আজ তার বিয়ে পর্ব-০২

0
2775

আজ_তার_বিয়ে
# লেখিকা -নাইমা জাহান রিতু
# পর্ব -২

ইতিরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে ভোর ৫
টার দিকে।এখন বাজে দুপুর ৩ টা।গুলশান তো
দুরের কথা এখনো ঢাকার কাছেই এসে
পৌছায়নি তারা।রাস্তায় প্রচুর জ্যাম।আসলে
রোড গুলোতে কাজ চলছে।একদিকের
রোডগুলো তে পিচ ঢেলে ব্লক করে রেখেছে।
আর অপর পাশের একটি রাস্তা দিয়েই কিছু
গাড়ি ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছে আবার কিছু
সিলেটের উদ্দেশ্যে বা তার আশেপাশে।আর
তাই দুই দিক থেকে আসা গাড়ি গুলোর মাঝে
প্যাচ লেগেই জ্যামটা বেধেছে।ট্রাফিকপ
ুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও তারাও
পেরে উঠছে।টানা ১০ ঘন্টা হলো মাইক্রো তে
বসে থাকতে থাকতে ইতি হাপিয়ে উঠেছে।
এইদিকে মন টা পড়ে আছে তার বাবার বাড়ি।
আজ তার ছোট ভাই ইমতির বিয়ে।অথচ এখনো
সে ঢাকায় পৌছতেই পারছে না।রাস্তার যা
অবস্থা তারা কি আদৌ আজ ঢাকায় পৌছাতে
পারবে কি না এটা নিয়েই সংশয় হচ্ছে।কিন্তু
ইতির তো এখন তার মা ভাইয়ের পাশে থাকার
কথা ছিল।ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে এখন তার
হৈচে করার কথা ছিল।কাজের চোটে এখন তার
দম ফেলানোর সময় টুকু থাকতো না,যদি সে
এখন ঢাকায় তার বাবার বাড়িতে থাকতো।
মুখে বিরক্ত নিয়ে ইতি তার বর পল্লবের দিকে
তাকালো।আজ যদি ইতি তার ভাইয়ের হলুদে
উপস্থিত হতে না পারে তাহলে এর জন্য শুধু
মাত্র এই লোকটাই দায়ী।ইতিকে নিজের
দিকে এভাবে রাগী মুখে তাকিয়ে থাকতে
দেখে পল্লব ভ্রু কুচকে বললো
-“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
-“তো কি করবো?চোখ বন্ধ করে বসে থাকবো?”
-“সেটা কি বলেছি নাকি?স্বাভাবিক ভাবে
বসে থাকো।”
ইতি তার গলার স্বর কিছুটা বাড়িয়ে বললো
-“তো কি আমি স্বাভাবিক ভাবে বসে নেই?
বাদরের মতো লাফাচ্ছি?”
-“অযথা আমার সাথে রাগ দেখাবে না।”
-“অযথা দেখাচ্ছি?”
-“অবশ্যয় এটা অযথা।রাস্তায় কাজ চলছে।আর
কাজ গুলো সরকার করাচ্ছে।আমি করাচ্ছি না।
সো রাস্তার জ্যামের সাথে আমার কোনো
সম্পর্ক নেই।”
-“তোমার এমন যুক্তির খ্যাতাপুড়ি।আমি
গতকালই রওনা দিতে চেয়েছিলাম।তোমার
জন্য আসা হয় নি।যার কারণে আজ আমি আমার
ভাইয়ের হলুদে উপস্থিত থাকতে পারছি না।”
-“চা বাগানের ঝামেলা টা না হলে আমরা
কালই আসতে পারতাম।কারণটা তোমাকে আমি
কতো বার এক্সপ্লেইন করবো?”
ইতি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ির জানালা
দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো।তার এখন
মোটেও কিছু ভালো লাগছে না।আর তার
স্বামী নামক এই লোকটাকে তো আরো না।
হারামি একটা,খাটাশ একটা।মাঝেমাঝে ইতির
প্রায়ই এমন টা হয়।পল্লব কে দুই চোখে সহ্য
করতে পারে না সে।কিন্তু এই মাঝেমাঝে
সময়টা খুব বেশি না।বেশির ভাগ সময়ই সে
পল্লব কে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারে না।তার
মনের মধ্যে আছে শুধুই পল্লব।খুব বেশি
ভালোবাসে তাকে ইতি।৫ বছর আগেই তো তার
মনটা সে পল্লব কে দিয়ে দিয়েছে।পল্লবকে
নিয়েই তো এখন তার এই জগৎ। ৫ বছর হলো বিয়ে
হয়েছে তাদের।৪ বছরের একটা পরী ও আছে
তাদের জগতে। কিন্তু রাগ উঠলেই একদম মাথা
ঠিক রাখতে পারে না ইতি।
-“আম্মু,আর কতক্ষন।বসে থাকতে ভালোলাগছে
না আর।”
পল্লব আর ইতির মাঝেই বসে ছিল তাদের
একমাত্র মেয়ে প্রাপ্তি।মেয়ের কথা শুনেই
পল্লব হাসি মুখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে
বললো
-“আর একটু সময় লাগবে,মামুনি।”
-“সেই কখন থেকেই তো একটা কথায় বলছো
বাবা।”
-“এখন একদম সত্যি বলছি।ঢাকার মাঝে ঢুকে
পড়েছি অলরেডি।”
প্রাপ্তি তার বাবার দিক থেকে চোখ সরিয়ে
মায়ের দিকে নিল।তারপর মায়ের সাথে গা
ঘেঁষে বসে বললো
-“আম্মু,আমি আজ যে শাড়িটা পড়বো ওটা
নানুমনি কিনেছে তো?”
-“হ্যা”।
-“আমি কিন্তু একদম আখিমনির মত শাড়ি
পড়বো।”
ইতি কপাল টা ভাজ করে মেয়ের দিকে
তাকিয়ে বললো
-“অসভ্যতারমির জায়গা পাস না?আখিমনি
আবার কি?মামি শব্দ টা কি মুখ দিয়ে বের হয়
না?আর সরে বস।একদম গা ঘেঁষবি না।”
মায়ের এমন আচারণের সাথে অনেকটা
পরিচিত প্রাপ্তি।৪ বছর বয়স হলেও সব কিছুতে
পাকা সে।অবশ্য আজকের যুগের
ছেলেমেয়েদের পাকতে বয়স লাগে না।আর
প্রাপ্তি সেই তুলনায় কম না।বরং দুই ডিগ্রী
বেশি।দাদি দাদি একটা ভাব আছে তার
মাঝে।প্রাপ্তি মায়ের চোখ রাঙানো দেখে
মায়ের কাছ থেকে কিছুটা দুরত্ব নিয়ে বসলো।
তারপর বাবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে
থাকলো।মেয়ের অসহায় দৃষ্টি দেখে পল্লব
ইতিকে ডাকলো।তার এখন উচিৎ ইতির রাগ টা
ভাঙানো।কিন্তু গাড়ির মাঝে কাজ টা
কিভাবে করবে ভেবে পাচ্ছে না।বাসায়
থাকলে ইতিকে রুমে ডেকে দুই একটা মিষ্টি
মিষ্টি কথা বলে জড়িয়ে ধরে খানিকক্ষণ
আদর টাদর দিলেই রাগ টা পরে যায়।মেয়েদের
মন টা আসলেই অনেক নরম।হাজারো রাগ
স্বামীরর উপর থাকলেও স্বামী যখন তাকে
ভালোবাসা দিয়ে কাছে ডাকে,মিষ্টি করে
দুটো কথা বলে তখনই রাজ্যের সব রাগ পানি
হয়ে যায় তাদের।আর এই টেকনিকটাই কাজে
লাগায় পল্লব ইতির রাগ ভাঙাতে।কিন্তু এখন
গাড়িতে তো মেয়ের,ড্রাইভার এর সামনে
এগুলো সম্ভব না।তাই ইতিকে অন্য কথার মাঝে
ডুবিয়ে দিয়ে রাগ টা ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা
করলো পল্লব।
-“আচ্ছা,আজিজ মামা রা এসেছে?”
ইতির কোন উত্তর না পেয়ে ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে
কথা না বলে আসল কথায় চলে গেল পল্লব।
-“অদ্রির বিয়েতে আসাটা ঠিক হলো না।যাকে
নিয়ে এত বছর হলো ঘর বাধার স্বপ্ন দেখেছিল
তার বিয়েটা আজ অন্য একটা মেয়ের সাথে
নিজের চোখে দেখা চারটেখানে কথা না।
কিন্তু কি এমন হলো ওদের মাঝে যে ওরা দুইজন
একে অপর কে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত বাতিল
করে দিল?”
পল্লবের কথা টা শুনে ইতির রাগে ফুলে উঠা
মুখটি নিমেষেয় চুপষে গেল।একটা দুঃখের
আভা নেমে এল তার চেহারায়।গলাটা কিছুটা
স্বাভাবিক রেখেই পল্লবের দিকে তাকিয়ে
বললো
-“আমার ইমতির কথা মনে হতেই বুকটা ফেটে
যাচ্ছে পল্লব।ওদের মাঝে কিভাবে কি হলো
কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।ইমতি কে বারবার কল
করে জানতে চেয়েছি।কিন্তু ও কিছু বলছে না।
শুধু তার একটাই কথা আপু যা হবার না সেটা
বারবার কেন মনে করিয়ে দাও।আমার ভাইটা
খুব কষ্টে আছে।কিন্তু আমি বোন হয়ে কিছু
করতে পারছি না।”
পল্লব চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো
-“হয়তো ব্রেকাপ হয়ে গেছে।এখনকার দিনে
এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।”
-“৬ বছরের সম্পর্ক এতোটাও ঠুনকো নয় পল্লব।
কোনো ঝামেলা তো অবশ্যয় আছে।”
-“হয়তো।”
-“ওদের মাঝে একে অপরের জন্য ঠিক কতোটা
ভালোবাসা আছে সেটা আর কেউ না
জানলেও আমি অনেক ভালো করেই জানি।৬
বছর আগে যখন ওরা প্রেম শুরু করলো তখনই আমি
বুঝতে পেরেছিলাম।তারপর অনেল ঝামেলা
করে ইমতির মুখ থেকে কথা গুলো বের
করিয়েছি।আমার ভাই টাও একটা পাগল।
জানো,যেদিন ইমতি আমার কাছে সব কিছু
স্বীকার করলো সেদিন লজ্জায় একদম লাল
হয়ে গিয়েছিল ও।মুখ টা নিচু করে কতো জড়তা
নিয়েই না কথা গুলো বলছিল আমার সাথে।আর
আমি ওর এক্সপ্রেসন গুলো দেখে হেসে
গড়িয়ে পড়ছিলাম।”
-“বড় বোনের কাছে নিজের প্রেমের কথা বলা
টা স্বাভাবিক কিছু না।লজ্জা লাগাটা
স্বাভাবিক।”
মুখ কিছুটা বাঁকিয়ে ইতি বললো
-“আমরা কিন্তু আগে বন্ধু।তারপর ভাই বোন।আর
২ বছর খুব বেশি বড় ও না।”
-“হুম,জানি।আর এর কারণেই ইমতি আর অদ্রির
রিলেশনের কথাটা শুধু তুমিই জানো
পরিবারের মাঝে।অবশ্য তোমার কাছ থেকে
পড়ে আমিও জানতে পেড়েছি।এখন আমরা দুজন
জানি।”
মাঝখানে বসে এতোক্ষণ চুপচাপ বসে মা
বাবার কথা মন দিয়ে শুনছিল প্রাপ্তি।কথা
বার্তার এ পর্যায়ে প্রাপ্তিও বলে উঠলো
-“আমিও জানি।”
প্রাপ্তির হঠাৎ করে এমন কথা শুনে পল্লব আর
ইতি প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও পর
মুহূর্তেই আবার দুজন দুজনের তাকিয়ে খিলখিল
করে হেসে উঠল।বাবা মায়ের হাসির কারণ টা
না বুঝলেও গাড়ির মাঝের পরিস্থিতি যে এখন
অনেকটা স্বাভাবিক এটা বুঝতে পেরেই বাবা
মায়ের সাথে হাসিতে যোগ দিল প্রাপ্তি।
-“তুমি এই ঘরে কিভাবে এলে?”
ইমতিয়াজ অদ্রির কানে হালকা করে ঠোট
ছুয়িয়ে বললো
-“আসাটা অসম্ভব কিছু না।”
-“আমি কিন্তু কাল এসেছি তোমাদের বাসায়।
তো হঠাৎ আজ এখন কি মনে করে আমার
সন্ধানে এলে?”
ইমতিয়াজ অদ্রিকে তার নিজের দিকে
ঘুড়ালো।তারপর হাত দুটো অদ্রির কোমরে
নিয়ে হালকা চেপে বললো
-“এখনো সময় আছে অদ্রি।বিয়েটা এখনো হয়
নি।তুমি প্লিজ সত্যি টা বলো।”
অদ্রি কোনো জবাব না দিয়ে ইমতিয়াজ এর
হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু
কিছুতেই পেড়ে উঠলো না অদ্রি।শরীর
এতোটাই দূর্বল হয়ে পড়েছে যে একটা পুরুষালী
হাত তার কোমর থেকে সরাতে পারছে না।
কিছুক্ষণ চেষ্টার পর ব্যর্থ চোখে ইমতিয়াজ এর
দিকে তাকিয়ে বললো
-“ছাড়ো আমাকে।”
এতোক্ষণ চুপচাপ থেকে ইমতিয়াজ অদ্রির হাত
সরানোর চেষ্টা দেখছিল।খুব একটা শক্ত করেও
ধরে রাখে নি সে অদ্রি কে।কিন্তু আজ অদ্রি
এটাই ছাড়াতে পাড়ছে না।নাকি পাড়া
সত্ত্বেও ইচ্ছা করেই সরাতে চাইছে না।
-“কি বলছি?ছাড়ো আমাকে।এমন আচারণ আমার
অসহ্য লাগে।”
-“আগে তো এমন আচারণ তোমার অসহ্য লাগতো
না।আগে তো নিজে থেকেই কাছে আসার
বাহানা খুজতে।তাহলে আজ কেন অসহ্য লাগছে
তোমার?”
ইমতিয়াজ এর কথায় কোনো জবাব না দিয়ে
অদ্রি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
ইমতিয়াজ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর উত্তর
না পেয়ে অদ্রির কোমর টা ছেড়ে দিল।তারপর
হাত দিয়ে অদ্রির মুখ টা উচু করে বললো
-“তাকাও আমার দিকে।”
-“হু।”
-“বলো তুমি এমন টা আমার সাথে কেনো
করলে?”
অদ্রি গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।মনে হচ্ছে
সব কষ্টরা মিলে এক হয়ে তার গলা চেপে ধরে
রেখেছে।ইমতিয়াজ যখন ওর কোমর টা ছেড়ে
দিল তখন ওর বুকের ভেতর একটা মোচড় দিয়ে
উঠেছিল।মুখে ইমতিয়াজ কে কোমর টা ছাড়তে
বললেও মন টা চাচ্ছিল সারাজীবন এর জন্য
ঠিক এভাবেই কোমর টা আঁকড়ে ধরে রাখুক
ইমতিয়াজ।
-“কথা বলছো না কেন?নাকি কথা বলার মতো
মুখ নেই তোমার?”
অদ্রি কষ্ট টা নিজের মাঝেই দাবিয়ে রেখে
খুব স্বাভাবিক গলায় বললো
-“হ্যা,মুখ নেই।তোমার সাথে কোন মুখে কথা
বলবো আমি!তোমাকে ফেলে রেখে নতুন করে
একজনের সাথে প্রেম শুরু করেছি,এটা গলা
ফাটিয়ে বলার মতো কথা না।”
-“আমি বিশ্বাস করি না।আমি তোমাকে
তোমার নিজের চেয়ে অনেক বেশি
ভালোভাবে চিনি,অদ্রি।”
ঠোঁটে কিছুটা হাসি এনে অদ্রি বললো
-“সেটা তোমার ব্যাপার।তুমি বিশ্বাস না
করলেই তো সব মিথ্যে হয়ে যাবে না।”
-“এগুলো যদি সত্যিই হয়,সত্যিই যদি তুমি নতুন
রিলেশনে জড়াও তাহলে নিজের এই হাল
করেছো কেন?আয়নায় নিজেকে একবার দেখে
তারপর উত্তর দিবে অদ্রি।”
অদ্রি হালকা একটা নিশ্বাস ফেলে বললো
-“তুমি আসলেই পাগল।আমার পরীক্ষা চলছিল।
রাত জেগে পড়ে অসুখ বাধিয়েছি।তাই
চেহারায় কিছুটা ছাপ পড়েছে।আর তোমার
কথাটাও হাস্যকর।তোমার কি ধারনা তোমার
বিয়ের কষ্টে বিরহে আমার এই হাল হয়েছে!
আগেও বলেছি আবার এখন বলছি তোমাকে
আমি আর ভালোবাসি না।আমি এখন তোমাকে
নিয়ে আর ভাবিও না।ছোট ছিলাম
তখন,আবেগের বসে তোমার সাথে একটা
সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম।আর ওটা
ভালোলাগা ছিল হয়তো।কিন্তু এখন আমি
যথেষ্ট বড় হয়েছি।সব কিছু বুঝতে শিখেছি।
ভালোবাসা টা কি জানতে শিখেছি।শুধু
পাগলের মতো ভালোবাসি ভালোবাসি
বললেই তো ভালোবাসা হয়ে যায় না।আর
আমি যে আগের সব কিছু ভূলে তোমার
বিয়েতে এসেছি,এঞ্জয় করছি এগুলো কি
তোমার চোখে পড়ে না?এগুলোই কি প্রমাণ
করতে যথেষ্ট না যে তোমাকে নিয়ে আমার
মনে আর কিছু নেই।আমি তোমার সাথে ভাই
বোন ছাড়া অন্যকোনো সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী
নই??”
ইমতিয়াজ খানিকক্ষণ নিরব হয়ে অদ্রির কথা
গুলো হজম করলো।তারপর অদ্রিকে হালকা করে
ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিল
নিজের কাছ থেকে।তারপর গলার স্বর বেশ
খানিক উচু করে বললো
-“বাহ!এখন ভাই বোন হয়ে গেলাম!তোমার মতো
লো ক্লাসের মেয়ের থেকে এর চেয়ে বেশি
আশা করাটাও ভূল।তোমাকে দিয়ে আর যায়
করা যাক বিয়ে করে ঘরে বউ করে আনা যায়
না।আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।তাই
তো তোমার মতো একটা মেয়ে আজ আমার
বাড়িতে বউ হয়ে না এসে আখির মত নিষ্পাপ
এক মেয়ে আমাদের বাড়িতে আসছে।”
ইমতিয়াজ এর ধাক্কায় নিচে পড়ে যেতে
যেতেও নিজেকে সামলে নিল অদ্রি।এখানে
দাঁড়িয়ে থেকে ইমতিয়াজ এর ইমোশনাল কথা
বার্তা শুনে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে কোন রকম
ভাবেই সরে আসতে চায় না অদ্রি।এখনই
ইমতিয়াজ যে ওকে আবার জড়িয়ে ধরে
বোঝানোর চেষ্টা করবে সেটা খুব ভালো
করেই জানে সে।তাই ইমতিয়াজ কে আর সেই
সুযোগ না দিয়ে বিছানার উপর থেকে
শাড়িটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে খুব
তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এল অদ্রি।ইমতিয়াজ এর
বিস্ময় এর সীমা রইলো না।অবশ্য গত ২ মাস
হলো একরকম বিস্ময় ঘিড়ে ধরেছে তাকে।হঠাৎ
করে অদ্রির কথা কমিয়ে দেওয়া,ধীরেধীরে
একদম বন্ধ করে দেওয়া,পরবর্তিতে নতুন একটা
সম্পর্কে অদ্রির জড়িয়ে পড়া,তাদের ৬ বছরের
সম্পর্কের ইতি হওয়া সব কিছুই এখনো ঠিক
ভাবে হজম করতে পারে নি ইমতিয়াজ।অদ্রির
উপর রেগে বিয়েটার জন্য রাজি হলেও কোনো
ভাবেই অদ্রিকে ভূলতে পারছে না ইমতিয়াজ।
এত বড় একটা ধোকা হজম করার জন্য ২ মাস খুবই
কম।আরো কিছুটা সময় দরকার ছিল ওর।এর
মাঝে অদ্রিকে বুঝিয়ে নতুন সম্পর্ক টা থেকে
সরিয়ে আনলেও আনতে পারতো।কিন্তু
কিভাবে কি হয়ে গেল!এত তাড়াতাড়ি
বিয়েটাও ঠিক হয়ে গেল।এখন কিভাবে সব
কিছু ঠিক ঠাক করবে ইমতিয়াজ?অদ্রিকে মন
থেকে মুছে ফেলবে?না,এটা সম্ভব না।তাহলে
কিভাবে কি করবে সে!আর কিই বা করার
আছে তার এই পরিস্থিতি তে??
বিকেল ৫ টার মাঝে সবাই গুলশান শুটিং
ক্লাবে এসে পৌছেসে।হলুদের অনুষ্ঠান টাও
এতোক্ষণে শুরু হয়ে যেত কিন্তু ইতি এখনো এসে
উপস্থিত হয় নি বলে শুরু করতে পারছে না।
ইফতেখার অবশ্য জানিয়েছে ইতিরা
কাছাকাছি আছে।আর কিছুক্ষণ এর মাঝেই
এসে উপস্থিত হবে তারা।
নিচতলা পুরোটাই ডেকোরেট করা হয়েছে ৪
টা রঙ কে প্রাধান্য দিয়ে।হলুদ,লাল,সাদা আর
সবুজ।স্টেজ এর পুরোটাই এই ৪ রঙের নানান
ধরনের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।তার ঠিক
মাঝেই জড়সড় হয়ে বসে আছে আখি আর
ইমতিয়াজ।যেন ফুলের বাগানের মাঝে বসে
আছে এক জোড়া মৌমাছি।ইমতিয়াজ আখির
পাশে বসে রইলেও একবারের জন্যও চোখ টা
আখির দিকে দেয় নি।কাল যার সাথে তার
বিয়ে তাকে একটা বার দেখার ইচ্ছা হওয়াটা
মোটেও অহেতুক নয়।কিন্তু ইমতিয়াজ এর
মোটেও এই ইচ্ছে টা হচ্ছে না।বরং তার
চোখজোড়া খুঁজে বেড়াচ্ছে অন্য একজন কে।
কোথায় অদ্রি?এইদিকে কোথাও তো দেখা
যাচ্ছে না।অদ্রি কি আসে নি?একা একাই কি
বাসায় রয়ে গেছে?মেয়েটা যে অসুস্থ সেটা
ওকে দেখেই বোঝা যায়।কিন্তু কি এমন হলো?
কোথাও তো একটা ঘাপলা অবশ্যই আছে।
ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ইমতিয়াজ।
ইমতিয়াজ অবশ্য অদ্রির ২ মাসের সো কল
বয়ফ্রেন্ডের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা
অনেকবার করেছে।কিন্তু লাভ হয় নি।ফোন
নাম্বার জোগাড় করে কল করেছিল।কিন্তু
রিসিভ করে নি কোনো বারই।এফবি তেও
ম্যাসেজ করেছিল।ম্যাসেজ টা পড়ে ব্লক করে
দিয়েছে তাকে।এমন কি ছেলেটার সাথে
দেখা করার জন্য রাজশাহী তেও গিয়েছিল।
কিন্তু ছেলেটাকে তার ঠিকানায় ও পায় নি।
আদৌ কি তার অস্তিত্ব অদ্রির জীবনে আছে
কিনা এটা নিয়েই কিছুটা হলেও সন্দেহ আছে।
ছেলেটা অদ্রির সাথে রাজশাহী ভার্সিটি
তেই পড়ে।এমনো তো হতে পারে ছেলেটি
অদ্রির শুধুই বন্ধু।কিন্তু তাহলে অদ্রিই বা কেন
মিথ্যে বলবে!আর এখানে অদ্রির সার্থই বা
কি??আর কিছুই ভাবতে পারলো না ইমতিয়াজ।
চোখ টা ঝাপসা হয়ে আসছে।চোখের পানি
উপচে বেড়িয়ে আসতে চাইছে ভেতর থেকে।
নিজেকে সামলানো টা এখন খুব বেশি জরুরি।
তাই বসা থেকে উঠে ইমতিয়াজ হাটতে শুরু
করলো বাইরের বাগানের দিকে।বাগানটায়
অনেক ধরনের ফুল দেখা যাচ্ছে।বাগানের
পাশে খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে
স্মৃতির পাতা উল্টোতে শুরু করলো ইমতিয়াজ।
সাজিদদের বাংলাদেশে আসার উদ্দেশ্য টা
এখন পরিষ্কার হলো ইফতেখার এর কাছে।
ইফতেখার সাজিদের কাধে এক হাত দিয়ে
চাপড়ে বললো
-“তুই আর ইমতিয়াজ আমার কাছে একই।তুই যা
ইমতি ও তাই।তুই যে পরিবার সহ ইমতির বিয়ে
এটেন্ড করতে আসিস নি সেটা আগেই
ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলাম আমি।তা
কতো দিন আছিস?”
-“এক মাসের মতো ভাইয়া।”
-“এক মাসের মাঝে মেয়ে খুঁজে আবার বিয়ে
করাটা টাফ।একটু বেশি সময় নিয়ে আসতে
পারতি।”
সাজিদ লজ্জিত ভঙ্গিতে হালকা হেসে
নিচের দিকে তাকিয়ে বললো
-“ইয়ে মানে…!মেয়ে খুঁজতে হবে না ভাইয়া।”
-“এর মাঝে আবার মেয়েও ঠিক করে ফেললি
তুই?”
এবারে মাথা টা তুলে ইফতেখার এর দিকে
তাকিয়ে সাজিদ স্বাভাবিক ভঙ্গীতে বললো
-“আমি অদ্রি কে বিয়ে করতে চাই।”
(চলবে)