আনন্দধারা বহিছে ভুবনে পর্ব-১৪

0
183

#আনন্দধারা_বহিছে_ভুবনে (পর্ব ১৪)
নুসরাত জাহান লিজা

সংজ্ঞাহীন শিউলিকে চোখের সামনে দেখতে দেখতে তুহিনের ক্রোধ আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল। যে মেয়ের পায়ের তলায় শক্ত মাটি পর্যন্ত নেই তার কীসের এত তেজ! ভেবেছিল হুমকি-ধামকি দিলেই সুড়সুড় করে ওর পিছু নেবে। তা তো হলোই না, বরং মানসিকভাবে আরও বলীয়ান হয়ে ওকে চোখ রাঙায়। এটা মেনে নেবার মতো পুরুষ তুহিন নয়! এমনভাবে মেরুদণ্ড ভাঙবে যাতে আর কোনোদিন মাথা উঁচু করে না দাঁড়াতে পারে।

শিউলির পরিবারের সবাই ঘাড়ত্যাড়া, নইলে কী মেয়ের সংসার ভাঙার জন্য উঠে পড়ে লাগে! সবগুলো বদের হাড্ডি, বিশেষ করে শ্যালক শাফিন। বোনের না আছে তেমন রূপ, না আছে বিদ্যা, বাপের কাড়ি কাড়ি টাকাও নেই। তবুও এরা মচকায় না, উল্টো তুহিন হেরে যাচ্ছে। কিন্তু সে হারতে নারাজ, একটা সামান্য মেয়ে, যাকে ইচ্ছে হলেই পিষ্ট করা গেছে কিছুদিন আগেও, সে ওর নাকের ডগা দিয়ে বিজয়ের ঝাণ্ডা উড়িয়ে উল্লাস করবে আর তুহিন চেয়ে চেয়ে দেখবে সেটা কীভাবে সম্ভব! তাই বন্ধুর কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে তার নির্জন এলাকার এই খালি বাড়িটার ব্যবস্থা করেছে। বন্ধু সপরিবারে ঢাকায় থাকে। তুহিন বলেছে, বেশ বিপদে পড়েছে, এই এলাকায় বেশ কিছুদিন থাকতে হবে। তাতেই সম্মতি পাওয়া গেছে। সেখানের একটা কামরার বিছানায় শিউলি অচেতন হয়ে পড়ে আছে। তুহিন পাশে বসে ওকে দেখছে।

জুয়ায় হেরে প্রায় সমস্ত টাকা খুইয়েছে, পৈত্রিক বাসাটা ছাড়া অন্যান্য জমিজিরাত আগেই বিক্রি করেছে। সেটা মায়ের নামে আছে বলে বিক্রি করতে পারেনি। শ্বশুরের কাছ থেকে যে টাকা পেয়েছিল তাও শেষ। বিশাল ঋণের বোঝা মাথায় চেপে আছে। শিউলির সাথে যেহেতু ডিভোর্স হয়েই যাচ্ছে সে তার নিজের কেউ নয়। এখন ওই মেয়ের সাথে খারাপ কিছু হলে তার দিকে কেউ আঙুল তুলবে না, উল্টো শিউলিকে নিয়েই টানাহেঁচড়া করবে, এটাই সুযোগ।

জুয়ার আসরে এক লোকের সাথে পরিচয় হয়েছে, মদ্যপ অবস্থায় সেই লোক স্বীকার করেছে সে দেশের বাইরে শিশু, আর মেয়ে পাচার করে। ধূর্ত তুহিন সাথে সাথেই ভাবল, প্রতিশোধ নেবার জন্য এরচাইতে মোক্ষম সুযোগ আর হতে পারে না। বেশ বড় অঙ্কের টাকা পাওয়া যাবে, সাথে নিজের প্রতিশোধ চরিতার্থ হবে। ওই লোক কিছুক্ষণের মধ্যে শিউলিকে নেবার জন্য লোক পাঠাবে।

তবে নিজের অহং বজায় রাখতে কিংবা আরও বাড়তি প্রাপ্তির আশায় মাথায় আরেকটা চিন্তা নাড়া দিল। যেই ভাবা সেই কাজ।

শাফিনের নাম্বারে ডায়াল করল, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করতে হয়। নাম্বার বদলে নিয়েছে।

একটু রিং হতেই রিসিভ হলো, পরিচয় দিতেই শাফিন তেতে উঠে বলল, “আবার কেন ফোন করছো? তোমার লজ্জা-শরম নাই?”

“আরে শালা, এত রক্ত গরম করলে চলবে? আমি তোমাদের জন্যে সন্ধি প্রস্তাব রাখলাম। আমার লাখ পাঁচেক টাকা লাগব। তোমাদের সামর্থ্য কম, তাই স্যাক্রিফাইস করলাম।”

“হারামজাদা! তুই এখনই ফোন কাট। নাইলে তোরে জেলের ভাত খাওয়ামু।”

শাফিন কল কেটে দিয়েছে। তুহিন হাসল, এখন যত ইচ্ছে তেজ দেখাক, একটু পরে যখন দেখবে বোন লাপাত্তা তখন ঠিকই পায়ে পড়বে। তাতেই জয় নিশ্চিত! আহ্! শান্তি, কী শান্তি!

দুই জায়গা থেকে টাকা নিয়ে গা ঢাকা দেবে৷ সব সেট করা আছে। একটু রয়েসয়ে সব ধামাচাপা পড়ে গেলে দেশের বাইরে চলে যাবে। সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে।

***
অয়ন মোড়ের একটা দোকানের সামনে বসে ছিল, অবন্তীকে ক্যাম্পাসের দিকে যেতে দেখে সচকিত হলো। কারণ বেশ কিছুক্ষণ আগে এই পথে জুনায়েদকে যেতে দেখেছে। আজ কয়েকমাস পরে অবন্তীর সাথে কথা বলার জন্য উঠে দাঁড়াল। পেছন থেকে হাঁক ছাড়ল,
“খুন্তি, এই খুন্তি…”

কিন্তু সাড়া পেল না, অবন্তী হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা ক্রস করে মোড়ের উল্টো পাশে গিয়ে দাঁড়ায় রিকশার জন্য। অয়ন অবন্তীর পিছু নিয়ে ওর পাশে এসে থামল।

“খুন্তি, এত ডাকলাম, শুনিস নাই তুই? নাকি ছ্যাকা খেয়ে বয়রা টয়রা হয়ে গেছিস।”

অবন্তী একবার বিষদৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে রাস্তার দিকে তাকাল। অয়ন হাল না ছেড়ে বলল,
“এত ভাব দেখাস না তো। নেহায়েত তোরে সাবধান করতে এলাম। নয়তো আমার ঠ্যাকা পড়েনি।”

“ঠ্যাকা পড়েনি তাইলে আসলি কী জন্যে? আমি কি তোরে সেধে সেধে আসতে বলেছিলাম?”

অয়ন একবার ভালো করে অবন্তীকে দেখল, এই মেয়ের এত রাগ, সবসময় কেমন ফোঁস করে উঠে।
“আজ যাস না ক্যাম্পাসে।”

“তোর কথায়?”

“হ্যাঁ। আমি তোর ভালোর জন্য বললাম।”

“আমার ভালো তোকে ভাবতে বলিনি। ফ্যাচফ্যাচ না করে নিজের কাজে যা।”

“আচ্ছা, তাইলে বাবা বা ছোটচাচা কাউকে সাথে নিয়ে যা। জুনায়েদকে দেখলাম ওইদিকে। ওই হারামজাদার ভাবগতিক সুবিধার না।”

অবন্তী এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে সরাসরি অয়নের চোখের দিকে তাকালো, এমন চাহনিতে অয়ন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। কিছুটা ইতস্তত করে বলল, “এভাবে তাকিয়েছিস কেন? আমি কি চোর ডাকাত নাকি?”

“হঠাৎ এসব নিয়ে, আমার সমস্যা নিয়ে ভাবছিস তো। তাই ঠিকঠাক দেখার চেষ্টা করছি যে তুই আসলে অয়ন কিনা? ভূত টুত ভর করল কিনা।”

তাচ্ছিল্যের হাসির সাথে গলায় কেমন একটা অসহায়ত্ব ফুটে আছে অবন্তীর, অয়ন এক মুহূর্তের জন্য টলে উঠলেও দ্রুত সামলে নিয়ে বলল, “প্লিজ অন্তি, একা যাওয়ার কোনো দরকার নেই আজ।”

“বাবা, বড়চাচা কেউই বাসায় নেই। আর আজকে খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা ক্লাস আছে, মিস করা যাবে না।”

“তোর লেজ শাফিনকে ডেকে নে, সে নাহয় নিয়ে যাক।”

“শাফিন ওদের বাসায়, এখানে নেই।”

“আমি যাই তোর সাথে?” মরিয়া হয়ে বলল অয়ন। জুনায়েদের উপরে ভরসা নেই, এক নম্বরের হারামি। এখন আবার অয়নকে শায়েস্তা করার জন্য হাত ধুয়ে পড়েছে। অবন্তীকে সে একা একা কিছুতেই যেতে দিতে চায় না।


অবন্তী প্রথমবারেই অয়নের ডাক শুনেছিল, তপ্ত খরার সময় এক পশলা বৃষ্টি যেমন তীব্র প্রশান্তি বয়ে নিয়ে আসে ধরায়, তেমন করেই ওর খরতপ্ত মন সুখী সুখী একটা আনন্দে ছেঁয়ে গিয়েছিল, কিন্তু মুহূর্তেই অয়নের বলা অপমানসূচক কথাগুলো সেই সুখে আগুন ধরিয়ে দিল। তাই হনহনিয়ে পাত্তা না দিয়ে চলে এসেছিল। কিন্তু এমন মরিয়া অয়নকে সে দেখেনি। কেন যেন অনেক চেয়েও এড়াতে পারল না। তাছাড়া জুনায়েদের একটা ভয় মনে গেঁথে আছে।

“আচ্ছা, চল।”

অয়নের মুখে সৌম্য একটা হাসি ফুটে উঠল। অবন্তী দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল। নিজের কাছে প্রতিজ্ঞ করেছে, নিজেকে আর ছোট হতে দেবে না। তাই মনের জোরে মুগ্ধতা কাটালো। অয়ন রিকশা থামাতেই দুজন তাতে সওয়ার হলো। এতটা কাছে বসে আছে ভালোবাসার মানুষটা, ভেতরটা কেমন করে যেন কেঁপে উঠল। যদি অয়নের হাতটা ধরতে পারত, সহসা তৃষ্ণা পেয়ে গেল অবন্তীর, না পাওয়া ভালোবাসা মন দিয়ে ছুঁয়ে দেখার প্রগাঢ় তৃষ্ণা!

***
শিউলির কাছে নিজের মাথাটা ভীষণ ভারী মনে হচ্ছে। চোখ মেলে অপরিচিত জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করে ভয়ের একটা শীতল স্রোত মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে গেল যেন! উঠে বসে দেখল কিছুটা দূরের একটা চেয়ারে তুহিন বসে আছে। মন বিদ্রোহ করে বসল, ভয় পেয়ে এই নোংরা লোককে জিততে দেবে না।

“আরে, বউ, তুমি উঠছো তাইলে?” চতুর হাসি ফুটে আছে তুহিনের মুখে। শিউলির মনে হলো একটা সাক্ষাৎ শয়তান যেন বসে আছে ওর চোখের সামনে।

শিউলির অসহায়ত্ব তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে চাইছে, কিন্তু সে কিছুতেই এটা হতে দেবে না।

“খুব তেজ না তোর? আমার সাথে তেজ দেখাইছস, আর একটু পরে তুই কই যাবি সেইটা জানলে তো…। থাক, সারপ্রাইজ একবারে সময় মতোই পাবি। এহন কিছু কমু না।”

ভেতরে ভেতরে সিঁটিয়ে গেলেও, সামলে নিয়ে বলল, “তুই একটা পচা নর্দমায় কীট। ভালো জিনিস নর্দমায় ফেললে সেইটাও নষ্ট হয়ে যায়। আমার অবস্থাও তাই।”

তুহিন তীব্র রাগে এগিয়ে এসে হাত দিয়ে শিউলির দুই গাল চেপে ধরল।
“ভাগ্যিস অনেকগুলা টাকার মামলা, নাইলে তোরে আমি এইহানেই জিন্দা পুইতা ফেলতাম।”

সাথে ভীষণ অশ্রাব্য কিছু গালি তুহিনের মুখ দিয়ে বের হলো। শিউলি আঁতকে উঠল। কিছু একটা আঁচ করে নিজেকে সামলে নিল। এখান থেকে পালাতেই হবে। যে করেই হোক। কেন যে শাফিনকে না নিয়ে এসেছিল, আফসোস হলো খুব। তুহিনের মতো কিছু জানোয়ারের জন্য মেয়েরা রাস্তাঘাটে নিরাপদে চলতে পারে না।

একটা সুযোগ খুঁজতে থাকল, নিজের মুখে অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলে তুহিনকে বলল, “পানি খাবো।”

তুহিন পেছনে সরে এলো। ভাবল পানি দেওয়ায় যায়। পানির গ্লাস ভর্তি করে শিউলির দিকে এগিয়ে দিতেই ফোনটা বেজে উঠল। তুহিনের ঠোঁটের কোণে বিশ্রী একটা হাসি লেগে আছে। বাইরে বেরিয়ে গেল, দরজার বন্ধ করে দিল বাইরে থেকে। শিউলি নিজের পরিকল্পনায় শান দিতে থাকল।


“আরে শালা, তুমি ফোন করলে যে? একটু আগে না…”

“আপু কই?”

“এত চিল্লাইতেছো ক্যান? সে ভালো আছে। পাঁচ লাখ টাকা দিবা, বোনরে নিয়ে যাবা। খেল খতম।”

“যদি আপুর কিছু হয় তোরে খুন করব হারামজাদা।”

“আরে আরে, এইভাবে তুই তুকারি করতেছো ক্যান? বড়দের সম্মান দিতে হয়।”

“তোর সম্মান আমি তোর…”

“শোনো, ট্যাকা নিয়ে আসো, বেশি প্যাচাল পারলে তোমার বোনের কী হবে সেইটা ভাবার চেষ্টা করো। বুঝলা? আর পুলিশে যদি খবর দেও তাইলে বোনরে আর ইহকালে দ্যাখতে পারবা না। মনে রাইখো।”

ফোন রাখতেই জুয়ারি লোকটার সাথে কথা বলে জানতে পারল আরও এক-দেড় ঘণ্টা লাগবে আসতে। বাড়ির লোকেশনটা আবারও জিজ্ঞেস করা হলে সেটা জানিয়ে নিশ্চিন্তে দরজা খুলে রুমে ঢুকতেই ঘাড়ে সজোরে কিছু একটা যেন গেঁথে গেল। একইসাথে মাথায় শক্ত আঘাত পেলো। তীব্র ব্যথায় টলে উঠল। চোখে অন্ধকার দেখতে লাগল।

***
তুহিন বেড়িয়ে গেলে শিউলি গ্লাসটা দিয়ে দেয়ালে হালকা করে বাড়ি দিল যাতে বাইরে থেকে শব্দ শোনা না যায়, কিন্তু কাজ হলো না। উঠে এসে দরজায় কান পাতলে বুঝল তুহিনের কথাগুলো অনেক দূরে চলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে, তাই ঘরের উল্টোদিকের কোণায় এসে আরেকটা বাড়ি দিল। কয়েক টুকরো হয়ে গেল। একটা বড় চোখা টুকরো হাতে নিল, গ্লাসের শক্ত অংশটাও তুলে নিল। টেবিলে একটা পেপার ওয়েট পেয়ে সেটাও সাথে নিল। এগুলোই অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করার কথা ভাবল। এরপর দরজার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তীব্র শঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। তুহিন ঢুকতেই চোখা অংশ দিয়ে ঘাঁড়ের নিচে গেঁথে দিল, শক্ত পেপার ওয়েট দিয়ে মাথায় সর্বোচ্চ শক্তিতে আঘাত করল। তুহিন কিছুটা টলে উঠেতেই আবারও আঘাত করল, এরপর আর দেরি না করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে নিজের ওড়না দিয়ে তুহিনের হাত বেঁধে দিল।

শেষের দিকের কথা বলতে বলতে দরজার কাছে চলে এসেছিল বলে সেগুলো শিউলি শুনেছে। এক ঘণ্টার মধ্যে পালাতে হবে নইলে আবার ধরা পড়ে যাবে। ঠিকানাও শুনে ফেলেছে, তুহিনের ফোনটা নিয়ে শাফিনের নাম্বারে কল করল, নিজের অবস্থান আর পরিস্থিতি সংক্ষেপে জানালো। আতঙ্ক কাটেনি শিউলির, ভয়ে সিঁটিয়ে আছে। এমন দুঃসাহসি একটা কাজ সে করতে পারবে সেটা সে কোনোদিনই ভাবতে পারেনি। নিজের ভেতরে কত আলো-আঁধারি লুকায়িত থাকে, নিজেই কী সবটা আবিষ্কার করতে পারে এক জীবনে!

তুহিন নিজের বোকামির জন্য নিজেকেই দুয়ো দিচ্ছে, খুব বেশি হালকাভাবে নিয়েছিল সে শিউলিকে। অতর্কিত আক্রমণের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না বলেই এমন হয়েছে। আরও বোকামি হয়েছে শাফিনকে ফোন করে, কাজ সেরে টাকা পেয়ে চুপিচুপি চলে যেত। কী দরকার ছিল এমন বেশি বুঝার! সব এভাবে হাতের বাইরে বেরিয়ে গেল। হাত খেলার চেষ্টা করতে করতে এসব ভাবছিল আর শিউলিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছিল।

শিউলি থম মেরে বসে রইল, ওর আর কিছু ভাবার নেই, দুনিয়াটা যেন হঠাৎই ওর কাছে দুঃসহ মনে হলো। এই জায়গার কিছুই চেনে না বলে সেখানেই অপেক্ষা করতে লাগল। কতক্ষণ কেটে গেল জানে না, তবে বাইরে হইচইয়ের শব্দের পাশাপাশি শাফিনের গলার আওয়াজ শুনে দরজা খুলল। পুলিশ এসেছে সাথে। পুলিশ তুহিনকে এরেস্ট করতেই শাফিন ওড়না এনে শিউলিকে দিল। পুলিশ শিউলির কাছ থেকে সব শুনে অপেক্ষা করতে থাকল নারী পাচারকারী চক্রের লোককে ধরার জন্য। দুই ভাইবোন বেরিয়ে এলো। মুক্ত বাতাসও আজ শিউলির ভয়ে প্রলেপ দিতে পারল না। অনুভূতি শূন্য হয়ে ভাইয়ের হাত ধরে পা বাড়ালো রাস্তায়।

***
অবন্তীকে পৌঁছে দিয়ে ফিরছিল অয়ন। রিকশায় উঠে একটাও কথা হয়নি দুজনের। রিকশা থামতেই টুপ করে নেমে একবারও পেছনে না তাকিয়ে হেঁটে চলে গেছে অবন্তী। অয়নও রিকশা বিদায় করে হেঁটে আসছিল, ফার্স্ট গেটের কাছাকাছি আসতেই জুনায়েদের মুখোমুখি হলো।

“ভালো ভালো, চাচাতো বোনের গার্ডের চাকরি জুটছে তাইলে। আমি ভাবছি তুই এমন আকাইম্মাই থাকবি সারাজীবন।”

অয়ন চোখমুখ শক্ত করে বলল, “আমারে বেশি ঘাটাইস না, তাইলে তোর লাশ পড়বে এইখানে।”

“আরে, তুই তো সেদিনই মাইর খাইলি৷ ভুইলা গেলি? আবার বড় বড় কথা। মুরোদ থাকলে আর বাপের বেটা হয়ে থাকলে মোকাবিলা কর। কাপুরষ একটা!”

অয়নের মাথায় খুন চেপে গেল, আজ বুঝি কিছু একটা হয়েই যাবে!
……..
(ক্রমশ)