আবদ্ধ আমি পর্ব-০৪

0
612

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#৪র্থ_পর্ব

“ট্রাকটা চলন্ত,নাকি না?”
প্রশ্নটার উত্তর এখনো পাচ্ছি না আমি।এদিকে আহান ভাই যেভাবে চালাচ্ছে তাতে মৃত্যু নিশ্চিত।আমার মনে হচ্ছে না আহান ভাই ট্রাকটাকে দেখতে পেয়েছে।

একপর্যায়ে আমরা পৌছে যাই ট্রাকটার সামনে।এমন সময় নিভে যায় ট্রাকের সামনের লাইটা।তার ঠিক সামনে বেশ জোড়ে ব্রেক করে আহান ভাই।ভাগ্যিস সিট বেল্টটা পড়ে ছিলাম নাহলে মাথা ফাটা নিশ্চিত।

আমি মাথা তুলে সামনে তাকাই।এতক্ষন যেটাকে ট্রাক ভাবছিলাম আসলে সেটা বাস ছিল।আহান ভাই খানিকটা রেগে গাড়ি থেকে নামে।আমি নামবো কি নামবো না ভাবতে থাকি?আমি নামার আগেই আহান ভাই গাড়িতে এসে বসে।তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে প্রচুর অবাক হয়েছে।শুধু অবাক নয় প্রচুর অবাকের চেয়েও বেশি।নিজে নিজে কি যেন বিরবির করছে?

আমি আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করি,
–“কি হলো আহান ভাই?”
তিনি মনে হয় আমার কথা শুনতেই পাননি।তিনি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চালাতে শুরু করেন।আমি মনে মনে শুকরিয়া কামনা করতে থাকি এই ভেবে যে ভাগ্যিস ট্রাকটা চলন্ত ছিল না।নাহলে এতক্ষন ওপারে পৌছে পটল তোলায় সামিল হওয়া লাগতো।

আমি আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে পুনরায় জিজ্ঞাসা করি,
–“কি হলো আহান ভাই?তখন থেকে একা একা কি বিরবির করতেছো?”

আহান ভাই আমার দিকে না তাকিয়ে বলে,
–“আচ্ছা উষু দুনিয়ার সবচেয়ে দ্রুতগামী যানবাহন কোনটি?”
আমি নির্দিধায় উত্তর দেই,
–“অবশ্যই প্লেন।আই মানুষ মানুষ বহনের কথা বলছি।তবে এমনিতে রকেট মনে হয় বেশি।আমার ঠিক জানা নেই।কেন এই প্রশ্ন করছো?”

আহান ভাই আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পুনরায় প্রশ্ন করে,
–“আচ্ছা আমার যেখান থেকে আসলাম সেখান থেকে এই বাস পর্যন্ত কি কোন প্লেন উঠেছে বা নেমেছে?”
আমি এবার ব্যাপারটাকে একটু ঘুরতর ভাবে নেই।আহান ভাই পাগল হলো কিনা বোঝার চেষ্টা করি?তবে তাকে দেখে পাগল মনে হচ্ছে না।আমি তার প্রশ্নের উত্তরে বলি,
–“তুমি পাগল হইলে নাকি!প্লেন এখানে নামবে কেন?”

এবার আহান ভাই গাড়িটা থামায়।মাথা ঘুড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা জোড়েই বলে,
–“তাহলে এত তারাতারি নিদ্র কেমন করে ওই বাসের মধ্যে আসলো?”
আহান ভাইয়ের কথা শুনে আমার মধ্যে চলে আসে পাগল হব হব ভাব।আহান ভাই পুনরায় গাড়ি চালাতে শুরু করে।আমি ভেবে চলেছি নিদ্র এত তারাতারি কেমনে আসলো।ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসি তবুও কোনো উত্তর খুঁজে পাই না।

আহান ভাই গাড়ি পার্ক করে নিয়ে আমাকে রেখেই বাসার ভিতরে প্রবেশ করে।তার পিছন পিছন আমি প্রবেশ করি বাসার ভিতরে।কয়েকবার কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে দেয় ইশান।আমরা দুজনে তার সাথে কথা না বলে নিজের রুমে চলে যাই।আমাদের ব্যবহারে খানিকটা অবাক হয় ইশান।

রুমে গিয়ে সর্বপ্রথম ওয়াসরুমে যাই আমি।আহান ভাই গালে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে।আমি ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বের হই।তখনো একই অবস্থায় সোফায় বসে আছে আহান ভাই।আমি গিয়ে তার পাশে দাঁড়াই।তার হাতটা ধরে গাল থেকে সড়িয়ে দিতে দিতে বলি,
–“এত চিন্তা না করে ফ্রেস হয়ে নাও।একটা ঘুম দিলেই এসব বাজে চিন্তা চলে যাবে।”

আমার কথা মতো উঠে দাঁড়ায় আহান ভাই।তারপর কোনো কথা না বলে সোজা ওয়াসরুমে চলে যায় সে।তাকে চিন্তা দুর করার কথা বললেও ‌নিজে দুর করতে পারছি আমি।চিন্তাটা বেশ ভালোভাবেই জেকে বসে মাথার মধ্যে।

কিছুক্ষন পর ফ্রেস হয়ে বের হয় আহান ভাই।তিনি আমার সাথে কোনো ‌কথা না বলে ধপ করে বিছানায় বসে পড়েন।তারপর আস্তে আস্তে মাথাটা এলিয়ে দেন বালিশে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন উপরের দিকে।আমি গিয়ে তার পাশে বসে পড়ি।এমন সময় দরজার সামনে দেখা দেয় ইশান।আমি তাকে আসতে বললে সে ভিতরে আসে।

আহান ভাই উঠে বসে এবার।ইশান সোফায় বসতে বসতে বলে,
–“ভাইয়া তোমরা আসার কিছুক্ষন আগে একটা অদ্ভুত ছেলে এসেছিল।বারবার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলেও আমি দেইনি।বারবার বলছিল সে উষার বন্ধু নাকি।কিন্তু তার জানা ছিল না আমরা বেষ্টফ্রেন্ড।আমি উষার সব বন্ধুকে চিনি।কিন্তু তাকে কোনোদিন দেখিনি।শেষ পর্যন্ত চলে যায় সে।”

ইশানের কথা শুনে বেশ আগ্রহ জন্ম নেয় আমার আর আহান ভাইয়ের মনে।আমি কিছু বলার আগেই আহান ভাই বলে ওঠে,
–“ছেলেটা দেখতে কি রকম ছিল?”
ইশান চোখ বন্ধ করে নেয়।তারপর বলতে শুরু করে,
–“দেখতে বেশ সুন্দরই।চুলগুলো মিডিয়াম ভাবে ছাটানো তবে তাতে কড়া করে জেল দেয়া রয়েছে।আর পরনে কালো কোর্ট আর প্যান্ট ছিল।”

ইশান যা যা বলছে তা নিদ্রের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে।কিন্তু নিদ্র এত তারাতারি এখানে কেমনে আসবে।আমি আর আহান ভাই পরস্পরের দিকে তাকাই।দুজনের চোখের ভাষা একটাই।সেটা হলো,
–“নিদ্র এখানে,অসম্ভব!”

এমন সময় ইশান বলে ওঠে,
–“আমি চুপ করে ছেলেটার একটা পিক তুলে নিয়েছি।ওয়েট মোবাইলটা নিয়ে আসি।”
এই বলে ইশান উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা দৌড়ে চলে যায় রুম থেকে।আহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে,
–“ছবি দেখলেই বুঝবো কে?”
আমিও তার কথায় শুধু মাথা নাড়াই কোনো কথা বলি না।

কিছুক্ষনের মধ্যে ফোন নিয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে ইশান।সে আমার হাতে মোবাইলটা দিয়ে সোফায় বসে পড়ে।আমি ছবিটা দেখে চমকে যাই।আহান ভাই আমার হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে ছবিটা দেখে চমকে যায় সাথে ভিষণ অবাকও হয়।

ছবিটাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে হাসি হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিদ্র।আহান ভাই ইশানের হাতে মোবাইলটা দিয়ে দেয়।মোবাইল নিয়ে রুম ত্যাগ করে ইশান।আহান ভাই আমার সাথে কোনো কথা না বলেই‌ চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।আমিও শুয়ে পড়ি তার পাশে।কিছুক্ষন পর ঘুমে জড়িয়ে আসে আমার চোখ।ঘুমিয়ে পড়ি আমি।

তারাতারি ঘুমানোর কারনে মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার।মাথা ঘুড়িয়ে পাশে তাকিয়ে দেখতে পাই না আহান ভাইকে।আমি তারাতারি করে উঠে বসি।এমন সময় চোখ যায় ব্যালকনিতে।সেখানে একটা ছায়া লক্ষ্য করি আমি।আস্তে আস্তে এগোতে থাকি ব্যালকনির দিকে।সেখানে গিয়ে দেখি আহান ভাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি যেতেই আহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আচ্ছা উষু,তুই কি আমাকে ভালোবাসিস?”
হঠাৎ আহান ভাইয়ের এরকম প্রশ্নে খানিকটা তাজ্জব হই আমি।নিজে নিজেকে প্রশ্ন করি,
‘সত্ত্যিই তো আমি কি আহান ভাইকে ভালোবাসি?”

আহান ভাই পুনরায় জিজ্ঞাসা করে একই প্রশ্ন।আমি কি বলবো বুঝতে পারি না।

চলবে..ইনশাআল্লাহ