আবদ্ধ আমি পর্ব-০৬

0
501

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#৬ষ্ট_পর্ব

কিছুক্ষনের যাত্রায় ইশান,আমি আর আহান ভাই পৌঁছে যাই গন্তব্যস্থলে।আমার আর আহান ভাইয়ের প্লানটা জানে না ইশান।তাকে না বলার একটাই কারন ছেলেটা পেটের মধ্যে কোনো কথা রাখতে পারে না।এই কথাটা যদি এখানে বলে ফেলে তাহলে মানসম্মান সব প্লাস্টিকের কৌটা হয়ে যাবে।

আমি আর ইশান আগে-ভাগেই গাড়ি থেকে নেমে পড়ি।আহা‌ন ভাই গাড়ি পার্কিং করে এসে আমাদের দলে যোগ দেয়।অথঃপর সবাই মিলে একসাথে প্রবেশ করি ভিতরে।আমাদের দুজনের চোখ বর্তমান একজনকেই খুঁজছে আর সেটা হলো নিদ্র।মনে হচ্ছে তাকে না পেলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে আমাদের।

কিছুক্ষন একসাথে থাকার পর ইশান আমাদের ছেড়ে আলাদা জায়গায় চলে যায়।আমি আর আহান ভাই পরস্পরের দিকে তাকাই।দুজনের চোখে কিলবিল করছে নানা প্রশ্ন?নিদ্রের দেখা কি পাব নাকি না?আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই আহান ভাই বলে ওঠে,
–“আমি একশত পার্সেন্ট সিউর সে এখানে নেই।এমনকি তার বাবা-মাও এখানে নেই।থাকার কথাও নয় তাদের।তবুও খুঁজে দেখি কি বলিস?”

আমি আহান ভাইয়ের কথায় মাথা নাড়াই কিছু বলি না।আহান ভাই পুনরায় বলে ওঠে,
–“শোন,একসাথে খুঁজলে হবে না।আলাদা আলাদা হয়ে খুঁজতে হবে।কিন্তু তোকে তো আলাদা ছাড়তেও ভয় লাগে।আচ্ছা আমার সাথে আয়!”
আমি আহান ভাইয়ের দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বলি,
–“আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে আমাকে আলাদা ছাড়তে ভয় লাগবে।আমি ওদিকে খুঁজ….”
বাকি কথাটা শেষ হওয়ার আগেই আহান ভাই বেশ রাগী চোখে তাকায় আমার দিকে।তার রাগী চোখ দেখে আমার ক্ষমতা হয় না বাকি কথাটা শেষ করার।তিনি চলতে শুরু করেন এবং আমি তার পিছনে পিছনে চলতে শুরু করি।

বেশ কিছুক্ষন ধরে চিরুনি তল্লাশি চালানোর পরেও কোনো খোঁজ মেলে না নিদ্র এবং তার পরিবারের।একপর্যায়ে আহান ভাই কি যেন বিরবির করতে থাকেন এক কোণায় দাঁড়িয়ে।আমি তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি,
–“কি ভাবছেন আহান ভাই?”

আমার কথা বোধ হয় কান অব্দি যায় না আহান ভাইয়ের।তিনি এক মনে বিরবির করতেই থাকেন।আমি পুনরায় তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করি,
–“কি ভাবছেন আহান ভাই?”
আহান ভাই আমার দিকে না তাকিয়ে খানিকটা অমনোযোগী ভাবে উত্তর দেন,
–“সবার অংক মেলে কিন্তু আমার অংক মেলে না।”

আমি এবার কিছুটা অবাক হয়ে তাকাই আহান ভাইয়ের দিকে।তারপর বেশ সুন্দর করে বলি,
–“অংক তো‌ মিলে গেছে আহান ভাই।আমরা জানতাম যে নিদ্রকে পাবো না এখানে এবং সেও এখানে নাই।তো অংক তো মিলে গেছে যে নিদ্র একটা ভ্যাম্পায়ার।”
আহান ভাই এবার সম্পুর্ন চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকায়।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি।এমন সময় আহান ভাই হুট করেই খানিকটা চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
–“আরে নিধি তুই এখানে!”

আমি ঝট করে মাথা ঘুড়িয়ে পিছনে তাকাই।আহান ভাই আমার পাশ কাটিয়ে গিয়ে মেয়েটার সামনে দাঁড়ায়।তারপর দুজন হ্যান্ডশেক করে।আমি লক্ষ করি মেয়েটার পাশে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে।মহিলাটাকে দেখে চমকে উঠি আমি।আরে এতো নিদ্রের মা।

আহান ভাইও নিদ্রের মাকে দেখতে পেয়েছে।তার মুখ দেখে বুঝতে পারছি আমার থেকেও বেশি চমকেছে সে।নিদ্রের মা আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে,
–“কেমন আছো‌ বাবা?”
আহান ভাই বহুৎ কষ্ট করে নিজের মুখের মধ্যে কিঞ্চিত পরিমাণ হাসি বিদ্যমাণ রেখে বলে,
–“এই ভালো,আপনি?”
নিদ্রের মা নিজের মুখের হাসিটা সংযত রেখে বলে,
–“ভালো আছি।তোমরা দু‌জন দুজনকে আগে থেকেই চেনো মনে হয়।”

এবার আহান ভাই কিছু বলার আগেই নিধি নামের মেয়েটা বলে ওঠে,
–“হুম,লন্ডনে পরিচয় হয়েছিল।আমি এই ভেবে অবাক হচ্ছি যে তুমি ওকে কেমন করে চেন?”
নিদ্রের মা এবার আমার দিকে তাকায়।তারপর হাসি মুখে বলে,
–“কেমন আছো মা?”
আমিও আহান ভাইয়ের মতো বহুৎ কষ্ট করে মুখের মধ্যে হালকা হাসি নিয়ে এযে বলি,
–“আলহামদুল্লিল্লাহ ভালো।”

নিদ্রের মা এবার আমাদের দুজনের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
–“এ হচ্ছে নিধি আমার বোনের মেয়ে।লন্ডনে থাকতো,বেড়াতে এসেছে।আহান বাবা মনে হয় চেনে নিধিকে?”
আমি দেখলাম আহান ভাই নিরবে মাথা নাড়ায়।নিধি এবার বলে ওঠে,
–“খালা তুমি যাও,আমি এদের সাথেই ‌থাকি।”
নিদ্রের এবার হাসি মুখে বলে ওঠে,
–“ওকে”

নিদ্রের মা চলে যাওয়ার পর নিধি চোখ তুলে আমার দিকে তাকায়।তারপর আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আহান এই মেয়েটা কে?”
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি নিধির চোখে একরাশ সন্দেহ কিলবিল করছে।আমি বুঝতে পারিনা তার চোখে কেন সন্দেহ?

নিধির কথার জবাবে আহান ভাই বলে ওঠে,
–“আমার ফুফাতো বোন।”
আহান ভাই আমাকে নিজের বউ বললো না ভেবে খুব কষ্ট লাগে আমার।কিন্তু আমি তার হয়ে বলে উঠি,
–“তোমার বউ হই সেটা বলো না কেন?”

আমার কথা শুনে নিধি যেন বড় একটা ঝটকা খায়।সে অবাক হয়ে তাকায় আমার দিকে।আমি হাসি মুখে তাকাই তার দিকে।আহান ভাই‌ কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।আমি স্পষ্ট দেখতে পাই‌ নিধির চোখের রং আস্তে আস্তে রক্তিমবর্ণ ধারন করছে।বুঝতে পারছি প্রচুর রাগ উঠেছে তার মাথায়।তবুও মুখে কিঞ্চিত হাসি এনে বলে,
–“ওহ,নাইস টু মিট।আচ্ছা তোমরা এখানে দাঁড়াও আমি আসছি!”
এই বলে সে আর আমাদের কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কিছুটা জোড়ে পা চালিয়ে চলে যায়।আহান ভাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তার যাওয়ার দিকে।

আমি এবার আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্রু-নাচিয়ে বলি,
–“কিছু বুঝলে?”
আহান ভাই ভ্রু-কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“কি বুঝবো?”
আমি আহান ভাইয়ের থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে বলি,
–“মেয়েটা তোমাকে ভালোবাসে।দেখলে না আমি যখন বললাম যে আমি তোকার বউ তখন কেমন রাগ করলো?বোঝ নাই ব্যাপারটা”

আহান ভাই আমার দিকে স্বচোখে তাকিয়ে বলে,
–“ধুর,আমি অনেক আগে থেকেই জানি।একদিন প্রপোজও করছিল‌ কিন্তু আমি না করে দিছি।তখন সে আমার বন্ধু হতে চায়।আমি রাজি হই।তারপর থেকে আমরা বন্ধু,বুঝলি।বাদ দেতো এসব ক্ষিধা লাগছে প্রচুর।ব্রেকফাষ্টও করি না চল তারাতারি!”

কথাগুলো বলে আহান ভাই সামনে আগাতে শুরু করে।আমি তার পিছন পিছন চলতে শুরু করি।আমার মনে বর্তমান একটাই দুশ্চিন্তা যে,
–“নিদ্র ভালোবাসে আমাকে মানে আমাকে পেতে চায়।এর জন্য সে যোকোনো বাজে কাউই করতে পারে।অপরদিকে নিধিও সেম।সেও ভালোবাসে আহান ভাইকে এবং তাকে পাওয়ার জন্য সবকিছুই করতে পারে।এখন চিন্তাটা এই জায়গায় যে,নিধি আর নিদ্র যদি হাত মেলায় তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।”

এসব ভাবতে ভাবতে আমি এসে পৌঁছাই একটা রুমে।বেশ ভালোভাবেই দেখতে পাই ইশান সোফায় বসে ফোন চালাচ্ছে।সেখানে আমি একজনকে দেখে চমকে উঠি।আমার থেকেও বেশি চমকে ওঠে আহান ভাই।এটা কেমনে সম্ভব?নিদ্র হাসি মুখে সোফায় বসে আছে…

চলবে..ইনশাআল্লাহ
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।