আবদ্ধ আমি পর্ব-০৩

0
744

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#৩য়_পর্ব

আমরা যেমন নিদ্রকে এইখানে এই অবস্থায় দেখে অবাক হয়েছি,আমাদের মতো নিদ্রও অবাক হয়েছে।আমি ঝট করে মাথা ঘুড়িয়ে তাকাই আহান ভাইয়ের দিকে।তাকে এখনো স্বাভাবিকই দেখা যাচ্ছে।আমি বুঝতে পারি না এরকম পরিস্থিতি গুলোতে তিনি স্বাভাবিক থাকেন কি করে?

এবার নিদ্র ঠোটের কোণে রহস্যময়ী হাসিটা নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আছে।একপর্যায়ে সে ঠিক আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে তার কোর্টের হাতাটা ঠিক করতে করতে অন্য দিকে তাকিয়ে বলে,
–“দেখা তাহলে হয়েই গেল?তবে এত তারাতারি দেখা হবে ভাবিনি।”

তার কথা শ্রবন করে আহান ভাই শুধু মুচকি একটা হাসি দেয় মুখ ফুটে কিছু বলে না।এমন সময় আমি‌ লক্ষ করি আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে মামা-মামি ও দুইজন ব্যাক্তি।পরবর্তিতে জানতে পারি ব্যাক্তি দুটো নিদ্রের বাবা-মা।

নিদ্রের বাবা মা বেশ ভালোভাবেই আমাদের সাথে কথা বলে।তাদের দেখে মনে হয় না তাদের ঘর আলো করে এই খাটাসটা জন্ম নিয়েছে।কথায় কথায় জানতে পারি তাদের সাথে মামার পরিচয় অনেকদিনের।যখন নাকি আহান ভাইদের জন্ম হয়নি তখন তারা একই‌ ফ্লাটে ভাড়া থাকতো।এসব ইতিহাস শুনতে যদিও আমার ভালো লাগে তবে বুঝতে পারছি আহান ভাই ও নিদ্র প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে।

মামার ইতিহাস বলার মাঝপর্যায়ে আহান ভাই বলে ওঠে,
–“বাবা আমরা তারাতারি চলে যাব!”
আহান ভাইয়ের কথা শুনে মামা ইতিহাস বলা থেকে বিরতি নিয়ে মাথা ঘুড়িয়ে তাকায় তার দিকে।তারপর মুখের মধ্যে হাসি রেখে বলে,
–“ওকে আয় তোরা।খাওয়া করে চলে যা!”

এই বলে মামা এগোতে থাকে।আমি,মামী আর আহান ভাই তার পিছনে পিছনে চলতে থাকি।একপর্যায়ে মামা আমাদের নিয়ে এসে একটা টেবিলে বসে পড়ে।টেবিলে আরো চেয়ার থাকার দরুন আমাদের সাথে বসে পড়ে নিদ্ররাও।আমার ঠিক সামনের চেয়ারটায় বসে পড়ে নিদ্র।

খাবার খাচ্ছি মাথা নিচু করে।আমার পাশে বসে আছে আহান ভাই।আমি খাবার খাচ্ছি আর ভাবছি নিদ্র কি পাগল নাকি?জানে আমি বিবাহিত তবুও পিছু ছাড়ছে না।এমন সময় আমি পায়ের কাছে কারো ছোয়া অনুভব করতে পারি।আমি মাথা তুলে আহান ভাইয়ের দিকে তাকাই।কিন্তু তাকে স্বাভাবিক দেখাচ্ছে।পরক্ষনেই আমি বুঝতে পারি এটা আহান ভাইয়ের পা নয় নিদ্রের পা।আমি এক সেকেন্ড দেরি না করে পা সড়িয়ে নেই।

সাথে সাথে নিদ্র আমার দিকে তাকায়।আমি তার দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে খেতেই থাকি।আমাদের টেবিলের মধ্যে সবার আগে খাওয়া শেষ হয় আহান ভাইয়ের।তিনি আমার জন্য বসে থাকেন সেখানেই।কিছুক্ষন পর আমার খাওয়া শেষ।দুজনে উঠে যাই টেবিল থেকে।

আসছি থেকে একটা জিনিসই ভেবে চলেছি,কেন আহান ভাই আমাকে চোখে চোখে রাখছে?তিনি কি আমাকে ভালোবাসে?মেনে নিয়ে কি তার স্ত্রী হিসেবে?কিন্তু তিনি তো বলেছিলেন তিনি আমাকে না বিশেষ একজনকে ভালোবাসেন।তাহলে আমাকে চোখে চোখে রাখছে কেন?আর কেনই বা নিদ্রের থেকে দুরে দুরে রাখছে।

আমি লক্ষ করি আহান ভাই একজন মানুষকে জিজ্ঞাসা করছে ছাদের কথা।কিছুক্ষন পর তিনি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলেন,
–“চল ছাদে যাই!”
তিনি আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই আমাকে নিয়ে এগোতে শুরু করেন।মাঝে মাঝে এই লোক গুলোর উপর প্রচুর রাগ হয়।যদি আমার উত্তর নাই শোনো তবে প্রশ্ন করো কেন?

কিছুক্ষনের যাত্রার সমাপ্তি ঘটে ছাদে পৌছে।বেশ লাইটিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে ছাদে।তবে ছাদটা জন-মানবহীন।চারদিকে বেশ ভালো করে তাকিয়েও ‌কোনো দুপেয়েকে দেখতে পেলাম না।আহান ভাই আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।আমি এবার একটা সিদ্ধান্ত নেই মনে মনে।সিদ্ধান্ত এই-“কেন আহান ভাই আমাকে চোখে চোখে রাখছে?তিনি কি আমাকে ভালোবাসে?মেনে নিয়ে কি তার স্ত্রী হিসেবে?কিন্তু তিনি তো বলেছিলেন তিনি আমাকে না বিশেষ একজনকে ভালোবাসেন।তাহলে আমাকে চোখে চোখে রাখছে কেন?আর কেনই বা নিদ্রের থেকে দুরে দুরে রাখছে।”এই প্রশ্ন গুলো জিজ্ঞাসা করবো।

একবুক সাহস সঞ্চার করে নেই প্রথমে।তারপর হাত দিয়ে আহান ভাইকে টেনে নিয়ে এসে একটা দেয়ালে চেপে ধরি।চেপে ধরি বললে ভুল হবে কেননা তার মতো‌ মানুষকে চেপে ধরার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা এখনো এই উষাকে দেয়নি।

আমার কাজ কারবার দেখে আহান ভাই একটু অবাক হন।তিনি কিছু বলার আগেই আমি তার দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলি,
–“আচ্ছা আহান ভাই আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?আমাকে আপনার স্ত্রী মনে করেন?”
আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে কোনো বেগ পেতে হয়না আহান ভাইকে।তিনি সোজাসুজি ভাবে বলে দেন,
–“না,আমি বিশেষ কাউকে ভালোবাসি।”

আমি এবার তাকে ছেড়ে দিয়ে তার থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াই।তারপর একটু জোড়ে করে বলি,
–“তাহলে কেন আমাকে চোখে চোখে রাখছেন?কেনই বা নিদ্রের থেকে দুরে দুরে রাখছেন”

আমার কথার উত্তর না দিয়ে আহান ভাই উল্টা প্রশ্ন করেন,
–“তুই কি নিদ্রের কাছে যেতে চাস?না ক্লিয়ারলি বল।যেতে চাইলে যা নো প্রবলেম।”
আমি কি উত্তর দিব বুঝতে পারি না।আহান ভাই পুনরায় আমার দিকে তাকিয়ে গলার স্বর একটু নরম করে বলেন,
–“তোকে চোখে চোখে রাখার কারন যাতে নিদ্র তোকে কিডন্যাপ করতে না পারে।ভাব একবার যে যদি তোকে কিডন্যাপ করে তোর সাথে খারাপ কিছু করে তাহলে কি হবে?”

আহান ভাইয়ের কথাটা শুনে শিউরে উঠি আমি।সত্ত্যিই তো!এসবতো আগে ভাবিনি।এমন সময় আমাদের দুজনকে বাদ দিয়ে তৃতীয় কেউ বলে ওঠে,
–“ভয় নেই উষা,সেরকম কিছু করবো না আমি।”
আমি আর‌ আহান ভাই ঝট করে তাকাই তার দিকে।স্পষ্ট দেখতে পাই নিদ্র দাঁড়িয়ে আছে সামনে।

নিদ্র আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে আমার দিকে।আসতে আসতে পুনরায় বলতে থাকে,
–“সেরকম কোনো ভয় নেই।আমি আমার ভালোবাসার কোনো ক্ষতি করবো না অন্যদের মতো।”
আহান ভাই আমার হাত ধরে ছাদ থেকে নিচে নামতে ধরে।নিদ্র আমাদের আটকানোর কোনো চেষ্টা করে না।নিরাপদেই ছাদ থেকে নিচে নেমে আসি আমরা।

আহান ভাই মামার কাছে গিয়ে বলে,
–“বাবা আমরা যাই!ইশান আবার একাই আছে।তোমাদের তো যেতে দেরি হবে তাই না!”
আহান ভাইয়ের কথায় শুধু মাথা নাড়ায় মামা।তিনি আমাদের যাওয়ার অনুমতি দেন।আহান ভাই আমার হাত ধরে কিছুটা টেনে বাহিরে নিয়ে আসে।আমরা গাড়িতে উঠে বসে পড়ি দুজনে।আহান ভাই গাড়ি চালাতে শুরু করে।

আমি শুরু থেকেই লক্ষ্য করি আমাদের পিছু নিয়েছে একটা গাড়ি।আহান ভাই গাড়ির স্পিডটা একটু বাড়িয়ে দেয়।এতোটা স্পিডে চালাচ্ছে যে যেকোনো সময় বিপদ হতে পারে।এমন সময় সামনে দেখা দেয় একটা ট্রাক।তবে সেটা চলছে না দাঁড়িয়ে আছে বোঝা যাচ্ছেনা।যদি চলতে থাকে তাহলে আমরা শেষ আর যদি দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে….
.
.
.
চলবে..ইনশাআল্লাহ