আবদ্ধ আমি পর্ব-০২

0
820

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#২য়_পর্ব

নিজের বরের সামনে অন্য একটা ছেলে প্রপোজ করছে আমাকে এটা সত্ত্যিই অবাস্তব।যদিও উপস্থিহ আহান ভাই আমাকে নিজের স্ত্রী মনে করে না তবুও শরীয়ত মোতাবেক আমি তো তার স্ত্রী।ড্যাশিং ছেলেটা এখনো আমার সামনে বসে আছে।আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না?শেষ পর্যন্ত উপায় না পেয়ে তাকাই আহান ভাইয়ের দিকে।তার মুখ দেখে চমকে উঠি আমি।কোনো এক কারন বশত তার মুখ লাল টকটকে রং ধারন করেছে।

আমি অতশত না ভেবে ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে আমার মুখখানা দিয়ে বলে ফেলি,
–“আই এম ম্যারিড।আর উনি আমার বর।সো,আমাকে ভালোবেসেও লাভ নেই।”

আমার উত্তর শুনে ছেলেটা মুচকি হেসে দাঁড়ায়।তারপর হাতের পিস্তলটা লোড করে নিয়ে তাক করে আহান ভাইয়ের দিকে।সাথে বলে,
–“তাহলে একে ‌মেরে দেই।তারপর আমরা দুজন সংসার করবো।”
আহান ভাইয়ের দিকে পিস্তল তাক করে রাখার পরেও তার মধ্যে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন খুঁজে পায় না আমার নয়ন দুটো।তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে,এখন ছোটবেলার মতো কাগজ দিয়ে বানানোর পিস্তল দিয়ে গুলি করাকরি খেলা চলছে।

হঠাৎ সম্পুর্ন ঘরটা ছেয়ে যায় ধোয়ায়।আমার কিডনি পর্যন্ত ভর্তি হয়ে যায় ধোয়ায়।এতটা পরিমাণে ধোয়া উড়ছে যে আমরা উপস্থিত কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।এমন সময় একটা হাত আমাকে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করে।আমিও তার সাথে তাল মিলিয়ে ধোয়ার অন্ধকারে হাড়িয়ে যাই।খেয়াল করি না কে আমাকে ধরে পালাচ্ছে?তবে পারফিউমের গন্ধ স্পষ্ট বলে দিচ্ছি ব্যাক্তিটা আহান ভাই।

আমরা গেটের কাছে চলে এসেছি এমন সময় পিছন থেকে ড্যাশিং ছেলেটা চিল্লিয়ে বলে,
–“পালিয়ে গেলে এবার না।চালাকিটা ভালোই করেছো।তবে মনে রেখো নিদ্রের হাত থেকে রক্ষা পাবেনা তুমি”
আমরা দুজন বের হয়ে এসে তাদেরই একটা গাড়িতে বসে পড়ি।আহান ভাই তারাতারি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চালাতে থাকে।কিছুক্ষন পর তাদের আর কোনো অস্তিস্ব দেখতে করতে পারি না আমরা।

আহান ভাই বেশ মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হয়ে বলি,
–“ধোয়াটা কেমন করে ছড়ালে তুমি?”
আমার কথা শুনে আহান ভাই আমার দিকে না তাকিয়েই বলে,
–“ছেলেটা তোকে চিনলো কেমন করে?তুই এরকম কাপড় পড়ে কলেজে যাস দেখেই ছেলেটার নজর তোর দিকে পড়েছিল।আজ থেকে বাড়ি থেকে বের হবার আগে বোরকা পড়বি বুঝলি।না হলে অবস্থা খারাপ করে দিব তোর।”

আমি তার কথায় বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়াই মুখ ফুটে কিছু বলিনা।আহান ভাই আবার বলতে শুরু করে,
–“আজকে আর ব্রেকআপ করতে যাচ্ছি না।ফোনেই করে নেব সেটা।এখন শপিংমলে যাবো তোর জন্য বোরকা কিনতে।রেডি থাক।”
আমি পুনরায় শুধু মাথা নাড়াই কোনো কথা বলি না।

একপর্যায়ে আমরা এসে পৌঁছাই যেখান থেকে আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে সেখানে।আমাদের গাড়িটা এখনও সেখানেই পড়ে আছে।আমরা গাড়িটা চেঞ্জ করে তাদের গাড়িটা সেখানেই রেখে রওনা দেই।

কিছুক্ষন পর এসে পৌঁছাই শহরের সবচেয়ে বড় শপিংমল টাতে।আহান ভাই গাড়িটা সাইট করে রেখে আমাকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।আমরা দুজন প্রথমে যাই একটা বোরকার দোকানে।সেখানে গিয়ে দুজনের পছন্দ মতো কিছু কাপড় ক্রয় করি।এরপর আহান ভাই আমাকে নিয়ে একটা রেষ্টুয়েন্টে প্রবেশ করে।তিনি আমার কোনো কথা না শুনে একগাদা খাবার অর্ডার করেন।

সব খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা সেখান থেকে বের হই।আহান ভাই আমাকে নিয়ে সোজা বাসার পথে রওনা হয়।বাসায় ফিরতে ফিরতে দুপুর ঘনিয়ে আসে।সবাই একসাথে খাবার টেবিলে বসি খাবার খেতে।

বিয়েটা যেহেতু ধুমধাম করে হয়নি সো পরেরদিন বাড়িতে কোনো আত্মীয়-স্বজন ছিল না।ছিলাম শুধু আমরাই।মামি খাবার দিতে লাগলেন সবার প্লেটে প্লেটে।

আমার মাথা বর্তমান একটা চিন্তাই ঘুরছে সেটা হলো,সেই ছেলেটার কথা গুলো।কিন্তু আহান ভাইকে দেখে মনেই হচ্ছেনা কিছুক্ষন আগে আমরা একটা বিপদের মুখ থেকে বেঁচে এসেছি।

খাবার খাওয়ার মাঝ পর্যায়ে মামা তার কণ্ঠ দিয়ে আমাদের সবার উদ্দেশ্যে বলেন,
–“রাতে আমাদের দাওয়াত আছে।বিয়ের দাওয়াত।আমি আর তোদের মা এখনি যাচ্ছি তোরা সবাই পরে চলে আসিস!”
ইশান মাথা তুলে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“কার বিয়ে বাব?”

এবার তার বাবা উত্তর দেয়ার আগে তার মা বলে,
–“তোর বাবার বন্ধু শফিক সাহেবের মেয়ের বিয়ে.”
ইশান সাথে সাথে আবার বলে,
–“আমার অ্যাসাইনমেন্ট আছে আমি যেতে পারবো না।তোমরা যাও সবাই”

এর মধ্যে খাওয়া শেষ হয় মেহেদি সাহেবের।তিনি উঠে জোর গলায় ঘোষণা করেন,
–“আহান আর উষা তোমরা দুইজন পরে একসাথে আসবে।আমরা এখনি যাচ্ছি”
আমি দেখলাম আহান ভাই শুধু মাথা ধাকালো কোনো কথা বললো না।আমি কোনো কথা না বলে খেতে থাকি।খাওয়া শেষ করে আমার আগেই রুমে চলে যায় আহান ভাই।তার কিছুক্ষন পর আমিও রুমে চলে যাই।

আমি রুমে গিয়ে দেখি আহান ভাই ফোন নিয়ে বসে আছে।আমি গিয়ে তার থেকে যতেষ্ট পরিমাণ দুরত্ব বজায় রেখে বসে পড়ি।কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে বসে থাকার পরও যখন সে কথা বলছেনা,তখন আমি আর বসে না থেকে শুয়ে পড়ি।কিছুক্ষনের মধ্যে আমার চোখ দুটো ঘুমে ছেয়ে যায়।ঘুমিয়ে পড়ি আমি।

কারো গা ধাক্কানিতে ঘুম ভাঙ্গে আমার।চোখ খুলে দেখি ও বিশাল আকৃতির মানুষ আহান ভাই দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।তিনি বেশ জোর গলায় বলেন,
–“তারাতারি রেডি হ উষু,সন্ধ্যা হবে কিছুক্ষন পর!”
এই বলে তিনি হরহর করে সেই স্থান ত্যাগ করেন।আ‌মি আস্তে করে উঠে টলতে টলতে ওয়াসরুমে যাই।ফ্রেস হয়ে বের হওয়ার পর একটা চিন্তা বেশ ভালো করেই ঝেঁকে ধরে আমাকে।

আমি জামা পড়বো নাকি শাড়ি?নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করি।কিন্তু আমার এই অকাজের মনটা কোনো উত্তর দিতে পারে না।শেষ পর্যন্ত কাজে লাগাই মাথাকে।জামা এবং শাড়ির ভালোমন্দ দিকগুলো খুঁজতে শুরু করি।একপর্যায়ে ধু‌ম করে আমার মনে পড়ে,আচ্ছা আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না তাহলে পড়ার চিন্তা করতেছি কেন?

এখন বুঝতে পারি মনের সাথে সাথে মাথাটাও বোকা হয়ে।শেষ পর্যন্ত চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত দাঁড়ায় জামা পড়বো।এমন সময় অশ্বের মতো রুমের ভিতরে প্রবেশ করে আহান ভাই।তিনি কিছুক্ষন আমার দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে থাকেন।তার এভাবে তাকানোর কারনটা বুঝতে পারছি না।এবার তিনি তার ভ্রু-স্বাভাবিক অবস্থানে নিয়ে গিয়ে বলেন,
–“তুই শাড়ি পর।মা বললো,তোকে শাড়ি পড়িয়ে নিয়ে যেতে”

“ব্যাস,যেখানে সন্ধ্যো হয় সেখানে তো বাঘের ভয় থাকবেই।শাড়ি পড়ার ইচ্ছা আমারও ষোলোআনা।কিন্তু আমার অকর্মা হাত দুটো ইহা সম্পাদন করতে পারে না।কেমনে পড়বো শাড়ি?পারি না!”
আমার কথা আহান ভাইকে একটু ভালোভাবেই নাড়িয়ে দেয়।বেশ চিন্তায় পড়ে যান তিনি বলে মনে হয়।

শেষ পর্যন্ত তিনি ঘোষনা দেন শাড়ি পড়তে হবে না তবে বোরকা পড়ে যেতে হবে।তার কথা মতো জামা বাদ দিয়ে বোরকা পড়ে নেই আমি।তারপর বাসায় ইশানকে রেখে আমরা দুইজন রওনা হই আমার মামা+শশুরের বন্ধু শফিক সাহেবের বাসার উদ্দেশ্য

প্রায় ৩০মিনিটের মতো গাড়ি ড্রাইভ করার পর সেখানে উপস্থিত হতে সক্ষম হই আমরা।গাড়ি সাইট করে ভিতরে প্রবেশ করতেই ভিতরে একটা অবাক করা লোককে দেখতে পাই।আমি যতটা চমকে গেছি আহান ভাই তার থেকে অল্প কম চমকেছে।এখন বড় কথা হলো কে কতটুকু চমকেছি সেটা নয়,চমকেছি যে এটাই বড়।

লোকটাকে দেখে ভয়ে আমার লোম খাড়া হয়ে যায়।লোকটাও আমাদের দেখে কিছুটা অবাক হয়েছে।লোকটা আর কেউ নয়…..

চলবে..