আবদ্ধ আমি পর্ব-০১

0
1261

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#১মপর্ব

আমাদের কাজিন দলের অঘোষিত নেতা আহান ভাই।দেশ-বিদেশে তার গার্লফ্রেন্ডের ছড়া-ছড়ি।আজ তার সাথে বিয়ে সম্পুর্ন হলো আমার।তিনি বাসরঘরে প্রবেশ করেই হাতে থাকা ড্রিঙ্কের বোতলটার কেপ খুলে আমার ঠোটে ঢেলে দেন।তারপর তিনি আমার সাথে জড়িয়ে নেন নিজের ঠোটটা।

তার এরকম উটোং মার্কা কাজ-কারবারে প্রচুর বিরক্ত হই আমি।তার উপর আবার মদের কিছু কণা পড়েছে নিজের ঠোটে।মনে হচ্ছে এখনি ভিতর থেকে বের হয়ে আসবে বমি নামক বস্তুটা।এদিকে আমাকে ছাড়ার কোনো নাম গন্ধ নেই আহান ভাইয়ের।

শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্টে তাকে ঠেলে সড়িয়ে দিয়ে ওয়াসরুমের দিকে দৌড় শুরু করি।তখন দৌড়ের স্পিড এত বেশি ছিল‌ যে খানিকক্ষনের জন্য মনে হয় বিখ্যাত দৌড়বিদ হোসাইন বোল্ট আমার কাছে কিছুই না।পরক্ষনে বুঝতে পারি হোসাইন বোল্টের সাথে আমার পার্থক্যটা।

নিজেকে হোসাইন বোল্ট মনে করে দৌড়াতে দৌড়াতে একপর্যায়ে মেঝেতে হোচট খেয়ে পড়ি আমি।একটু জোড়ে হোচট খাওয়ার ফলস্বরুপ কপালে ডিম্বাকৃতির মতো একখানা বস্তু জন্ম নেয়।আস্তে করে উঠে দাঁড়িয়ে শত বাধা পেড়িয়ে অবশেষে ওয়াসরুমে পৌঁছাতে সক্ষম হই আমি।

ওয়াসরুমে পৌছে প্রথমে ঠোটটা পরিষ্কার করতে থাকি।তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠি আমি।কপাল দিয়ে রক্ত পড়ছে।আমি সেখানে একটু পানি দিয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আসি।আমি বের হয়ে আহান ভাইয়ের সামনে আসতেই তিনি ভ্রু-কুঁচকে তাকান আমার দিকে।তার এভাবে তাকানোর কারনটা বুঝতে পারি আমি।

আহান ভাই উঠে দাঁড়িয়ে আমার সামনে আসে।বেশ কিছুক্ষন কড়া চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মুখ খুলে বলেন,
–“আচ্ছা উষু তুই আর্জেনটিনা নাকি ব্রাজিল?”
এই মুহুর্তে তার এরকম প্রশ্ন কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা বানিয়ে দেয় আমাকে।তবুও কণ্ঠটা নরম রেখে বলি,
–“আমি নাইজেরিয়া।যদি উগান্ডা ফুটবল খেলতো তাহলে আমি উগান্ডাকে সাপোর্ট করতাম।কিন্তু তারা তো খেলে না তাই তার খালাতো ভাই নাইজেরিয়াকে সাপোর্ট করি।”

আমার উত্তর শুনে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে আমার দিকে আহান ভাই।অথ:পর তার ২২কেজি ওজনের বিশাল হাতখানা দিয়ে একটা বাড়ি মারেন আমার পিঠের মধ্যে।সাথে বলে ওঠেন,
–“সাব্বাস উষু,আমিও নাইজেরিয়া।তারমানে আমরা সেম।আয় আয় তারাতারি তোর কপালটা ব্যান্ডেজ করে দেই!”

আহান ভাইয়ের কথা শুনে চোখ কপালে উঠে যায় আমার মানে উষা নামক মেয়েটার।আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে গিয়ে তার পাশে বিছানায় বসে পড়ি।তিনি অত্যান্ত দায়িত্বতার সাথে আমার ব্যান্ডেজ করাতে থাকেন।তার সাথে মুখ দিয়ে বলতে থাকেন,
–“তুই নাইজেরিয়া বলে তোর ব্যান্ডেজটা করছি।অন্য কিছু ‌মনে করিস না আবার।”

আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে বলি-‘না।’আহান ভাই আমার মাথায় আস্তে করে একটা মেরে বলে,
–“দেখতেছিস না ব্যান্ডেজ করতেছি।তবুও নড়িস কেন?”
এবার আর আমি কোনো উত্তর দিলাম না।আহান ভাই সব কাজের ইতি টেনে নিয়ে লম্বা হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েন।আমার দিকে তাকিয়ে আদেশের সুরে বলেন,
–“লাইটটা বন্ধ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়!”

আমি লাইট বন্ধ করে দিয়ে এসে শুয়ে পড়ি তার পাশে।মনে মনে আওরাতে থাকি কিছু কথা।উদাহরণস্বরুপ,
–”বাসরঘর নিয়ে কত না স্বপ্ন ছিল কিন্তু একটাও পুরন হলো না আমার।ধুর নিজেকে কপালফাটা মনে হচ্ছে।”
এমন সময় ঘাড়ের কাছে কারো উপস্থিত টের পাই।মাথা ঘুড়িয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি আহান ভাই ঘুমিয়ে আছে।আমি একরাশ মন খারাপ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।ইতি ঘটে বাসররাত নামক রাতটার।

আমি উষা।পৈতৃক নাম অনুযায়ী উষা আহম্মেদ।আর আমার পাশে শুয়ে থাকা অদ্ভুত ব্যাক্তিটার নাম আহান আহম্মেদ।সবাই তাকে আহান বলেই ডাকে।জীবনের অর্ধেক বয়সই থেকেছে দেশের বাহিরে।

পরেরদিন কিছুটা দেরিতে ঘুম ভাঙ্গে আমার।মাথায় হাত দিতেই আবিষ্কার করি ব্যান্ডেজটা।চকিতে মনে পড়ে যায় রাতের কথা।পাশে তাকিয়ে আবিষ্কার করি ঘুমন্ত আহান ভাইকে।আমি উঠে বসতেই চোখ খোলেন তিনি।আমি তার সাথে কথা না বলে একটা জামা নিয়ে প্রবেশ করি ওয়াসরুমে।লক্ষ ফ্রেস হওয়া।

বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে ফ্রেস হওয়ার পর বের হই আমি।আমি বের হওয়ার পর ভিতরে প্রবেশ করে আহান ভাই।কিছুক্ষন পর তিনিও ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে আসেন।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“উষু আজকে আমার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে তোকে।আমার ৪নাম্বার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ করবো।”

সকাল বেলাই তার মুখের প্রথম কথাটা অবাক করে দেয় আমাকে।আমি মাথা নিচু করে বলি,
–“চলুন নিচে যাই!”
আহান ভাই ভ্রু-কুঁচকে আমার দিকে তাকায় কিন্তু কোনো‌ কথা বলে না।তিনি রুম থেকে বের হয়ে যান।আমিও তার পিছন পিছন বের হই রুম থেকে।আমি উপরে থাকতেই তিনি উপস্থিত হন খাবার টেবিলে।নিচ থেকে মামি চিল্লিয়ে বলেন,ইশানকে ডেকে নিয়ে যেতে।ইশান আহানের ছোট ভাই সাথে আমার বেষ্টফ্রেন্ড।

আমি হাসি-খুশি ভাবে ইশানকে ডাকতে যাই।তার রুমের সামনে গিয়ে থমকে যাই আমি।ফুলস্পিডে গান বাজতেছে তার রুমে।আমি দরজায় বাড়ি মারতেই থাকি।একপর্যায়ে দরজা খুলে দেয় ইশান।সে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“বেষ্টু,কি হইছে?”

আমি এবার একটু বড় হওয়ার ভাব নিয়ে বলি,
–“বেয়াদ্দপ ছেলে।বেষ্টু কি ভাবি বল?”
ইশান ঢ্যাপঢ্যাপ করে তাকায় আমার দিকে।তারপর মুখের উপরে ঠাস করে লাগিয়ে দেয় দরজাটা।গান বাজতে শুরু করে ফুলস্পিডে।আমি আর কয়েকবার দরজায় মেরে দরজা খুলছে না দেখে নিচে নেমে আসি।

নিচে এসে বসে পড়ি খাবার টেবিলে।মামি আমাকে দেখে বলেন,
–“ইশান আসতেছে কি?”
আমি উত্তর না দিয়ে নিরবে মাথা নাড়াই।আহান নাস্তা করতে শুরু করে দিয়েছে অলরেডি।মামা আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“উষা মা,তোর কপালে টেপ কেন?”
মামি আমার দিকে তাকিয়ে একই প্রশ্ন করেন।আমি এবার কি বলবো ভেবে পাইনা?এইসময় আহান ভাই বলে ওঠেন,
–“আসলে কালকে পড়ে গেছিল ও।আমি ব্যান্ডেজ করে দিছিলাম।আজ সকালে ব্যান্ডেজ খুলে টেপ লাগিয়েছে”

সেদিনের মতো নাস্তা করা শেষ হয় আমাদের।সবাই উঠতে যাব এমন সময় ইশান এসে বসে নাস্তা করতে।আমি আর আহান উপরে উঠে যাই।রেডি হতে থাকি দুজনে।লক্ষ্য আহানের ৪নাম্বার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ করানো।কলেজে আমি এসব কাজে পাকা।তাই রিক্সটা নিয়েই নিলাম।

আমি আর আহান ভাই বের হই রুম থেকে।আমি গাড়িতে বসে পড়ি।আমার পাশের সিটে বসে পড়েন আহান ভাই।গাড়ি চালাতে শুরু করেন তিনি।গাড়ি চালানোর একপর্যায়ে তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
–“উষু তুই কি মনে করতেছিস আমি তোকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছি?”

এই প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর খুঁজে পেল না আমার মস্তিস্ক।তবুও মুখটা দিয়ে বলে ফেললাম,
–“অবশ্যই”
আমার উত্তর শুনে ঝট করে গাড়ি থামায় আহান ভাই।মাথা ঘুড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“ও মাই গড।তারমানে তোর মনের মধ্যে বিশ্রি ভাবনা চলছে।আরে বুদ্ধু আমি তো তোকে বিয়ে করেছি জাষ্ট মজা করার জন্য।আমি মন থেকে ভালোবাসি একজনকে।দিনশেষে তার সাথেই আমার সবকিছু”
এই বলে তিনি পুনরায় গাড়ি চালানোয় মন দেন।আহান ভাইয়ের এই কথাটায় প্রচুর মন খারাপ হয়ে যায় আমার।চোখের কোণে জমা হয় পানির কণা।

একপর্যায়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় কালো রংয়ের একটা গাড়ি।গাড়ি থেকে নেমে আসে মুখোসধারী কিছু লোক।তারপরে তারা আমাদের গাড়ির কাছে আসে।আহান ভাই গাড়ি থেকে বের হতেই একজন তার মুখে রুমাল চেপে ধরে।অনুরুপ আমার মুখেও রুমাল চেপে ধরে অজ্ঞান করা হয় আমাকেও।

চোখ খুলে নিজেকে একটা বিশাল বাংলোয় আবিষ্কার করি আমি।আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে একটা ছেলে।ছেলেটাকে দেখে চমকে উঠি আমি।আহান ভাই সামনে দাঁড়িয়ে আছে,তবে হাত দুটো বাধা।

আমার হাত পা বাধা না থাকার কারনে উঠে দাঁড়াই আমি।ছেলেটি এক ঝটকায় টেনে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আমি তাকে সড়িয়ে দিয়ে এক কোণে দাঁড়াই।ভালোভাবে তাকাই ছেলেটার দিকে।ড্যাশিং একটা ছেলে দেখতে যাষ্ট ওয়াও😍

ছেলেটা আমার সামনে বসে পড়ে একটা ফুল নিয়ে।বলতে শুরু করে,
–“যেদিন প্রথম দেখেছি সেদিনই ভালোলেগে যায়।একটা কথাই শুধু বলবো তোমাকে ভালোবাসি নিজের থেকেও বেশি।আই লাভ ইউ..”

চলবে..