা করেনা।এখন আবার বিয়ে করে এই মেয়েটাকে নিয়ে শুরু করেছে আদিখ্যেতা।রাগ,দুঃখ সব একসাথে মিশিয়ে রুপ্সিতার দিকে তাকিয়ে আছে।যেন পারলে এখনি রুপ্সিতাকে চিবিয়ে খাবে।

রুপ্সিতা ব্যস্ত আলিফকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে।এই কয়দিনে মানুষটার প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছে।আলিফের সাথে থাকতে ভালো লাগে ওর।ওর আশেপাশে থাকলে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়।একমনে চেয়ে আছে আলিফের মুখপানে।হঠাৎ রুপ্সিতার কি হলো ও জানেনা।হাত উঁচু করে আলিফের গাল ছুঁয়ে দিলো।
আলিফ থেমে গেছে রুপ্সিতার হঠাৎ আক্রমনে।পরক্ষণে আবার হাটা ধরলো।ও নাহয় নিজে এখন প্রস্তুত নয় কিন্তু রুপ্সিতার অনুভূতি গুলোকে অগ্রাহ্য করার অধিকার ওর নেই।আলিফর নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য সময় প্রয়োজন।একজনকে ভুলে দ্বিতীয়বার কাউকে মনে জায়গা দেওয়া এতটাও সহজ নয়।যতটুকু সম্ভব রুপ্সিতার সাথে স্বাভাবিক হতে চাইছে।

অনেকটা পথ হেঁটে বাসায় এসে পৌঁছেছে তিনজনে।আলিফ হাঁপিয়ে গেছে রুপ্সিতাকে কোলে নিয়ে।একে তো অনেকটা পথ আবার উঁচুনিচু রাস্তা তাই কষ্টটা একটু বেশিই হয়েছে।

একটু আগেই তিনজনে বেরিয়েছে।এত তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে আবার রুপ্সিতাকে কোলে নিয়ে তাই মাহির মা চিন্তিত হয়ে বলল, কি হয়েছে?তোমরা ফিরে এলে যে।রুপ্সিতার কি হয়েছে?
আলিফ বলল,বলছি আগে ওকে নামাই।রুপ্সিতাকে সোফায় বসিয়ে বলল,মাহি এক গ্লাস পানি দেতো।

মাহির মেজাজ এমনিতেই বিগড়ে আছে এখন ইচ্ছা করছে রুপ্সিতার সাথে সাথে আলিফের মাথাটাও ফাটিয়ে দিতে।
রুপ্সিতা মনে মনে মাহির উপর রাগ ঝাড়ছে।এই মেয়ের কারণে আজ ঘুরতে পারলো না।শয়তান মেয়ে আলিফের সাথে চিপকে থাকতে চায়।
যখন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাবো?তখন তোকে মোটেও নেবো না।স্বামী-ত্রীর মাঝে কাবাবে হাড্ডি হতে আশে।

মাহি পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই আলিফ ঢকঢক করে পুরো গ্লাস খালি করে দেয়।গায়ে ঘাম ছুটে গেছে।রুপ্সিতার এখন নিজের কাছেই খারাপ লাগছে আলিফের অবস্থা দেখে।এবার আলিফ তার মামিকে সবটা বলতেই উনি হন্তদন্ত হয়ে বললেন,সে কি পায়ে বেশি চোট পেয়েছে নাকি?
রুপ্সিতা বলল,মামি আপনি চিন্তা করবেন না।কিছুক্ষণ রেস্ট করলে পা ঠিক হয়ে যাবে।আলিফ রুপ্সিতাকে আবার কোলে নিয়ে রুমে নিতে চাইলে রুপ্সিতা না করে দেয়।ও বলে,
আমি এখানে কিছুক্ষণ থাকি।রুমে একা একা বসে থাকতে হবে।
আলিফ ও আর জোর করলোনা নিজে রুমে চলে এসেছে।

রুপ্সিতা যে পায়ে ব্যাথা পায়নি এমনটা নয়।অভিনয় করে পড়েছে ঠিকই পায়েও একটু ব্যথা পেয়েছে।তবে সেটা এত গুরুতর না।ঘন্টাখানেক বসার ঘরে থেকে মাহিকে ডেকে বলল,ওকে একটু হেল্প করতে।ও রুমে যেতে চায়।মাহির মা মাহিকে বলল,যা ওকে রুমে দিয়ে আয়।

মাহি মুখটাকে বেলুনের মতো ফুলিয়ে রুপ্সিতা কাঁধের নিচে হাত দেয়।রুপ্সিতা ইচ্ছে করে নিজের খানিকটা ভর মাহির উপর ছেড়ে দেয়।মাহি পা এগোতে পারছেনা তাই বলল,তুমি এত ভারী কেন?
রুপ্সিতার রাগ লাগছে কিন্তু মুখে মেকি হাসি ধরে বলল,তুমি এত পাতলা যে তাই আমি ভারী।এখন আমাকে কষ্ট করে রুম পর্যন্ত দিয়ে আসো।
মাহি রক্তচক্ষু নিয়ে বলল,তুমি এসব ইচ্ছে করে করছো তাইনা?
রুপ্সিতা কথা না পেঁচিয়ে সোজাভাবে বলল,অন্যের জামাইর গা ঘেষে দাঁড়ালে এরকমই হবে।এখন কি দেখছো পরে আরো কিছু দেখবে।সো ডিসটেন্স মেনটেইন করে চলবে।

মাহি রুপ্সিতার কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিতেই রুপ্সিতা মাহিকে চেপে ধরে বলে,উহু!আমাকে রুমে দিয়ে তারপর তুৃমি যাবে।অগত্যা মাহি রুপ্সিতাকে রুমে পৌঁছে দিলো।আলিফ ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো।ফোন রেখে পেছনে তাকিয়ে দেখে মাহি রুপ্সিতাকে ঘরে নিয়ে এসেছে।
রুপ্সিতা খাটে হেলান দিয়ে বসে পা টা হালকা একটু নাড়াচাড়া করে নিলো।
মাহি আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলো।আলিফ বলল,ব্যথাটা এখন কেমন?কমেছে?

রুপ্সিতা বলল,হ্যাঁ!এখন অনেকটাই কমেছে।আলিফ চিন্তিত কন্ঠে বলল,পায়ের ব্যথা বেশি হলে আজ আর ঘুরতে যেতে হবে না।
রুপ্সিতা চেঁচিয়ে উঠে বলল,নাহ!আমি ঘুরতে যাবো ততক্ষণে পা ঠিক সেরে যাবে।
আলিফ বিরক্ত হয়ে বলল,তুমি হাটতে পারছোনা বলে আমি তোমাকে কোলে করে নিয়ে আসলাম তাহলে তুমি বিকালে বেরোবে কি করে?পায়ের ব্যথা সারতে অন্তত একদিন তো লাগবেই।

রুপ্সিতা আমতা আমতা করে বলল,আমার পা ঠিক সেরে যাবে।আর যদি না সারে তাহলে যাবোনা।
মানে তোমাকে যেতেই হবে।বিয়ের প্রথমদিন দেখলাম একরকম ভোলাভালা এখন দিনদিন তোমার নতুন নতুন রূপ বের হচ্ছে।।রিতিমতো ঝগড়া করছো।জানিনা আমাকে তোমার আর কত রূপের সাথে পরিচিত হতে হবে।

দুপুরে রোদ একটু কমে আসতেই রুপ্সিতা আর আলিফ পতেঙ্গার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।আলিফ মাহিকে নেওয়ার কথা বলতেই রুপ্সিতা বলল,আমরা স্বামী-স্ত্রী যাচ্ছি সেখানে ও ছোট বাচ্চা গিয়ে কি করবে?
অপমানিত হয়ে মাহি বলল,ভাইয়া আমি এমনিতেও যাবো না তোমরা যাও।
আলিফ রুপ্সিতাকে চোখ রাঙিয়ে বলল,এসব কোন ধরনের কথা হ্যাঁ।ওর খারাপ লেগেছে না?

রুপ্সিতা উল্টো চোখ গরম করে আলিফের দিকে তাকিয়ে বলল,তাহলে ওকে বেডরুমে ও আমাদের সাথে নিয়ে চলুন।
আলিফ আর কিছু বলল না।এই মেয়েটা এখন মাহিকে সহ্য করতে পারছেনা যখন জানতে পারবে ওর স্বামীর জীবনে ওর আগেও অন্যকেউ ছিলো তখন কিভাবে সহ্য করবে?

মেইন চট্টগ্রাম থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ১৪ কিলোমিটার।আলিফ আর রুপ্সিতা দুজনে সেখানে বিকালের মধ্যেই পৌঁছে গেছে।সমুদ্র দেখেই রুপ্সিতার মন খুশিতে ভরে গেলো।আলিফের হাত ছেড়ে দিয়ে সমুদ্রের তীরে গিয়ে দাঁড়ালো।
আলিফ পেছন থেকে চিল্লিয়ে বলছে,দৌঁড়াবানা একদম।এবার কিছু হলে আমি তোমাকে এখানে রেখেই চলে যাবো।
#চলবে………..।

(রি-চেইক করা হয়নি।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।হ্যাপি রিডিং।)