আজ তার বিয়ে পর্ব-০৮

0
2177

# আজ_তার_বিয়ে
# লেখিকা -নাইমা জাহান রিতু
# পর্ব -৮
ভোর ৬ টা। এর মাঝে একবার মর্নিং ওয়াক
করে এসেছে আফজাল সাহেব। তারপর
অভ্যাসমত তার নিজের রুমের সাথে লাগোয়া
ব্যালকনিতে বসে অপেক্ষা করছে চা এর জন্য।
অন্যদিনের তুলনায় আজ সময় টা একটু বেশি
নিচ্ছে আয়েশা বেগম। কিছুক্ষণ বিরক্তি নিয়ে
বসে থাকার পর আফজাল সাহেব কঠিন কন্ঠে
আয়েশা কে ডেকে উঠলো। ঠিক তখনই চা
নিয়ে তার সামনে এল তাদের বাড়ির একজন
কাজের মেয়ে বিলকিস। বিলকিসকে দেখে
তার রাগ চরমরূপে বেড়ে গেল। গলা ফাটিয়ে
বিলকিস কে বললো
-“আমার চোখের সামনে থেকে যা। আর
আয়েশা কে পাঠিয়ে দে।”
কয়েকবার চা মুখে দিতেই আফজাল সাহেবের
সামনে আয়েশা বেগম হাত মুছতে মুছতে
উপস্থিত হলো। আজ ছেলের বিয়ে। সে নিয়েই
রান্না ঘরে ব্যস্ত ছিল আয়েশা বেগম।
ব্যালকনিতে এসে স্বামীর পাশের চেয়ারে
বসতে বসতে আয়েশা বেগম বললো
-“কিছু লাগবে?”
আফজাল সাহেব মুখ বিকৃত করে আয়েশা
বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো
-“আপাতত তোমার বয়স্ক মহিলা দিয়ে আমার
কোনো কাজ নেই।”
এমন কথা শুনতে শুনতে মোটামুটি অভ্যস্ত
আয়েশা বেগম। তাই সে স্বাভাবিক ভাবে
বললো
-“তাহলে ডাকলে কেন?”
-“ছেলে যে তার নিজের ঘরে নেই এটার খবর
রাখো?”
-“আশেপাশেই গিয়েছে হয়তো কোথাও।”
আফজাল সাহেব ভ্রু কুঁচকে বললো
-“উহু, আমি দারোয়ান কে জিজ্ঞাসা
করেছিলাম। সে ইমতিকে বাইরে বের হতে
দেখে নি। আমার কি ধারনা জানো?”
-“কি?”
-“তোমার ভাইঝি ওকে নিজের রুমে নিয়ে
গেছে নষ্টামি করার জন্য।”
স্বামীর মুখ থেকে অদ্রি কে নিয়ে এমন কথা
শুনতেই মন টা খারাপ হয়ে গেল আয়েশা
বেগমের। নিজেকে কি ভাবে এই লোকটা!
বাজে কথা বলতে মুখে আটকায় না! আয়েশা
বেগম উদাস ভঙ্গি তে বলতে লাগলো
-“তোমার ছেলে পিচ্চি খোকা না। আর তুমি
প্লিজ অদ্রি কে নিয়ে বাজে কথা বলবে না।
ও এখানে আসতে চায় নি কোনোভাবেই।
তোমার কথা মতোই ওকে আমি ফোন করে
আসতে বলেছি। আর এখন এসব কথা বলছো।
আমার ভাইঝি কে ডেকে নিয়ে এসে তাকে
অপমান করার কোনো ফন্দি আটছো না তো?
তাহলে প্লিজ এমন কিছু করো না। এমনি তেও
কম কথা শুনাও নি ওকে।”
-“আমার এতো টাইম নেই যে আমি তোমার
ভাইঝির মতো থার্ড ক্লাসের মেয়েকে নিয়ে
ভাববো। ওকে এখানে আনার একটাই কারণ,
আমি চাই ও নিজের চোখে আমার ছেলের
শ্বশুর বাড়ির স্ট্যাটাস দেখুক। আমার ছেলের
বৌ কে দেখুক। আদারওয়াইস নাথিং ইলস।”
ওপাশ থেকে আয়েশা বেগমের কোনো কথা
না শুনতে পেয়ে আফজাল সাহেব বলে উঠলো
-“এখন আমার সামনে থেকে যেতে পারো।
তোমার চেহারাটা আর দেখতে ইচ্ছে করছে
না।”
আফজাল সাহেবের কথা শুনে নিঃশব্দে
চেয়ার ছেড়ে উঠে ব্যালকনি থেকে বেরিয়ে
এল আয়েশা বেগম।
ইতি প্রাপ্তিকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে
তাও আধঘণ্টা হলো। কিন্তু কোনো ভাবেই মুখে
খাবার নিতে চাচ্ছে না সে। সব দিক দিয়ে
একটা দাদি দাদি ভাব থাকলে খাওয়ার সময়
সে পিচ্চি বাচ্চা হয়ে যায়। কোনো খাবারই
মুখে দেয়া যায় না তার। জোর করে দু একবার
মুখে দিলেও সেটা গিলতে দু ঘন্টা পার করে
দেই প্রাপ্তি। এদিকে সময়ও আর বেশি বাকি
নেই। একটু পরই ভাইয়ের বিয়ের উদ্দেশ্যে বের
হতে হবে তাদের। কিন্তু মেয়েটার জ্বালায়
দেরি না হলে হয়। ভেবেই মেয়ের দিকে ভ্রু
কুঁচকে ইতি বললো
-“আর একবার খেলেই আজ সারাদিনেও খেতে
বলবো না তোকে। নে, মুখ খোল।”
প্রাপ্তি ঘরের মাঝে দৌড়ানো বন্ধ করে মার
দিকে তাকিয়ে বললো
-“উহু, তুমি এই মিথ্যে টা বলে সব সময় খাওয়াও
আমাকে।”
ইতির ইচ্ছে করছে প্রাপ্তির কান ধরে টেনে
এনে আচ্ছা মত কয়েকটা চড় বসিয়ে দিতে
তারপর চুপচাপ বসিয়ে গলার ভেতর খাবার
ঢালতে। কিন্তু সেটা সম্ভব না। তাই গলা
কিছুটা কঠিন করে বললো
-“তুই খাবি না? না খেলে নিচে যে পাগল টা
বসে আছে তাকে উপরে আসতে বলবো। তারপর
ওর ব্যাগে ভরে নিয়ে যাবে তোকে। তখন তুই
আমাকে তোর বাবা কে পাবি কই?”
-“পাগলের কাছে গেলে খেতে হবে না, তাই
ওর কাছেই যাব। আর তোমাদের বাসায় গিয়ে
রোজ একবার করে তোমাদের দেখে আসবো।”
মেয়ের এমন পাকা পাকা কথা শুনে খাবারের
প্লেট টা রেখে হাত ধুতে গেল ইতি। তার এখন
এই প্লেট নিয়ে বসে বসে সময় নষ্ট করার
কোনো মানে হয় না। ওয়াশরুম থেকে বের
হতেই ইমতিকে বিছানায় বসে অপেক্ষা করতে
দেখে ইতি মুচকি হেসে ইতি বললো
-“প্রাপ্তি খাবারের প্লেট টা নিয়ে কই
গেলো রে?”
-“শিমা ভাবি ওকে আর খাবারের প্লেট নিয়ে
গেলো মাত্র।”
-“যাক বাচা গেল!”
বলেই স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো ইতি। তারপর
ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো
-“কাল রাতে কি হয়েছিল তোর?”
ইমতি প্রথমে মাথায় হাত দিয়ে চুল ঠিক করলো
তারপর আমতা আমতা করে বললো
-“ইয়ে মানে… আমি কিছু কথা বলতাম।”
-“তো বল।”
-“আপু আমি আখি কে বিয়ে করতে পারবো না।
এই অল্প সময়ের মাঝে কি রেখে কি হচ্ছে
আমার মাথায় সেগুলো ঢুকছে না। কিন্তু আমি
অদ্রিকে ছাড়া অন্য কাওকে বিয়ে করতে
পারবো না।”
-“কিন্তু অদ্রি তো তোকে বিয়ে করতে চাচ্ছে
না!”
-“আমি বুঝতে পারছি না আমি কি করেছি!
আমার দ্বারা কি ভুল হয়েছে যার কারণে
অদ্রি এমন টা করছে? নিরবে কিন্তু নিজে
ঠিকই কষ্ট ঠিকই পাচ্ছে ও। অথচ মুখ ফুটে কিছু
বলছে না। আর তাই আমি আরো কিছু সময় নিয়ে
ওকে বুঝাতে চাই, ওর মনের কথা গুলো বুঝতে
চাই। যার কারণে আমার সময় লাগবে। হুট করে
ওর উপর রাগ করে বিয়েতে মত দিয়ে যে আমি
ভুল করেছি সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমিও
তো একজন মানুষ! আর মানুষ হয়ে আমার ভুল
করাটা অস্বাভাবিক কিছু না। আমি এখন ভুল
গুলো শুধরে নিতে চাই। আর এই কাজ টার জন্য
আমাকে হেল্প করতে হবে তোর।”
ইতি চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো
-“আজ এসে বিয়েটা ভাঙা সম্ভব না, ইমতি।
আর তুই একবারো আখির কথা ভাবছিস না!”
-“আমি ওতো শত বুঝি না। আর আখির বয়স কম।
বাচ্চা একটা মেয়ে। আমার সাথে ওর দুদিনের
পরিচয়। এই বিয়েটা ভেঙে গেলে তেমন ক্ষতি
ওর হবে না। বরং ভালই হবে। পুরো জীবন টা
সামনে পড়ে আছে ওর। আর আমার সাথে বিয়ে
হলেই যে আমি ওকে সুখী করতে পারবো এটা
ঠিক না। আমি কখনওই ওকে ভালোবাসতে
পারবো না। আর ভালোবাসা না থাকলে
সংসারে অশান্তি লেগেই থাকবে। আরো
অনেক সমস্যাই আছে যা এখন আমি মনে করতে
পারছি না। কারণ এখন আপাতত আমি কোনো
আখি পাখিকে নিয়ে আমি ভাবছি না। আমার
ভাবনা শুধুই অদ্রিকে ঘিরে।”
-“তাহলে এখন কি করবো? অদ্রির আর মার
সাথে কথা বলবো?”
-“তোর অদ্রির সাথে কথা বলতে হবে না। ওকে
যা বুঝানোর বিয়েটা ভাঙার পর আমি
বুঝাবো। তুই আপাতত মার সাথে কথা বল। মা
বাবাকে বুঝিয়ে কিছু একটা করতে পারবে।”
ইতি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো
-“তোর হুট করে বিয়েতে রাজি হওয়াটা একদম
ঠিক হয় নি। এখন দেখ কি একটা ঝামেলায়
পড়লি! কি যে হবে আজ আমার মাথায় আসছে
না। এদিকে তোর আর অদ্রির কষ্ট টাও দেখতে
পারছি না। নিজেদের মাঝে তোদের কি এমন
হয়েছে আল্লাহই জানে!”
ইমতি বোনের দিকে অনুরোধের দৃষ্টি তে
তাকিয়ে বললো
-“আপু, প্লিজ।”
ভাইয়ের মাথায় হাত দিয়ে চুল ঠিক করে দিতে
দিতে ইতি বললো
-“হয়েছে হয়েছে! আর নাটক করতে হবে না।
আমি কথা বলছি মার সাথে।”
অদ্রি নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে কাল রাতের মধুর
স্মৃতি গুলো আওড়াচ্ছিল। ঠিক তখনি তার
ফোনে ইমতির কল এল। কয়েকমুহূর্ত ভেবে ফোন
টা রিসিভ করলো অদ্রি।
-“কি হয়েছে?”
-“একবার ছাদে আসতে পারবে?”
-“না, শরীর টা ভালো না। বিছানা ছেড়ে উঠে
ছাদে যাবার মত শক্তি আমার এখন নেই।”
-“তাহলে আমি তোমার রুমে আসি?”
অদ্রি রুমে আসার কথা শুনেই বলে উঠলো
-“না, প্লিজ এই কাজ টা করো না।”
ইমতি আর কিছু না বলে নিরব হয়ে রইলো।
ছোট্ট একটা নিশ্বাস ছেড়ে ইমতি নিরবতা
ভেঙে বলতে লাগলো
-“আমি জানি না আমি কি করেছি। কি ভুল
আমার দ্বারা হয়েছে কিন্তু আমি এটা জানি
আমি তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসি। আর
তুমি নিজেও আমাকে ভালোবাসো। কি?
বাসো না?”
অদ্রির জবাবা না পেয়ে ইমতি আবারো
বললো
-“কিছু একটা নিয়ে হয়তো তুমি আমাকে ভুল
বুঝছো। সেটা কি? কারণ টা কি আমাকে বলা
যায় না?”
অদ্রিকে পেতে যে ইমতি মরিয়া হয়ে উঠেছে
এটা বুঝতে পেরে অদ্রি বললো
-“আমি এত কিছু তোমাকে বলতে পারবো না।
শুধু এতটুকুই জেনে রাখো আমার জীবন থাকতে
আমি তোমাকে বিয়ে করে তোমার সাথে
সংসার করতে পারবো না। এটা জাস্ট আমাকে
দিয়ে হবে না। আমি পারবো না তোমাকে
বিয়ে করতে।”
অদ্রির কথা শুনে ইমতি হতাশ হয়ে বললো
-“কিন্তু কেন? আমি কি করেছি? কেন আমাকে
এভাবে কষ্ট দিচ্ছো তুমি?”
-“জানি না। আমাকে জোর করো না।”
-“ওকে, ফাইন। তুমি আমাকে বিয়ে করবে না,
একসাথে থাকবে না। এই তো?”
কিছুক্ষণ নিরব থেকে অদ্রি বললো
-“হ্যাঁ।”
-“আমিও দেখবো তুমি কিভাবে আমাকে ছেড়ে
থাকতে পারো। আমি তোমাকে ছাড়া অন্য
কোনো মেয়েকে বিয়ে করবোও না।”
-“ইমতি, এমন জেদের কোনো মানে হয় না, যার
কোনো দাম নেই। অযথা ঝামেলা করো না।
তোমার বাবা মার মানসম্মান এর কথা ভাবা
উচিৎ তোমার। আর তুমি যদি আজ আখিকে
বিয়ে করতে না যাও তাহলে…”
অদ্রিকে থামিয়ে দিয়ে ইমতি বললো
-“তাহলে কি করবে? যাই করো না কেন আমি
বিয়েটা করছি না।”
খানিকক্ষণ ভেবে অদ্রি বললো
-“তুমি আজ বিয়ে করতে না গেলে আমি
সুইসাইড করবো। আর আমি তোমার মত অযথা
থ্রেট দিচ্ছি না। আমি সত্যিই কাজ টা করে
দেখাই তুমি এটা চাও?”
অদ্রির মুখ থেকে এ ধরনের কথা শুনে
একমুহূর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গেল ইমতি। তারপর
নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বললো
-“আজিব! তুমি কি ধরণের কথা বলছো এগুলো?”
-“আমি সত্যি টাই বলছি। পরিস্থিতি মেনে
নিয়ে চলতে শেখো, ইমতি। আর আজ তুমি
বিয়েটা না করলে কাল আমার লাশকে নিয়ে
তোমার সংসার করতে হবে। বলো পারবে?”
-“চুপ অদ্রি। আর একটা কথাও তুমি তোমার মুখ
থেকে বের করবে না। আমি আখিকেই বিয়ে
করবো। করতে হবে না আমার সাথে তোমার
সংসার। তবুও তুমি সুখে সাজিদের সাথে
সংসার করো।”
বলেই আর এক সেকেন্ড দেরি না করে ফোন
টা কেটে দিল ইমতি। অদ্রি ও ফোন টা কান
থেকে নামিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে
লাগলো -“একটা মেয়ে হিসেবে আমার নিজের
আত্মসম্মান বোধ আছে। তোমাকে বিয়ে করে
এক ছাদের নিচে তোমার বাবার মতো
ছোটলোক শ্রেণীর মানুষের সাথে একসাথে
উঠা বসা করা আমার পক্ষে সম্ভব না। যে
মেয়েদের সম্মান করতে জানে না। শুধু পারে
তাদের সাথে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে। আর
ফুপু? তার কষ্ট টাও আমি নিজের চোখে
দেখতে পারবো না, সে জীবনে কখনো
অশান্তি ছাড়া কিছু পায় নি। আরো অশান্তির
মাঝে তাকে ফেলতে আমি চাই না। তোমাকে
পেয়ে নিজের সুখের জন্য আমি বাকিদের
জীবন গুলো তো নরক বানাতে পারবো না।
তোমাকে হারানোর পরিবর্তে তাও সবাই
শান্তিতে থাকুক।”
আয়েশা বেগম নিজের ঘরে বসে গহনা বের
করছিল। আজ ছেলের বিয়েতে নতুন বৌ কে
কোন গহনাগাঁটি দিবে সেটা আগেই তাকে
আফজাল সাহেব বলে রেখেছিল। এখন আয়েশা
বেগম তার কথা মত বসেই সেগুলো গোছাচ্ছিল।
সেই মুহূর্তেই তার ঘরে ইতি প্রবেশ করলো।
মায়ের পাশে বসতে বসতে ইতি বললো
-“কি করছো?”
মেয়ের দিকে না তাকিয়েই আয়েশা বেগম
বললো
-“এই তো আখির জন্য গহনাগাঁটি সব ঠিক ঠাক
করছি।”
-“অহ। আচ্ছা মা, আখি মেয়েটা কেমন? কথাই
হলো না তেমন ভাবে ওর সাথে।”
-“খুব মিশুক। একদম শিমার মতোই। খুব চটপটে।
বয়স কম হলেও দারুন।”
মায়ের দিকে আরো চেপে আসতে আসতে ইতি
বললো
-“মা, ইমতির কি আখিকে পছন্দ হয়েছে?”
মেয়ের মুখ থেকে এমন কথা শুনতেই বুক টা
কেপে উঠলো আয়েশা বেগমের। তার গলা টা
যেন কেমন ধরে আসছে। চোখ টাও ছলছলে হয়ে
আসতে শুরু করেছে। এই প্রশ্নের জবাব সে
জানে। কিন্তু এখন চুপচাপ বসে যা হচ্ছে তা
দেখা ছাড়া তার আপাতত কিছু করার নেই।
নিজেকে সামলে নিয়ে মেয়ের দিকে
তাকিয়ে আয়েশা বেগম বললো
-“পছন্দ অপছন্দের কি আছে? বিয়ের পর
ধীরেধীরে ভালোলাগা তৈরি হবে।”
-“মা, তোমার সাথে কিছু কথা বলা দরকার।”
-“কি কথা?”
ইতি আর দেরি না করে তার মা আয়েশা
বেগমকে সব খুলে বলতে লাগলো। সব শেষে
বললো
-“মা, প্লিজ কিছু করো। ওদের এভাবে কষ্ট
পাওয়াটা আমি দেখতে পারছি না। কি এমন
হয়েছে ওদের মাঝে জানি না। দুই জনের কেউই
আমাকে খুলে কিছু বলছে না। ইমতি ভুল বশত
বিয়েতে মত দিলেও আজ বিয়েটা করতে
চাচ্ছে না ও।”
মেয়ের কথা শুনে খুব স্বাভাবিক গলায়
আয়েশা বেগম বললো
-“আমি জানি সব, আর যা হচ্ছে সেটা হতে দে।
বিয়েটা নিয়ে তোরা কেউ ঝামেলা করিস
না।”
মায়ের মুখ থেকে এমন কথা শুনে বিস্ময় নিয়ে
তাকিয়ে রইলো ইতি তার মা আয়েশা বেগমের
দিকে।
সবাই মোটামুটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু
বরের কোনো পাত্তা নেই। বর এলেই সবাই
বেরিয়ে পড়বে এখন কমিউনিটি সেন্টারের
উদ্দেশ্যে। সেজে গুঁজে অপেক্ষা করাটা একদম
পছন্দ না শিমার। সে তার মুখে বিরক্তি
ফুটিয়ে বললো
-“ইমতি গেলো টা কই?”
ইফতেখার ওদিক থেকে ইমতিকে কল দেওয়ার
উপরেই আছে। কিন্তু কোনোভাবেই ফোন টা
রিসিভ করছে না ইমতি। ছেলের নিখোঁজ
হওয়ার খবর শুনেই কোনো ভাবেই শান্তি
পাচ্ছে না আয়েশা বেগম। ছেলেটা কি
তাহলে শেষে এসে বিয়ে করবে না? ভাবতেই
পুরো শরীর কাঁপতে শুরু করলো তার। ঠিক তখনই
ইফতেখার এর ফোন টা রিসিভ করলো ইমতি।
ইফতেখার কঠোর গলায় বলতে লাগলো
-“তুই কোথায়? আজ যে তোর বিয়ে এটা মাথায়
আছে তোর? সবাই রেডি হয়ে অপেক্ষা করছি
তোর জন্য। আর তুই উধাও।”
ওপাশ থেকে ইমতি বললো
-“আমি একটু বাইরে আটকে গেছি। তোমরা বের
হও। আমার সাথে নিলয় আছে। আমি এখান
থেকেই কমিউনিটি সেন্টারে যাব।”
হতভম্ব হয়ে নিলয় বললো
-“নিলয় কখন এল? আর তুই তৈরি হয়ে যাবি না?”
-“আমি রেডি আছি। তোমরা বের হয়ে পড়।”
বলেই ফোন টা রেখে দিল ইমতি। ইফতেখার
সবাইকে তার আর ইমতির কথোপকথন গুলো বলল।
তারপর মা আয়েশা বেগমের দিকে তাকিয়ে
বললো
-“তোমার এই ছেলেটা এত্ত ছন্নছাড়া হয়েছে
কেন? কোনো বিষয়েই সিরিয়াস না সে। আজ
তার বিয়ে। অথচ তার মাঝে এটা নিয়ে কোনো
আগ্রহ নেই। দিস ইস টু মাচ।”
ছেলের কথা শুনে আয়েশা বেগমের আত্মায়
যেন পানি ফিরে এল। ছোট্ট একটা নিশ্বাস
ফেলে বললো
-“বাদ দে। তোরা তাহলে আল্লাহর নাম নিয়ে
বের হ।”
সব কিছু ঠিক ঠাক করে কমিউনিটি সেন্টারের
উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগেই অদ্রির রুম থেকে
একটা মেয়েলি চিৎকার ভেসে আসলো। সবাই
কিছু বুঝে উঠার আগেই অদ্রির মা শাহানা
বেগম ছুটে এল। হাপাতে হাপাতে ভয়াতুর দৃষ্টি
তে বলতে লাগলো
-“অদ্রি….অদ্রি..”
ইতি তার মামি শাহানা বেগমের দিকে
এগিয়ে এসে বললো
-“কি হয়েছে মামি? অদ্রি ঠিক আছে তো?”
-“অদ্রি..মেঝেতে পড়ে আছে।”
কথা টি শুনে একমুহূর্ত দেরি না করে ইতি
দৌড়িয়ে অদ্রির রুমে যেতে যেতে বললো
-“হাই খোদা! তুই এই কাজ টা তাই করতে পারলি
অদ্রি! এভাবে হার মেনে তুই এই পদক্ষেপ টা
কিভাবে নিলি? নিজের জীবনের কোনো মূল্য
নেই তোর কাছে!”
(চলবে)