আবদ্ধ আমি পর্ব-০৫

0
539

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#৫ম_পর্ব

অধীর আগ্রহে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আহান ভাই।তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে আমার উত্তরের উপরই নির্ভর করছে তার বাঁচা-মরা।আমি কিছু বলছি না দেখে আহান ভাই পুনরায় তাগদা দেয়।সদ্য ঘুম থেকে উঠে এরকম প্রশ্ন শুনে খানিকটা বিব্রত হই আমি।অথঃপর আহান ভাই আরেকবার তাগদা দেয়ার আগেই আমি বলে উঠি,
–“প্রত্যেক স্ত্রী তার স্বামীকে ভালোবাসে,আমি তার ব্যাতিক্রম নই।আমার মনেও আমার স্বামীর জন্য ভালোবাসা আছে।”

আমার কথা শুনে আহান ভাই‌ আমার দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
–“মোটকথা তুই আমাকে ভালোবাসিস।এটাই তো!”
আমি এবার তার কথায় মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দেই যে তার ধারনা ঠিক।আমার কাছ থেকে উত্তর পেয়ে পুনরায় খোলা আকাশের দিকে তাকান তিনি।তারপর আমার দিকে না তাকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“উষু একটা অদ্ভুত ব্যাপার কিন্তু সত্য।তুই কি জানতে চাস?”

মানুষ কৌতুহল সম্পন্ন জীব।সবকিছুকে জানার ইচ্ছা প্রায় সব মানুষের।আমিও ব্যাতিক্রম নই।তাই অত ভণিতা না করে সোজা বলে দেই,
–“অবশ্যই জানতে চাই।বলো তুমি!”

আমার উত্তর শুনে মাথা ঘুড়িয়ে আমার দিকে তাকায় আহান ভাই।তারপর কোলা ব্যাঙ-এর মতো গলার স্বর করে বলে,
–“নিদ্র একটা ভ্যাম্পায়ার”

আহান ভাইয়ের কথা শুনে কিছুক্ষনের জন্য মনে হয় লোকটাকে পাবনায় ভর্তি‌ করাতেই হবে।নাহ এভাবে কি আর বাঁচা যায়?সারা জীবন শুনে আসলাম ভ্যাম্পায়ার বলতে কিছু নাই আর এখন তিনি বলছেন আমাদের চোখের সামনে ঘুড়ে বেড়ানোর জলজ্যান্ত মানুষটা ভ্যাম্পায়ার।আমি হাসতে হাসতে আহান ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলি,
–“তাহলে সে আমাদের ধরে রক্ত খাইলো না কেন?ভ্যাম্পায়ার রা তো রক্ত খায়!”

আহান হাসিটা মোটেও ভালো লাগে না আহান ভাইয়ের।সে আমার মাথায় হালকা করে একটা চাটি মেরে বলে,
–“সে এমন ভ্যাম্পায়ার যে রক্ত খায় না।”
আহান ভাই যতই বলুক না কেন ব্যাপারটা আমার কাছে সবসময় অবিশ্বাসজ্বনকই থাকবে।তারপরেও আমি তার উদ্দেশ্য বলি,
–“তুমি কি করে বুঝলে সে ভ্যাম্পায়ার?”

আমার প্রশ্ন শুনে আহান ভাইয়ের মুখে চওড়া হাসি লক্ষ করি।অবাক হয়ে জানতে চাই তার হাসির কারন।সে তার মুখের হাসিটা বজায় রেখে বলে,
–“তুই তো লক্ষ করিস নি এসব কিন্তু আমি করেছি।দেখিসনি যে নিদ্র রোদে কখনো বের হয় না।আমাদের যখন ধরে নিয়ে গেল তখন নিদ্র গুদামের ভিতরে ছিল একবারের জন্যেও বাহিরে আসেনি।সে ইচ্ছা করলে আমাদের পিছনে দৌঁড়াতে পারতো কিন্তু দৌড়ায়নি।এর একটা কারন..?”

আহান ভাই বলার আগেই আমি জানতে চাই,
–“কি কারন?”
তিনি মুখের হাসি বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“রোদ।বাহিরে রোদ ছিল”

আহান ভাইয়ের কথা শুনে আমার কান্না পাচ্ছে এই ভেবে যে,আমার বরটা পাগল হয়ে গেল‌ এত তারাতারি।সে যতই উদাহরন প্রদর্শন করুক না কেন আমি কখনো এটা বিশ্বাস করতে পারব না।

আমি অতশত না ভেবে পিছন থেকে আহান ভাইকে জড়িয়ে ধরি।জড়িয়ে ধরার পর তাকে উদ্দেশ্য করে বলি,
–“আহান ভাই তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?তুমি কি‌ আমাকে নিজের স্ত্রী মনে করো?”

আমার কথা শুনে এক পলকে আমার দিকে ঘোরে আহান ভাই।হঠাৎ ঘোরার ফলসরুপ আমি পড়ে যে ধরি।আমাকে টপ করে টেনে ধরেন তিনি।তারপর নিরাপদ ভাবে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলেন,
–“তোকে কতবার বলবো আমি বিশেষ একজনকে ভালোবাসি।সে কোনো মানুষ নয় তবে মানুষের ভিতরে থাকা একজন।”

আহান ভাই আত্মাকে ভালোবাসে এই‌ কথাটা শুনে শরীর শিউরে ওঠে আমার সাথে মাথাটাও একটু গরম হয়।আমার বর আমাকে ভালো না বেসে বিশেষ একজনকে ভালোবাসে যে কিনা আবার আত্মা।আমি রাগ করে বলে ফেলি,
–“তো‌ আমাকে আটকে রেখেছো কেন?আমাকে মুক্তি দাও,যেতে দাও নিদ্রের কাছে।সে তো আর তোমার মতো অন্য কাউকে না আমাকে ভালোবাসে।ভালোবাসা ছাড়া সংসার হয় নাকি।”

কথাগুলো বলে হরহর করে রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ি।কথাগুলো ঠিক বললাম নাকি ভুল বিবেচনা করার সময় পাই না।খুব খারাপ লাগে আমার।গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে।আমার কথা গুলো শোনার পর আহান ভাইয়ের কিরকম রিয়েকশন হয়েছিল জানি না আমি।তবে জানতেও চাই না।

আমি বিছানায় শুয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলতে থাকি।একপর্যায়ে আমি মাথার কাছে কারো উপস্থিতি টের পাই।মাথা তুলে তাকিয়ে অবাক করা এক দৃশ্য দেখি।অবিশ্বাস এক দৃশ্য।আমার মাথার পাশে হাসি মুখে বসে আছে নিদ্র।প্রথমে কল্পনা মনে হয়।কিন্তু একপর্যায়ে মাথায় হাতের ছোয়া পাই।

আমি আর একসেকেন্ডও সেখানে শুয়ে না থেকে উঠে দৌড়ে ব্যালকনিতে গিয়ে পিছন থেকে আহান ভাইকে জড়িয়ে ধরি।হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরায় খানিকটা শিউরে ওঠে আহান ভাই।আস্তে করে ঘুরে দাঁড়ায় আমার দিকে।খানিকটা রাগি স্বরে জিজ্ঞাসা করে,
–“কি হয়েছে?”

আমার মুখ দিয়ে কোনো‌ বাচ্য বের হচ্ছে না।আমি আঙ্গুল দিয়ে রুমের দিকে ইশারা করি।আহান ভাই‌ কিছুটা কৌতুহল নিয়ে রুমে প্রবেশ করে।চোখ বন-বন করে চারদিকে তাকিয়ে দেখে সবকিছু ঠিক আছে।সে কিছুটা রেগে আমার দিকে তাকায়।তারপর জিজ্ঞাসা করে,
–“কি এখানে?”

রুমে কিছু নেই দেখে বেশ অবাক হই ‌আমি।আমি যে স্পষ্ট নিদ্রকে দেখেছি ব্যাপারটা খুলে বলি আহান ভাইকে।ধর্য্য সহকারে আমার প্রতিটা শব্দ শ্রবন করেন তিনি।তারপর কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলেন,
–“আমার ধারনাই ঠিক।আচ্ছা ঘুমিয়ে পড় আয়!”

তারপর দুজনে একসাথে বিছানায় শুয়ে পড়ি।কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে যাই দুজনে।সম্পুর্ন নিরব হয়ে যায় রুমটা।এক ঘুমে পাড় হয়ে যায় অবিশিষ্টটা রাতটা এবং সকালের কিছু সময়।

সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠি আমরা।কোনো ‌এক কারন বশত আজ একসাথেই ‌দুজনের ঘুম ভেঙ্গে যায়।খাবার টেবিলে কাউকে দেখতে পাই না।ইশান বিচারকের মতো গাম্ভীর্যভাব নিয়ে বলে,
–“কালকে বাবা-মা আসেনি।আজকে নাকি বৌ-ভাত।আমাদের সবাইকে যেতে হবে কিছুক্ষন পর।”

তার কথা শুনে বুঝতে পারি সবকিছু।আমি রুমে যেতেই আহান ভাই ‌আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“এখনি সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে উষু”
আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে জানতে চাই,
–“মানে”

আহান ভাই‌ আমার আরো কাছে এসে বলে,
–“নিদ্র ভ্যাম্পায়ার হয় নাকি নয়।সে যদি ভ্যাম্পায়ার না হয় তাহলে আসবে আর যদি হয় তবে আসবে না।কারন বাহিরে রোদ আছে।”

আমিও এবার বুঝতে পারি আহান ভাইয়ের কথার উদ্দেশ্য।মনে মনে চাইতে থাকি নিদ্র যেন ভ্যাম্পায়ার না হয়।এই চাওয়ার কারন বুঝতে পারি না।কি হয় দেখা যাক??

চলবে…ইনশাআল্লাহ