আজ তার বিয়ে পর্ব-০৪

0
2232

# আজ_তার_বিয়ে
# লেখিকা -নাইমা জাহান রিতু
# পর্ব -৪
বেশ খানিকটা সময় নিয়ে অদ্রির ঠোঁটের
স্বাদ নিল ইমতি। এরপর মুখটা উঠিয়ে অদ্রির
নাকের সাথে নিজের নাক টা লাগিয়ে ঘষতে
ঘষতে ইমতি বললো
-“হ্যাপি?”
অদ্রি তখনো চোখ টা বন্ধ করে ইমতির আদর
উপভোগ করছিল। তার মাঝে ইমতির এক একটা
স্পর্শে এক অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম দিতে শুরু
করেছে। ইমতির কোন কথার জবাব তার আপাতত
দিতে ইচ্ছা করছে না।
অদ্রির নিশ্বাস ধীরেধীরে ভারী হতে শুরু
করেছে বুঝতে পেরে ইমতি অদ্রির বুকে
নিজের মাথা টা রেখে অদ্রিকে খুব জোরে
দুই হাতে জড়িয়ে নিল। তারপর খুব ধীরে অদ্রি
কে ডাকলো
-“অদ্রি?”
অদ্রির এখন প্রায় জান যায় যায় অবস্থা
এমনিতেই। তারউপর ইমতিকে নিজের বুকে
মাথা রাখতে দেখে সে নিশ্বাস আরো জোরে
জোরে নিতে শুরু করলো। হার্টবিট যে কতোতে
উঠে এসেছে সেটা অজানা। বুকের ভেতর
থেকে শুধু ধরাম ধরাম আওয়াজ ভেসে আসছে
তার কানে। মনে হচ্ছে ইমতি তার বুকের ভেতর
থেকে হৃদয় টাকে বের করে এনে কিছু দিয়ে
আচ্ছা মত পিটাচ্ছে। আর সেই শব্দই তার কানে
ভেসে আসছে। ইমতির কাছে আসায় তার
মাঝে যে এতো টা ভালোলাগা কাজ করবে
এটা মোটেও ভাবে নি অদ্রি। এর আগেও ইমতি
তার কাছে আসলেও তা শুধু হাত ধরাতেই বা
পাশে বসে কোমর টা চেপে ধরা পর্যন্তই
সীমাবদ্ধ ছিল। এতো রাতে এভাবে জড়িয়ে
ধরা বা চুমু খাওয়ার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম
তার। ভালোবাসার মানুষ কাছে আসায় যে
এতোটা ভালোলাগা কাজ করে সেটা জানলে
কখনওই এতোদিন ইমতির থেকে দূরে দূরে
থাকতো না অদ্রি। এদিকে ইমতির এক একটা
নিশ্বাস বুকে এসে লাগায় বুকের ভেতর টায়
একেবারে ভুমিকম্প শুরু হয়ে গেছে। ইমতির
ডাকে সারা দেওয়ার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও
অদ্রি ইমতির মাথা টা দুহাতে চেপে ধরে
বললো
-“হু।”
-“তোমার হার্টবিট এতোটাই বেড়েছে যে
সেগুলোর আওয়াজ আমার কানে এসে লাগছে।”
-“হু।”
-“ভালোবাসি।”
-“হু।”
এবারে ইমতি অদ্রির বুক থেকে মাথা টা
উঠিয়ে অদ্রির দিকে তাকিয়ে বললো
-“কী হু?”
ইমতি কিছুক্ষণ বুকের উপর মাথা রাখায়
অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছে অদ্রি। ইমতির
মাথা উঠানো টা টের পেয়ে অদ্রি তার চোখ
দুটি খুলে তাকালো ইমতির দিকে। তারপর
ফিসফিসিয়ে বললো
-“কিছু না, তুমি এতো রাতে এই ঘরে কেন এলে?”
-“তোমার রাগ ভাঙাতে। আমার ভাষায় তোমার
ঠোঁটের স্বাদ নিতে।”
অদ্রি লাজুক ভঙ্গিতে হাসি দিয়ে বললো
-“ধুর, একদম খারাপ খারাপ কথা আমার সাথে
বলবে না।”
-“এটা কোন দিক থেকে খারাপ কথা হলো?”
-“সব দিক থেকেই।”
-“আভি তো বাছ শুরু হুয়ি হেয়।আগে আগে
দেখো অর কেয়া কেয়া হোতা হেয়!”
-“এমন অসভ্যতা করলে মোটেও তোমাকে বিয়ে
করবো না আমি।”
ইমতি দুষ্ট একিটা হাসি দিয়ে বললো
-“এখানে অসভ্যতার কি দেখলা? দেখি একটা
বালিশ দাও তো। এভাবে বালিশ ছাড়া শুয়ে
থাকা যায় না।”
অদ্রি ভ্রু কুঁচকে বললো
-“বালিশ দিয়ে কি করবা? তুমি কি এখানে
থাকবে নাকি?”
-“আজ্ঞে হ্যাঁ।”
-“মোটেও না, বের হও বলছি।”
বলতে বলতেই ইমতি কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে
দিল অদ্রি নিজের শরীরের উপর থেকে। তারপর
নিজে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজার দিকে
এগুলো দরজা খোলার জন্য। তার আগেই খপ
করে পিছন থেকে জোরে চেপে ধরলো ইমতি
অদ্রিকে। তারপর পাজকোলে নিয়ে এগুলো
বিছানার দিকে। অদ্রি নিজেকে ইমতির হাত
থেকে ছাড়ানোর জন্য বলতে লাগলো
-“এই, ছাড়ো।”
-“কিছুক্ষণ আগেই তো বলছিলে তোমার মাঝে
নিজেকে হারাতে আমি রাজি! আর এখন এমনে
বাদরের মতো লাফাচ্ছো কেন?”
-“তখন কি সব বলেছি খেয়াল নেই। আর তুমি
এখানে থাকবেই বা কিভাবে! সকালে আমার
ঘর থেকে তোমাকে বের হতে দেখলে ফুপুর
চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে।”
ইমতি অদ্রিকে বিছানায় শুয়িয়ে দিতে দিতে
বললো
-“হলে হবে।”
-“ভয় পাও না ফুপু কে দেখে?”
-“না।”
-“ইহ!! এতো মিথ্যুক!! ভয় না পেলে ফুপুর সামনে
আমার সাথে কথা বলো না কেন?”
-“শশশ, আর কোনো কথা না।”
-“এই ইমতিয়াজ? ইতি এসে গেছে। তোকে
ভেতরে ডাকে। বাইরে দাঁড়িয়ে কি করিস?”
ইফতেখার এর ডাকে পরম সুখের অতীতের স্মৃতি
থেকে বর্তমানের এই বিদঘুটে পরিস্থিতির
মাঝে ফিরে আসতে হলো ইমতিয়াজ কে। তার
চোখ দিয়ে এতোক্ষন অবিরাম ধারায় পানি
পড়ছিল। বিধাতা এমন খেলা দুনিয়ায় কেন
দেখায়? যাকে এত বেশি ভালোবাসে তাকে
নিজের করে কেন পাচ্ছে না সে আজ! সেই
অদ্রি আর আজকের অদ্রির মাঝে কতো টা
তফাৎ। সেদিনের অদ্রি ইমতির থেকে দূরে
থাকা টা একদম মেনে নিতে পারতো না, সব
সময় আশেপাশে থাকতে চাইতো, সবসময় আদর
পেতে চাইতো সে ইমতির থেকে। অথচ
আজকের অদ্রি কিছুতেই ইমতির কাছে আসতে
চায় না, ভালোবাসা পেতে চায় না, আদর
পেতে চায় না, কখনো মুখ ফুটে বলে না ‘ইমতি
আমাকে জড়িয়ে ধরো, তোমার ঠোঁট টা দিয়ে
আমার ঠোঁট টা স্পর্শ করো, আমাকে তোমার
বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখ।’ এতোটা পরিবর্তন
কেন এল অদ্রির মাঝে? আজ অদ্রি যদি রাজি
থাকতো তাহলে বাকি দুনিয়া বাধা দিলেও
আখি কে বিয়ে না করে অদ্রিকে বিয়ে
করতো সে, অদ্রিকে নিয়ে বাকিটা পথ এক
সাথে পাড়ি দিতে পারতো সে। কিন্তু
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!!
চশমা টা খুলে হাতে নিয়ে চোখ টা ভালো
ভাবে মুছলো ইমতি। তারপর হালকা করে কাশি
দিয়ে গলা টা ঠিক করলো। গলা টা যেন কেমন
ধরে এসেছিল। তারপর দ্রুত পায়ে এগুলো
ভেতরের দিকে। ভেতরে তার জন্য অপেক্ষা
করছে অজানা, অদেখা এক ভবিষ্যৎ।
ইতিরা কমিউনিটি সেন্টারে এসে পৌছেছে ৫
মিনিট হলো। এত সময় জার্নির পরও যে তারা
হলুদ এর অনুষ্ঠান টায় এটেন্ড হতে পারছে এটা
ভেবেই শান্তি লাগছে। গাড়ি থেকে নামতেই
ইফতেখার আর শিমা কে দেখতে পেল ইতি।
তাদের দেখে মুচকি একটা হাসি দিয়ে ইতি
বললো
-“তাও ভাগ্য ভালো এসে পৌছাতে পারলাম।
আমি তো ভেবেছিলাম আজ রাত টাও আমার
গাড়িতেই কাটবে।”
শিমা এগিয়ে এসে প্রাপ্তিকে কোলে নিতে
নিতে বললো
-“আমরাও সেটাই ভেবেছিলাম। যাই হোক এই
অবস্থায়ই কি ফাংশন এ জয়েন হবে নাকি?”
ইতি হতাশ হয়ে বললো
-“তো তোমার মত সাজ গুজের সময় আছে নাকি!
যত দেরি করে এসেছি।”
-“সমস্যা নেই। আমরা শাড়ির থিম দিয়েছি
সবুজ আর হলুদ কালার। এই যে আমার টা
দেখছো তেমনই। তোমার আর প্রাপ্তি মামুনির
শাড়িটাও নিয়ে এসেছি। ওয়াশরুমে গিয়ে
ঝটপট শুধু শাড়ি টা বদলে নিতে পারো। তারপর
মুখে হালকা মেকআপ করলে করতে পারো।”
পল্লব আর ইফতেখার এক পাশে দাঁড়িয়ে
রাস্তার জ্যাম নিয়ে কথা বলছিল। শিমার
কথা ইফতেখার এর কানে যেতেই বললো
-“কোনো দরকার নেই মেকআপ এর। নিজের মতো
সবাইকেই ভুত সাজানোর ইচ্ছা টা আপাতত বাদ
দাও।”
শিমা কপাল টা ভাজ করে ইফতেখার এর
দিকে তাকিয়ে বললো
-‘আমাকে সাজলে ভূতের মতো লাগে?”
-“সামান্য।”
শিমা আর কথা না বাড়িয়ে প্রাপ্তির দিকে
তাকিয়ে বললো
-“প্রাপ্তি, তোর মামা কে বলে দে। আমার
সাথে আজ কের পর থেকে যেন ছ্যাঁচড়ামি না
করতে আসে।”
বলেই প্রাপ্তিকে নিয়ে গটগট করে হেটে
ভেতরে চলে গেল শিমা। শিমার চলে যাবার
দিকে তাকিয়ে ইতি বললো
-“এভাবে ভাবিকে রাগিয়ে না দিলেও
পারতে তুমি, ভাইয়া।”
-“ওর আবার রাগ আছে নাকি! এখনি পানি হয়ে
যাবে। চল, ভেতরে যাই।”
ইতিরা ভেতরে ঢোকার পথেই ইতির চোখ
আটকে গেল গাড়ির পার্কিং প্লেসের দিকে।
সেখানে একা একা দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে
একটা দোকানের দিকে তাকিয়ে আছে অদ্রি।
তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঝাপসা দৃষ্টিতে
সে দোকানটার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা
হয়তো ভাবছে। ইতি ভেতরের দিকে আর পা না
বাড়িয়ে অদ্রির দিকে এগুলো। অদ্রির কাছে
এসে অদ্রির কাধে ঝাঁকুনি দিয়ে বললো
-“কি রে! এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি
করছিস?”
ইতির ঝাঁকুনি তে অদ্রি বাস্তবে ফিরে এল।
হঠাৎ ইতিকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু
করলো অদ্রি। ইতি ও কিছু না বলে অদ্রিকে
কিছুটা সময় দিল। খানিকক্ষণ পর অদ্রির
কান্না কিছুটা কমলেও ফোঁপানি টা রয়েই
গেল। ইতি অদ্রির মাথায় আলতো করে হাত
ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে বললো
-“বাচ্চা মেয়ে, কাদছিস কেন এভাবে তুই?”
অদ্রির জবাব না পেয়ে ইতি বলতে শুরু করলো
-“এত ভালোবাসিস আমার ভাইকে! অথচ
বিয়েটা কেন অন্যকে করতে দিচ্ছিস? তোদের
মাঝে কি হয়েছে আমি জানি না। কিন্তু
ক্ষনিকের কিছু ভুল বোঝাবুঝি তে একে
অপরের কাছ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে
ফেলিস না। পরে আফসোস এর সীমা থাকবে
না।”
ইতিকে ছেড়ে দিয়ে ফোঁপাতে ফোঁপাতেই
অদ্রি বললো
-“যা হচ্ছে সব আল্লাহর ইচ্ছে তেই তো হচ্ছে।
আর আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। আর
আমি নিজেও ভালো আছি, আপু।”
-“এটাকে ভালো থাকা বলে? যদি ভালো
থাকাই বলে তাহলে ইমতির জন্য আজ চোখের
জল ফেলছিস কেন তুই?”
ইতির প্রশ্ন শুনে অদ্রি চুপ করে নিচের দিকে
তাকিয়ে রইলো। অদ্রির উত্তর না পেয়ে ইতি
বললো
-“চোখ মোছ। নিজের শরীরের কি হাল
করেছিস? চোখের নিচে কালি পড়ে কি
অবস্থা! দেখি এদিকে আয়, চোখ টা মুছে
দেই।”
-“আমি করে নিচ্ছি।”
-“আচ্ছা, আর তোর ফোনে কল দিলে ফোন
রিসিভ করতি না কেন?”
-“জানি না।”
ইতি অদ্রির হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে
যেতে যেতে বললো
-“আচ্ছা, জানতে হবে না। আমি এসেছি। সব
কিছু ঠিক ঠাক করে তবেই ফিরবো।”
সাজিদ অদ্রিকে খুঁজতে খুঁজতে পাগলপ্রায়।
কমিউনিটি সেন্টারের এমন এক জায়গা বাকি
নেই যেখানে খুঁজতে বাদ রেখেছে। কিন্তু
অদ্রির দেখা নেই মানে নেই। একটা মেয়ে
এভাবে হটাৎ অদৃশ্য কিভাবে হয়ে যাবে!
এখানে আসার পরেই একবার দেখেছিল সে
অদ্রিকে। সবুজ আর হলুদের মাঝের শাড়িতে
তাকে কতোটাই না মানিয়েছিল! চোখই
সরাতে পারছিল না সে অদ্রির দিক থেকে।
তারপর পরই বিয়ের কথা টা জানাতে
গিয়েছিল সে পরিবারের কাছে। আর এতোটুকু
সময়ের মাঝেই মেয়েটা উধাও হয়ে গিয়েছে।
গেল টা কই মেয়েটা?
-“উহ!! পা সড়ান।”
এতোক্ষণ অদ্রির ভাবনায় এতোটাই ডুবে
গিয়েছিল যে তার সামনে স্বয়ং অদ্রি
দাঁড়িয়ে আছে এটাও খেয়াল করে নি। এমনকি
সে যে তার পা দিয়ে অদ্রির পায়ে পাড়া
লাগিয়ে দিয়েছে এটাও টের পায় নি সে।
অদ্রির কথা শুনে সাথে সাথেই পা টা সরিয়ে
এনে সাজিদ লজ্জিত ভঙ্গিতে বললো
-“সরি, সরি। একদম দেখতে পাই নি।”
-“জ্বি, ঠিক আছে।”
মুখে বললেও অদ্রি মনে মনে বলতে লাগলো
‘তোর চোখ নাই নাকি! যে দেখতে পাস না!
নাকি চোখ আকাশে তুলে হাটিস! বদের বাচ্চা
বদ একটা।’ এই লোকটাকে একদম সহ্য করতে
পারছে না সকাল থেকে অদ্রি। এগিয়ে
এগিয়ে বার বার কথা বলতে আসে মেয়েদের
সাথে। ক্যারেকটারে নিশ্চিত কোনো সমস্যা
আছে।
-“না ঠিক নেই। আই অ্যাম রিয়েলি সরি।”
অদ্রি মুখে কিছুটা হাসি এনে বললো
-“বললাম তো ইটস ওকে।”
-“ব্যাথা পেয়েছো?”
-“না।”
-“চলো, বসে কিছুক্ষণ কথা বলি।”
অদ্রি সাজিদের কথায় ভ্রু কুঁচকে বললো
-“বসতে হবে না। কি বলবেন এখানে দাড়িয়েই
বলুন।”
-“ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে বলবো নাকি শর্ট কার্ট?”
-“শর্টকাটে বলুন”।
সাজিদ গলা খাকড়ি দিয়ে অদ্রির চোখে চোখ
রেখে বললো
-“আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই অদ্রি।”
সাজিদের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল অদ্রি।
সে কি ঠিক ঠাক শুনছে? সাজিদ নামের এই
লোক টা তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে?
-“কি হলো?”
অদ্রি সাজিদের স্পর্ধা দেখে রীতিমতো
স্তম্ভিত হয়ে গেছে। সাহস কিভাবে হয় তাকে
বিয়ের কথা বলার! অদ্রি স্বাভাবিক ভাবেই
সাজিদকে বললো
-“চেনেন না জানেন না, অথচ এমন একটা
মেয়েকে বিয়ের প্রপোজাল দিচ্ছেন?”
-“না চেনা বা জানার কি আছে? আমি কি
তোমাকে চিনি না?”
অদ্রি একরাশ বিরক্ত নিয়ে বললো
-“বিয়ে করার জন্য যতোটুকু চেনা জানা দরকার
ততোটুকো চেনা জানা আমাদের মাঝে নেই।”
মুখে কিছুটা হাসি ফুটিয়ে সাজিদ বললো
-“আমাদের দেশে এরেঞ্জড ম্যারেজ বলতে
একটা ব্যাপার আছে। এটা কি জানো?”
-“না জানার কি আছে? আমি কি আপনার মত
নিজের দেশ ফেলে অন্য দেশে গিয়ে থাকি
নাকি!”
-“তাহলে এইটা সম্পর্কে খুব ভালোভাবে
জানার কথা তোমার। আর এরেঞ্জড ম্যারেজে
কিন্তু ছেলে মেয়েদের মাঝে চেনা জানা
থাকার ব্যাপার টা দরকার পরে না। যেটা
আমার আর তোমার মাঝে কিছুটা হলেও
আছে।”
-“এরেঞ্জড ম্যারেজে দুই পক্ষের সম্মতি থাকা
টাও জরুরি। যেটা আমার পক্ষ থেকে ‘না’।
ক্লিয়ার?”
অদ্রির না শুনে সাজিদের বুকের মাঝটা
কেপে উঠলো। সে করুণ দৃষ্টিতে অদ্রির দিকে
তাকিয়ে বললো
-“কিন্তু কেন? কি সমস্যা তোমার?”
-“আপনার মত ক্যারেকটার লেস ছেলে কে
আমি বিয়ে করবো এটা ভাবলেন কি করে
আপনি?”
ক্যারেকটার এর কথা টা উঠতেই সাজিদের
মেজাজ টা চরম খারাপ হয়ে গেল। সে কি এমন
করেছে যে তাকে অদ্রি ক্যারেকটার লেস
বলছে! খারাপ চোখে তাকিয়েছে ওর দিকে?
নাকি কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে ওকে টাচ
করেছে?
-“ফান করছো আমার সাথে তুমি, অদ্রি? আর
একটা কথা মন দিয়ে শুনে রাখো আমি বলেছি,
আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। আমি কিন্তু
তোমার কাছে মতামত চাই নি তুমি আমাকে
বিয়ে করবে কি না!”
সাজিদের মুখ থেকে এমন ধরনের কথা শুনে
অদ্রি আর রাগ টা সামলাতে পারলো না।
এমনিতেই তার মন টা ভালো নেই, শরীর টার
অবস্থা ও ভালো না। তার উপর এমন কথা শুনলে
মেজাজ ঠিক রাখা সম্ভব না। এই লোকটাকে
কড়া করে কিছু কথা না শোনালে চলবে না।
তাই সাজিদের দিকে তাকিয়ে কড়া গলায়
অদ্রি বলতে লাগলো
-“জোর করে বিয়ে করতে চাচ্ছেন? নাকি
আমাকে বিছানায় নিতে চাচ্ছেন? আমার
শরীর দেখে লোভ জেগেছে? সামলাতে না
পেরে বিয়ে নামক এই নাটকীয়তা করতে
চাচ্ছেন? যাতে সহজেই আমাকে বিছানায়
নিতে পারেন? অবশ্য বিছানায় পারফরমেন্স
আমার তেমন একটা খারাপ না। আমার
বয়ফ্রেন্ড নিজেই আমাকে এটা বলেছে।”
একদমে কথা গুলো বলেই খুব দ্রুত সাজিদের
সামনে থেকে চলে গেল অদ্রি। অদ্রির কথা
গুলো হজম করতে কিছুটা সময় নিল সাজিদ।
তারপর ধীরেগতিতে ইমতির দিকে এগোতে শুরু
করলো।
অদ্রি তার মায়ের পাশে গিয়ে বসতেই তার মা
শাহানা বেগম হাসি মুখে বললো
-“তোর জন্য একটা বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে।”
অদ্রির রাগ টা এখনো যায় নি। মায়ের মুখ
থেকে এই কথা শুনে তার আর বুঝতে বাকি
রইলো না যে বিয়েটার প্রপোজাল কে
দিয়েছে। তবুও মার সাথে এখন এ নিয়ে
রাগারাগি করতে চাইলো না অদ্রি। তাই
স্বাভাবিক ভাবেই মায়ের দিকে তাকিয়ে
বললো
-“অহ।”
-“হুম। ছেলের ফুল ফ্যামিলি অস্ট্রেলিয়ায়
সেটেল। খুব ভালো ফ্যামিলি। কথা বার্তা ও
খুবই ভালো। আমার তো ছেলেটাকে খুব পছন্দ
হয়েছে। অনেক মিশুক। কিছুক্ষণ এর মাঝেই
আমার সাথে কতোটা সহজ হয়ে কথা বলছিল
ছেলেটি। তোর বাবারো খুব পছন্দ হয়েছে।”
-“অহ।”
-“হ্যাঁ। এক মাস আছে বাংলাদেশে ওরা। এই
এক মাসেই বিয়েটা করতে চায়।”
-“অহ।”
-“আমরা কিন্তু হ্যাঁ বলে দিয়েছি।”
গান বাজনা চলছে একের পর এক। কিছু মেয়ে
দল বেধে গানের তালে তালে হাত পা
নাড়াচ্ছে। চুপচাপ বসে ইমতিয়াজ মেয়েগুলোর
সেই হাত পা নাড়িয়ে নাচা দেখছিল। ঠিক
তখনই পাশ থেকে হাতের কুনুই দিয়ে একটি
গুঁতো মারলো আখি ইমতি কে। গুঁতো খেয়ে
পাশে তাকাতেই ইমতি আর আখির চার
চোখের মিলন হলো এই প্রথম। হলুদ আর সাদা
রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে আখি। মাথায়, গলায়,
হাতে, কানে, নাকে সাদা ফুলের অর্নামেন্টস
দিয়ে নিজেকে সাজিয়েছে আখি। তাকে
দেখতে এখন ঠিক স্বর্গের অপ্সরী দের মতো
লাগছে। ইমতিয়াজ আখিকে আপাদমস্তক
একবার দেখে খুব তাড়াতাড়ি মুখ ঘুরিয়ে
সামনে তাকালো। আসলেই মেয়েটা ঠিকিই
বলেছিল। অসম্ভব রূপবতী সে। যে কোনো
পুরুষের চোখ ধাঁদা লাগানোর মতো রূপ নিয়ে
জন্মেছে সে। আচ্ছা আখিকে যদি সত্যিই সে
বিয়ে করে তাহলে কখনওই আখির এই রূপ সে
বাইরের কাওকে দেখাবে না। বউ এর এই রূপ
বাইরের কাউকে দেখাবে কেন সে! বোরকা
পড়তে বলবে সে আখিকে। আখি কি তার এই
কথায় রাজি হবে? আখির এই রূপের কাছে
বাকি মেয়ে কিছুই না। এমন কি অদ্রিও কিছুই
না। কথা টা মনে হতেই তার বুক টা কেপে
উঠলো। সে কি ভাবছে এগুলো! আখির সাথে
অদ্রির তুলনা কেন করছে! আখি কে এক মুহূর্ত
এর জন্য হলেও নিজের বউও ভাবতে শুরু
করেছিল সে। তাহলে কি সেও কি বাকি পুরুষ
দের মতোই হয়ে গেল না? রূপকেই প্রাধান্য
দিয়ে ভালোবাসা কে ভুলে যাচ্ছে সে? পুরুষ
জাতি কি মেয়েদের এই রূপের কাছেই
পরাজিত?
-“কথা বলছেন না কেন?”
আখির কথায় চিন্তায় ছেদ পড়লো ইমতির।
মেয়েটা রূপবতী হলেও গলার স্বর টা এতো
মোটা হলো কিভাবে!
কথাটি ভেবেই হালকা হেসে ইমতিয়াজ বললো
-“বলো।”
-“আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে?”
-“পছন্দ অপছন্দের কথা কেন আসছে!”
-“না মানে… একবারো তো আমার দিকে
তাকিয়ে আমাকে ভালোভাবে দেখলেন না!”
-“দেখেছি।”
-“আপনার প্রিয় রঙ সাদা। তাই না?”
ইমতিয়াজ অবাক হয়ে বললো
-“হ্যাঁ, কে বলেছে?”
-“শিমা ভাবি।”
-“অহ।”
-“আপনার জন্যই সাদা রঙ কে প্রাধান্য
দিলাম।”
ইমতিয়াজ আরো একবার আখির দিকে
তাকালো। তারপর মুগ্ধ দৃষ্টিতে আখির দিকে
তাকিয়ে বললো
-“সুন্দর লাগছে।”
দূর থেকে ইমতি আর আখিকে লক্ষ করছিল
অদ্রি। তাদের মাঝে যে কিছু নিয়ে
কথাবার্তা চলছিল সেটা দূর থেকেই দেখছিল
অদ্রি। এক পর্যায়ে ইমতির আখির দিকে মুগ্ধ
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে অদ্রির বুকের
ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে গেল। নিমিষেই তার
চোখ গুলো পানিতে ভরে গেল। এক ফোটা দু
ফোটা করে চোখের নোনতা পানির ধারা তার
গাল বেয়ে পড়তে লাগলো।
(চলবে)