আজ তার বিয়ে পর্ব-০৭

0
2146

# আজ_তার_বিয়ে
# লেখিকা -নাইমা জাহান রিতু
# পর্ব -৭
সেই দিনটির পর থেকে ইমতির সাথে
একেবারে যোগাযোগ বন্ধ না করতে পারলেও
কমিয়ে দিয়েছিল অদ্রি। বয়ফ্রেন্ডের কথা
বলেও দূরে সরাতে পারেনি ইমতিকে সে।
ভালোবাসা গুলো কি এমনই হয়? এর উত্তর
জানা নেই অদ্রির। কিন্তু ইমতিকে ছাড়া পুরো
জীবন টা কাটানো যে অনেকটা কষ্টের এটা
পদে পদে উপলব্ধি করতে পারে অদ্রি। তবুও
কিছু করার নেই আপাতত তার। এই বাড়িতে
আসার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না অদ্রির। আর
ইমতির বিয়েতে তো প্রশ্নই উঠে না। নিজের
চোখে নিজের মরণ দেখা যতটা না কঠিন তার
থেকে একশত গুণ বেশি কঠিন নিজের চোখের
সামনে নিজের আত্মা, প্রিয়মানুষ টিকে
অন্যের হতে দেখা। তার উপর ইমতির সাথে
বিচ্ছেদ এর পর থেকে অদ্রির শরীর টা ও
ভালো যাচ্ছে না। অবশ্য ভালো যাবার কথা ও
না। দুই মাস হলো খাওয়া দাওয়া ঘুম কোনোটাই
ঠিক মতো হচ্ছে না তার। খাবার দেখলেই বমি
বমি লাগে। গলা দিয়ে খাবার নামে না, রাতও
কাটে নির্ঘুমে। প্রথম কয়দিন অদ্রির খুব কষ্ট
হতো। বলতে গেলে পুরো রাত কেঁদে কেঁদেই
কাটাতো। কিন্তু এখন আর কাঁদতেও ইচ্ছে হয়
না অদ্রির। কেঁদে কি হবে? যা হবার সেটা তো
কেউ আটকাতে পারবে না। আর আসলেই তো,
তারা হলো ফকির শ্রেণির মানুষ। তারা কেন
বামুন হয়ে চাঁদে হাত দেওয়ার স্বপ্ন দেখতে
যাবে! যেসব কথা অদ্রির ফুপা আফজাল
সাহেব তার মুখ দিয়ে বলেছেন তাতে কোনো
দিনই তার মুখদর্শন করার ইচ্ছা অদ্রির ছিল না।
কিন্তু তার ফুপু আয়েশা বেগমের করুণ
আহাজারি তে সে আসতে বাধ্য হয়েছে। বাবা
মা হাজার চাপাচাপি করলেও অদ্রি এখানে
আসতো না যদি না তার ফুপু ফোন করে সেদিন
তাকে অনুরোধ না করতো। কিন্তু অদ্রির মাথায়
এটা কিছুতেই আসছে না তার ফুপু এই কাজ টা
করলো কেন!!
-“অদ্রি জেগে আছিস?
…অদ্রি?”
ইতির ডাকে চিন্তায় ছেদ পড়লো অদ্রির। এতো
রাতে ইতি আপু কেন ডাকছে? ইমতির কি কিছু
হয়েছে? ভেবেই বুকের মাঝে গুঁতো দিয়ে
উঠলো তার। তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে
নেমে দরজা খুললো অদ্রি। দরজা খুলে ইতির
পাশে ইমতিকে দেখেই তার দম বন্ধ হওয়ার
জোগাড় হলো। দরজা টা খুলে কি সে ভুল
করলো? অদ্রি যথাসাধ্য চেষ্টা করতে লাগলো
নিজেকে সামলানোর। তারপর নরম গলায় ইতির
দিকে তাকিয়ে বললো
-“কি হয়েছে? ডাকছো কেন?”
ইতি ইমতির দিকে তাকিয়ে বললো
-“কি বলবি বল।”
ইমতি বোনের কথার উত্তরে বললো
-“বলবো। আপু, তুই ঘরে গিয়ে ঘুমা।”
ইমতির কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে ইতি বললো
-“যা কথা বলার আমার সামনে বল। এতো রাতে
আমি কোনো ঝামেলা চাই না।”
-“ঝামেলার কি আছে? আমি অদ্রির কাছ
থেকে কিছু প্রশ্নের উত্তর চাই। তুই যা।”
-“আমি থাকলে কি সমস্যা?”
ইমতি আর কথা না বাড়িয়ে অদ্রিকে ঠেলে
রুমের ভিতরে ঢুকিয়ে নিজেও ঢুকে পড়লো।
তারপর দরজার দিকে হাত বাড়ালো। অদ্রি
এতোক্ষণ চুপচাপ ভাই বোনের কথা শুনছিল।
কিন্তু যখন ইমতির তার ঘরে এসে দরজা বন্ধ
করতে লাগলো তখন অদ্রি ইমতির পাশে গিয়ে
ইমতিকে দরজা বন্ধ না করার জন্য বাধা দিতে
লাগলো। ইমতি অদ্রিকে উপেক্ষা করে দরজা
টা বন্ধ করে দিল। তারপর ইতির উদ্দেশ্যে
ঘরের ভেতর থেকে ইমতি বললো
-“যা, তুই গিয়ে ঘুমা। আমি একটু পড়েই বের হয়ে
যাব।”
হঠাৎ ইমতির ভিতরে ঢুকে গিয়ে দরজা বন্ধ করে
দিতে পারে এটা কোনো ভাবেই মাথায় আসে
নি ইতির। তাহলে কিছুতেই সে তার ভাইকে
অদ্রির কাছে নিয়ে আসতো না। এখন ভিতরে
কি হচ্ছে সেটা দরজায় কান লাগিয়ে বোঝার
চেষ্টা করতে লাগলো ইতি। কিছু না বুঝতে
পেরে কিছুক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে
একসময় নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো ইতি।
এভাবে হুট করে ইমতির ঘরে ঢুকে পড়া কিছুতেই
হজম করতে পারছে না অদ্রি। কিছুক্ষণ দরজার
পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো অদ্রি। ওদিক
থেকে ইমতির ও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে
দরজার দিকে হাত বাড়ালো অদ্রি। অদ্রির
দরজা দিকে হাত বাড়াতে দেখেই এক
ধাক্কায় মেঝে তে ফেলে দিল ইমতি
অদ্রিকে। হঠাৎ ধাক্কা খাওয়াই কোনো রকম
তাল সামলাতে না পেড়ে মেঝের মাঝে
গিয়ে পড়লো অদ্রি। কোনো রকম টু শব্দ না
কড়ে অদ্রি মেঝে থেকে উঠার চেষ্টা করতেই
বুঝতে পারলো কোমরে ভীষণ ভাবে ব্যথা
পেয়েছে সে। কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর উঠতে
না পেড়ে সেখানেই ওই অবস্থায় বসে থাকলো
অদ্রি। অন্ধকার ঘরে ইমতি কে স্পষ্ট না
দেখতে পেলেও ইমতির কথায় ও কাজে স্পষ্ট
বোঝা যাচ্ছে কোনো কারণে সে রেগে
আছে। আর যে সহজে রাগে না সে যদি কোনো
কারণে একবার রেগে যায়, তাহলে তাকে না
ঘাটাই উচিৎ। কারণ পৃথিবী তে তখন তার চেয়ে
হিংস্র প্রাণী আর কিছু নেই। তাই এত রাতে
কোনো সিনক্রিয়েট যেন না হয় এইটা ভেবেই
চুপ করে বসে রইলো অদ্রি। এত রাতে ঝামেলা
হলেই সব যে তার ফুপু আয়েশা বেগমের উপর
দিয়েই যাবে সেটা তো আর তার অজানা নয়।
ইমতি রাগের বসে কি রেখে কি করছে কিছুই
তার নিজের মাথায় আসছে না। সে রেগে
এতোটাই হিংস্র হয়ে গিয়েছে যে তার
সবচেয়ে প্রিয় মানুষ টিকে মাত্রই সে ধাক্কা
মেরে মেঝেতে ফেলে দিয়েছে এটাও তার
মাথার ভেতর কাজ করছে না। কিছুক্ষণ
অপেক্ষা করলো সে অদ্রির উঠে দাঁড়ানোর।
কিন্তু অদ্রির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে সে
নিজেই অদ্রির পাশে মেঝেতে গিয়ে বসলো।
তারপর কঠিন স্বরে অদ্রিকে জিজ্ঞাসা
করলো
-“সাজিদ কে বিয়ে করতে কেন রাজি
হয়েছো?”
ইমতির মুখ থেকে সাজিদের সাথে বিয়ের কথা
শুনতেই অবাক হয়ে অদ্রি বললো
-“কে রাজি হয়েছে?”
-“তুমি।”
-“আমি তো রাজি হয় নি।”
-“তাহলে সাজিদ আমাকে মিথ্যে বলেছে? ওর
কিসের এত ঠ্যাকা আমাকে মিথ্যে বলার?
মিথ্যে বলতে বলতে তুমি এত নিচু পর্যায়ে চলে
এসেছো যে তোমাকে দেখলেই এখন ঘৃণা
লাগে।”
ইমতির মুখ থেকে ঘৃণা শব্দ টা শুনতেই অদ্রি
ইমতির দিকে তাকিয়ে জোর গলায় বললো
-“হ্যাঁ,, আমি মিথ্যে বলি। আর হ্যাঁ আমি
সাজিদের সাথে বিয়ের কথায় ও রাজি
হয়েছি। তাতে তোমার কি?”
ইমতির রাগ আরো তিন ডিগ্রী বেড়ে গেল
অদ্রির কথায়। চেঁচাতে চেঁচাতে বলতে
লাগলো
-“আমার কি মানে? তুই বয়ফ্রেন্ডের দোহাই
দিয়ে আমার সাথে ব্রেকাপ করেছিস। আমার
ছয় বছরে স্বপ্ন গুলো মাটি করে দিয়েছিস। আর
আজ তুই তোর বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে না করে
সাজিদ কে বিয়ে করবি! তুই কি ভেবেছিস?
আমি নরম বলে আমার সাথে যা ইচ্ছা তাই করে
যাবি আর আমি কিচ্ছু বলবো না? বসে বসে
চুপচাপ দেখবো?”
ইমতির চিৎকার করে কথা বলা দেখে অদ্রি
ইমতিকে থামাতে চেষ্টা করতে লাগলো।
-“ধীরে কথা বলো। প্লিজ তোমার পায়ে পড়ি
চেঁচিয়ো না।”
অদ্রির কথায় তাল না দিয়ে ইমতি বলতে
লাগলো
-“কেন ধীরে বলবো? এত রাতে তোর ঘরে আছি
জানতে পারলে তোর সাজিদের সাথে
বিয়েটা ক্যান্সেল হয়ে যাওয়ার ভয়ে? কেন!
তুই সাজিদ কে জানাস নি যে তোর সাথে
আমার কতোটুকু সম্পর্ক ছিল? কতো রাত আমি
তোর সাথে এক বিছানায় এক সাথে
কাটিয়েছি। নাকি এই কাজ গুলো তুই সবার
সাথেই করিস? তোর সো কল বয়ফ্রেন্ড এর
সাথেও কি রাত কাটিয়েছিস? সাজিদের
সাথেও কাটিয়েছিস, না? আমার কাছ থেকে
বেনেফিট না পেয়ে অন্য কে ধরেছিস? আমি
কি তোকে বিছানায়…”
আর কিছু বলতে পারলো না ইমতি। হঠাৎ এক
ঝটকায় ইমতিকে কাছে টেনে এনে ইমতির
ঠোঁটে ঠোঁট পুড়ে দিল অদ্রি। ইমতির মুখ থেকে
এইসব বাজে কথা শুনে মোটেও অভ্যস্ত না
অদ্রি। তার উপর ইমতির চিৎকার থামাতে এর
চেয়ে ভালো কোনো উপায় জানা ছিল না
অদ্রির।
বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ ইমতির ঠোঁটের সাথে অদ্রি
ঠোঁট লাগিয়ে বসে রইলো। ইমতি নিজেও
অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে। একটু আগে রাগে
তার শরীরের কাঁপুনি টা থাকলেও এখন সেটা
অনেকটাই কমে এসেছে দেখে একটা স্বস্তির
নিশ্বাস ফেললো অদ্রি। এদিকে হঠাৎ
ইমতিকে কাছে টেনে নেওয়ায় ইমতি প্রথমে
কিছুক্ষণ অদ্রির ঠোঁটের সাথে ঠোঁট লাগিয়ে
চুপ করে রইলেও পরে নিজে থেকেই শুষে নিতে
শুরু করেছে সে অদ্রির ঠোঁট। তার পৃথিবীর সকল
কিছু উপেক্ষা করার মতো শক্তি থাকলেও
অদ্রির স্পর্শ উপেক্ষা করার মতো কঠোর হৃদয়
এখনো তার হয় নি। অদ্রির ঠোঁটের স্পর্শে
আছে ঘোর লাগানোর মতো এক অদ্ভুত নেশা।
মাতাল হয়ে পৃথিবীর সব কিছু ভুলে যাওয়ার
এক ভয়ংকর জাদু। চুমু খেতে খেতেই ইমতির হাত
অদ্রির কোমরে স্পর্শ করলো। কোমরে আলতো
করে হাত বুলোতে শুরু করতেই অদ্রি ‘আউচ’ বলে
কাতরিয়ে উঠলো। ইমতি চুমু খাওয়া বন্ধ করে
ভ্রু কুঁচকে অদ্রির দিকে তাকালো। তারপর
কোমরে হালকা করে আরেকবার চাপ দিতেই
অদ্রি আবারো ‘উহহহ’ বলে উঠলো। ইমতি
অদ্রিকে জিজ্ঞাসা করলো
-“কোমরে কি হয়েছে?”
অদ্রি অভিমানী স্বরে বললো
-“জানো না?”
-“না পেঁচিয়ে কি হয়েছে সেটা বলো।”
-“একটু আগে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আমার
এই হাল করেছো। আর এখন বলছো কি হয়েছে!”
ইমতি অবাক হয়ে বললো
-“এতো জোরে লেগেছে!”
-জোরে ধাক্কা দিলে কি ধীরে লাগবে?”
ইমতি আর এক মুহূর্ত দেরি না করে অদ্রিকে
নিজের বুকে চেপে ধরে বললো
-“সরি, সোনা। আমি সত্যিই একদম বুঝতে পারি
নি। রাগের চোটে মাথা কাজ করছিল না। খুব
কি ব্যথা করছে?”
ইমতির বুকে মাথা রাখতেই ইমতিকে শক্ত করে
জড়িয়ে ধরলো অদ্রি। এই মানুষটার বুকে মাথা
রাখায় এত শান্তি অনুভূত হয় কেন অদ্রির?
ইমতিকে অদ্রি যতোবার এই প্রশ্ন টি করেছে
প্রত্যেকবার এক উত্তরই দিয়েছে ইমতি। ‘আমার
বুকের মাঝে তোমার জন্য বুক উজাড় করা
ভালোবাসা আছে, তাই।’ বলেই এক গাল
হাসতো ইমতি। আর কিছু না ভেবে একদম জড়সড়
হয়ে ইমতির গা ঘেষে একটা বিড়াল ছানার
মতো চুপচাপ বসে রইলো অদ্রি। যেন সুযোগ
পেলেই সে ধীরেধীরে ইমতির বুকের মাঝে
ঢুকে পড়বে। খানিকক্ষণ পর ইমতির বুকে নাক
ঘষতে ঘষতে অদ্রি বললো
-“উহু, বেশি ব্যথা লাগছে না। আপাতত আমাকে
একটু বিছানায় উঠাও।”
-“ওকে, ওয়েট।”
বলেই অদ্রিকে পাজকোলে নিয়ে দাঁড়ালো
ইমতি। তারপর অদ্রির নাকের সাথে নাক
লাগিয়ে বললো
-“তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে না করলে
সাজিদকে কেন? আমাকে করবে।”
অদ্রি কথা না বাড়িয়ে বললো
-“আচ্ছা, এখন নামাও আমাকে। আর খুব
ধীরেসুস্থে বিছানায় রাখবা আমাকে।”
অদ্রিকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে মুভ খোঁজার
জন্য লাইট অন করলো ইমতি। কয়েকটা ড্রয়ার
খোঁজার পর ড্রেসিং টেবিলের উপরে মুভ
পেল সে। তারপর লাইট অফ করে অদ্রির কাছে
ফিরে এল ইমতি। অদ্রির উপর নিজেকে হালকা
করে রেখে কামিজের কাটা দিয়ে হাত
ঢুকিয়ে মুভ লাগাতে শুরু করলো। মুভ কোমরে
ঘষতে ঘষতে ক্রমেই ইমতির হাত অদ্রির
শরীরের উপরের দিকে উঠতে শুরু করলো। ঠোঁট
টাও ধীরেধীরে এগিয়ে দিল সে অদ্রির
ঠোঁটের দিকে। অদ্রিও বাধা না দিয়ে চুপচাপ
ইমতির শেষ স্পর্শ উপভোগ করতে লাগলো। কেন
যেন আজ বাধা দিতে একদমই ইচ্ছে করছে না
অদ্রির। কি হবে আজ বাধা দিয়ে? কি এমন
হবে এই শেষ বারের মতো তাদের হাত, পা,
ঠোঁট, শরীরের প্রত্যেকটি অংশ এক হলে? আর
কখনওই তো নিজেদের এর থেকে বেশি আপন
করে পাওয়া হবে না তাদের।।
(চলবে)