আবদ্ধ আমি পর্ব-০৭

0
492

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#৭ম_পর্ব

নিদ্রকে হাসি-মুখে বসে থাকতে দেখে অবাকের চুড়ান্ত পর্যায় অতিক্রম করে ফেলি আ‌মি আর আহান ভাই।নিদ্রের পাশে বসে আছে নিধি।আমি চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে নিদ্রের ফুল ফ্যামিলি উপস্থিত।আমি এবার আহান ভাইয়ের দিকে তাকাই।তিনি অবাক হয়ে নিদ্রের দিকে তাকিয়ে আছেন।

আমাদের দেখে নিদ্রের পাশের সোফায় বসতে বলে মামা।আমি আর আহান ভাই গিয়ে বসে পড়ি।আমাদের মাঝে এসে বসে পড়ে ইশান আর ইশানের সোফাটায় বসে পড়ে নিদ্রের বাবা-মা।আসছি থেকে একটা বিষয় খেয়াল করছি নিদ্র আর নিধির মুখে হাসি লেগেই আছে।তারা এত খুশি কেন ভেবে কিছুটা অবাক হই?মনের মধ্যে একটা সন্দেহ ঢুকে যায়।নিদ্র আর নিধি একত্র হয়ে কোনো গুরতর প্লান করছে নাতো?

আহান ভাই নিজে নিজে কি যেন বিরবির করতেছেন?তাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো একটা বিষয়ের হিসাব তিনি মিলাতে পারছেন না।আমি বুঝতে পারছি তার ব্যাপারটা।ব্যাপারটা আমাকেও বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।আমি এবার নিদ্রের দিকে তাকাতেই আমাকে চোখ মারে নিদ্র।ব্যাপারটা খেয়াল করে না আহান ভাই।তবে নিদ্রের এই কাজ-কারবারে প্রচুর রাগ ওঠে আমার।

আমি আহান ভাইয়ের দিকে তাকাতেই দেখি তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন।সবার চোখের দৃষ্টি গিয়ে পড়ে তার উপর।তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
–“উষা,নিধি,নিদ্র তোমরা আমার সাথে আসোতো।”
আহান ভাইয়ের কথা শুনে আমি সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালেও,নিদ্র আর নিধি উঠে দাঁড়ায় না।আহান ভাই তাদের দিকে তাকিয়ে পুনরায় বলেন একই কথা।

এবার আহান ভাইয়ের কথা শুনে উঠে দাঁড়ায় নিদ্র।নিদ্রের দেখাদেখি উঠে দাঁড়ায় নিধি।এবার আহান ভাই চলতে শুরু করেন।তার পিছনে আমি চলতে শুরু করি।আমাদের পিছন পিছন রুম থেকে বের হয় নিদ্র ও নিধি।আমি খেয়াল করি আহান ভাই ছাদের দিকে যাচ্ছে।আমি কোনো প্রকার প্রশ্ন না করে তার সাথে চলতে শুরু করি।

একপর্যায়ে আমরা এসে পৌঁছাই ছাদের মধ্যে।আহান ভাই সর্বপ্রথম চলে যায় এক কোণায়।তার সাথে আমি চলে আসি।নিদ্র আর নিধি পরস্পরের দিকে তাকায়।তারপর দুজনে আমাদের সামনে চলে আসে।তারা আমাদের সামনে আসতেই আহান ভাই বলে ওঠে,
–“তো‌মাদের ডাকার কারন…”
তার কথা শেষ না হওয়ার আগেই নিধি বলে ওঠে,
–“তারাতারি বলো,আমাদের কাজ আছে।”

আহান ভাই অবাক হয়ে নিধির দিকে তাকায়।আহান ভাইয়ের তাকানো দেখে হেসে ওঠে নিধি।তার হাসির কারন বুঝতে পারি না আমরা দুজনেই।আহান ভাই পুনরায় কিছু বলে ওঠার আগেই নিধি বলে ওঠে,
–“আসলে ডাইরেক্ট এয়ারপোর্ট থেকে এখানে এসেছি।এখান থেকে তারাতারি বাসায় যাব।যা বলার একটু তারাতারি বলো?”

আহান ভাই নিজের অবস্থা স্বাভাবিক করে বলে,
–“ভূমিকা ছাড়াই বলছি।আমি একটা বিষয় নিয়ে প্রচুর চিন্তিত কয়েকদিন থেকে।আশা করি তোমরা আমাদের সাহায্য করতে পারবে।কারন তোমাদের অনেক কিছু জানা আছে।”
নিদ্র আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বেশ বিরক্ত নিয়ে বলে,
–“এত কথা না বলে ডাইরেক্ট বললেই তো হয়।”

আহান ভাই নিদ্রের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে,
–“কয়েকদিন আগে একটা কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করি।সেখানে আমাকে প্রশ্ন করা হয় ভ্যাম্পায়ার আছে নাকি নেই।আমি সুন্দর করে উত্তর দেই,অবশ্যই আছে।”
নিদ্র আহান ভাইয়ের কথা শুনে মাথা ঝাকিয়ে বলে,
–“উত্তরটা তো ঠিকই আছে।”
আহান ভাই নিদ্রের দিকে তাকিয়ে নিজের মুখের হাসিটা বজায় রেখে বলে,
–“তারপর তাড়া বলে,আপনার নিশ্চয় জানা আছে ভ্যাম্পায়াররা রোদ সহ্য করতে পারে না।আমি তাদের কথায় নিরবে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলি।তারা পুনরায় বলে ওঠে,কিছু কিছু ভ্যাম্প রোদকে ভয় পায় না।তারা মানুষের মতো চলাচল করতে পারে।এর কারন কি?”

এইটুকু বলে কিছুক্ষনের জন্যে বিরতি নেয় আহান ভাই।তারপর পুনরায় বলতে শুরু করে,
–“তারপর আমি উত্তরে বলি,এ বিষয় আমার জানা নেই।
ব্যাস তারপর তারা আমাকে ক্যান্সেল করে দেয়।হাত ছাড়া হয়ে যায় ৭কোটি টাকা।টাকা যাক কিন্তু আমি এটা বুঝতে পারছি না যে ভ্যাম্পায়াররা রোদেও বেড়াতে পারে।কেমনে সম্ভব?তোমরা কিছু জানো কি?”

এবার আহান কিছু বলার আগেই আগেই নিদ্র বলে ওঠে,
–“হ্যাঁ অনেক ভ্যাম্পায়ার রোদও সহ্য করতে পারে।যদি তার বাবা মা উভয়ে ভ্যাম্পায়ার না হয়।যদি উভয়ে ভ্যাম্পায়ার হয় তাহলে রোদ সহ্য করতে পারে না আর যদি না হয় তাহলে পারে।হইছে এখন আমরা যাই।”
আহান ভাই তাদের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে,
–“ওকে ওকে”

আহান ভাইয়ের অনুমতি পেয়ে দ্রুততার সাথে সেই স্থান ত্যাগ করে নিদ্র ও নিধি।এবার আমি আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হয়ে বলি,
–“তুমি কখন কুইজ-এ অংশগ্রহণ করলে আহান ভাই?”
আহান ভাই এবার নিদ্রদের যাওয়ার দিকে তাকায়।তারপর আমার আরো কাছে এসে আস্তে করে বলে,
–“চেক করলাম নিদ্র আসলেই কি ভ্যাম্পায়ার নাকি নয়?”

আমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলি,
–“কেমনে?”
আহান মুখের মধ্যে হাসি এনে বলতে শুরু করে,
–“নিদ্রের বাবা ও মা।দুজনের যেকোনো‌ একজন মানুষ।এজন্য তার মধ্যে মানুষ এবং ভ্যাম্পায়ার উভয়ের সম্পর্ক রয়েছে।এজন্য সে ভ্যাম্পায়ার-এর মতো চলতে পারে আবার মানুষের মতো রোদও সহ্য করতে পারে।সে সত্ত্যিই ভ্যাম্পায়ার।”

আমি বেশ অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকি।সত্ত্যি আহান ভাইয়ের বুদ্ধির তুলনা নাই।তিনি আমার সাথে আর কোনো কথা না বলে ছাদ থেকে নিচে নামতে থাকে।আমি কোনো কথা না বলে তার সাথে নিচে নামতে থাকি।

একপর্যায়ে আমরা নিচে চলে আসি।নিচে আসতেই মামা আমাদের একটা টেবিলে বসে আছে।আগে থেকেই সেখানে বসে আছে ইশান।অথঃপর তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়া শেষ করি আমরা।খাওয়া শেষ হতেই আহান ভাই যাওয়ার জন্য রেডি হয়।তবে ইশান জানিয়ে দেয় সে এখনি যাবে না পরে যাবে।

তার মতামতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি আর আহান ভাই তাকে রেখে বাসার পথে রওনা দেই।আহান ভাই গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আমি তার পাশে বসে আছি।একপর্যায়ে আমরা বাসায় পৌঁছে যাই।আহান ভাই আমাকে রেখে গাড়ি পার্কিং করতে যায়।আমি দরজা খুলে বাসায় প্রবেশ করতেই কেউ আমার মুখে রুমাল চেপে ধরে।মুহুর্তের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে যাই আমি।তবে অজ্ঞান হবার সময় খেয়াল করি,যে লোকটা আমার মুখে রুমাল চেপে ধরেছে তার পোশাক থেকে আহান ভাইয়ের পারফিউমের মতো সেন্ট আসছে।তাহলে কি আহান ভাই নাকি তার পারফিউম ব্যবহার করা অন্যকেউ।

চলবে…ইনশাআল্লাহ