আজ তার বিয়ে পর্ব-০৩

0
1928

# আজ_তার_বিয়ে
# লেখিকা -নাইমা জাহান রিতু
# পর্ব -৩

সাল টা তখন ২০১২। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি
সময়। গ্রীষ্মের ছুটি চলছে সব স্কুল কলেজে।
বাড়িতে বসে একাকী নির্জন সময় কাটাচ্ছিল
অদ্রি। পড়াশোনায় খুব মনযোগী হলেও
সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকার অভ্যাস তার
মাঝে নেই। মাত্র কিছুদিন হলো স্কুলে ক্লাস
শুরু হয়েছিল। দশম শ্রেণীতে উঠে নতুন নতুন
ক্লাস শুরু করেছিল অদ্রি কিন্তু এর মাঝেই
আবার ছুটি এসে পড়লো। অবশ্য এখনো গুনে গুনে
আরো দশ মাস আছে তার এসএসসি পরীক্ষার।
অনেকটা সময় এখনো আছে তার হাতে। তাই
বেশি প্যারা না নিয়ে এই ছুটির দিনগুলোতে
শুয়ে বসে আরামে সময় কাটাচ্ছিল অদ্রি। ঠিক
সেই সময় গ্রামে বন্ধু বান্ধব নিয়ে ঘুরতে এল
তার ফুপাতো ভাই ইমতিয়াজ।
ছোট বেলায় ইমতিয়াজ এর সাথে অদ্রির খুব
সখ্যতা থাকলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটা
ক্রমেই কমে এসেছে। এখন বলতে গেলে
প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা কথা হয় না তাদের।
যখন ইমতিয়াজ ঢাকা থেকে তার মামার
বাড়িতে ঘুরতে আসে তখন ‘কেমন আছো অদ্রি,
পড়াশোনার কি খবর’ আর ঢাকা ফিরে যাবার
সময় ‘ভালো করে পড়াশোনা করো অদ্রি’ এমন
ধরণের দু একটা কথা ছাড়া তাদের মাঝে বিনা
কারণে আর তেমন একটা কথা হতো না। কিন্তু
ছোট থাকতে তাদের মাঝে এই জড়তা টা ছিল
না। মেপে মেপে কথাও বলতো না তারা।
ইমতিয়াজ গ্রামে এলে যেন খুশির সীমা
থাকতো না অদ্রির মনে। একসাথে বৌছি,
কানামাছি, গোল্লাছুট নামক আরো বিভিন্ন
খেলায় তারা মেতে থাকতো। অথচ আজ একে
অপরের সাথে কথা বলতেও কেমন যেন একটা
অস্বস্তি কাজ করে। অবশ্য ইমতিয়াজ সবার
সাথেই খুব কথা বলে। অপরদিকে ইফতেখার
ছিল ইমতিয়াজ এর পুরো উলটো। অদ্রির সাথে
খুব ভাব ও ছিল। অদ্রির নিজের ও কথা বলতে,
এক সাথে চলা ফেরা করতে ভালো লাগতো
ইফতেখারের সাথে। দুই আপন ভাইয়ের এতোটা
অমিল লক্ষ করে অদ্রি নিজেই মাঝেমাঝে
কিছুটা হতাশ হতো।
ইমতিয়াজ এর সাথে এবার গ্রামে এসেছে তার
ভার্সিটির ফ্রেন্ড নিলয়। অদ্রির সাথে
ইমতিয়াজ এর গ্রামে আসার দিন কথা হলেও
পরে আর কথা হয় নি। অদ্রি নিজে ও সেধে
সেধে কথা বলতে যায় নি ইমতিয়াজ এর সাথে।
এদিকে নিলয় নামের ছেলেটা যেন অদ্রির
পিছুই ছাড়ে না। সব সময় বিরক্ত করে মারে।
এখানে ঘুরতে নিয়া যাও, ওখানে ঘুরতে নিয়ে
যাও শুনতে শুনতে বিরক্তের সীমা ছাড়িয়ে
যাচ্ছে। মাত্র তিন দিনেই এই হাল। এরা নাকি
থাকবে আরো দশ পনেরো দিন। ভেবেই অন্তি
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছিল। ঠিক এর মাঝেই এসে
উপস্থিত হলো আবার নিলয় নামের বান্দর টা।
কিছু কথা এই লোকটাকে শুনাতে যাবে ঠিক
সেই মুহূর্তেই নিলয়ের সাথে সাথে অদ্রির ঘরে
ঢুকলো ইমতিয়াজ। নিলয়কে দেখে যতটা ফুলে
ফেঁপে উঠেছিল ইমতিয়াজ কে ততোটাই চুপষে
গেল অদ্রি। বিছানার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে
বললো
-“কিছু দরকার?”
ইমতিয়াজ কোনো উত্তর না দেবার আগেই
নিলয় বলে উঠলো
-“অবশ্যই দরকার।”
অদ্রি নিলয়ের কথা শুনে মনে মনে বললো
তোরে জিগাইছি বেডা!হুদাই আগে আগে মুখ
নড়াস।
-“কী দরকার?”
-“তোমারদের বাড়ির ওপাশটায় যে চলনবিল
আছে ওইদিক টায় যেতে চাচ্ছি। তুমিও চলো।”
-“আমার মাথা ব্যথা করছে, যেতে পারবো না।”
এ পর্যায়ে ইমতিয়াজ মুখ খুলে বললো
-“অদ্রি, গেলে মাথা ব্যথা টা কমে যাবে।”
অদ্রি বিরক্ত মুখে ইমতিয়াজ এর দিকে
তাকিয়ে বললো
-“চলনবিল আবার কবে থেকে মাথা ব্যথা
কমানোর ঔষধ হিসেবে কাজ করতে শুরু
করেছে?”
-“না, মানে সেটা বলছি না।”
-“সরি, আমি যেতে পারবো না।”
নিলয় এতোক্ষণ চুপ থেকে দুজনের কথা বার্তা
খেয়াল করছিল। অদ্রির মুখে বিরক্তির ছাপ
দেখে বললো
-“থাক, ওর যেতে হবে না। চল, আমি আর তুইই
যায়, ইমতি।”
অদ্রি কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বললো
-“ইমতি ভাইয়াও যাচ্ছো?”
নিলয় হালকা হেসে বললো
-“জ্বি, ম্যাডাম।”
-“আচ্ছা চলুন তাহলে। হাজার হোক আপনি
আমাদের এখানে ঘুরতে এসেছেন, আপনাকে
নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গ্রাম দেখানো আমার
দায়িত্ব।”
-“এইতো লাইনে এসেছো। তো যাওয়া যাক
তাহলে। ভাবি, আপনি এগোন।”
ভাবি ডাকটা শুনে এই মুহূর্তে দম টা আটকে
আসছিল অদ্রির। নিলয় নামের ছেলে টা কী
তালে ভাবি বলে ডাকছে? না,ভাবি বলে
ডাকবে কেন? কোন জনমের ভাবি হয় নিলয়ের
সে? তাহলে কী ভুল শুনেছে নাকি? হুম, এটাই
হবে হয়তো। তাই এই একটা শব্দের পিছনে না
পরে থেকে অদ্রি এগুলো। ওর পেছনে পেছনে
গুঁতোগুঁতি করতে করতে ঘর থেকে বেড়িয়ে এল
ইমতিয়াজ আর নিলয়ও।
দেখতে দেখতেই দশ টা দিন খুব তাড়াতাড়ি
পার হয়ে এল। কাল সকালের ট্রেনেই ঢাকায়
ফিরে যাবে ইমতিয়াজ ও নিলয়। ভেবেই
অদ্রির বুকটা কেপে উঠছে বারবার। প্রতিবারই
ইমতিয়াজ ঢাকায় যাবার সময় খুব খারাপ লাগে
অদ্রির। মুখ ফুটে কখনো কথা না বললেও
ইমতিয়াজ এর তাদের বাড়িতে উপস্থিতি
অনেকটা আনন্দ দেয় তার মনে। কখনো এই
খারাপ লাগাটাকে পাত্তা না দিলে আজ খুব
বেশি খারাপ লাগছিল অদ্রির। মনে হচ্ছিল এই
একটা রাত যদি ইমতিয়াজ ভাইয়ের সাথে
কিছুক্ষণ গল্প করে কাটানো যেত, তাহলে
কিন্তু মন্দ হতো না। অথচ এটা কখনো হবার না।
গল্প টা তো দুরের কথা মুখ খুলে দু একটা কথাও
বলবে কি না এটা নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ!
ইদানীং নিলয় নামের বাদরটাও ভাবি ভাবি
বলে ডাকা শুরু করেছে। এই ভাবি ডাকার
পিছনে কী মর্মার্থ আছে সেটা আল্লাহ
ভালো জানে। একবার অদ্রি ভেবেছিল নিলয়
ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করবে কিন্তু পরমুহূর্তেই
ইচ্ছাটাকে নিজের মাঝেই দাবিয়ে রেখেছে
সে।
এদিকে কাল ভোরের ট্রেন ইমতিয়াজ দের।
অথচ এবারো কাজ টা না করেই ফিরতে হচ্ছে
ঢাকায় তাকে। গ্রামে আসতে ইমতিয়াজ এর
মোটেও ভালোলাগে না। কিন্তু এই কাজ টার
জন্য বারবার তাকে গ্রামেই আসতে হয়। অথচ
কোনো বারই কাজ টা করতে পারে না সে।
ভেবেই লম্বা একটা শ্বাস ফেললো ইমতিয়াজ।
ঠিক সেই সময় নিলয় বিছানায় শোয়া থেকে
উঠে বসে বললো
-“এতোটা হতাশ হয়ে পড়ো না বন্ধু। তোমার
জায়গায় আমি থাকলে কাজ টা এক নিমিষেই
খতম করে দিতাম।”
ইমতিয়াজ ভ্রু কুঁচকে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে
বললো
-“তো ধর আমিই তুই। এখন এক নিমিষেই কাজ টা
খতম করে আয়, যা।”
-“ধুর, আমি ধরলেই তো আর হলো না, তোর গুণধর
বোনকেও তো ধরতে হবে। না হইলে আমাকে
পাদানি দিয়া তোর মামা এত রাতেই বাড়ি
থেকে বের করে দিবে।”
-“শোন, আর যাই বলিস বোন বলবি না।”
নিলয় ইমতিয়াজ এর কথা শুনে হাসতে হাসতে
শার্ট টা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে
গেল। এদিকে ইমতিয়াজ এর অবস্থা একরকম
কেরোসিন বললেই চলে। মামাত বোন অদ্রি
কে খুব বেশি পছন্দ করে সে। ২ বছর যাবৎ এই
একটা কথা বলার চেষ্টাতেই সে বারবার
গ্রামে আসে। কিন্তু কোনো বারই বলা হয় না।
অবশ্য কিভাবে বলবেই বা সে? যেদিন থেকে
বুঝতে পারলো অদ্রির কে নিয়ে তার মনে কিছু
একটা আছে সেদিন থেকেই একরকম দূরে দূরে
থাকে সে অদ্রির কাছ থেকে। কথা বার্তাও
তেমন একটা বলে না। অদ্রির কাছে গেলেই
কেমন যেন অন্য রকম একটা ফিলিংস কাজ
করে তার মাঝে। তাই একরকম দুরেই থাকে সে
অদ্রির কাছ থেকে। আরো একটা কারণে সে
মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। সেটা হলো
অদ্রির বয়স। অনেক ছোট সে। এখন তাকে গিয়ে
ভালোবাসার কথা বললে কে জানে কিভাবে
নিবে সে! কী ভাববে আবার ইমতিয়াজ কে।
আবার মামা কেউ বলে দিতে পারে। তখন
লজ্জায় মাথা কাটা যাবে। এসব ভেবেই
কখনো সাহস করে ভালোলাগার কথাগুলো
বলতে পারে নি ইমতিয়াজ অদ্রিকে।
অদ্রি তার ঘরে বসে মন দিয়ে গণিত করছিল।
গণিততে খুব একটা পাকা না হলেও গণিত করতে
তার খুব বেশি ভালো লাগে। বিশেষ করে
ত্রিকোণমিতি। ত্রিকোণমিতির ৯.২ চ্যাপ্টার
টার অংক গুলো নিয়ে বসে ছিল সে। তার
মাথায় এখন শুধু sin cos tan cot sec cosec ঘুরছে।
বাকি পৃথিবির কথা আপাতত তার স্মরণে নেই।
ত্রিকোণমিতিক অনুপাত গুলো নিয়ে অনেকটা
ঝামেলায় আছে সে। কিছুতেই মুখস্ত করেও
মনে রাখতে পারে না এগুলো। তার বাবা
অবশ্য বলেছে কোনো জিনিশ মুখস্ত করতে হলে
সেটা জোরে জোরে পড়তে হয়। তাহলে নাকি
সেই শব্দ গুলো কান ভালোভাবে শ্রবণ করে
মস্তিষ্কে পাঠায়। তখন খুব সহজেই নাকি
সেগুলো মনে থাকে। তাই অদ্রি কিছুটা জোর
আউয়াজেই পড়তে শুরু করলো
“Sin 0° = 0
Sin 30° = 1/2
Sin 45° = 1/√2
Sin 60° = √3/2
Sin 90° = 1….”
ঠিক সেই সময় দরজায় টোকা পড়লো। অদ্রি
পড়া না থামিয়েই বলতে লাগলো
-“Cos 0° = 1.. কে?”
দরজার ওপাশ থেকে নিলয় বলতে লাগলো
-“Cos 0° = 1.. আমি নিলয়।”
অদ্রি নিলয়ের কথা শুনে রেগে তেড়ে এসে
দরজা খুলে বললো
-“আপনি আমার সাথে মশকরা করেন?”
-“Cos 0° = 1..আজ্ঞে না।”
-“মানে?”
– “Cos 0° = 1..মানে তুমি কি আমার ছেলে
মেয়ের ত্রিকোণমিতির ম্যাম হবে?”
এবারে অদ্রি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুড়ে দিল নিলয়ের
দিকে। তারপর ধমকের সুরে বললো
-“এগুলো কি ধরণের কথা বার্তা! রাত বিরাতে
মেয়েদের দরজায় দাঁড়িয়ে এই সব কী ধরনের
কথা বলেন? দাঁড়ান, এখনি বাবা কে এখনি
ডাকছি। বা..
-“আরে ভাবি আমার, পায়ে পড়ি চুপ করো।
আমার ছেলে মেয়ের না ইমতিয়াজ এর ছেলে
মেয়ের ত্রিকোণমিতির ম্যাম হও না,, প্লিজ
প্লিজ!! নিজেকে ইমতি ভেবে অফার টা করতে
এসেছিলাম।”
অদ্রি অবাক দৃষ্টিতে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে
বললো
-“ইমতিয়াজ ভাইয়া বিয়ে করেছে নাকি?
বাচ্চা এল কোথা থেকে?”
-“করে নি। তবে করবে। আর তখন তুমি তাদের
পড়াবে।”
অদ্রির মাথায় কিছুই ঢুকছে না। এই লোকটা
পাগল হয়ে গিয়েছে নাকি! কি সব উলটা
পালটা কথা বলছে!
-“ভাবি প্লিজ তাড়াতাড়ি উত্তর টা দাও।
নিয়ে যাই। বন্ধু আমার অপেক্ষা করছে।”
অদ্রি কপাল টা ভাজ করে বললো
-“কিসের উত্তর দিব? আর ভাবি ভাবি করবেন
না একদম।”
-“অবশ্যয় করবো। ফ্রেন্ডের বউ কে সবাই ভাবি
ই বলে।”
-“আমি আবার আপনার কোন কালের কোন
ফ্রেন্ডের বউ?”
-“কেন? ইমতির।”
নিলয়ের কথা টা শুনেই অদ্রির হার্টবিট মিস
হওয়ার উপক্রম হলো। তার মনে হতে লাগলো
নিশ্বাস নেওয়াটা যেন মানুষের জন্য খুব কঠিন
কাজ। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে
জোরে একটা নিশ্বাস ফেললো অদ্রি। তার
মাথা টা ঘুরছে খুব। মাথায় কিছু ঢুকছে না। কি
বলছে এই লোকটা? সে কিভাবে ইমতিয়াজ
ভাইয়ের বউ হবে?
অদ্রির অবস্থা দেখে নিঃশব্দে কিছুক্ষণ
হাসলো নিলয়। তারপর অদ্রির কাধে এক হাত
রেখে বললো
-“আমার বন্ধু টা তোমাকে খুব বেশি
ভালোবাসে। কিন্তু হাদারাম কিছুই বলতে
পারে না। তাই ওর হয়ে এবার আমি তোমাকে
বলে দিলাম। উইল ইউ বি ত্রিকোণমিতি.. অপ্স!
সরি সরি, উইল ইউ বি মাদার অফ ইমতি’স
চিলড্রেন?”
সেই রাতে অদ্রি কোনো উত্তর না দিলেও
পরদিন রাতে বাবার ফোনটা চুপিচুপি নিয়ে
এসে অদ্রি ইমতিয়াজ এর নাম্বার ডায়াল
করলো। ইমতিয়াজ তখন ডিনার সেরে মাত্রই
তার ঘরে এসে বসেছে। এত রাতে মামার
নাম্বার থেকে কল এসেছে দেখেই কিছুটা
অবাক হলো সে। সকালে আসার সময় নিলয়
কাল রাতের ঘটনা গুলো বলেছে ওকে। তাহলে
কি অদ্রি মামা কে সব কিছু বলে দিল?
পরমুহূর্তে আবার মনে পড়লো আজ ঢাকায়
আসার পর মামাকে ফোন করে জানানো হয় নি
যে সে ঠিক ভাবে বাসায় পৌছেছে। মামা
হয়তো চিন্তা করছিল। আর কিছু না ভেবে
কাপা কাপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলো
ইমতিয়াজ।
-“আসসালামু আলাইকুম, মামা। আসলে আসার
পর একটা কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে
পড়েছিলাম। তাই আর ফোন করে জানাতে
পারি নি। ভালো ভাবেই পৌছেছি আমরা।”
অদ্রি কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কেন ফোন
দিল সে ইমতিয়াজ ভাইয়া কে? কী দরকার
ছিল! এখন কিই বা বলবে সে! আর ইমতিয়াজ
ভাইয়া তো নিজে থেকেও তাকে কিছু বলে
নি। তার বন্ধু বলেছে। সে তো মিথ্যে ও বলতে
পারে। তার সাথে ঠাট্টা ও করতে পারে। হায়
আল্লাহ! এই টাই হবে হয়তো। অদ্রি নিজের
কপালে থাপড়াতে শুরু করলো। এই কারণেই সে
কাল রাত দু চোখের পাতা এক করতে পারে
নি। সারা রাত এটা নিয়ে উলটা পালটা
চিন্তা ঘিরে ধরেছিল তাকে। এমনকি আজ
সকালে যখন ইমতিয়াজ ভাইয়া রা চলে গেল
তখন ও নিজের ঘর থেকে বের হয় নি সে। তার
তখন খুব কান্না পাচ্ছিল। আর তাই ঘরে বসেই
চুপচাপ চোখের জল ফেলছিল সে।
ফোনের ওপাশে কোনো জবাব না পেয়ে
ইমতিয়াজ আবার বলে উঠলো
-“হ্যালো?
…হ্যালো মামা?”
অদ্রি নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে নিয়ে
বললো
-“না মানে ভাইয়া, আমি বলছিলাম।”
ফোনে অদ্রির গলার স্বর শুনে ইমতিয়াজ এর
বুকের ভেতর টা কেপে উঠলো।কাপা কাপা
স্বরে বললো
-“অ..অদ্রি?”
-“হুম,আসলে ভুলে কল টা দিয়ে ফেলছি।এত
রাতে ডিস্টার্ব করার জন্য সরি।”
-“না, ঠিক আছে।”
-“আচ্ছা, রাখি।”
বলেই ফোনটা কেটে দিল অদ্রি।তার বুকের
ধুকপুকানি টা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। ফোন টা
বুকের কাছ নিয়ে দু হাতে জোরে চেপে ধরলো
অদ্রি।ঠিক সেই সময়ই ফোন টা বেজে উঠলো।
ফোনের রিংটোনে পুরো ঘর যেন কেপে
উঠলো। অদ্রি তাড়াহুড়ো করে ফোন টা রিসিভ
করলো। বাবার কানে এক বার রিংটোন এর
আওয়াজ গেলে খবর হয়ে যাবে। আর সে
নিজেও কতো টা বুদ্ধু। ফোন টা সাইলেন্ট করে
নিলেই আজ এমন বিপদের সম্মুখীন হতে হতো
না।
-“হ্যালো?”
অদ্রির বুকের মাঝে মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি
দিয়ে পিটাচ্ছে।ধক ধক ধক,, শব্দ হয়েই যাচ্ছে
একের পর এক।
-“হ্যাঁ, হ্যাঁ”
-“তুমি কি উত্তর টা দিতে ফোন করেছিলে
আমায়?”
-“না, মানে হ্যাঁ।”
-“তো বলো।”
-“কি বলবো?”
-“ভালোবাসো কিনা আমায়, আপন করে নিতে
পারবে কিনা আমায়, অহ হ্যাঁ, আরো একটা।”
-“কী?”
ইমতিয়াজ মুচকি হেসে বললো
-“আমার ছেলে মেয়েদের ত্রিকোণমিতির
ম্যাম হতে পারবে কি না?”
অদ্রি খুব সহজ গলায় বললো
-“আমি অংকে এমনিতেই খুব দুর্বল।”
ইমতিয়াজ অদ্রির কথা শুনে প্রাণ খুলে হাসতে
হাসতে বললো
-“আচ্ছা, যাও এটা বাদ। আমার বাচ্চার মা
হবে?”
অদ্রির জবাব না পেয়ে আবারো ইমতিয়াজ
বললো
-“Cos 0° = 1…আই লাভ ইউ, অদ্রি।”
অদ্রি আর কিছু ভাবতে পারলো না। একদমে
বলেই ফেললো
-“Cos 0° = 1.. আই লাভ ইউ টু, ভাইয়া”
অদ্রির কথা শুনে ইমতিয়াজ খিল খিল করে
হেসে উঠলো।
এভাবেই তাদের প্রেমের শুরুটা হয়েছিল। রোজ
রাতেই অদ্রির বাবা ঘুমানোর পর চুপিচুপি
ফোন এনে সারারাত কথা বলতো তারা।
ইমতিয়াজ কথা কম বললেও অদ্রির কথার যেন
শেষ ছিল না। পুরো রাত টাই খুব অল্প সময় মনে
হতো অদ্রির। সারাদিন অপেক্ষার পর রাতেই
শুধু কথা হত। তাও ভালোভাবে না। অদ্রি
প্রত্যেকটা মুহূর্ত ভয় নিয়ে কথা বলতো। বাবার
ফোন, কোন সময় না উঠেই বাবা ফোন টা
খুঁজতে শুরু করে! তখন পুরো বাঁশ, টের পেলে কি
যে হবে! এইসব ভয় কে জয় করেই তারা রাতের
পর রাত ফোনে কথা বলতে থাকলো। এর মাঝে
অদ্রির টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়ে এসএসসি শুরু
হয়ে গেল। কিন্তু তাদের কথা একটু হলেও
কমলো না। ধীরেধীরে পরীক্ষা শেষ হয়ে
রেজাল্ট এর সময় এসে গেল। একসময় রেজাল্ট
ও দিয়ে দিল। অদ্রি জিপিএ ৫ পেয়ে পাস
করলো। ২ সাবজেক্ট এ A+ মিস হওয়ার জন্য
গোল্ডেন টা এল না। ইন্টারে ঢাকা ভর্তি
হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও ভর্তি হতে পারলো না।
ছাত্রছাত্রীদের মাঝে প্রতিযোগিতা যে
হারে বাড়ছে তাতে ১/২ নাম্বারের মূল্যও এখন
খুব বেশি। ইন্টারে ঢাকা ভর্তি হতে না
পারলেও রাজশাহী কলেজে ভর্তি হলো
অদ্রি। বাড়ি থেকে বাইরে থাকার সুবাদে
একটা নতুন ফোনও পেল। এতে ইমতিয়াজ আর
অদ্রির প্রেম করার রাস্তা আরো ক্লিয়ার
হয়ে গেল। প্রায়ই রাজশাহী এসে ইমতি দেখা
করে যেত অদ্রির সাথে। এভাবেই কাটতে
লাগলো তাদের দুষ্টুমিষ্টি প্রেমের দিনগুলো।
অদ্রি ইন্টার পরীক্ষার পর ঢাকায় কোচিং
করতে এল। ঢাকায় এসে অদ্রি উঠলো ইমতিয়াজ
দের বাসায়।
অদ্রি ইমতির মা আয়েশা বেগমের একমাত্র
ভাইঝি। খুব বেশিই ভালোবাসে সে অদ্রিকে।
যখন শুনলো অদ্রি কোচিং করতে ঢাকায়
আসছে তখন থেকেই তার টেনশন শুরু হয়ে গেছে।
একা একা মেয়েটা ঢাকায় আসতে পারবে
কিনা! ঢাকার রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে
পারবে কিনা! সব কিছু ঠিক ঠাক মানিয়ে
নিতে পারবে কিনা! ব্লা ব্লা। মেয়েদের এই
একটা গুণের কথা না বললেই নয়। তারা
দুশ্চিন্তা করতে খুব বেশিই পছন্দ করে। হুমায়ূন
স্যারের ভাষায় ‘দুশ্চিন্তার কোনো বিষয় না,
এসব বিষয় নিয়েও মেয়েরা দুশ্চিন্তা করে।’
অদ্রি ঢাকায় এসেছে প্রায় ১ মাসের মতো
হলো। এখানে এসে পুরো বিরক্ত হয়ে পড়েছে
সে। অদ্রি ভেবেছিল ইমতিয়াজ দের বাসায়
আসার পর সময় টা খুব ভালো কাটবে ওদের।
সারাদিন দুজন দুজনার আশেপাশে থাকতে
পারবে। রাজ্যের সব গল্প যা জমিয়ে
রেখেছিল অদ্রি সেটা এখন সামনাসামনি বসে
শুনাতে পারবে ইমতিয়াজ কে। কিন্তু এখানে
এসে তার কিছুই হচ্ছে না। বরং সারাটাদিন
কোচিং পড়াশোনার পেছনে কাটিয়ে যখন
ফাকা হয় অদ্রি কিছুটা তখন ইমতিয়াজ এর
রাজ্যের কাজ নেমে আসে। এমনিতেও বাসায়
সবার সামনে তেমন একটা কথা বলে না
ইমতিয়াজ ওর সাথে। এই তো দু দিন আগের কথা।
ইমতিয়াজ এর মা আয়েশা বেগম ইমতিয়াজ কে
ডিনারের জন্য ডেকে বললো
-“অদ্রি কেও ডেকে আন।”
-“তুমি যাও।”
আয়েশা বেগম ভ্রু কুঁচকে বললো
-“এটা কি ধরনের কথা! ছোট বোন কিছুদিনের
জন্য তোদের বাসায় থাকতে এসেছে অথচ তুই
ওর সাথে ভালোভাবে কথা বলিস না, মিশছিস
না। চুপচাপ থাকতে পছন্দ করিস ঠিক আছে।
তাই বলে এগুলো একদম ঠিক হচ্ছে না তোর।”
-“মিশছিই তো। এর চেয়ে আর কত ভালোভাবে
মিশবো?”
-“এটা মেশা হলো? বড় ভাই হিসেবে তোর
উচিৎ ওকে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়
ওকে নিয়ে যাওয়া। ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখিয়ে
আনা। আর তুই সেটা না করে…”
আয়েশা বেগম কে থামিয়ে দিয়ে ইমতি
বিরক্ত মুখে বললো
-“মা, ও পড়াশোনা করতে এসেছে। ঘুরতে
ফিরতে না।”
বলেই অদ্রির ঘরের দিকে এগুলো ইমতিয়াজ।
মনে মনে তার যেন হাসি থামছেই না। তার মা
কি ভাবছে আর সে কত্তদুর এগিয়ে গিয়েছে!
অদ্রির রুমের দরজায় নক করে ইমতিয়াজ বললো
-“অদ্রি, মা খেতে ডাকে।”
অদ্রি শুয়ে শুয়ে এর আগের সালে আসা ঢাকা
ইউনিভারসিটির ‘ঘ ইউনিট’ এর নৈবেত্তিক
গুলোতে একবার চোখ বুলাচ্ছিল ঠিক তখনি
ইমতিয়াজ এর গলার আওয়াজ পেয়ে তার মন টা
ফুরফুরে হয়ে গেল। বিছানা থেকেই জোরে
বলে উঠলো
-“ইমতি ভাইয়া, একটু ঘরে এসো তো। এই প্রশ্ন
টা কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না। দেখিয়ে দিয়ে
যাও না একটু।”
ইমতি অদ্রি কে ডেকে তখনই আবার ডাইনিং এ
চলে এসেছিল। তাকে ফিরে আসতে দেখে
হতাশ হয়ে আয়েশা বেগম নিজেই আবার
ডাকতে গিয়েছিল অদ্রিকে। তার আগেই
অদ্রির গলার আওয়াজ পেয়ে সে অদ্রির ঘরে
না ঢুকে ফিরে এল ডাইনিং এ। তারপর ছেলের
দিকে তাকিয়ে বললো
-“ইফতেখার দেশে থাকলে কখনওই মেয়েটা কে
এভাবে রুমের ভেতর একা একা পচতে দিত না।
কোথাও না কোথাও ঘুরতে ঠিকই নিয়ে যেত।”
ইমতি নিজের প্লেটে ভাত তুলতে তুলতে বললো
-“হুম।”
-“কিসের হুম! অদ্রি তোকে ডাকে। কি প্রশ্ন
যেন বুঝছে না। যা, ওকে প্রশ্ন টা বুঝিয়ে
তারপর নিয়ে আয়। আমি অপেক্ষা করছি।”
ইমতিয়াজ এমন একটা ভঙ্গি করলো যা দেখে
যেন মনে হয় তার মা আর অদ্রির উপর সে
প্রচণ্ড বিরক্ত। বিরক্ত মুখ নিয়েই সে চেয়ার
ছেড়ে উঠে অদ্রির ঘরের দিকে এগুলো।
ইমতিয়াজ কে রুমে ঢুকতে দেখেই অদ্রি শোয়া
থেকে উঠে বসলো। বাসায় এমনিতেই থ্রি পিচ
পড়েই থাকে সে। নিজের ঘরে সবসময় একা
থাকার কারণে ওড়না টা তেমন কাজে লাগেও
না। অবশ্য এতক্ষণ ওড়না টা অদ্রির পাশেই
ছিল। ইমতি কে ডাকার পর ওড়ানা টা সরিয়ে
বালিশের নিচে রেখেছে অদ্রি। ইমতি ঘরে
ঢুকে বিছানার এক কোণায় বসে বললো
-“কোনটা সমস্যা? দেখি দেখাও।”
অদ্রি দুষ্ট একটা হাসি দিয়ে এগিয়ে এল
ইমতির কাছে।ইমতির পাশে বসে পা নাচাতে
নাচাতে বললো
-“কোনো সমস্যা নেই।”
-“তাহলে ডাকলে যে?”
-“এমনি ডেকেছি।”
-“চলো, মা অপেক্ষা করছে খাবার নিয়ে।”
-“যেতে পারি। কিন্তু একটা শর্তে।”
ইমতিয়াজ ভ্রু কুঁচকে বললো
-“কী?”
-“এখন তুমি আমাকে তোমার কোলে বসিয়ে
তোমার ঠোঁট টা আমার ঠোঁটের সাথে
ছোঁয়াবে। ব্যাস!”
-“তুমি কি পাগল হয়েছো? মা বাইরেই আমাদের
জন্য অপেক্ষা করছে।”
-“করুক। দিবা কি দিবা না?”
-“দিব না কেন! অবশ্যয় দিব। কিন্তু এখন সম্ভব
না।”
-“ফুপুকে গিয়ে বলো আমি খাব না।”
-“এগুলো বাচ্চামি ছাড়া আর কিছু না, অদ্রি।”
-“বাচ্চামি হলে সেটাই। এখন বের হও তুমি।”
সেদিন রাতে সত্যিই আর খেল না অদ্রি।
আয়েশা বেগম বার বার ডাকতে এলেও বললো
ক্ষুধা নেই। অবশ্য এ নিয়ে ইমতিকে আয়েশা
বেগম অনেক কথাই শুনালো। তার ধারনা নিশ্চয়
ইমতি গিয়ে অদ্রি কে গিয়ে কিছু একটা
বলেছে যার কারণে খাবার টাও খেল না
মেয়েটা।
টানা দু দিন দু রাত কথা বললো না অদ্রি
ইমতিয়াজ এর সাথে। অবশ্য আগে ও এমন
রাগারাগি হয়েছে। কিন্তু রাগ টা ছিল এক
পক্ষের। তাদের এই ৩ বছরের সম্পর্কে কখনোই
গলা উঁচিয়ে কথা বলে নি ইমতিয়াজ অদ্রির
সাথে। যা রাগারাগি করার সেটা অদ্রি একাই
করেছে ইমতিয়াজ এর সাথে। শুধু ইমতিয়াজ এর
এই রাগারাগির পর একটা কাজই করার থাকে।
সেটা হলো রাগ ভাঙানো। রাগ ভাঙানোর
উপায় গুলো একরকম গুগোল ঘেটে ঘেটে মুখস্ত
করে ফেলেছে সে। তবে সেই সব ও এই বারের
রাগে কাজে দিচ্ছে না। ফোন করলে ফোন
রিসিভ করছে না। এমন কি ঘর থেকেও বের
হচ্ছে না। এই দু দিন কোচিং এর ক্লাসেও
এটেন্ড হয় নি অদ্রি। অদ্রির সাথে এই দুই দিন
কথা না বলে একদম মাথা টা ফাকা ফাকা
লাগছিল ইমতির। তাই কোনো কিছু না ভেবেই
রাত ১ টার দিকে ম্যাসেজ করলো অদ্রির
নাম্বারে ইমতিয়াজ।
অদ্রি তখন শুয়ে শুয়ে বই এ চোখ বুলাচ্ছিল।
ফোনের ম্যাসেজের টোন শুনে ফোন হাতে
নিয়ে দেখলো ইমতিয়াজ এর ম্যাসেজ।
Emtiaaz-‘দরজা টা খোলো।’
এক মুহূর্ত ভেবে অদ্রি রিপ্লাই করলো
Odrika-‘না ।’
Emtiaaz-‘প্লিজ,জাস্ট এক মিনিটের জন্য হলেও
খোলো ।’
Odrika-‘না না না ।’
Emtiaaz-‘দরজা না খুললে সুইসাইড করবো
সিরিয়াসলি। এত প্যারা আমি জাস্ট আর
নিতে পারছি না।’
Odrika-‘গোল্লায় যাও। আই ডোন্ট কেয়ার
।’
ম্যাসেজ টা করার পর ইমতির আর কোনো
রিপ্লাই এল না। অদ্রির বুকের ভেতর টা
কাপতে শুরু করলো। কিছু আবার করে ফেলবে
না তো ইমতি। আর কিছু না ভেবেই বিছানা
ছেড়ে উঠে তাড়াহুড়ো করে দরজা খুললো
অদ্রি। দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে অদ্রির জন্য
অপেক্ষা করছিল ইমতিয়াজ। অদ্রি দরজা
খোলার সাথে সাথে অদ্রিকে ঠেলে ঘরে
ঢুকে দরজা টা বন্ধ করে দিল ইমতিয়াজ।
ইমতিয়াজ কে এভাবে এত রাতে ঘরে ঢুকতে
দেখে কিছুটা হলেও ভয় পেল অদ্রি।ইমতিয়াজ
কে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয় টা
আরো দশ গুণ বেড়ে গেল। পিছতে পিছতে
অদ্রি বললো
-“এত রাতে এই ঘরে আসলে কেন? কি সমস্যা।
এভাবে তাকিয়ে থাকবে না। এই, আর এগোবে
না।”
-“কেন? কোলে বসার, ঠোঁটে চুমু খাওয়ার ইচ্ছা
শেষ হয়ে গেছে?”
অদ্রি ঢোক গিলতে গিলতে বললো
-“আমি এমনি বলেছিলাম তখন।”
-“তাইলে এই দুই দিন এতো নাটক দেখাইলা
কিসের জন্য?”
-“না,, মানে..”
বলতে বলতে খাটের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো
অদ্রি। ইমতিয়াজ এমন ভাবে ধাক্কা টা
দিয়েছে! মাথাটা ঝিম ধরে গেছে অদ্রির।
আর এক সেকেন্ড দেরি না করে অদ্রির পাশে
আধশোয়া হয়ে অদ্রির কোমরে হাত দিয়ে
নিজের কাছে এগিয়ে এনে ইমতি বললো
-“আমাকে এই দুই দিন এতোটা কষ্ট দেওয়ার ফল
আজ তুমি পাবে।”
অদ্রির পুরো শরীরে একটা ঘোর কাজ করছে।
চোখটা পরম আবেশে বন্ধ করে ফেললো অদ্রি।
ইমতির গলা দু হাতে জড়িয়ে ধরে অদ্রি বললো
-“তোমার মাঝে নিজেকে হারাতে আমি
রাজি।”
ইমতিওআর কথা না বাড়িয়ে অদ্রির ঠোঁটে
আলতো করে ঠোঁট ছুয়িয়ে শুষে নিতে শুরু
করলো।
(চলবে)