আবদ্ধ আমি পর্ব-০৮

0
463

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#৮ম_পর্ব

চোখ খোলার পর বুঝতে পারি অজ্ঞান হওয়ার আগে আমার মনে যে ভাবনা চলছিলো সম্পুর্ন ভুল।তবে আমার নাক ঠিকই কাজ করেছে।আমি যে আহান ভাইয়ের পারফিউমের গন্ধ পেয়েছিলাম সেটা সত্ত্যিই ছিল তবে সেখানে আহান ভাই ছিল না।আহান ভাইয়ের টি-শার্ট পড়ে থাকা নিদ্র ছিল।

চোখ খুলে নিজেকে আবিষ্কার করি চলন্ত গাড়িতে।আমার পাশের সিটে কেউ নেই তবে সামনের সিট দুটোতে নিদ্র আর নিধি বসে আছে।আমি চোখ খুলে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি কিন্তু কোনো কথা বলতে পারি না কেননা আমার মুখ বাধা রয়েছে।সমস্ত গাড়িতে আমার চোখ শুধু আহান ভাইকেই খুঁজছে।

এমন সময় আমার দিকে তাকায় নিধি।আমাকে চোখ খোলা দেখে মুখে চাপা হাসি দিয়ে বলে,
–“নিদ্র,চোখ খুলেছে।”
নিধির কথা শুনে মাথা ঘুড়িয়ে আমার দিকে তাকায় নিদ্র।তারপর গাড়িটা থামায়।এবার সম্পুর্ন আমার দিকে ঘুড়ে বসে নিধি ও নিদ্র।নিদ্র আমার মুখ থেকে কাপড়টা খুলে দিতে দিতে আদুরে গলায় বলে,
–“খুব লেগেছে তাই না।সত্ত্যিই আমি সরি।আসলে তারাহুড়োর কারনে একটু জোড়ে হয়ে গেছে বাঁধাটা।আমি সত্ত্যিই দুঃখিত।মাফ করে দাও”

নিদ্রের কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠে নিধি।জলন্ত চোখে তার দিকে তাকায় নিদ্র।নিধি হাসতে হাসতে বলে,
–“তোর জানুর কেয়ার করছিস তুই কিন্তু আমারটা মনে হয় কান্না করছে।এই সময় তার পাশে থাকা উচিত আমার।কি বলিস?”
নিধির কথা শুনে নিদ্র স্বাভাবিক হয়ে বলে,
–“তো যা,কে আটকে রেখেছে?আমি আমার ভালোবাসা কে নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো।”

তাদের কথোপকথন শুনে আমি কিছুটা বুঝতে পারি আসলে কি হয়েছে।তবুও নিদ্র ও নিধির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি,
–“আহান ভাই কোথায়?”
আমার কথা শুনে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকায় নিদ্র।নিধি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিদ্রের দিকে।হঠাৎ নিদ্র আমার গালে কষে একটা থাপ্পড় মারে।তারপর বেশ রেগে খানিকটা জোড়ে চিল্লিয়ে বলে,
–“আমার সামনে যদি আরেকবার অন্য কোনো ছেলের নাম উচ্চারণ করেছো তাহলে সাথে সাথে গিয়ে সেই ছেলেটাকে মেরে দিয়ে আসবো।বেশিক্ষন লাগবে না তাকে মারতে।তুমি আর ওই আহান দুইজনেই জানো আমি ভ্যাম্পায়ার।হ্যা এই নিধি আছে না সেও মানুষ+ভ্যাম্পায়ার।সো আমাদের সাথে চালাকি করলে তোমারই লস হবে।”

এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে গাড়ি থেকে নেমে যায় নিদ্র।তার দেখাদেখি নিধিও গাড়ি থেকে নেমে যায়।আমি একাই গাড়িতে পড়ে থাকি।মুখ খোলা থাকলেও হাত বাধা রয়েছে আমার।এই কারনে বের হতে পারছি‌ না গাড়ি থেকে।

গাড়িতে বসে বসে ভাবতে থাকি আমাদের ধারনাই ঠিক ছিল।নিদ্র আসলেই একটা ভ্যাম্পায়ার।তারা আমাকে নিয়ে আসলো কিন্তু আহান ভাইকে আনলো না কেন?তাকে কি মেরে ফেলেছে নাকি?ধুর কি ভাবছি?নিধি তাকে মেরে ফেলতে দিবে না।তবে খুব চিন্তা হচ্ছে আহান ভাইয়ের জন্য।এই মুহুর্ত অনুভব করতে পারছি‌ আহান ভাইকে কতটা ভালোবাসি আমি।

বেশ কিছুক্ষন থ মেরে গাড়িতে বসে থাকি আমি।একপর্যায়ে একসাথে গাড়িতে প্রবেশ করে নিদ্র ও নিধি।নিদ্রের হাতে আইসক্রিম।সে এবার আমার হাতের বাঁধনটা খুলে দিয়ে আমার হাতে ধড়িয়ে দেয় আইসক্রিমটা।তারপর কোমল স্বরে বলে,
–“খাও।”

তারপর সে নিধির দিকে তাকিয়ে বলে,
–“অনেকদুর চলে আসছি আমরা।আরেকটু সামনে একটা ছোট-মত জঙ্গল পাব।সেখানেই ক্যাম্প করবো কি বলিস?”
নিদ্রের কথা শুনে নিরবে মাথা ঝাঁকায় নিধি।নিদ্র গাড়ি চালাতে শুরু করে পুনরায়।

এপর্যায়ে আমরা পৌঁছে যাই‌ একটা জঙ্গলমত জায়গায়।নিদ্র গাড়ি থামিয়ে দেয় একটা ফাঁকা জায়গায়।গাড়ি থেকে নেমে পড়ে নিধি ও নিদ্র।সবার শেষে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি আমি।চারদিকে তাকিয়ে দেখি‌ শুধু গাছপালা।এসব দেখে শরীর একটু শিউরে ওঠে।ভয় করছে ভুতের।একপর্যায়ে নিজে নিজে ভাবি, ভুতের ভয় পাচ্ছি কেন?যেখানে নিজের সাথেই দুইটা ভুত রয়েছে।

আমি লক্ষ্য করি নিদ্র আর নিধি গাড়ি থেকে কিছু তাবু বের করে।তারপর দুজনে সেসব খাটাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।আমি গাড়িতে হেলান দিয়ে তাদের কাজ-কারবার দেখছি।তাদের কাজ-কারবার দেখলেও মনটা শুধু ভাবছে আহান ভাইয়ের কথা।তিনি নিশ্চয় আমাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছেন।কিন্তু একটা ব্যাপার আমি বুঝতে পারছি না যে,এরা আমাকে কেমন করে তুলে আনলো?নিশ্চয় এরা আহা‌ন ভাইকেও অজ্ঞান করেছিল।নাহলে…

বাকি ভাবনাটা আর ভাবতে পারলাম না।তার আগেই নিদ্র বলে ওঠে,
–“তাবু রেডি।একটাতে নিধি অন্যটাতে আমি আর উষা।”
নিদ্রের কথা শুনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই আমি।নিধি মুচকি হেসে বলে,
–“বিয়ের আগেই কাজ সাড়বি নাকি?”

তাদের এসব কথা শোনার ইচ্ছা আমার নেই।তাই কথা কাটানোর জন্য বলি,
–“ক্ষুধা লাগছে আমার খুব।”
আমার কথা শুনে গাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে নিদ্র।বের হয়ে আসে একটা ব্যাগ নিয়ে।সেখান থেকে বের করে পাউরুটি আর জেলি।সেগুলো আমার দিকে এগিয়ে দেয় সে।

পাউরুটিতে জেলি মাখিয়ে খেতে খেতে আমি তাদের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ প্রশ্ন করে বসি,
–“আমাকে কেন তুলে এনেছো তোমরা?”
আমার কথা শুনে নিদ্র আমার সামনে এসে বুকে হাত দিয়ে বলে,
–“ভালোবাসি তাই”

নিদ্রের কথা শুনে মুচকি হাসি আমি।তারপর ঘৃণার চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“কিন্তু আমি না তোমাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃ‌ণা করি।আমাকে যদি বলা হয় তোমার সবচেয়ে অপছন্দের বস্তু কি?আমি তোমার নাম‌ বলবো সেখানে।কি মনে করেছো তুমি?আমাকে ভালোবাসার অভিনয় করবে আর আমি স্বামী সংসার ছেড়ে চলে আসবো।পাগল না আমি”

আমার কথা শুনে নিদ্র আমার আরো কাছে এসে বলে,
–“আমার এই ভালোবাসা তোমার কাছে অভিনয় মনে হয়।আমি সত্ত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।নিজের জীবনের থেকেও বেশি।তোমাকে না পেলে আমি সারাজীবন অবিবাহিতই থাকবো।”

নিদ্রের এসব কথায় মন গলে না আমার।আমি দৃঢ়গলায় বলে দেই,
–“তুমি আমাকে যতই ভালোবাসো না কেন আমি ‌তোমাকে ভালোবাসবো না।আমি শুধু আহান ভাইকেই ভালোবাসি।সংসার করার হলে তার সাথেই করবো না হলে করবোই না।এটাই আমার শেষ কথা।”

আমার কথা শুনে বেশ রেগে উঠে দাঁড়ায় নিদ্র।নিধির উদ্দেশ্য চিল্লিয়ে বলে,
–“ক্যামেরা রেডি কর নিধি।কিছু ছবি তুলে মি.আহানের কাছে পাঠাতে হবে।”
কথাগুলো বলে শার্ট খুলতে শুরু করে নিদ্র।আমি তার দিকে তাকিয়ে ঘৃণার চোখে তাকিয়ে দেখি,
–“এই তোমার ভালোবাসার নমুনা।যতই ছবি তোলো আহান ভাই সবসময় আমাকে বিশ্বাস করবে।”

আমার কথা শুনে ধপ করে সেখানে বসে পড়ে নিদ্র।চোখের কোণে পানি দেখতে পাই।নিদ্র কান্না মৃশ্রিত গলায় বলে,
–“খুব ভালোবাসি যে তোমাকে….”

চলবে..ইনশাআল্লাহ